ঈদ আসলেই শুরু হয়ে যায় কোরবানীর গরু নিয়ে অপপ্রচার
“আমে ফরমালিন, গরুতে স্টেরয়েড- এগুলো হলো দেশী শিল্পকে ধ্বংস করতে গুজব”। কোরবানীর ঈদ আসলেই বিদেশী মদদপুষ্ট মিডিয়াগুলো উঠে পড়ে লাগে, দেশী গরুর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে এবং প্রশাসনকে দিয়ে দেশী শিল্পের লাগাম টেনে ধরতে। সেই প্ল্যানেই সম্প্রতি বিবিসি খবর করেছে, ঈদ সামনে রেখে বাড়ছে গরু মোটা করার ওষুধের চোরাচালান (https://bbc.in/2KYOiFS)
পাঠক কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করুন-
১. গরু মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড কোন ক্ষতিকর ওষুধ নয়। অ্যালার্জি টাইপের রোগের জন্য হরহামেশা মানুষের শরীরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। যারা বডি বিল্ডিং করে তারা স্টেরয়েড নিয়মিত নেয়। অনেক রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে গেলে তাকে স্টেরয়েড দেয় ডাক্তাররা। তাই স্টেরয়েড মানেই খারাপ, এ ধরনের বার্তা ছড়ানো সম্পূর্ণ অমূলক ও গুজব।
২. আজ থেকে প্রায় ৫ বছর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের প্রধান ভেটেরিনারিয়ান এ বি এম শহীদুল্লাহ সাহেব এ সম্পর্কে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “পশু মোটা-তাজাকরণ বা গ্রুথ হরমোন বাড়ানোর জন্য যে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয় তা সহনীয় পর্যায়ে। এতে গরুর কোনো ক্ষতি হয় না এবং মানুষের শরীরের জন্যও কোনো ক্ষতি নেই। কারণ এই ধরনের ওষুধ গরুকে খাওয়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এছাড়া ৭৭ কেজি মাংসের মধ্যে যে পরিমান স্টেরয়েড থাকে তার সমপরিমান স্টেরয়েড থাকে একটি ডিমে। অন্যদিকে প্রাকৃতিকভাবে কিছু সবজি আছে যার মধ্যে প্রচুর স্টেরয়েড থাকে। কিন্তু এতে তো আমাদের শরীরের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বরং উপকারই হচ্ছে।” (https://bit.ly/2NvULtP)
৩. স্টেরয়েড দিয়ে মানুষ যেখানে মোটাতাজা হচ্ছে, সেখানে গরু মোটাতাজাকরণ অবশ্যই একটি বিজ্ঞানসমর্থিত সিস্টেম। যদিও বাংলাদেশের অধিকাংশ খারামী বর্তমানে বিশেষজ্ঞ পদ্ধতি মেনেই গরু মোটাতাজা করে। এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৯০ থেকে ১২০ দিন আগে থেকে গরুর লালন-পালন ও খাদ্য পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করা হয়।
৪. ঝামেলা হইলো, “মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন, ২০১০” আইনের হাস্যকর ধারা – ১৪ নিয়ে। যেখানে আছে-“মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্যে এন্টিবায়োটিক, গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড ও কীটনাশকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাইবে না৷”।
মজার বিষয় হইলো, মানুষের মধ্যে যেখানে হরহামেশা স্টেরয়েড প্রয়োগ হচ্ছে, মানুষের খাদ্য যেখানে কীটনাশক ছাড়া চাষ হচ্ছে না, সেখানে পশুখাদ্যে এগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ, বিষয়টি খুব হাস্যকর হয়ে যায়। আমার মনে হয়, এ ধরনের দেশীশিল্প বিরোধী আইন শুদ্ধ/পরিবর্তন করা জরুরী।
