ইউরোপ আমেরিকায় অনেক জঙ্গি হামলাকারীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়,। এন.সি- ২৯৬

ইউরোপ আমেরিকায় অনেক জঙ্গি হামলাকারীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়,
Related image
ইউরোপ আমেরিকায় অনেক জঙ্গি হামলাকারীর ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়,
হামলাকারী আগেই একবার গ্রেফতার হয়েছিলো এবং পুলিশি হেফাজতে ছিলো।
বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় যে জঙ্গীবিরোধী অভিজান হয়, বিভিন্ন বাড়িতে জঙ্গী দমন হয়,
সেখানেও দেখা যায় একই কথা, অর্থাৎ যেই জঙ্গীর বিরুদ্ধে অভিজান চালানো হয়,
সেই কথিত জঙ্গী এর আগেও পুলিশি হেফাজতে ছিলো।
অর্থাৎ যে সব জঙ্গীকে মিডিয়ার সামনে হাইলাইট করা হচ্ছে, তার সাথে আগেই আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারীদের সম্পর্ক দেখা যায়, এটা একটা বড় ধরনের সন্দেহজনক বিষয়।
সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে ‘উগ্রবাদকে না বলুন’ শিরোনামে একটি ভিডিও রিলিস করা হইছে (https://www.youtube.com/watch?v=cxw0fjHnI08), যেখানে মুসলমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হইলে (যেমন: গান পছন্দ না করা, খেলাধূলা পছন্দ না করা, ছবি আকা পছন্দ না করা, টিভি দেখতে না চাওয়া ) পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে, বলা হচ্ছে পুলিশ তাদের কাউন্সিলিং করে তাদের সেই স্বভাব পরিবর্তন করবে।
বাংলাদেশে এ ধরনের যারা প্রচারণা চালাচ্ছে, তারা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এরা আমেরিকা থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত। আপনাদের আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ভবনের সামনে বোমা হামলা চালনার চেষ্টা করা ‘নাফিস’ নামক এক বাংলাদেশী তরুণের কথা মনে থাকার কথা, যাকে মার্কিন সরকার ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলো। ধর্মপ্রিয় খুব সাধারণ ছেলে ছিলো নাফিস। নিউইয়র্ক পুলিশই তার সাথে যোগাযোগ করে, তাকে বেনামে জঙ্গীবাদে উদ্ধুদ্ধ করে, এবং তার পুলিশ-ই ট্র্যাক ভর্তি ভুয়া বিষ্ফোরক দ্রব্য দিয়ে আসে। এবং শেষে তাকে গ্রেফতার করে। অর্থাৎ পুরোটাই মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর সাজানো নাটক। নিউইয়র্ক পুলিশের দাবী- নাফিসের মনের ভেতর সুপ্ত জঙ্গিবাদ (!) ছিলো, সেটাকে শুধু জাগিয়ে তুলেছে তারা। দোষ নাফিসেরই, তার ভেতরে জঙ্গিবাদ (!) ঘুমিয়ে থাকবেই বা কেন ?
এই যে ধর্মপ্রিয় ছেলেকে কাউন্সিলিং এর জন্য ডাকা হচ্ছে, কয়েকদিন পর হয়ত তাদেরকে গুলি খাওয়া অবস্থায় পাওয়া যাবে, হয়ত মারা যাওয়ার ছবি প্রকাশ করা হবে, তারা কালো পতাকার সামনে এক আঙ্গুল তুলে পোজ দিয়েছে, সেই ছবি দেখিয়ে ঐ ছেলেগুলোকে খুন করা বৈধ করা হবে।
আমি আগেও বলেছি, আমেরিকার দুই হাত, একহাত টেরোরিস্ট, অন্যহাত কাউন্টার টেরোরিস্ট। এই দুই হাতের চাপায় সে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে। এ কারণে যে এলাকায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাউন্টার টেরোরিজমের কার্যক্রম বাড়বে, সেখানে সমানুপাতিক হারে কথিত জঙ্গীদের ‘লোন উলফ' বা 'সিঙ্গেল এ্যাটাক'ও বাড়বে। অর্থাৎ যায়গায় যায়গায় জঙ্গী হামলা বাড়বে, যা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একটি বা-হাতের কাজ, যার মাধ্যমে প্র্যাকটিসিং মুসলমানদের ভয় দেখিয়ে সেক্যুলার বানানোর কাজে ব্যবহৃত হবে।
এই বিষয়টি বুঝতে আরেকটু গভীরে যাওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে সাধারনত প্রশিক্ষণ দেয় আমিরকার জঙ্গি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা র‌্যান্ড কর্পোরেশন। র‌্যান্ড কর্পোরেশনের কাজ হলো কোন দেশের মুসলমানদের সেক্যুলার বানানো, আর যারা সেক্যুলার হতে পারবে না, তাদের জঙ্গী ট্যাগ দিয়ে শেষ করা। এজন্য তাদের কতগুলো পর্যায় আছে।
র‌্যান্ড কর্পোরেশনের মতে, মুসলমানরা চার ধরনের হয়ে থাকে
১) ফান্ডামেন্টালিস্ট : এটা শুধু ধর্মকে বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে না বরং দৈনন্দিন জীবনে ধর্মকে পরিপূর্ণ রূপে পালন করে। র‌্যান্ডের দাবি, এরা হলো পশ্চিমা সম্রাজ্যবাদের ১ নম্বর শত্রু। এদের যে কোন মূল্যে শেষ করতে হবে, এরাই হলো, পশ্চিমা কালচার, পশ্চিমা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
