কেন মুরসির পতন ?
মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি মারা গেছেন। স্থানীয় সময় ১৭, জুন, ২০১৯ সোমবার দেশটির একটি আদালতে শুনানি চলাকালে বক্তব্য দেওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান।
অনেক তরুণ পাঠক, মুরসি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাদের বেশি আগ্রহ- কেন তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও ১ বছরের মধ্যে পতন হয়েছিলো জানতে চেয়েছিলেন, এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো ?
অনেক তরুণ পাঠক, মুরসি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাদের বেশি আগ্রহ- কেন তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও ১ বছরের মধ্যে পতন হয়েছিলো জানতে চেয়েছিলেন, এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো ?
আরব বসন্তের মাধ্যমে ২০১১ সালে হোসনি মোবারকের পতনের পর ২০১২ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন মুহাম্মদ মুরসি। কিন্তু এই ১ বছরের মধ্যে পুরো পরিস্থিতি তার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়। ২০১৩ সালের ৩ জুলাই দেশটির তৎকালীন সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ও বন্দি করে। সেই বন্দি অবস্থায় ৬ বছর পর তার মৃত্যু হলো।
মিশরে আরব বসন্তে কি হয়েছিলো ?
মূলত মিশরে আরব বসন্তের উদ্দেশ্য ছিলো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা রুশব্লকের শাসক হোসনি মুবারককে সরিয়ে নতুন কাউকে ক্ষমতায় আনা। এক্ষেত্রে কাজ করে ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদার হুড এবং তাদের সমর্থন দেয় মার্কিন ডেমোক্র্যাট ব্লক। যেহেতু রুশপন্থী শাসকের বিরুদ্ধে তাই রিপাবলিকান ব্লকের সদস্যরাও তাতে বাধা দেয়নি।
২০১১ তে আরব বসন্তের মাধ্যমে হোসনি মুবারক ক্ষমতা থেকে নেমে যায় এবং ২০১২তে নির্বাচনের মাধ্যমে মুসলিম ব্রাদারহুডের মুহাম্মদ মুরসি ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু সমস্যা হয়, মুরসি ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক সহযোগী মার্কিন ডেমোক্র্যাট ব্লকের ‘ইসরাইল সংক্রান্ত’ পলিসির বিরুদ্ধে কাজ করতে থাকে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যায় এবং ডেমো-রিপাবলিক এক হয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে।
ডেমোক্র্যাট ব্লকদের ‘ইসরাইল সংক্রান্ত’ পলিসি কি ?
আসলে ইসরাইল-ফিলিস্তিন নিয়ে তিন ধরনের সমধান প্রার্থীদের দেখা যায়।
সমাধান-১:
টু স্টেট সলুশন- অর্থাৎ ইহুদী সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রচারণা চালানো। এটা মূলত ডেমোক্র্যাট ব্লকের পলিসি। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ শাসক/জনগণ/জাতিসংঘ ডেমোক্র্যাটদের এই পলিসির পক্ষে।
টু স্টেট সলুশন- অর্থাৎ ইহুদী সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রচারণা চালানো। এটা মূলত ডেমোক্র্যাট ব্লকের পলিসি। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ শাসক/জনগণ/জাতিসংঘ ডেমোক্র্যাটদের এই পলিসির পক্ষে।
সমাধান ২:
পুরো এলাকা ইসরাইলের হবে। ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেয়া হবে। এটা মূলত রিপাবলিকান ব্লকের পলিসি। যদিও এটা মার্কিন রিপাবলিকান ব্লকের শাসকরা (ট্র্যাম্প) ডাইরেক্ট বলে না, কিন্তু তাদের আচার আচরণে সে বক্তব্য ফুটে উঠে।
পুরো এলাকা ইসরাইলের হবে। ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দেয়া হবে। এটা মূলত রিপাবলিকান ব্লকের পলিসি। যদিও এটা মার্কিন রিপাবলিকান ব্লকের শাসকরা (ট্র্যাম্প) ডাইরেক্ট বলে না, কিন্তু তাদের আচার আচরণে সে বক্তব্য ফুটে উঠে।
সমাধান-৩ :
ইসরাইল যেহেতু মুসলমানদের জমি দখল করে তৈরী করা, তাই পুরো এলাকার মালিক মুসলমানরা। এখানে কথিত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নাম দিয়ে বড় এলাকা ইহুদীদের এবং ছোট এলাকা মুসলমানদের দেয়া হচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। মুসলমানদের জমির পুরো মালিকানা মুসলমানদের ফিরিয়ে দিতে হবে। এটা মূলত ইসলামপন্থীদের বক্তব্য ও দাবী।
ইসরাইল যেহেতু মুসলমানদের জমি দখল করে তৈরী করা, তাই পুরো এলাকার মালিক মুসলমানরা। এখানে কথিত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নাম দিয়ে বড় এলাকা ইহুদীদের এবং ছোট এলাকা মুসলমানদের দেয়া হচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। মুসলমানদের জমির পুরো মালিকানা মুসলমানদের ফিরিয়ে দিতে হবে। এটা মূলত ইসলামপন্থীদের বক্তব্য ও দাবী।
২০১২ সালে মুরসি ক্ষমতায় আসার পর ইসরাইলিরা অভিযোগ করতে থাকে, মুরসি হচ্ছে হাসানুল বান্নাহ’র হুবুহু অনুসারি। হাসানুল বান্না’ যেমন ছিলেন ইসরাইলের অস্তিত্বের বিরোধী, ঠিক তেমনি মুরসিও হলো ইসরাইলের অস্তিত্বের বিরোধী। তাই তার ক্ষমতায় থাকা মানে ইসরাইলের অস্তিত্ব বিনাশ করা। এমনকি যে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন নিয়ে সে সে ক্ষমতায় এসেছে, সেই ডেমোক্র্যাট ব্লকের টু-স্টেট সলুশনেরও ঘোর বিরোধী হলো মুরসি। তার কাছে টু স্টেট সলুশন হলো একটা ধোকাবাজি ছাড়া কিছু নয়। এর প্রমাণ হিসেবে ২০১০ সালে মুরসির কিছু ভিডিও প্রকাশ করা হয়। যেখানে মুরসির ইহুদী ও ইসরাইল এবং টু-স্টেট সলুশনের বিরুদ্ধে শক্ত বক্তব্য পাওয়া যায়।
ইসরাইলে সিমান্ত ঘেষে বিশাল রাষ্ট্র মিশরের প্রেসিডেন্ট যদি এত কঠিন ইসলামিস্ট ও ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ঘোর বিরোধী হয়, তবে ইসরাইলের ধ্বংস হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই অতি-দ্রুত ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান ব্লক এক হয়ে তার পতন ঘটাতে উঠে লাগে। দৃশ্যত্ব দেখা যায়, ডেমোক্র্যাটপন্থী মিডিয়া মুরসির বিরুদ্ধে কঠিন অপপ্রচার শুরু করে এবং তাদের অনুসারিদের মুরসির বিরুদ্ধে মাঠে নামিয়ে দেয়। অপরদিকে রিপাবলিকান ব্লক মেইনটেইন করা সেনাপ্রধান সিসি অস্ত্রের শক্তিতে মুরসিকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে ক্ষমতা দখল করে । এক্ষেত্রে আরব বিশ্বের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান ব্লক মেইনটেইন করা বিভিন্ন সদস্যরাও মুরসির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, যার কারণে মুরসির পতন তরান্বিত হয়।
মুরসির প্রকাশিত ভিডিওতে ইসরাইল বিরোধী কি বক্তব্য ছিলো ?