মজার বিষয় হইলো, মানুষের মধ্যে যেখানে হরহামেশা স্টেরয়েড প্রয়োগ হচ্ছে, মানুষের খাদ্য যেখানে কীটনাশক ছাড়া চাষ হচ্ছে না, সেখানে পশুখাদ্যে এগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ, বিষয়টি খুব হাস্যকর হয়ে যায়। আমার মনে হয়, এ ধরনের দেশীশিল্প বিরোধী আইন শুদ্ধ/পরিবর্তন করা জরুরী।
৫. চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ডা. এ কে এম হুমায়ুন কবির বলেন, “এক মাসে স্টেরয়েড ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে সে বেশি পরিমাণে স্টেরয়েড ব্যবহারের দিকে ঝুঁকবে। এটা পশুর জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ওই পশুর মাংস যারা খায় তাদের জন্যও ক্ষতিকর। পশুকে স্টেরয়েড বা হরমোন প্রয়োগ করা হলে তা পশুর প্রস্রাব বন্ধ করে দেয়। ফলে পশুর চামড়ার নিচে পানি জমতে থাকে এবং তা ফুলে যাওয়ায় পশু স্বাস্থ্যবান দেখায় “(https://bbc.in/2KYOiFS)
পাঠক, প্রফেসর হুমায়ুন কবির সাহেবের বক্তব্য বলে দিচ্ছে, খুব কম সময়ের মধ্যে স্টেরয়েড ব্যবহার করলে পশু স্বাস্থ্যঝুকির মধ্যে পড়ে। প্রস্রাব বন্ধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। যে কোন সময় মারা যেতে পারে। এতটুকু তথ্য জানার পর আপনি নিজে নিজেকে খামারি হিসেবে কল্পনা করুন তো একবার। আপনার এত কষ্টের/দামের গরুকে কি এমন কোন ওষধ খাওয়াবেন, যার মাধ্যমে পশুটি মারা যেতে পারে ? ৫-১০ দিন ধরে গরুটি হাটে আসে, গরু অসুস্থ হয়ে গেলে তো পাবলিক তা কিনবেই না, তাহলে খামারি কি গরুকে মোটাতাজা দেখাতে গরুর প্রস্রাব বন্ধ করে অসুস্থ করে পাঠাবে ? আপনার গরুর জন্য বেশি মায়া, নাকি ঐ ব্যবসায়ী/খামারির ? এমনিতেই তো গরুর দাম বেশি, তারমধ্যে দাম বাড়াতে কোন গর্দভও তো নিজ গরুকে এমন হুমকির মুখে ফেলবে না। এটা যে পুরোটাই গুজব, সামান্য চিন্তা করলেই তো বের করা সম্ভব।
৬. উল্লেখ্য সম্প্রতি খরব এসেছে, কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশে অবাধে প্রবেশ করছে ভারতীয় জীবানুবাহী গরু। এসব গরুর শরীরে এমন কিছু মিশ্রিত করা হয়েছে যে, গরুগুলোর মৃত্যুর পর তার মাংশে জীবযন্তুও মুখ দিচ্ছে না। (https://bit.ly/2xxeD50)। লক্ষণীয় বিষয় হলো- বিবিসি খবর করেছে ভারত থেকে আসা মোটাতাজা করার ট্যাবলেট নিয়ে, ভারতীয় গরু নিয়ে নয়। অর্থাৎ বিবিসির টার্গেট বাংলাদেশী গরু বিষাক্ত হচ্ছে-এটা প্রমাণ করা। এজন্য বাংলাদেশী গরু পরীক্ষা করার জন্য পশু সম্পদ অধিদফতরকে সে প্রেসারও দেয়। অথচ ভারত থেকে অবাধে জীবানুবাহী গরু প্রবেশ করছে, সেটা নিয়ে বিবিসি কোন খবর করে না এবং প্রশাসনকে সে সব গরু চেক করতেও বলে না।
কোরবানীকে সামনে রেখে দেশী খামারিরা বহুদিন কষ্ট করে বহু খরচ করে গরু প্রস্তুত করে। কিন্তু শেষ মুহুর্তে বিদেশীমদদপুষ্ট একটি মহল হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠে, দেশী খামারীদের এই প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে। আপনাদের জানিয়ে রাখছি, ঈদ যত সামনে আসবে, এ ধরনের অপপ্রচার ততই বাড়তে থাকবে। তাই জনগণকে এ ব্যাপারে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে এবং বিদেশী দালালদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ করতে হবে।