২) ট্র্যাডিশানালিস্ট: এরা মুসলমানদের মধ্যে নরমাল হুজুর শ্রেণী। এ জাতীয় মুসলিমদের গন্ডি মসজিদ, মাদ্রাসা, শেখা-শেখানো, ফতোয়া, মাসআলা, খুতবা দেওয়া - এসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর বাইরে তাদের মধ্যে নিজস্ব অন্য কোন কনসেপ্ট নেই। র‌্যান্ড বলছে, এরা পশ্চিমা সভ্যতার জন্য হুমকি না।
কিন্তু সাবধান! যদি কখনো এরা ফান্ডামেন্টালিস্টদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে বিশাল ঝামেলা। কারণ ট্র্যাডিশানালিস্টদের সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব আছে। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো এদের জন্য সহজ। প্রতি শুক্রবার নামাজের মানুষ তাদের কথা শুনছে। ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান বা জনসমাবেশ করতেও কিন্তু মেলা ঝক্কি। জায়গা ঠিক করো, পোস্টার ছাপাও, এই করো, সেই করো - অথচ মানুষ নিজে থেকেই প্রতি শুক্রবার, গোসল করে, আতর মেখে, সুন্দর করে সেজে, ভালো কাপড় পড়ে, এদের কাছে আসছে। তাই এরা যদি ফান্ডামেন্টালিস্টদের সাথে একসাথে হয়, তাহলে সেটা অনেক বড় বিপদ।
একারণে এ দুটো শ্রেণীকে একে অপরের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। আর যারা ট্র্যাডিশানালিস্ট – হুজুর, তাদেরকে নিজেদের মধ্যে মাসলাক-মাযহাব-ফিকহ ইত্যাদি বিভিন্ন তর্কে ব্যস্ত রাখতে হবে। তারা যেন নিজেদের মধ্যেই তর্কাতর্কিতে ব্যস্ত থাকে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) মর্ডানিস্ট মুসলিম: এরা হল ঐসব লোক যারা ইসলামের নতুন নতুন ব্যাখ্যা করতে চায়। আর এসব নতুন ব্যাখ্যার পেছনে উদ্দেশ্য থাকে ইসলামকে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থা, পশ্চিমা সভ্যতার সাথে কম্প্যাটিবল, সামঞ্জস্যপূর্ণ বানানোর চেষ্টা। র‌্যান্ডের পলিসি সাজেশান হল - এদের সাহায্য করতে হবে, এদের জন্য ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। আর বিশেষভাবে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে এদের প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সাধারণ মুসলিমদের কাছে এদের তেমন একটা গ্রহনযোগ্যতা নেই। তাই মিডিয়ার মাধ্যমে এদেরকে বেশি বেশি করে মানুষের সামনে নিয়ে আসতে হবে। যাতে তাদের কথা মানুষের কাছে পৌছে যায়।
৪) সেক্যুলারিস্ট: এরা প্রথম থেকেই পশ্চিমাদের পকেটেই আছে। পশ্চিমের শিক্ষা এরা আত্মস্থ করে ফেলেছে, হজম করে ফেলেছে। এরা মনস্থির করে ফেলেছে, শাসনের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম হল ধর্ম, আর ধর্ম হল বিশ্বাস, ইবাদত আর আচার-অনুষ্ঠানের সমষ্টি। এরা তো ওদেরই লোক।
ইসলামের বিরুদ্ধে সভ্যতার সংঘাতে জেতার জন্য, পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি র‌্যান্ড কর্পোরেশনের প্রেসক্রিপশান হল - মর্ডানিস্ট আর সেক্যুলারিস্ট, এই দুটো শ্রেণীকে সবধরনের সাহায্য করো। আর ফান্ডামেন্টালিস্ট ও ট্র্যাডিশানালিস্ট, এই দুটো দলকে দমন করো। এদেরকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে রাখো। আর ট্র্যাডিশানালিস্টদের ব্যস্ত রাখো নিজেদের মধ্যেকার ইখতেলাফে, মতপার্থক্যে। এই হল মুসলিমদের ওপর বিজয়ী হবার পলিসি।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্নভাবে র‌্যান্ড কর্পোরেশনের কার্যক্রম বাড়ছে। অনেকেই র‌্যান্ড কর্পোরেশনের সাথে যুক্ত, যেমন-
ক) মাওলানা ফরিদুদ্দিন সাহেবের ছেলে ব্যরিস্টার মাকতুম র‌্যান্ড কর্পোরেশন থেকে ডিগ্রি প্রাপ্ত।
খ) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আন্ডারে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম এবং ‘দারুল আরকাম’ মাদ্রাসা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরমাধ্যমে সহস্রাধিক মসজিদ-মাদ্রাসার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া হবে। শোনা যাচ্ছে, এ কার্যক্রমের পেছনে র‌্যান্ড কর্পোরেশনের হাত রয়েছে।
গ) র‌্যান্ডের প্রকল্প হিসেবে ‘হিজবুত তাওহিদ’ নামক একটি গ্রুপকে প্রমোট করা হচ্ছে, তারা চায় সব মুসলমান ঐ দলটির মত হয়ে যাক।
ঘ) ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভার্সিটির ভাইস চেয়্যারম্যান প্রফেসর ওমর ইজাজ রহমানও র‌্যান্ড কর্পোরেশনের সাথে জড়িত।
উল্লেখ্য র‌্যান্ড কর্পোরেশনের কেন্দ্রে অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে বয়ঃবৃদ্ধ ইহুদী হেনরী কিসিঞ্জার।