বাজেট নিয়ে খণ্ড খণ্ড আলোচনা করবো, আগেই বলেছিলাম,। এন.সি- ৩০৬

বাজেট নিয়ে খণ্ড খণ্ড আলোচনা করবো, আগেই বলেছিলাম,
বাজেট নিয়ে খণ্ড খণ্ড আলোচনা করবো, আগেই বলেছিলাম,
বাজেটের বিষয়গুলো সহজে বুঝতে গেলে, কিছু সহজ উদহারণের প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে, আমরা দেশকে একটি পরিবারের সাথে তুলনা করতে পারি,
সরকারকে তুলনা করতে পারি বাবা’র সাথে, আর জনগণকে তুলনা করতে পারি স্ত্রী-সন্তানের সাথে।
Image result for স্প্রিংএকজন বাবা তার পরিবার ( স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে)- কে ১ মাস চালাবে।
এক্ষেত্রে বাবা কি করবে ?
প্রথমে ইনকাম করবে, তারপর সেই টাকা ছেলে-মেয়ের পেছনে খরচ করবে।
হ্যা, কোন ছেলে-মেয়ে যদি সাবলম্বী হয়, তবে সে সংসারের খরচে অংশগ্রহণ করবে।
কিন্তু শুধু স্ত্রী-সন্তানরাই ইনকাম করবে, আর বাবা খরচ করবে, এমনটা কিন্তু হয় না।
হতে পারে। কিন্তু তখন বাবা আর কর্মক্ষম বাবা থাকে না, অবসরে চলে যায়।
কিন্তু যদি এমন হয়, স্ত্রী-সন্তানরা ইনকাম করবে, আর বাবা মনমত খরচ করবে, ইচ্ছামত টাকা উড়াবে, শুধু তাই না, বাইরে থেকে ধার-কর্জ করেও টাকা উড়াবে, আর সেই ঋণ স্ত্রী-সন্তানদের উপর চাপিয়ে দিবে।
ছোটবেলায় হুমায়ুন আহমেদের লেখা আর নওয়াজীশ আলী খানের পরিচালনায় ‘জননী’ নামের একটা নাটক দেখেছিলাম। নাটকের ঘটনা ছিলো- স্ত্রী (ডলি জহুর) ও সন্তান (একজন শাওন) খুব কষ্ট করে সংসার চালায়, সন্তানরা ছাগল পালে, হাস-মুরগী পালে। কিন্তু বাবা (আসাদুজ্জামান নূর) হয় উড়নচণ্ডি। মুখে সারা দিন বড় বড় চেতনার (জ্ঞানের কথা) কথা বলে। কিন্তু কোন কাজ করে না, স্ত্রী-সন্তানদের ঘাড়ের উপর বসে বসে খায়। আর রাতের বেলায় নাচ-গান আর মজমাস্তিতে করে।
কিন্তু মজমাস্তি করতে আরো টাকা দরকার। তখন সন্তানদের লালন করা ছাগল চুরি করে বিক্রি করে, স্ত্রীর বহু কষ্টে জমানো টাকা চুরি করতে চায়। স্ত্রী-সন্তানদের সামান্য সাহায্য করা তো দূরের কথা, কিভাবে তাদের সম্পদ লুটে নিয়ে মোজমাস্তি করবে, সেই ধান্ধায় থাকে।
বর্তমান বাজেট একটু খেয়াল করুন, নাটকের সাথে পুরোপুরি মিলে যাবে।
বাজেটের আয়ের মাত্র ২টি অংশ। প্রথমটি জনগণের থেকে আদায় করা হচ্ছে ট্যাক্স/ভ্যাট/মাসুল, অপরদিকে দেশ-বিদেশ থেকে সুদে ঋণ। যা পরবর্তীতে চাপানো হচ্ছে জনগণের উপরেই। যেখানে বাজেটে শুধু সুদ পরিশোধ হচ্ছে মোট বাজেটের ১০ ভাগের ১ ভাগ।
অপদিকে বাজেটের প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ, প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতা আর পেনশন। এই যে ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারির উপর (মোট জনংসংখ্যার মাত্র ০.৭%) প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা ১ বছরে ব্যয় হবে এর আউটপুট কি ? এর ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আর্থিকভাবে কত রিটার্ন আসতেছে ?
যেমন ধরুন, টিএন্ডটি, টেলিটক। এর পেছনে তো জনগণ টাকা দিচ্ছে, কিন্তু এর বার্ষিক লাভ কত ?
আবার ধরেন বিটিভি। এ বছর তার পেছনে ব্যয় ২ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।
কিন্তু এর আউটপুট কি ? বিভিন্ন প্রাইভেট টিভিগুলোতো ঠিকই সব খরচ দিয়ে লাভ করছে,
তাহলে বিটিভির পেছনে যে জনগণের ২ হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট হলো,
এর দ্বারা জনগণের কোন লাভ না হোক, অন্তত বিটিভির কর্মকর্তা কর্মচারি বেতনের টাকাটা অন্তত আসুক।
সরকারি মালিকানায় অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, জমি আছে, পুকুর আছে, গাছ আছে। সেগুলো নিয়ে এদিক-সেদিক না করে যদি প্রকৃত ব্যবহার করা যায়, তবে সেখান থেকেও প্রচুর ইনকাম করা সম্ভব।
আমার কথা হলো, ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিকে ইনকাম করে ১৮ কোটি জনগণকে খাওয়াতে হবে না, তাদের ইনকাম দিয়ে অন্তত তাদের বেতন-ভাতা-পেনশন টুকু আসুক। তাহলে বাজেটের ২০% অন্তত বেচে যাবে।
আমার মনে হয়, সরকার নিজেই জানে না, তার কাজটা কি ?
