পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে একজন বাঙালী শ্রমিক মারা গেছে,। এন.সি- ৩০৮

পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে একজন বাঙালী শ্রমিক মারা গেছে,
Image result for স্প্রিং
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে একজন বাঙালী শ্রমিক মারা গেছে,
“সেই শ্রমিককে নাকি চাইনিজ শ্রমিকরা গুম করতে চাইছিলো”,
এই খবর ছড়িয়ে পরার পর সব বাঙালী শ্রমিক একসাথে চাইনিজদের উপর হামলা করছে, ভাংচুর করছে।
চাইনিজ-বাঙালী সংঘর্ষে দুই পক্ষের অনেকে আহত এবং ১ চাইনিজ নিহত হইছে।
মোটামুটি এতটুকু খবর সব মিডিয়ায় আসছে। তবে এখানে আরো খবর হইলো-
প্রথম যে শ্রমিকটা মারা যায়, সে একজন হিন্দু শ্রমিক ছিলো, যার নাম সাবিন্দ্র দাস।
তার বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এবং সে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পার্মানেন্ট কেউ না,
হবিগঞ্জে সে বাড়ি বাড়ি গ্যাসের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতো, তাকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে বয়লারের কাজ করানোর জন্য আনা হয়। এবং সে একজন গোড়া হিন্দু হিসেবেই পরিচিত ছিলো।
কালেরকণ্ঠ নিউজ করেছে, শ্রমিক মৃত্যুর পর গুজব ছড়ানো হয় এবং সেই গুজব থেকেই দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মিডিয়াতে প্রকাশ- গুজবটি ছিলো দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুর পর তার লাশ গুম করতে চেয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ।(https://bit.ly/2WTupkS)
তবে গুজবের বিস্তৃতি যে আরো বেশি ছিলো, তা বোঝা যায় সময় নিউজের লাইভ শুনলে। সেখানে একজন বাঙালী বলছে, (০০:৫৫ এর সময়) ঐ হিন্দু শ্রমিককে চীনারা লাথি মেরে নিচে ফেলে হত্যা করছে, এই খবর তার কানে আসছে। (https://bit.ly/2FjX0Ks)
তবে এত এত টাকা ইনভেস্ট করে, চাইনিজরা একটা সামান্য হিন্দু শ্রমিক মেরে কি ফায়দা নিবে, কিংবা কেনই বা তাদের প্রজেক্ট হুমকির মুখে ফেলবে, সেটার ক্যালকুলেশন মেলানো যাচ্ছে না।
এ কারণেই অনুধাবন করার যায়, হিন্দু শ্রমিক মৃত্যুর পর সেখানে কোন একটি বিশেষ মহল গুজব রটিয়ে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করেছে। কথা হলো ঐ বিশেষ মহলটি আসলে কে ??
এখানে জানার প্রয়োজন-
১. পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কোন বিচ্ছিন্ন প্রজেক্ট নয়, বরং পায়রা সমুদ্রবন্দরের একটি অংশ হিসেবে বলা হয়। যে পায়রায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ পেয়েছে চীন। তবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর চীনের স্ট্রিং অব পালর্স বা মুক্তার মালা পলিসির অংশ হিসেবে তৈরী হচ্ছে।
২. গত ৩রা এপ্রিলের খরব- ভারতীয় মিডিয়া এএনআই একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়, যার শিরোনাম ছিলো- “পায়রা বন্দরের দখল নিতে পারে চীন”। প্রতিবেদনে বলা হয়- চীনের রাষ্টায়ত্ত দুই প্রতিষ্ঠান চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ইতিমধ্যে পায়রা বন্দরের মূল কাঠামোসহ স্থাপনা নির্মাণে ৬০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করেছে।..... পায়রা বন্দরকে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। বলা হয়, পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরের পর শ্রীলংকার হাম্বানটোটা এবং পায়রা বন্দরের দখলের মাধ্যমে নেকলেস আকৃতিতে ভারতকে ঘিরে ফেলতে চায় চীন। উপস্থিতি বাড়াতে চায় বঙ্গোপসাগরে। চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল চীনের ওয়ানবেল্ট ওয়ানবেল্ট উদ্যোগে যোগ দেয়া দেশগুলোর সম্মেলন হবে। এএনআই’র দাবি, এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে চীন।” (https://bit.ly/2RqW9MBhttps://bit.ly/2IqPhfj)
৩. লক্ষণীয় চীনের মুক্তারমালা পলিসি বিস্তারে বাংলাদেশের পায়রা সমুদ্রবন্দরে চীনের ইনভেস্টমেন্টের ঘোর বিরোধী ভারত। এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রীকে ভারতে ডেকে নিয়ে নিয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ভারতকে দিতে বলে দিল্লী। তারা বলে বাংলাদেশ যেন চীনের মুক্তারমালার সাথে যুক্ত না হয়ে ভারতের ‘সাগরমালা’ প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়। (https://bit.ly/2MYxNvk)
৪. আসলে বঙ্গপোসাগরে চীনা পলিসির বিপরীতের ভারতের এত চিৎকার পেছনে আসলে ভারত নেই, আছে আমেরিকা। চীনকে সামাল দিতে ভারত এখানে আমেরিকার আঞ্চলিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। এই তো ৫ দিন আগেও খবর আসলো- বঙ্গপোসাগরে চীনের উত্থান ঠেকাতে বাংলাদেশসহ ৩টি দেশে ইনভেস্টের জন্য কংগ্রেসের কাছে ৩০ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে ট্র্যাম্প। (https://bit.ly/2WO9TlS)
৫. পুরো ঘটনা অবলোকনে আমার কাছে মনে হয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে হিন্দু শ্রমিকের মৃত্যুর পর গুজব রটানো ও সংঘর্ষের ঘটনার সাথে চীনকে দমাতে ভারত-আমেরিকার নীতির কোন যোগসূত্র থাকতে পারে।
তাহলে কি আমরা বাংলাদেশকে চীনের ঋণের ফাঁদে ফেলানোর পরিকল্পনার বিরোধীতা করবো না ?
