কথায় বলে, ভাবিয়া করিয়ো কাজ, করিয়া ভাবিয়ো না। এন.সি- ২৯০

কথায় বলে, ভাবিয়া করিয়ো কাজ, করিয়া ভাবিয়ো না।
Image result for স্প্রিং
কথায় বলে, ভাবিয়া করিয়ো কাজ, করিয়া ভাবিয়ো না।
একটা সময় বাংলাদেশের মানুষ ম্যাশ ম্যাশ করে পাগল ছিলো।
ম্যাশ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, ম্যাশ অমুক, ম্যাশ তমুক।
আমি তখন এক স্ট্যাটাসে বলেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণ যেভাবে ‘সেলিব্রেটি ওরশিপ’ শুরু করেছে,
দেখবেন কয়েকদিন পর এই কৃত্তিম ভ্যালুটা আওয়ামীলীগ গ্রহণ করবে।
আওয়ামীলীগ থেকে মাশরাফিকে মনোনয়ন দিয়ে, সেই ফলাফল নিজের ঘাড়ে তুলবে। (https://bit.ly/2JxcaNt)
মানুষ তখন কতটুকু বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলো, জানি না। কিন্তু কয়েকদিন পর আওয়ামীলীগ ঠিকই মাশরাফিকে মনোনয়ন দিয়ে তার পথে সে হাটতে থাকলো। এখন ঐ পাবলিকগুলাই (যারা ম্যাশ ম্যাশ করে পাগল ছিলো), সারা দিন বলতেছে, ম্যাশরাফিকে যেন অবসরে যায়।
একইভাবে বাংলাদেশে যখন ফ্লাইওভার-মেট্রোরেলের কাজ শুরু হলো, তখন আমি বলেছিলা, এগুলো হলো কর্পোরেটোক্রেসির লক্ষণ। এর মাধ্যমে ধনী শ্রেণী মধ্যবিত্ত হবে, মধ্যবিত্ত দরিদ্র হবে আর দরিদ্র মারা যাবে। মাঝখান দিয়ে রাজনৈতিক নির্ভর এলিট ক্লাস বের হবে, যাদের পাশে থাকবে বিদেশী কর্পোরেট শ্রেণী।
আমার কথা শুনে, অনেকে বলেছিলো- আপনি যাই বলেন, বাংলাদেশে মেট্রোরেল-ফ্লাইওভারের দরকার আছে। এর মাধ্যমে যানজট নিরসন হবে।
আজকে ঐ লোকগুলোকেই দেখছি হাইহুতাশ করতেছে, ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তায় রিকশা বন্ধ করে দেয়ার জন্য। বলছে- এটা গাড়িওয়ালাদের সুবিধা করে দিতে হইছে।
তবে এটা ঠিক, এখনও একটা শ্রেণী আছে, যারা মটরসাইকেল, প্রাইভেট কার বা বাস ব্যবহার করে, তারা আবার এ রিকশা বন্ধ করাকে সমর্থন যোগাচ্ছে। আমি চাচা চৌধুরীর এক গল্পের উদারহণ দিয়ে বলেছিলাম, এক ভাইয়ের সমর্থন নিয়ে অন্য ভাইকে শেষ করা হচ্ছে এদের পলিসি। তবে দিন শেষে সবাইকেই শেষ করা হবে। (https://bit.ly/30lgs1A)
কথা হলো, এগুলো অনেক পুরাতন পলিসি। কিন্তু মানুষ এগুলো বুঝে না। যদি বেশি বলেন, তবে বলবে, “আরে ভাই! খালি নতুন নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বের করেন, আপনার মাথায় সমস্যা ?”
ঢাকা শহরকে সুন্দর করতে বস্তি উচ্ছেদ
ঢাকার রাস্তাকে সুন্দর করতে হকার উচ্ছেদ
ঢাকার রাস্তাকে গতিশীল করতে রিকশা উচ্ছেদ
কিন্তু বস্তি, হকার ও রিকশা এগুলো যে ঢাকার অংশ – এটা আমরা ভুলে যাচ্ছি। আমার ঘরের জনসংখ্যা বেড়ে গেছে, তাই আমার ভাই-বোন দুই চারটাকে মেরে ফেলে ঘরটা খালি করি। তখন ঘরটা দেখতে সত্যিই খুব সুন্দর লাগবে, কি বলেন ?
