কোরবানীর উপর ট্যাক্স নিষিদ্ধ হোক । এন.সি- ২৯৮

কোরবানীর উপর ট্যাক্স নিষিদ্ধ হোক

Related image
কোরবানীর উপর ট্যাক্স নিষিদ্ধ হোক
কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে এবার ঢাকা শহরে বসবে ২৬টি পশুর হাট। হাটগুলো সরকার টেন্ডার ডেকে ইজারা দেয়। যেই ইজারার টাকা জমা পড়ে সরকারের রাজস্ব খাতে। প্রতি বছর যেটা দেখা যায়, সরকার যে রেটে ইজারা ডাকে তার ৪ ভাগের ১ ভাগও দরদাতা পাওয়া যায় না। কারণ পেছনে কাজ করে অদৃশ্য, হাত যারা টেন্ডার জমা দিতে দেয় না। দিলেও ২-১টা লাশ পড়লে টেন্ডার দাতাও লুকিয়ে যায়।
দেখা গেছে, সরকার যদি ১৮ লক্ষ টাকা ডাকে তবে ১৮ কোটি হওয়ার কথা, সেখানে দর ৪ লক্ষও পাওয়া যায় না। অথচ যারা হাটের ইজারা পায় তারা পশু প্রতি ৫% হারে হাসিল নেয়। সেই হিসেবে সারা দেশে হাসিলের পরিমাণ দাড়ায় ১ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা।
এখানে স্পষ্ট সরকার নিজ পৃষ্ঠপোষকতায় জনগণের ধর্মীয় অণুষ্ঠান থেকে চাদাবাজি করার সুযোগ করে দিচ্ছে। আর তার উপলক্ষ হচ্ছে রাজস্ব বা ইজারা। সরকার যদি ইজারা না ধরে দিতো, তবে তার সাঙ্গপাঙ্গরা হাসিল নামক চাদাবাজি আদায় করতে পারতো না।
মুখে বলছে এখানে সরকারের আয়, কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সরকারী লোকদের চাদাবাজি। একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সরকারী ট্যাক্স হোক আর তার দলীয় লোকদের চাদাবাজি হোক কোনটাই মেনে নেয়া যায় না।
এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যনীয়, প্রতিটি হাটের বাশ বানতে, আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থা করতে কিছু খরচের দরকার হয়। ঢাকা শহরে মোটি ২৬টি হাট হবে। ২৬টা হাটের বাশ বানতে আর আনুসাঙ্গিক খরচে ২-৪ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা না। সরকার এই সামান্য খরচ বহন করতে চায় না। অথচ হিন্দুদের দূর্গা পূজার সময় ঢাকা শহরে প্রায় ৩০০টি এবং পুরো দেশে প্রায় ৩০ হাজার পূজা মণ্ডপ হয়। সরকার সেখানে বিপুল পৃষ্ঠপোষকতা করে, মণ্ডপ প্রতি ৫০০ কেজি চাল, মণ্ডপের বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে কারেন্ট গেলে জেনারেটর খরচ পর্যন্ত দেয়। মাত্র ২-৩% হিন্দু জনগোষ্ঠীর জন্য এত খরচ করতে পারলে ৯৫% মুসলমানের জন্য ২৬টি হাটের বাশ বাধার খরচ সরকার দিতে পারে না ? একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে ট্যাক্স আদায় করতে হয় ? আবার সেই ট্যাক্সকে অজুহাত করে হাজার কোটি টাকার চাদাবাজির সুযোগ করে দেয়া। এক্ষেত্রে সরকারই উচিত নিজ খরচে এসব হাটের ব্যবস্থা করে দেয়া। কারণ প্রতিটি হাটে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক লেনদেন হয়, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক উপকার, সেখানে থেকে সামান্য পরিমাণ রাজস্ব আদায় না করলে বা সামান্য কিছু খরচ করলে সরকারের লাভ নয়, বরং উপকারই হবে। তাছাড়া হাটের টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর খুনোখুনিও বন্ধ হবে।
তাছাড়া ৫% হাসিল বন্ধ হলে শুধু যে কোরবানি পশু দাম করবে তা নয়, বরং বেশি কোরবানী হবে, যার দরুণ অনেক গরীব মানুষ কোরবানীর মাংশ খেতে পারবে।
বিষয়টি যদি আপনি ছোট করে দেখেন, তবে ভুল করবেন-
সারা দেশে প্রতি বছর কোরবানী হয় দেড় থেকে দুই কোটি পশু।
যদি ১ কোটিকে হাসিলের আন্ডারে ধরে নেই,
এবং সেখান থেকে যদি ৫% হাসিল নামক চাদাবাজি না হলে যদি ৫% কোরবানী বৃদ্ধি হয়,
তবে ১ কোটিতে হয় ৫ লক্ষ পশু। প্রতি পশুতে যদি ২০ জন গরীর মাংশ পায়, তবে ৫ লক্ষ পশুতে মাংশ পাবে ১ কোটি গরীব মানুষ।
বাংলাদেশের মানুষকে আমি অনেক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে দেখি, কিন্তু আমার কাছে বেশি জরুরী মনে হয়েছে কোরবানীর উপর আরোপিত ট্যাক্স (হাসিল+ইজারা) নিয়ে আন্দোলন করাকে। কারণ একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ট্যাক্স আদায় কখন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কোরবানীর ঈদ আসতে আর মাত্র দেড় মাস বাকি, এখনই এ বিষয়ে আন্দোলন ও লেখালেখি শুরু করা জরুরী।