এ কারণে সরকারী লোকজন বেকুবের মত বলছে, “কে দিয়েছে মোবাইল ?”
অথচ সে বুঝতেছে না, এটা বৈশ্বিক প্রযুক্তির বিষ্ফোরণের ফসল। আফ্রিকার সবচেয়ে অনুন্নত দেশের জনগণেরও হাতে হাতে মোবাইল থাকে। এর পেছনে সরকার বা কারো ক্রেডিট নাই।
কিন্তু নিজের অর্জন জানে না বলেই, আরেক জনের ক্রেডিট নিজের নামে চালিয়ে হাসির পাত্র হচ্ছে।
সরকারী অফিসে কাজ করা পাঠকরা মাইন্ড করতে পারেন,
কিন্তু সত্যিই বলতে আমি সরকারী অফিসগুলোতে কোন কাজ দেখি না।
সারাদিন গল্প-গুজব, নির্বাচন নিয়ে কথা, কোন মতে হাজিরা দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়া। অথচ তাদের থেকে আপনি কোন সার্ভিস নিতে যান, আপনার সাথে এমন ব্যবহার করবে, মনে হবে দুনিয়াতে তার থেকে ব্যস্ত মানুষ আর দুইটা নাই।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমন অনেক বিএডিসি কর্মকর্তাকে চিনি, যারা মাসে ১ দিন অফিস করেও বেতন নেন। আমি এমনও সরকারি ভার্সিটির শিক্ষককে চিনি, যে ২ বছর ধরে বিদেশে ডিগ্রির কথা বলে গেছেন, সেখানে গিয়ে আলাদা ইনকাম করতেছেন, সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্দেশ্যে ডিগ্রি। কিন্তু সরকারি বেতন কিন্তু একমাসেও মিস হয় নাই। জেলা-উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেটদের কাজ কি ? সারাদিন কিছু দাওয়াত খাওয়া, সপ্তাহে দুই-চারটা বাল্যবিয়ে বন্ধ করা। ব্যস।
অন্যদিকে সরকার প্রতি বছর উন্নয়নে চালচিত্র প্রকাশ করতে স্টেডিয়ামে জনগনের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আতশবাজি পোড়ায়, অথচ এই আতশবাজি দিয়ে মজমাস্তির খরচ কেন জনগণ বহন করবে ?
প্রধানমন্ত্রী-প্রেসিডেন্ট-সেতুমন্ত্রী থেকে শুরু করে অধিকাংশ সরকারী লোকজন জনগণের অর্থ দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেন, কিন্তু সেই জনগণ সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পান না।
যাগগে, কথা বললে, অনেক বেড়ে যাবে। আমার কথা হলো-
বাজেটে সরকারের ইনকাম কত, সেটা আলাদা করে দেখানো উচিত।
সরকারি খরচে সরকারী ব্যয় মিটছে কি না, সেটা স্পষ্ট করা জরুরী।
এছাড়া, খনিজ সম্পদ থেকে সরকারের ইনকাম কত সেটা আলাদা করা দরকার।
সরকার তরল গ্যাস আমদানি করে সেই পাহাড়সম ঋণ জনগণের উপর চাপায় দিচ্ছে,
অথচ বাংলাদেশে অনেক গ্যাসের খনি আবিষ্কার হলেও অদৃশ্য কারণে সরকার সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করতেছে না।
আবার বিদেশী রাষ্ট্রকে ট্রানজিট বা করিডর দেয়ার মধ্যে সরকারের অদ্ভূত আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। সরকারের ভাষ্য “বন্ধু রাষ্ট্র থেকে ট্রানজিট মাসুল নেই কিভাবে?”, অথচ বন্ধুরাষ্ট্রের বড় বড় লরিগুলো জনগণের টাকায় বানানো রাস্তার উপর দিয়ে চলে রাস্তার বারোটা বাজাচ্ছে। উল্লেখ্য পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র ট্র্যানজিট/করিডর দিয়ে আজ ধণী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ কিছুই করতে পারতেছে না।
যা হওয়ার হয়ে গেছে, তবে এখন সরকার জনগণের টাকায় পদ্মা সেতু-পায়রা গভীর সমুদ্রসহ বিভিন্ন প্রকল্প বানিয়ে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের সাথে এবং চট্টগ্রাম গভীর সমুদ্র বন্দর-রাজশাহী আন্তর্জাতিক নৌ বন্দর বানিয়ে ভারতকে নৌ করিডোরের রাস্তা করে দিচ্ছে। দুই বড় রাষ্ট্র যাদের সমন্বিত জনসংখ্যা পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক, তারা বাংলাদেশের উপর দিয়ে ব্যবসা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এখন বাংলাদেশের জনগণের তো ওদের ট্রানজিট করিডোরের ফি উপর ভর করে পায়ের উপর পা তুলে খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথা ছিলো, কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টো দেশের জনগণের বাজার খরচে আগুন ধরে গেছে।
মূল কথা হলো, বাজেটের যে খরচ, সেটা শুধু কেন জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে ?
সরকারের বাজেটে অবদান কতটুকু সেটা আগে স্পষ্ট করা উচিত।
অন্যের টাকায় মজমাস্তি করা সোজা, কিন্তু সরকার যখন নিজে ইনকাম করবে এবং সেখান থেকে নিজের খরচ বহন করবে, তখন সে হিসেব করেই খরচ করবে। তাছাড়া নিজে যখন সে ব্যয়কারী না হয়েও উৎপাদকও হবে, তখন সে উৎপাদন কি সেটা বুঝবে এবং উৎপাদন বান্ধব হবে। তখন দেশের উন্নতি হবে, এর আগে না।