আসুন মুরসির বক্তব্য শুনি-
আসুন মুরসির বক্তব্য শুনি-
“…………ইসরাইল-ফিলস্তিন সমঝোতা কখন সম্ভব নয়,
এটা সময় ও সুযোগের অপচয়,
ইহুদীবাদীরা সময় অতিবাহিত করে এবং আরো সুযোগ নেয়,
মুসলমানরা সময় ও সুযোগ হারায়, কিন্তু সেখান থেকে কিছুই পায় না।
তাদের স্বপ্ন দেখানো আসলে একটা ধোকা,
এখনও অনেক ফিলিস্তিনি ভাবে তারা তাদের শত্রু থেকে কিছু পাবে
প্যালেস্টাইন স্ব-শাসন কর্তৃপক্ষ (মাহমুদ আব্বাস) আমেরিকা ও ইহুদীবাদীদের তৈরী।
তারা ফিলিস্তিনিদের মূল লক্ষ্য ও স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে।
ইসরাইলি, ইহুদী ও ইহুদীবাদী হলো, যুদ্ধবাজ, বানর ও শুকরের বংশধর ও কি্রিমিনাল।
স্বাধীন প্যালেস্টাইনের জন্য মিলিটারি যুদ্ধ করতে হবে।
এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধ ও অর্থনৈতিক বয়কট করতে হবে।
ইহুদী ও ইহুদীবাদীদের কোন প্রকার সুযোগ দেয়া যাবে না।
ইহুদীদের মুসলমানদের ভূমি থেকে বিতারণ করতে হবে।
ইহুদীবাদীদের প্যালেস্টাইনে কোন ভূমি নেই।
ফিলিস্তিনের ভূমি ফিলিস্তিনিদের, ইহুদীবাদীদের নয়।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান (টু স্টেট সলুশন) বা শাস্তি প্রতিষ্ঠা ধোকা ছাড়া কিছু নয়।
ইহুদীরা প্রকৃতগতভাবে শত্রুভাবাপন্ন, ইতিহাসেও তাই দেখা যায়।
ইহুদীবাদীরা জবরদস্তি ছাড়া কোন ভাষা জানে না।
হে মুসলমান ভাইয়েরা, আমরা যেন কখন ভুলে না যাই, আমাদের সন্তান ও নাতিদের ইহুদী, ইহুদীবাদী ও তাদের সমর্থনকারীদের ঘৃণা করতে। তাদের অবশ্যই শিক্ষা দিতে হবে ওদের ঘৃণা করার জন্য। এবং এই শিক্ষা (বংশ পরম্পরা) চালাতে হবে……….. “।
এটা সময় ও সুযোগের অপচয়,
ইহুদীবাদীরা সময় অতিবাহিত করে এবং আরো সুযোগ নেয়,
মুসলমানরা সময় ও সুযোগ হারায়, কিন্তু সেখান থেকে কিছুই পায় না।
তাদের স্বপ্ন দেখানো আসলে একটা ধোকা,
এখনও অনেক ফিলিস্তিনি ভাবে তারা তাদের শত্রু থেকে কিছু পাবে
প্যালেস্টাইন স্ব-শাসন কর্তৃপক্ষ (মাহমুদ আব্বাস) আমেরিকা ও ইহুদীবাদীদের তৈরী।
তারা ফিলিস্তিনিদের মূল লক্ষ্য ও স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে।
ইসরাইলি, ইহুদী ও ইহুদীবাদী হলো, যুদ্ধবাজ, বানর ও শুকরের বংশধর ও কি্রিমিনাল।
স্বাধীন প্যালেস্টাইনের জন্য মিলিটারি যুদ্ধ করতে হবে।
এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধ ও অর্থনৈতিক বয়কট করতে হবে।
ইহুদী ও ইহুদীবাদীদের কোন প্রকার সুযোগ দেয়া যাবে না।
ইহুদীদের মুসলমানদের ভূমি থেকে বিতারণ করতে হবে।
ইহুদীবাদীদের প্যালেস্টাইনে কোন ভূমি নেই।
ফিলিস্তিনের ভূমি ফিলিস্তিনিদের, ইহুদীবাদীদের নয়।
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান (টু স্টেট সলুশন) বা শাস্তি প্রতিষ্ঠা ধোকা ছাড়া কিছু নয়।
ইহুদীরা প্রকৃতগতভাবে শত্রুভাবাপন্ন, ইতিহাসেও তাই দেখা যায়।
ইহুদীবাদীরা জবরদস্তি ছাড়া কোন ভাষা জানে না।
হে মুসলমান ভাইয়েরা, আমরা যেন কখন ভুলে না যাই, আমাদের সন্তান ও নাতিদের ইহুদী, ইহুদীবাদী ও তাদের সমর্থনকারীদের ঘৃণা করতে। তাদের অবশ্যই শিক্ষা দিতে হবে ওদের ঘৃণা করার জন্য। এবং এই শিক্ষা (বংশ পরম্পরা) চালাতে হবে……….. “।