বাংলাদেশে চাঁদ দেখা নিয়ে আগে তেমন গণ্ডগোল দেখি নাই।
কিন্তু ৬ মাস আগে আওয়ামী সরকার নতুন টার্মে এসে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ’কে করার পর থেকে দেখছি চাঁদ নিয়ে নিত্য নতুন গণ্ডগোল লেগেই আছে। ২ মাস আগে তো চাঁদ নিয়ে মানুষকে হাইকোর্টে যেতে দেখেছে দেশবাসী, আর এবার দেখা গেলো ঈদের চাঁদ নিয়ে ভয়ঙ্কর এত তামাশা।
কিন্তু ৬ মাস আগে আওয়ামী সরকার নতুন টার্মে এসে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ’কে করার পর থেকে দেখছি চাঁদ নিয়ে নিত্য নতুন গণ্ডগোল লেগেই আছে। ২ মাস আগে তো চাঁদ নিয়ে মানুষকে হাইকোর্টে যেতে দেখেছে দেশবাসী, আর এবার দেখা গেলো ঈদের চাঁদ নিয়ে ভয়ঙ্কর এত তামাশা।
গতকালকে সোশাল মিডিয়ার কল্যাণ্যে বাংলাদেশ সময় আনুমানিক সন্ধা ৭:৪৫ থেকেই দেখতেছি ফেসবুকে ঘুড়তেছে উত্তরবঙ্গে (কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট) থেকে নাকি চাঁদ দেখা গেছে। আমি ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায়, সেটার সত্য মিথ্যা যাচাই করতে পারি নাই। কিন্তু অবাক লাগছে রাত ৯:০০ টার দিকে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ ঘোষণা দিলো চাঁদ দেখা যায় নাই, বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার ঈদ। আমার ভেতরে তখন খটকা লাগছিলো। যাই হোক, এরপর বাংলাদেশ সময় রাত ১১:০০ টার দিকে দেখি আবার ঘোষণা পরিবর্তন হলো, শেখ আব্দুল্লাহ বললো চাঁদ দেখা গেছে। আমি তৎক্ষণাৎ কুড়িগ্রামে আমার এক বন্ধু ছিলো, তার সাথে যোগাযোগ করলাম, ঘটনা জানার জন্য। ঘটনা জানতে গিয়ে পেলাম এক ভয়ঙ্কর তথ্য। জানতে পারলাম, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার অনেক লোক চাঁদ দেখে এবং তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসে সন্ধার সময় জানায়। কিন্তু তাদের দেয়া তথ্য নাকি শেখ আব্দুল্লাহ গ্রহণ করছে না। তাদের চাঁদ দেখার তথ্যকে উপেক্ষা করেই চাদ না দেখার ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার ঈদের ঘোষণা দেয় শেখ আব্দুল্লাহ। এই খবর টিভিতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী প্রথমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও করে। তাদের ব্যাপক বিক্ষোভ ও তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রশাসনে সর্বত্র বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে সরকারের উধ্র্বতন মহল থেকে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ’র উপর চাপ আসে। তখন শেখ আব্দুল্লাহ’র নেতৃত্বে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি আবার মিটিং এ বসে এবং তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। কালকে রাতে যদি কুড়িগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ব্যাপক বিক্ষোভ ও সরকারি কার্যালয় ঘেরাও না করতো তবে ঈদের দিনও বাংলাদেশের মানুষকে রোজা রাখতে হতো। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে হঠাৎ করে কেনো ছিনিমিনি খেলছে নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ? আর যে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী নিজেই বিশ্বস্ত নয় তার অধীনে ধর্মমন্ত্রনালয় রাখাই বা কতটুকু যুক্তি সংগত ?
