গতকাল সংসদে দাড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছে, “বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা ২০৪১ সাল নাগাদ বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে”। এন.সি-২৮৩

Related image
গতকাল সংসদে দাড়িয়ে মাননীয় 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছে, “বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা ২০৪১ সাল নাগাদ বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে”।

গতকাল সংসদে দাড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছে, “বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা ২০৪১ সাল নাগাদ বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে”।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৩ সালে জেলা পরিষদ প্রশাসকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলো, “আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করতে পারলে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। কেন্দ্রের হাতে শুধু পলিসি তৈরি, মনিটরিং ও বাজেট বরাদ্দের দায়িত্ব থাকবে। বাকি সব ক্ষমতা স্তরে স্তরে ছেড়ে দেওয়া হবে। ” (দৈনিক আমাদের সময়, ২৭ আগস্ট, ২০১৩)
তারমানে ২০১৩ সালে বলেছিলেন, আবারও ক্ষমতায় গেলে (২০১৪তে গিয়েছেন) ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করবেন, কিন্তু ২০১৯ ফের সরকার গঠন করে বলতেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবেন।
২০৪১ সালে স্থানীয় প্রশাসন বা জেলা প্রশাসকের হাতে যদি আর্থিক ব্যয়ের ক্ষমতা যায়, তারপর তারা যদি সুষ্ঠু ব্যয় করে, এরপর গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়ন হবে, “দিল্লী হনুজ দূর অস্ত- দিল্লী এখনও অনেক দূর”।
২০৪১ সাল আসতে আরো ২২ বছর বাকি ! কিন্তু এরমধ্যে আপনার সাবেক অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছে, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশ দরিদ্রমুক্ত হবে; এক মেয়র ঘোষণা দিয়েছে, রিকশা চালকরা যেন শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়, আরেক মেয়র ঘোষণা দিয়েছে ‘ঢাকা হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’।
গ্রামগুলো উন্নয়ন করতে যদি ২০৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তবে ঐ গরীবগুলো কোথায় যাবে ? মাটির নিচে ??
গ্রামীন অর্থনীতি হচ্ছে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি। কৃষির উন্নয়ন মানে গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়ন। কিন্তু বর্তমান সরকারের পলিসি হচ্ছে ‘এন্টি-কৃষি’। যার প্রমান প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য- আমরা কৃষি থেকে শিল্পের দিকে প্রত্যাবর্তন করতেছি। খোদ বর্তমান কৃ্ষিমন্ত্রীর বক্তব্য হলো- “ছেলেমেয়েরা শিক্ষা শেষে গ্রামের মাঠে গিয়ে আর কৃষি কাজ করবে না। তাদের জন্য চাকরি দরকার। সেই চাকরির জন্য শিল্প কারখানা করা দরকার। তাই বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি। ”
আমারা দেখেছি, বর্তমান সরকার নতুন করে ক্ষমতায় আসার আগে একটি শ্লোগান চালু করেছিলো- ‘গ্রাম হবে শহর’।