আমি একটা কথা আগেই বলেছিলাম, ঢাকা শহরে যানজট নিরসনের সমাধান কখন ফ্লাইওভার মেট্রোরেল নয়, সমাধান হলো ঢাকা শহরকে বিকেন্দ্রীকরণ করা। শাসক শ্রেণী ঐ যানজটের মোয়া দেখিয়ে বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নিচ্ছে, আর কাড়ি কাড়ি টাকা কামাচ্ছে।
আমি এও বলেছিলাম- বিকেন্দ্রীকরণের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন যে নতুন লোকগুলো প্রবেশ করছে তাদের আটকানো। ইউএনএফপিএ ও বিবিএসের তথ্য অনুসারে ঢাকায় প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে ১৭০০ মানুষ। আপনি ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল বানাচ্ছেন, যা বহণ করতে পারবে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার লোক। অথচ ঢাকা শহরে ৩৫ দিনে নতুন প্রবেশ করতেছে ৬০ হাজার লোক। তারমানে মাত্র ৩৫ দিনে ঢাকা শহরে যে লোক প্রবেশ করে এত খরচ করে মেট্রোরেল বানিয়ে শুধু তা সামাল দিতে পারবে! ঢাকার বাইরে প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা জরুরী। এজন্য ঢাকার ভেতরে ফ্লাইওভার মেট্রোরেলে ইনভেস্ট না করে ঢাকার বাইরে প্রডাক্টিভ খাতে ইনভেস্ট করতে হবে। তখন ঢাকা থেকে লোক সরবে, ঢাকার যানজট নিরসন হবে।
আমি আরো বলেছিলাম মেট্রোরেল ফ্লাইওভারে খরচ পোষাতে মানুষের জীবন ব্যয় বাড়বে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে, চাল-ডাল কিনতে মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হবে। অন্যদিকে, ঢাকা শহরে যত ইনভেস্ট বাড়বে, তত বিকেন্দ্রীকরণের আশা কমে যাবে। কারণ ঢাকায় ইনভেস্ট হলে ঢাকায় মানুষ রাখতে হবে, নয়ত সেই খরচ পোষাবে কিভাবে ? পাশাপাশি, ঢাকায় যত জনসংখ্যা বাড়বে, তত বাসা ভাড়া বাড়বে, মানুষের হাশফাস বাড়বে, জীবন ব্যয় বাড়বে। পাশাপাশি ঢাকাকে প্যারিস, লস অ্যাঞ্জেলস বানাতে নিয়মিত ছাটাই চলবে, গরীব ছাটাই, রিকশা ব্যান তারই অংশ বিশেষ। কিছু বললে বলবো- “পোষালে থাকো, নয়ত পাকিস্তান চলে যাও। ”
এই যে রিকশার ব্যাপারটা দেখেন, কারো কাছে রিকশা বিরক্তিকর, কিন্তু কারো কাছে রিকশা অতি জরুরী। এক্ষেত্রে সরকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রিকশার জন্য যেভাবে আলাদা লাইন করে দিয়েছে সেভাবে আলাদা লাইন করে দিতে পারতেো। পাশাপাশি মানুষ যেন রিকশা থেকে অটোরিকশা (সিএনজি) দিকে ঝুকে সেটাও উচিত ছিলো। কিন্তু সেখানেও দুর্নীতি। সেই ১৫-১৬ বছর আগে ঢাকা শহরে মাত্র ১৩ হাজার সিএনজি’র অনুমতি দিয়েছিলো বিআরটিএ। এরপর রহস্যজনক কারণে আর নতুন লাইসেন্স দেয়া হয় না। ফলে সিএনজি অটোরিকশা পরিণত হয় সোনার হরিণে। একটা কার-মাইক্রোবাসের রাস্তায় ছাড়তে যেখানে খরচ হয় ৭-৮ লক্ষ টাকা, সেখানে একটা সিএনজি অটোরিকশার দাম হয়ে দাড়ায় ১০-১২ লক্ষ,তারপরও পাওয়া যায় না। নুতন লাইসেন্স হয় না, ফলে হাত বদল হলেই দাম বাড়ে। কিছুদিন আগে সরকার পুরাতন সিএনজি অটেরিকশা ভেঙ্গে নুতন গাড়ি করেছে, কিন্তু আমার জানা মতে এখনও নতুন রেজিস্ট্রেশন দেয়নি। ফলে জনগণের কোন উপকার হয় না, সব উপকার হয় আমাদানিকারকদের।
অনেকেই ক্ষোভ ঝাড়ে, সিএনজি মিটারে যায় না, আরে ভাই যে গাড়ির দাম ১০-১২ লক্ষ, জমা হাজার টাকা, যানজট কবলিত ঢাকায় সেটা মিটারে যাবে কিভাবে ? বাস্তবতা বুঝতে হবে অবশ্যই। এ কারণে প্রতি ট্রিপে (যত কমদূরত্ব হোক) ২০০ টাকার নিচে যেতে চায় না সিএনজি চালকরা। সরকার রিকশা উঠিয়ে দেবে ভালো কথা, কিন্তু সেটার স্থলে সিএনজি আনা দরকার ছিলো। বাস কখন রিকশার বিকল্প নয়, তবে সিএনজি সেটা হতে পারতো। সেক্ষেত্রে ভাড়া নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখতে হবে। প্রতি কিলো ২০ টাকার মধ্যে। কিন্তু সরকার রিকশার বিকল্প হিসেবে বাস বলতে চাইছে, এটা ভুল।
প্রথম দেখেই দেখেছি, সরকার প্রাইভেট কার বিরোধী। বলতো- এত এত গাড়ি রাস্তায় নামলে যানজট বাড়বে। এ অজুহাত করে গাড়ি আমদানিতে ৩০০-৮০০% পর্যন্ত ট্যাক্স ধরছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা কমিশন খেয়ে বাংলাদেশে উবার নিয়ে আসলেন, যার ফলশ্রুতিতে গ্যারেজের পুরাতন গাড়িগুলো পর্যন্ত ভাড়ায় খাটতে লেগে গেলো। এবার রাস্তা সয়লাব হয়ে গেলো গাড়িতে। তাহলে এতদিনের নীতি গেলো কোথায় ? তবে যেহেতু জনগণ উবার ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছে, তাই হয়ত বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি। কিন্তু আলটিমেটলি জনগনের খরচ তো বেড়েছে।
কর্পোরেটোক্রেসি’ পলিসিটাই একরম। একদল লাভের স্বপ্ন দেখবে, অন্য দলকে শেষ করে দেয়া হবে। মাঝখান দিয়ে লাভবান হবে আন্তর্জাতিক কর্পোরেট ও দেশের দুর্নীতিবাজ শাসক। সাবেক অর্থমন্ত্রী মাল মুহিত যে বলেছিলো, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে কোন গরীব থাকবে না, এখন সেটাই হচ্ছে, অর্থাৎ গরীব নিধন কর্মসূচি চলছে, ২০২৪ সালের মধ্যে সব গরীবকে মেরে দেশকে গরীবমুক্ত করা হবে।