কয়েকদিন আগে ইউটিউবে একটা নাটক দেখতেছিলাম। এন.সি- ৩১৭

কয়েকদিন আগে ইউটিউবে একটা নাটক দেখতেছিলাম।
Image result for স্প্রিং
কয়েকদিন আগে ইউটিউবে একটা নাটক দেখতেছিলাম।
নাটকের এক দৃশ্যে, প্রাইভেট টিউটরের কাছে কিশোরী ছাত্রী পড়তে বসেছে।
এক পর্যাযে ছাত্রীর ডায়লগটা এরকম-
“ শোনেন স্যার, আপনাকে কেন আনা হয়েছে তা আমি জানি না।
কিন্তু আমি পড়তে পারবো না।
কতবার করে সবাইকে বললাম- আমাকে বিয়ে দাও, বিয়ে দাও
কিন্তু কেউ আমার কথাই শুনে না।
সবার কথা, আগে নাকি আমাকে নিজের পায়ে দাড়াতে হবে
আর এদিকে, আমি যে পরী হয়ে যাচ্ছি, এটা কারো মাথায় নেই
উফ !”
বাস্তবে কোন ছাত্রী তার শিক্ষকের সাথে এভাবে কথা বলে কি না, তার সত্যতা আমি যাচাই করতে পারিনি।
কিন্তু ছাত্রীটি যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটা কিন্তু একদম বাস্তব।
আপনি বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুলগুলোতে যান, ফাইভ, সিক্স, সেভেন এর ছাত্রীদের সাথে কথা বলেন।
আমি নিশ্চিত এরকম বহু মেয়ে পেয়ে যাবেন।
কোন মেয়ে যখন এ স্টেজে আসে,
তখন গার্জিয়ানরা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে।
তখন তাকে তুলনা করা যায়, রাত্রে হঠাৎ পাখা গজিয়ে ওঠা পীপিলিকা বা উইপোকার মত।
যে আলো দেখলেই ঝাঁপ দিতে চায়, এক্ষেত্রে তাকে বেশিক্ষণ আটকে রাখা অসম্ভব ।
সেহেতু বাবা-মা সন্তানের সর্বোত্তম স্বার্থটাই চায়,
ঝাপ দেয়ার স্থানটা যেন সামাজিকভাবে বৈধ বা ‘বিয়ে করা স্বামী’ হয় সেটা তারা খেয়াল রাখার চেষ্টা করে।
আমি জানি, আমার এ কথায় অনেকে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখতে পারেন
হয়ত বলবেন- “আমি নারী জাতিকে হেয় করছি, নারীকে কিভাবে উপরে উঠানো যায় সে চিন্তা করছি না।”
আমি তাদেরকে বলবো- দয়া করে মহাকাশে ভেসে ভেসে চিন্তা করবেন না।
বাস্তবতার নিরীখে চিন্তা করুন।
নারী-পুরুষ সমান বলে মাঠে নারীদের ক্রিকেট খেলতে নামিয়েছেন ভালো কথা,
কিন্তু পুরুষ ক্রিকেটে যত দর্শক হয়,নারী ক্রিকেটে তত দর্শক হয় না কেন ?
নারীদের গ্রাউন্ড সীমানা ছোট কেন ?
নারী ক্রিকেটের ২-৪ মিনিট হাইলাইট দেখতেও আপনি হাপিয়ে যান কেন ?
নারীদের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, ক্যাচ ধরার দৃশ্য দেখে মাঝে মাঝে নিজেই মুচকি হেসে উঠেন কেন ?
এটাই হলো বাস্তবতা, আপনি মুখে মুখে যত নারী-পুরুষ সমান বলে শ্লোগান দেন
বাস্তবে নারী-পুরুষ কতটা সমান তা নারী ক্রিকেট দেখলেই বোঝা যায়।
কাউকে সমান অধিকার দেয়া মানে, তার যতটুকু অধিকার তাকে ততটুকু দেয়া।
পিপড়া আর হাতির সমান অধিকার দাবী করে যদি, পিপড়া আর হাতিকে সমান খাবার দেয়া হয়, তবে তা দুইজনের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
কারণ দুইজনকে সমান খাবার দিলে, হয় একজন না খেতে পেয়ে মারা যাবে, অথবা অন্যজন খাবারের নিচে চাপা পরে মরে যাবে।
হয়ত, বলতে পারেন- তবে কি নারীদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে না ?