অবশ্যই করবো, তবে সেটা শুধু চীনের ক্ষেত্রে নয়, বরং চীন, জাপান, ভারত, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইডিবি, আমেরিকাসহ সবার করবো, তাহলেই ব্যালেন্স রক্ষা হবে।
আসলে একটা একটু জানিয়ে রাখা দরকার, আওয়ামী সরকার পায়রা সমুদ্র বন্দর দিচ্ছে চীনকে, আর চট্টগ্রাম গভীর সমুদ্রবন্দর দিচ্ছে ভারতকে। এখানে আওয়ামী সরকার চীন ও ভারতের মধ্যে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করেছে। মূলত: চীন পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং বাংলাদেশে আরো ১০টি বড় বড় প্রকল্প করতেছে মুক্তার মালা ও ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভ) পলিসির অংশ হিসেবে। (https://bit.ly/2WVf1cQ)
অপরদিকে ভারত চট্টগ্রাম গভীর সমুদ্রবন্দর, নৌ-রুটগুলো খনন, পুরান ঢাকার ব্যবসা শেষ করে বুড়িগঙ্গার তীরে পর্যটন স্পট বানানো এবং রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক নৌ বন্দর করতেছে চীনকে সামাল দিতে আমেরিকার পিভট ট্যু এশিয়া ও ভারতের লুট ইস্ট পলিসির অংশ হিসেবে।
এখন কথা হলো, এই যে বাংলাদেশে এত বড় বড় বিদেশী প্রকল্প হচ্ছে, এগুলোর কোনটার টাকা কিন্তু বিদেশীরা ফ্রি দিচ্ছে না। বরং তারা বাকিতে মালামাল ও শ্রম দিয়ে প্রজেক্টগুলো করে দিচ্ছে, এবং বছর বছর তার খরচ সুদে আসলে জনগণকে (বাজেট থেকে) পরিশোধ করতে হচ্ছে।
আমার কথা হলো, এত বড় বড় প্রজেক্ট তো আমাদের দেশের জনগণের এখন দরকার নাই, দরকার হলো আমেরিকা-চীন-ভারতের। তাদের স্বার্থে দ্রুত এসব প্রজেক্ট তৈরী করা হচ্ছে, কিন্তু তার খরচ বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে। অথচ সেই খরচ ও খেয়াল যদি ওদের প্রজেক্টের পেছনে ব্যয় না করে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থনীতির উৎপাদনশীল খাতগুলোর পেছনে দেয়া যেতো, তবে বাংলাদেশকে বহুগুনে উন্নতি করা সম্ভব ছিলো। অথচ, তাদের প্রয়োজনে তাদের বানানোর প্রজেক্টগুলোর সুদ-আসলে খরচ মেটাতে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের মানুষের জীবন ব্যয় বেড়ে চলেছে।, নষ্ট হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেসরকারী খাত, বেকার ও দরিদ্র হয়ে পড়ছে অসংখ্য মানুষ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৭ বছর হয়ে গেছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, শিক্ষা-দীক্ষা এতটুকু ছিলো যে আমরা নিজেরাই চেষ্টা করলে স্বতন্ত্র শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারতাম। কিন্তু বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী আর্থিক লোভ আর যে কারণেই হোক চীন-আমেরিকার দ্বন্দ্বের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। দেশের উৎপাদনশীলতার দিকে খেয়াল না দিয়ে বিদেশীদের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে চলেছে। আমি আজ থেকে দুই বছর আগে বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম- আমেরিকা-চীনের প্রক্সি ওয়ার জোন হিসেব ব্যবহৃত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে আমেরিকা-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ যত শক্ত হচ্ছে, বিষয়টি তত স্পষ্ট হতে চলেছে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের উপর আমেরিকা-চীনের সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্বের বিষয়টি যদি সঠিকভাবে সামাল না দেয়া যায় এবং বাংলাদেশের যদি স্বতন্ত্র অবস্থান না থাকে, তবে বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মত ধ্বংসস্তুপে (সেটা অর্থনৈতিকভাবেও হতে পারে) পরিণত হতে সময় লাগবে না।