দক্ষিণ আফ্রিকায় যে সব বাংলাদেশী কাজ করেন, তারা সব সময় কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ থাকেন।এন.সি- ৩২৭

দক্ষিণ আফ্রিকায় যে সব বাংলাদেশী কাজ করেন, তারা সব সময় কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ থাকেন।
Image result for স্প্রিংদক্ষিণ আফ্রিকায় যে সব বাংলাদেশী কাজ করেন, তারা সব সময় কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ থাকেন। ঐ দেশে ব্যবসা করতে গিয়ে নিয়মিত খুন ও মারের শিকার হতে হয় তাদের।
একটি দেশের জনগোষ্ঠীটিকে যখন দেশী এলিট ক্লাস ও বিদেশীরা একযোগে শোষণ করে, সম্পত্তি, চাকুরী, ব্যবসা কেড়ে নেয়, তখন দীর্ঘদিন নিপীড়িত হওয়ার পর তারা হিংস্র হয়ে যায়, তারা অপরকে শত্রু মনে করে। মাদক ব্যবসা, খুন, ডাকাতি, চুরি, মারামারি, পতিতাবৃত্তি তাদের জন্য স্বাভাবিক হয়ে যায়। আপনাদের মনে থাকার কথা, পুরান ঢাকায় যখন প্ল্যাস্টিক কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছিলো, তখন আমি এ কথাটাই বলেছিলাম। বলেছিলাম, এই প্লাস্টিক কারখানাগুলো বন্ধ হলে, এর সাথে জড়িত একটি শ্রেণী চুরি-ছিনতাইযে নেমে পড়বে। কোন দেশে যখন কর্পোরেটোক্রেসি বাস্তবায়ন হয় তখন মূল জনগোষ্ঠী এলিট ক্লাস ও বিদেশীদের দ্বারা নিপীড়িত হয়ে অন্য জনগোষ্ঠীগুলো অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে, এটাই স্বাভাবিক।
দক্ষিণ আফ্রিকা চরম শ্রেণীর দারিদ্রতা হচ্ছে ৫৫% জনগোষ্ঠীর মধ্যে। কালোদের মধ্যে এর পরিমাণ ৬৩% এবং সাদাদের মধ্যে দারিদ্রতা মাত্র ১%। দেশটিতে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। দেশটিতে অফিসিয়ালী বেকারত্বের হার ২৫% এর উপরে। দেশটির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে কষ্ঠের বিষয় হলো মুদ্রাষ্ফীতি। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত দেশটির মুদ্রার দাম হ্রাস পাচ্ছে, ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশের কালোরা দরিদ্র হলেও জিডিপি বিবেচনা করলে অনেক ধনী রাষ্ট্র থেকেও ধনী হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৭ সালে দেশটির ডিজিপি ছিলো ৩৫০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের থেকে জিডিপি ১০০ বিলিয়ন বেশি। দেশটির ঘাড়ে রয়েছে প্রচুর বৈদেশিক ঋণ। ২০১৮ সালে দেশটির নোমিনাল জিডিপির অর্ধেক ছিলো বৈদেশিক ঋণ।
জনগণের মধ্যে দরিদ্রতা থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকা সম্পদের প্রাচুর্যতায় ভরপুর। দক্ষিণ আফ্রিকাতে রয়েছে বিশাল বিশাল ৭টি হিরার খনি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিরার খনি ‘দ্য কিম্বার্লি মাইন’ দক্ষিণ আফ্রিকাতে অবস্থিত। খনিটি আপাতত বন্ধ হলেও একটা সময় তোলা হয়েছে প্রচুর পরিমানে হিরা। দক্ষিণ আফ্রিকার এই হিরার উৎসগুলো থেকে একচেটিয়ে ব্যবসা করে ব্রিটিশ কোম্পানি ডি বিয়ার্স। ডি বিয়ার্সের উপরে আছে Anglo American plc নামক কোম্পানি, যা প্রতিষ্ঠা করে Ernest Oppenheimer নামক এক জার্মানির ইহুদী। এই কোম্পানিতে আবার ফিনানসিয়াল ব্যাকিং আছে মার্কিন ইহুদী আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগানের।
শুধু হিরা নয়, আমেরিকান সার্ভের মত হলো, পৃথিবীর ৫০% স্বর্ণের উৎস হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এটাও অ্যাংলো-ডি বিয়ার্সরা কন্ট্রোল করে, এখানেও লাভবান হয় আফ্রিকান ইহুদী ব্যবসায়ী Harry Oppenheimer , যে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনীদের একজন।
স্বর্ণ ছাড়াও আছে প্লাটিনাম। ২০০৫ দেশটিতে থেকে বিশ্বের মোট প্লাটিনাম উৎপাদনের ৭৮% এসেছিলো। এছাড়া পৃথিবীর দ্বিতীয় ইউরোনিয়ামের মজুদ হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। দেশটি থেকে প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়াম উত্তোলন করা হয়। দেশটির সকল খনীগুলোই হলো বড় বড় আন্তর্জাতিক কর্পোরেটদের ঘাটি।