নারীদের শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে না।
অবশ্যই ভাবতে হবে। তবে সাথে আপনাদের মত আলগা বুদ্ধির লোকেদেরও মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।
হাতের ৫ আঙ্গুল যেমন সমান নয়, ঠিক তেমনি সমাজের ৫টা মেয়ে সবাই সমান হবে না।
সবাইকে এক থিউরীতে, মানে বিয়ে আটকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার বুদ্ধি করবেন
এটা কারো জন্য লাভের থেকে ক্ষতির কারণ হবে।
সমাজে সব ধরনের মানুষ থাকবে এটাই বাস্তবতা।
তাই সমাজে এমন নিয়ম বা আইন থাকবে, যা সবার জন্য যায়।
কিন্তু আজকাল আমাদের সমাজে তথাকথিত আধুনিক বুদ্ধিজীবিদের চিন্তাধারাগুলো স্বৈরতান্ত্রিক
তারা নিজেরা যতটুকু কুয়ার মধ্যে চিন্তা করে, সবার উপর সেটাই চাপিয়ে দিতে চায়।
কিন্তু তারা বুঝতেই চায় না, তার কুয়োর বাইরেও অনেক মানুষ থাকে, তাদের জীবন ধারা থাকে।
সমাজে বহু কোয়ালিটি নারী থাকতে পারে।
এদের কেউ উচ্চ শিক্ষিত হবে,
কেউ স্বল্প শিক্ষিত হবে,
কেউ ভালো গৃহিনী হবে,
কেউ ভালো ব্যবসায়ী/চাকুরীজীবি হবে।
আপনাকে যার যার হিসেব বুঝে সুযোগ করে দিতে হবে।
কিন্তু আপনি বিয়ে আটকে অন্যগুলোর সুযোগ করে দিলে,
সমাজে একটা বড় শ্রেণীর নারীকে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত করবেন।
আপনি মুখে বলছেন, আপনি নারীর ভালো চান,
কিন্তু সবাইকে এক সিস্টেমে বাধতে গিয়ে আপনি কোন একটা শ্রেণীর নারীর ক্ষতি করছেন, এটা আপনাকে মানতে হবে।
এক্ষেত্রে আমাদের বুদ্ধিজীবি শ্রেণীরও মানসিকতা পরিবর্তন জরুরী।
তারা যেমন- বাঙালীত্ব আর সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্ম ইসলামকে পরষ্পর মুখোমুখি করে দিয়েছে।
কেউ বাঙালী হলে মুসলিম হতে পারবে না, আর মুসলিম হলে বাঙালী হতে পারবে না।
ঠিক একইভাবে তারা প্রচার করছে- কেউ বিয়ে করলে শিক্ষিত হতে পারবে না, আর শিক্ষিত হতে চাইলে বিয়ে করতে পারবে না। এভাবে তারা বিয়ে আর শিক্ষাকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছে।
এ ধরনের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরী।
বিয়ে করলেই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে, এ ধারণাটা অবশ্যই ভুল।
বাংলাদেশে বহু নারী আছে, যারা বিয়ের পরও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করছে।
এটা অবশ্যই তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও চেষ্টার ফসল।
আবার অনেক শিক্ষিত নারী আছে, যারা বিয়ে করে স্বামী-সন্তান নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের পড়ালেখার ব্যবহারিক কোন উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে কথিত বুদ্ধিজীবিদের দৃষ্টিতে তারাও তো অকর্মা।
তাহলে উপায় কি ?