গতকালকে বাংলাদেশ সময় রাত ১১:০০ টায় ঈদের চাদ দেখার ঘোষনা দেয়ার সময় সময়টিভি লাইভটা (https://bit.ly/2WKANz2) যদি দেখেন, তবে বুঝবেন, কতটা অনুপযুক্ত ও বদ রাগী একটা লোককে ধর্মমন্ত্রনালয়ের চেয়ারে বসানো হয়েছে। তার বক্তব্যের মধ্যে সমস্যাগুলো হলো-
১) সে কথায় কথায় দেশের বিভিন্ন কমিউনিটির ধর্মীয় নেতা বা আলেমদের কথা নিয়ে আসে। এটা তার একটা চালাকি। সে নিজে ভুল করে, কিন্তু বিভিন্ন পরিচিত আলেমদের নাম বলার মাধ্যমে তার নিজের দোষের সাথে অন্যদের জড়িয়ে ফেলে। মানে নিজে ডুবলে অন্যদেরকে নিয়েও ডুবতে চায়। এমনকি চাদ দেখা নিয়ে ব্যর্থতার দায় সে স্পষ্ট জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। সময় টিভি লাইভে সে স্পষ্ট বলেছে- “এর দায় জনগণ নিবে।
২) সে চাঁদ দেখার কথা বলে, বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা, আলেম ওলামার নাম আনছে । কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আন্ডারে যে জাতীয় চাদ দেখা কমিটিকে সরকারি টাকা দিয়ে রাখা হইছে মাসে ১ বার চাঁদ দেখার জন্য, তারা কতজন কতক্ষণ চাঁদ দেখেছে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কি না, সে বক্তব্য সে এড়িয়ে গেছে।
৩) আমার এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে জেনেছিলাম, বিভিন্ন জেলার ‘জাতীয় চাদ দেখা কমিটি’র অপর নাম নাকি ‘জাতীয় চা খাওয়া কমিটি’। যে দিন চাদ অনুসদ্ধানের কথা, সেই দিন নাকি তারা সবাই রুমের মধ্যে বসে চা-বিস্কুট খায়। আর দারোয়ানকে পাঠায় ছাদে চাদ দেখার জন্য। দারোয়ানও তো তাদের মত ধান্ধাবাজ। সেই ধান্ধাবাজ চাদ খুজলে খুজলো, নাহলে আন্দাজে যেটা বলে সেটাই রিপোর্টে লিখে দেয় চাঁদ দেখা কমিটি। সেই রিপোর্ট নিয়ে দেশের ১৬ কোটি মুসলমান ধর্ম-কর্ম পালন করে। প্রতি মাসে চাঁদ দেখার জন্য তারা ধর্মমন্ত্রনালয় থেকে একটা টাকার খাম পায়, যদিও সেই খামের জন্য তারা কোন পরিশ্রম করে না। এছাড়া প্রত্যেক জেলায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির মূল দায়িত্ব থাকে ডিসি-টিএনও’র। এদের সন্ধার সময় আকাশে চাঁদ খোজার সময় কোথায় ? তারা তাদের অন্যান্য অফিসিয়াল কাজ বা ব্যক্তিগত কাজে তুমুল ব্যস্ত থাকে। এরাও নামকাওয়াস্তে রিপোর্ট দেয়। এদের মধ্যে অনেকে আছে আবার অমুসলিম।
৪) astronomical moon sighting বিভিন্ন ওয়েবসাইটের দেয়া তথ্য মোতাবেক গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখতে পাওয়ার যুক্তিসংগত সম্ভবনা ছিলো। (https://bit.ly/2Z4tU9e) কিন্তু গতকাল বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ব্যতিত দেশের অন্যান্য অঞ্চল ছিলো মেঘাচ্ছন্ন, অনেক এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছিলো। যার কারণে অন্য এলাকার মানুষ চাঁদ দেখতে পায়নি, কিন্তু উত্তরাঞ্চলে মুসলমানরা বেশ সময় ধরে চাঁদ দেখেছে। আর উত্তরাঞ্চলে সূর্য পরে ডুবে, ফলে সেখানে অন্যান্য এলাকার অনেক পরে চাঁদ দেখা যায়। কিন্তু এ আসল কথাটাই ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনতে পেলাম না। তখন বুঝলাম- আসলে এ লোকটা চাঁদ দেখা সম্পর্কে কিছু বুঝেই না।
৫) বাংলাদেশের মানুষ এখন ডিজিটাল হয়ে গেছে। প্রায় সবাই ফেসবুক ব্যবহার করেন। কিন্তু ইসলামীক ফাউন্ডেশনের ফেসবুকে তেমন কোন কার্যক্রম দেখলাম না (https://bit.ly/2MwQSEC)। অথচ অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার চাঁদ দেখার খবর খুব সময়ের মধ্যে নেয়া সহজ ছিলো। তারা গতানুগতিক মান্ধারতার আমলের সিস্টেমে কিছু টিএন্ডটি নাম্বার দিয়ে দায় সারে। ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ‘আহসান ফয়সাল’ নামক এক শিক্ষককে দেখলাম, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তার একজন ছাত্র চাঁদ দেখেছেন। কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফোন বিজি আছে, অথবা ধরতেছে না। যার কারণে কোন খবর জানাতে পারছে না। এক্ষেত্রে আমাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর অবস্থানকে দায়িত্বহীন বলে মনে হয়েছে।
৬) দেশের এমন অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে, যারা হয়ত সরকারের ৯টার চাদ না-দেখার খবর শুনতে পেরেছে, কিন্তু রাত ১১টার সময় চাদ দেখার খবর শুনতে পায়নি। ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর গাফেলতির কারণে অনেকের মধ্যে তাই বিভ্রান্তি তৈরী হওয়া স্বাভাবিক।
আমার মনে হয়েছে, গতকাল ঈদের চাঁদ নিয়ে তামাশা করার ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার দরকার আছে। বিশেষ করে ধর্মমন্ত্রনালয় একটি সেনসেটিভ মন্ত্রনালয়, এ মন্ত্রনালয়ে শেখ আব্দুল্লাহ’র মত অতিবৃদ্ধ, রগচটা ও দায়িত্বহীন লোককে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রাখলে দেশে হঠাৎ করে বড় ধরনের কোন অরাজকতা তৈরী হতে পারে । তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে পদচ্যূত করাই বাঞ্চনীয়।