গ্রাম হবে শহর বলতে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছাবে আর সেই বিদ্যুতে গ্রামের লোকজন আরামসে ক্রিকেট খেলা দেখবে আইপিএল জুয়া ধরবে, ব্যস এতটুকু। আর হ্যা ! গ্রামে পাকা বাড়ি হবে, কিন্তু সেটা গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে উপার্জিত অর্থে না, বাড়ির ছেলেপেলেরা বিদেশে গিয়ে গায়ে খেটে বাড়িতে টাকা পাঠাবে, সেই টাকা দিয়ে পাকা দালান উঠবে। গ্রাম তখন শহরের মত দেখাবে, ব্যস এতটুকুই, কিন্তু গ্রামের অর্থনীতির কোন উন্নয়ন হবে না।
কথা হলো, ২০৪১ সাল নাগাদ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করুন, সেটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু এখনই দেশ বাচানোর জন্য হলেও অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ করা জরুরী। ঢাকা শহরে আর ইনভেস্ট না, এখন জেলা শহরগুলো উন্নত করুণ এবং জেলা-উপজেলা-ইউয়িন ও গ্রাম পর্যায়ে কিভাবে উৎপাদন খাতগুলো জাগিয়ে তোলা যায় সে চেষ্টা করুন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের একটা বড় কারণ ছিলো- পশ্চিম পাকিস্তানে সব ইনভেস্ট, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান ফাঁকা। এখন হয়ে গেছে একই অবস্থা। ঢাকাকেন্দ্রীক সব উন্নয়ন, বাইরের জেলাগুলো ফাঁকা।
আপনারা নিজেরাই চিন্তা করুন, কোন বাবা যদি তার পরিবারের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে, তবে আগে ঘরের আয় বাড়ায়, তারপর সেই বাড়তি টাকা দিয়ে ঘরের উন্নয়ন করে। অবশ্যই বাইরে থেকে ঋণ করে ঘরের ফার্নিচার গোছায় না। ঠিক একইভাবে ঢাকাকে সুইজ্যারল্যান্ড-পারিস বানাতে যেভাবে বিদেশ থেকে ঋণ আনতেছেন, এটা অস্বাভাবিক। আগে দেশের উন্নয়ন বাড়ান, উৎপাদনশীল খাত জাগিয়ে তুলে সেই অর্থ দিয়ে উন্নয়ন করেন। কিন্তু বাইরের ধার করা টাকা দিয়ে কি উন্নয়ন হয় ?
দেশের একক বা কোষ হলো ‘গ্রাম’, এজন্য সেই গ্রামের অর্থনীতি আগে বাড়ান। কিন্তু মূল একক বাদ দিয়ে বাইরে থেকে ঋণ এনে রাষ্ট্রের উন্নয়ন তো সম্ভবই নয়, বরং বাচিয়ে রাখাও সম্ভব নয়। বিষয়টি তুলনা করা যায়,মানুষের শরীরের সাথে। মানুষের শরীরের প্রতিটি কোষে বিপকীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন হয় এবং সেই শক্তি হলো মানব শরীরের আসল চালিকা শক্তি। কিন্তু সেই বিপকীয় কার্যক্রম বন্ধ করে আপনি যদি বাইরে থেকে একটা মানুষের হাত-পা নেড়ে চালাতে চান, তবে ঐ মানুষটি কতক্ষণ বাচবে? কিছুক্ষণের মধ্যেই তো মানুষটা মারা যাবে।
তাই বাইরে প্যারিস-সুইজারল্যান্ড বাদ দিয়ে আগে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খাতগুলোর দিকে নজর দিন, সেগুলো শক্তিশালী করুন। দেশের মার্কেট পুরোপুরি চাহিদা পূরণ হয়ে গেলে প্রয়োজনে বাহিরে রফতানির জন্য উৎপাদকদের সরকারীভাবে সাহায্য করুন। দেশে যা উৎপাদন হয় তা বিদেশ থেকে আমদানি করা বন্ধ করুন, মোটা ট্যাক্স ধার্য করুন। নয়ত দেশ বাচানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
আমরা জানি, আওয়ামীলীগ এক সময় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো। বাকশাল শব্দের অর্থ কিন্তু খারাপ না। বাকশাল রাশিয়ান টার্ম দেখে মার্কিনী গণতন্ত্রপন্থীরা তার বিরোধীতা করে, বাকশালকে একটা গালি হিসেবে প্রচার করে। আসলে বাকশাল অর্থ “বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ”। বর্তমান আওয়ামীলীগের যে পলিসি তাতে আওয়ামীলীগ কৃষক ও শ্রমিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই বাকশাল এর ‘ক’ আর ‘শা’টা গায়েব হয়ে গেছে শুধু ‘বাল’টা রয়ে গেছে। তাই শেখ হাসিনাকে বলবো, প্রয়োজনে বাকশালী হোন,সমস্যা নাই। কিন্তু দয়া করে শুধু ‘বাল’ হইয়েন না, তাহলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শেষ হয়ে যাবে।