বিয়ে, ঘর, সংসার বন্ধ করে দেন। তাহলেই সমাধান।
আসলে, মানুষের জীবনে প্রতিটি ইভেন্ট-ই গুরুত্বপূর্ণ।
সেটা লেখাপড়া হোক, বিয়ে হোক, সন্তান হোক।
আপনি যদি কোন বিবাহিত নারীকে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টের কথা জিজ্ঞেস করেন,
আমি নিশ্চিত অধিকাংশ বলবে- তার স্বামী-সন্তান নিয়ে ঘর সংসার তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট।
কিন্তু আপনি অমুক-তমুক অজুহাত দিয়ে নারীর বিয়ের বয়সে হস্তক্ষেপ করে
তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টকে সংক্ষিপ্ত করে দিচ্ছেন।
তার মা’ হওয়ার সময়কে সংক্ষিপ্ত করে দিচ্ছেন,
তার সন্তানের সংখ্যাকে সংক্ষিপ্ত করে দিচ্ছেন
স্বামীর সাথে অবস্থানের সময়কে সংক্ষিপ্ত করে দিচ্ছেন
একটা মেয়ে নারীত্বের অনুভব করছে ৯ বছরে
আপনি তাকে বিয়েতে বাধ্য করছেন ১৮ পর্যন্ত টানতে, সার্টিফিকেট এইজে ১৮ হচ্ছে ২০ বছর।
এরপর সেই বয়স অনেকের পৌছে যাচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ বছর।
হাসপাতালগুলোতে যোগাযোগ করুণ, দেখবেন তারা বলবে- বর্তমানে অনেক দম্পত্তির বাচ্চা হচ্ছে না, দেরিতে বিয়ে হওয়ার কারণে। আপনাদের উস্কানিতে বহু মেয়ে মা হতে পারছে না, এর থেকে বড় দুঃখের আর কি হতে পারে ?
অন্যদিকে
পুরুষ হোক আর মহিলা হোক, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তার মনটা কিন্তু আর ভার্জিন থাকে না।
কারো না কারো সাথে লেনদেন হয়ে যায়।
এর প্রভাব পরে গিয়ে বিবাহিত জীবনে। মুখে যতই বলেন- “তোমার এক্স গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে কথা তুলবো না” কিন্তু এক পর্যায়ে কথা কিন্তু উঠেই যায়। এরপর শুরু হয় সন্দেহ, সংসারে অশান্তি, অনেক ক্ষেত্রে ডিভোর্স। এক্ষেত্রেও কম বয়সে বিয়ে অনেক বড় সমাধান।
হয়ত বলবেন, ৯ বছর বয়সে কি একটা মেয়ে ঘর, সংসার বা শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে ম্যাচিউরড হয়?
ঐ যে বললাম- সবাইকে এক পাল্লায় মাপবেন না।
কেউ হয় না, আবার কেউ কেউ হয়।
শহরে ২৫ বছরের ছেলে মেয়ে মায়ের হাতে ভাত খায়।
আবার গ্রামের ৮-৯ বছরের ছেলে-মেয়ে সংসারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে।
তাই সবাইকে এক পাল্লায় মাপা কখনই সঠিক নয়।
“ছেলে-মেয়েকে কম বয়সেই বিয়ে দিতে হবে”- আমি এ বক্তব্যের পক্ষে নই।
কিন্তু কারো কারো কম বয়সে বিয়ে প্রয়োজন হতে পারে।
এটাই বহুমাত্রিক সমাজের বাস্তবতা, এটা আপনাকে মেনে নিতেই হবে।
সেক্ষেত্রে একজন গার্জিয়ান সবচেয়ে ভালো বুঝবে, তার সন্তানের জন্য কোনটা ভালো।
কিন্তু সেখানে আইন করে, ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে তাদের জেলে পাঠাবেন,
এটা কখনই সঠিক নয়, বরং স্বৈরতান্ত্রিক এগুয়ে আচরণ, কূপমণ্ডুক মানসিকতা,
যাদের সমাজের সকল অংশ সম্পর্কে ধারণা নাই, যারা সমাজের সকল অংশ সম্পর্কে অজ্ঞ
তারাই এধরনের আইনকে সমাজের উপর চাপিয়ে দিতে পারে। এরা কখনই সমাজের জন্য ভালো নয়, বরং সমাজের জন্য ক্ষতির কারণ।