গতকাল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট দলকে হারায়।
এতে অনেকে ক্রিকেট নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে।
তবে আমার মনে হয়েছে, খোদ দক্ষিণ আফ্রিকা নামক রাষ্ট্রটিকে নিয়েই আমাদের অনেক আলোচনা করার দরকার আছে। এই রাষ্ট্রটি নিয়ে আলোচনার মধ্যে আমাদের অনেক শিক্ষনীয় বিষয় আছে। আমার পাঠক শ্রেণীর মধ্যে অনেকে দক্ষিণ আফ্রিকা রাষ্ট্রটি সম্পর্কে আমার থেকে ভালো জ্ঞাত থাকতে পারেন, অথবা খোদ দক্ষিণ আফ্রিকাতেই প্রবাসী হিসেবে থাকতে পারেন। তাদেরকেও অনুরোধ করবো, আমার আলোচনার মধ্যে কোন ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন এবং নিজেরাও বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করবেন।
এতে অনেকে ক্রিকেট নিয়ে বিভিন্ন পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে।
তবে আমার মনে হয়েছে, খোদ দক্ষিণ আফ্রিকা নামক রাষ্ট্রটিকে নিয়েই আমাদের অনেক আলোচনা করার দরকার আছে। এই রাষ্ট্রটি নিয়ে আলোচনার মধ্যে আমাদের অনেক শিক্ষনীয় বিষয় আছে। আমার পাঠক শ্রেণীর মধ্যে অনেকে দক্ষিণ আফ্রিকা রাষ্ট্রটি সম্পর্কে আমার থেকে ভালো জ্ঞাত থাকতে পারেন, অথবা খোদ দক্ষিণ আফ্রিকাতেই প্রবাসী হিসেবে থাকতে পারেন। তাদেরকেও অনুরোধ করবো, আমার আলোচনার মধ্যে কোন ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন এবং নিজেরাও বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭০ লক্ষ। দেশটির জনগণ কয়েকটি জাতিতে বিভক্ত-
১) শেতাঙ্গ : এদের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮%, কিন্তু এরাই দেশটির এলিট ক্লাস, ধনী শ্রেণী। এরা দেশের মূল সুবিধা ভোগ করে। এরা দেশটির আদিবাসী নয়, ইউরোপ থেকে আগত। ডাচ ও ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে এদের পূর্বপুরুষদের আগমন। দেশটির অধিকাংশ সম্পদ তাদের হাতে রয়েছে।
২) কৃষ্ণাঙ্গ : দেশটির মোট জনসংখ্যার তারা প্রায় ৮০%, এরাই দেশের মূ্ল আদিবাসী। এরা এলিট ক্লাস মানে শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা নির্যাতিত ও নিপীড়িত। এরা চরম দরিদ্র হয়। এদের মধ্যে ৬৩% হচ্ছে চরম দরিদ্র শ্রেনীর নিচে বাস করে। দেশের মোট কৃষি জমির মাত্র ৮% এর মালিক তারা।
৩) মিশ্র: শেতাঙ্গরা প্রায় ৩শ’ বছরের বেশি থাকার কারণে কৃষ্ণাঙ্গ ও শেতাঙ্গের মিশ্রণের ফলে এই মিশ্র জাতির তৈরী। জনসংখ্যায় এদের পরিমাণ ৯% এর মত।
৪) এশিয়ান: ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে থেকে এদের আগমন। জনসংখ্যায় এদের পরিমাণ ২.৫% এর মত।
ছোটবেলায় যখন দক্ষিণ আফ্রিকার নাম শুনেছিলাম, তখন সেটা শুনেছিলাম নেলসন মান্ডেলার নামের সাথে। তাকে খুব মহান নেতা বলে প্রচার করা হতো। শ্বেতাঙ্গরা এক সময় কালোদের উপর খুব নির্যাতন করতো, তার কারণে নাকি সেই বর্ণবাদের অবসান ঘটে। এজন্য তাকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়।
তখন এ কথাগুলো শুনে খুব বিশ্বাস করতাম, কিন্তু এখন লেনসন ম্যান্ডেলার মাধ্যমে আসলে কতটুকু বর্ণবাদ দূর হয়েছে, সেটা হিসেব করার দরকার। যেহেতু ক্রিকেট খেলার কথা এসেছে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট টিম নিয়ে আলোচনা করলে মূল বিষয়টি খোলাসা হবে, প্রকৃতপক্ষে দেশটিতে কতটুকু বর্ণবাদ দূর হয়েছে। যেমন- বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট টিমে ১১ জন খেললে, তার মধ্যে ৫ জন হতে হবে শ্বেতাঙ্গ (তারা মূল জনংসংখ্যার ৮%), কৃষ্ণাঙ্গ হতে হবে ২ জন (যদিও তারা মূল জনসংখ্যার ৮০%), মিশ্র ও বিদেশী থেকে হবে বাকি ৪ জন।
অনেকের মতে, লেনসন ম্যান্ডেলা নাকি একজন বিশ্বাসঘাতক। কৃষ্ণাঙ্গরা প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদেশী শ্বেতাঙ্গদের হাত থেকে মুক্তি পায়নি। কিন্তু ম্যান্ডেলা কথিত বর্ণবাদের অবসানের নাম দিয়ে আসলে স্বগোত্রীয় কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। তাদের বহুদিন ধরে তৈরী হওয়া মুক্তি আন্দোলনকে স্থিমিত করে দেয়। লেনসন ম্যান্ডেলার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে দেশটির প্রকৃত স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে, পশ্চিমাদের স্বার্থের পক্ষে কাজ করার পুরস্কার স্বরূপ তাকে নোবেল দেয়া হয়, দেশের প্রধান করা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে আমি ধারবাহিক লিখবো বলে চিন্তা করেছি। এই দেশটি থেকে বাংলাদেশীদের অনেক কিছু শেখার আছে। আপাতত এই লেখা থেকে সমাজে তৈরী হওয়া এলিট ক্লাস সম্পর্কে শেখার দরকার আছে, যাদের দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠদের শাসন ও নিপীড়ন করে সম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী- এই বিষয়টি বুঝার দরকার। এছাড়া পশ্চিমারা এমন কিছু সেলিব্রেটি তৈরী করে, যাদের মিডিয়ার মাধ্যমে খুব হাইলাইট করা হয়। কিন্তু এরা জাতীয়ভাবে বেঈমান প্রকৃতির হয়, এদেরকেও চেনার দরকার আছে।
তবে বর্তমান বাংলাদেশীদের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গবেষণার সবচেয়ে বেশি দরকার কর্পোরেটোক্রেসি সম্পর্কে বুঝতে। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা হচ্ছে কর্পোরেটোক্রেসির সবচেয়ে ভালো ও প্রকৃষ্ট উদাহরণ । দক্ষিণ আফ্রিকার সিস্টেমরা বুঝতে পারলেই বাংলাদেশে কর্পোরেটোক্রেসির আগমন বুঝা একদম সোজা হয়ে যাবে।