দক্ষিণ আফ্রিকা খুব খেলাপাগল জাতি। পৃথিবীর মাত্র ৪টি দেশ আছে, যারা একসাথে তিনটি বড় খেলার বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণ করে। দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের মধ্যে একজন যে একইসাথে ফুটবল, ক্রিকেট ও রাগবী বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণ করে। শুধু অংশগ্রহণ নয়, বড় আয়োজনগুলোর ভেন্যুও সে হয়। যেমন- ১৯৯৫ সালে রাগবী বিশ্বকাপ, ২০০৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ২০০৭ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ, ২০১০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়।
দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যটনের দিক থেকে খুব এগিয়ে। দেশটির শহর- জোহান্সবার্গ, কেপটাউন, ডারবান আন্তর্জতিকভাবে পর্যটনের জন্য বিখ্যাত। বিশাল বিশাল বিলাসবহুল হোটেল আর রিসোর্টের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি টুরিস্ট আসে, আমেরিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, জার্মানি ও ব্রিটেন থেকে।
পতিতাবৃত্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাপক পরিচিত। দেশটির জনগোষ্ঠী অতি দরিদ্র হওয়ায় কারণে দেশটির মূল নিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মেয়ে পতিতাবৃত্তির পথ বেছে নেয়। সরকারী হিসেবেই নিবন্ধকৃত পতিতার সংখ্যা মোট নারীর ১০ ভাগের ১ ভাগ। নিবন্ধনহীন পতিতার সংখ্যা আরো বেশি। শুধু দেশী পতিতা নয়, পর্যটকদের আগমণের কারণে আশেপাশের দেশগুলো থেকেও প্রচুর পরিমাণে পতিতা দেশটিতে আশ্রয় নেয়। আপনাদের মনে থাকার কথা, ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় মিডিয়ায় এসেছিলো, দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিফা বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে ৪০ হাজার বিদেশী পতিতার আগমন ঘটবে। উল্লেখ্য দেশটিতে সাড়ে ৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৫ লক্ষ জনগণ হলো এইচআইভি পজিটিভ। পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ ধর্ষণ সংগঠিত হওয়ার রাষ্ট্রও হলো দক্ষিণ্ আফ্রিকা।
আমি আগেই বলেছি, কর্পোরেটোক্রেসির সবচেয়ে ভালো উদহারণ হলো দক্ষিণ আফ্রিকা। কর্পোরেটোক্রেসি কিভাবে কর্পোরেটদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য একটি সমৃদ্ধশালী জাতিকে ধ্বংস করে দেয় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বুঝতে হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে স্ট্যাডি করলে সব বের হয়ে যাবে।
দেশের সম্পদ পাচার,
দেশের জনগণকে দুইভাগে ভাগ করা, এলিট ক্লাস দিয়ে সাধারণ জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করা।
দেশের সম্পদ নিয়ে যেতে বিদেশী মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিদের ডেকে নিয়ে আসা।
দেশের দুর্নীতিবাজ শাসক বিদেশীদের কর্পোরেটদের সাথে যোগাযোগ রাখা
ভূমি ও সম্পত্তির মালিকানা এলিট ক্লাস ও বিদেশীদের হাতে রাখা।
কাজীর গরু খাতায় থাকবে, গোয়ালয়ে থাকবে না। জিডিপি অনেক বেশি কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ খুবই গরীব।
দেশকে খেলাপাগল করা, সারাদিন খেলায় মত্ত থাকা।
দেশকে পর্যটন নির্ভর করা, বিদেশীদের কর্পোরেটদের আসা যাওয়া ও থাকার জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ করে দেয়া।
জনগনকে দরিদ্র করে অপরাধের দিকে ঢেলে দেয়া,
পুরুষরা হবে সন্ত্রাসী, নারীরা হবে পতিতা।
ধর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া
আমার দেয়া তথ্যগুলো আমি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে নিয়েছি, কিন্তু কিছু রেফারেন্স আছে অ্যানালাইসিস ভিত্তিক। তবে খুব বেশি তথ্য এদিক-সেদিক হবে না।
আমরা দক্ষিণ্ আফ্রিকার সাথে ক্রিকেটে জিতে গেছি, এটা ঠিক। এজন্য হয়ত খুশি হয়েছেন। কিন্তু দেশটিকে নিয়ে পর্যালোচনা করলে বুঝবেন, আমাদেরকেও কিন্তু তাদের পথে হাটানো হচ্ছে। সুতরাং ভবিষ্যত বাংলাদেশ কোন পথের দিকে যাচ্ছে সেটাও এখান থেকে অনুমান করা সম্ভব।