রেল দুর্ঘটনার খবর দেখতেই আমার চিন্তায় আসলো মেট্রোরেলের কথা। এন.সি-৩০৪

রেল দুর্ঘটনার খবর দেখতেই আমার চিন্তায় আসলো মেট্রোরেলের কথা।
Image result for স্প্রিংরেল দুর্ঘটনার খবর দেখতেই আমার চিন্তায় আসলো মেট্রোরেলের কথা।
আজকে যদি রেল দুর্ঘটনা না হয়ে মেট্রোরেল দুর্ঘটনা হতো, তবে কত জন মারা যেতো ?
গতকালকের রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৫ জন (কারো কারো মতে ২০ জন), আহত হইছে ৩শ’।
রেলের বগি ১০-১৫ ফুট নিচে খালে পরে গেছে, তাই এই দুর্ঘটনা।
কিনতু আজকে যদি মেট্রোরেলের একটা বগি পরে যায়, তখন ?
এক বগিতে যাত্রী থাকবে কম করে ৪-৫শ’ লোক।
আর বগি পরবে ৫-৭ তলা উচু ফ্লাইওভার থেকে।
আর বগি তো একা থাকে না, ৬টা এক সাথে থাকে,
প্রায় ১৭শ’ লোক যদি, ফ্লাইওভার থেকে বগিসহ পড়ে যায়, তখন দুর্ঘটনাটা কতটা ভয়াবহ হবে ?
একবার চিন্তা করেছেন ?
ভারতের গত কয়েকবছরে বেশ কয়েকটি মেট্রোরেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশেও যে সেকরম ঘটনা ঘটবে না, তা তো বলা যায় না।
আমি শুধু একটা জিনিস চিন্তা করি,
বাংলাদেশ রেলওয়ে একটা আলাদা মন্ত্রনালয়, প্রতিষ্ঠা হয়েছে প্রায় দেড়শ’ বছর।
স্ট্যাফ সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।
এর পরেও রেলওয়ে দৈনিক পরিবহন করে মাত্র আড়াই লক্ষ যাত্রী।
সেখানে মেট্রোরেল কিভাবে দৈনিক ৭ লক্ষ ২০ হাজার যাত্রী পরিবহণ করবে ? (ঘণ্টায় ৬০ হাজার ধরে ১২ ঘণ্টা)।
সে পরিমাণ সক্ষমতা কি আদৌ হবে ?
আজকে ১টা ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত ছিলো দেখে ট্রেন পড়ে গেছে।
কিন্তু মেট্রোরেলের লাইনগুলোতো প্রতিদিন চেক করতে হবে, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সে ধরনের চেক করবে কি না ?
দুর্ঘটনার পর রেলমন্ত্রী যাত্রীদের দোষ দিয়ে বলছে, যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠে, তাই দুর্ঘটনা্।
পাঠক ! মেট্রোরেল যখন ঢাকার মধ্যে চলবে তখন ঘন্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করবে, অনেক হুড়োহুড়ি হবে, সেই হুড়োহুড়ি সামাল দেয়ার মত সক্ষমতা কর্তৃপক্ষের আছে কি না ?
যারা রেলে চড়েন, তারা ভালো বলতে পারবেন, রেল স্টেশনগুলোর কতটা করুণ অবস্থা।
কমলাপুর কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে নাই কোন শিডিউল, নাই কোন ভালো ব্যবস্থা।
এক কমলাপুর রেল স্টেশন চালাতে যদি এত সমস্যা হয়,
তবে মেট্রোরেলের জন্য ঢাকার ভেতরে ১৬টি স্টেশন লাগবে, সেই স্টেশন চালানোর মত যোগ্যতা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের আছে কি না ?
১৬টি স্টেশনের সিড়ি দিয়ে যে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার লোক উঠানামা করবে, হুড়োহুড়ি করবে, তারা যেন দুঘটনায় পতিত না হয়, সে জন্য প্রটেকশন সরকার দিবে কি না ?
মেট্রোরেল কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন একটা সিস্টেম, যা আগে কখন বাংলাদেশে ছিলো না।
অপরদিকে ট্রেন/বাস অনেক পুরাতন জিনিস, যা বহুদিন যাবত বাংলাদেশে চলে আসতেছে।
এরপরও মাঝে মাঝে খবর আসে, রেলে বগি ফেলে রাখায় নষ্ট হচ্ছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ।
একইভাবে বিআরটিসি বাসগুলোও অযত্নে ফেলে রাখতে রাখতে অনেকগুলো পরিত্যাক্ত হয়ে গেছে।
বাস/রেলের মত বিষয় যদি সরকার পরিচালনা না করতে পারে, তবে মেট্রোরেল চালানোর স্বপ্ন কতটুকু বাস্তব হবে ?
হয়ত বলতে পারেন, আরে ভাই এত ভুল ধরেন কেন ?
সরকার একটা নতুন জিনিস দিচ্ছে, এই তো বেশি ?
না ভাই, সরকার দিচ্ছে না। ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল তৈরী হচ্ছে, এটা সরকারী টাকা না, এই টাকা আমাকে আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে।
যেহেতু আমার টাকায় একটা প্রকল্প হচ্ছে, তাই ১টা জিনিস দাম দিয়ে কিনলে যেমন আগে আমরা যেমন যাচাই বাছাই করে নেই, আসলে উপকার হবে, না ফালতু খরচ হবে, সেটা বুঝার চেষ্টা করি,
ঠিক তেমনি আমার টাকায় একটা মেট্রোরেল হবে, সেটা কি আদৌ বাস্তব সম্মত কি না, আমার উপকার হবে কি না ? টাকা উসুল হবে তো ?
এসব চিন্তা করে সেটা কেনা উচিত। নয়ত পুরো টাকাটাই পানিতে পড়বে।
ফিজিবিলিটি স্টাডি বা আর্থিক সমীক্ষা :
একটু চিন্তা করুন- মেট্রোরেলের খরচ ২২ হাজার কোটি টাকা, প্রতিদিন সব খরচ, সুদ, মেইনটেইনেন্স বাদে শুধু লাভ করতে হবে ৩ কোটি টাকা। তাহলে ২২ বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা উঠবে।
ধরে নিলাম, মূল টাকা, সুদ এবং মেইনটেইনেন্স খরচ ও স্ট্যাফ খরচ দিয়ে দৈনিক আয় করতে হবে ৭ কোটি টাকা।
এখন দৈনিক যাত্রী যদি ৭ লক্ষ হয়, তবে প্রতি যাত্রীর থেকে অবশ্যই ১০০ টাকা নিতে হবে, এর নিচে নেওয়া যাবে না।
অর্থাৎ মেট্রোরেলে উঠলেই ভাড়া হবে নিম্নপক্ষে ১০০ টাকা, দূরত্ব ভেদে আরো বাড়বে।
অর্থাৎ একজন যাত্রী যে দূরত্ব বাসে গেলে ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা বা সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দিয়ে যেতে পারে,
সেটা মেট্রোরেলে যেতে হলে তাকে কমপক্ষে ১০০ টাকা গুনতে হবে।
অর্থাৎ মেট্রোরেলে ভাড়া হবে খুবই উচ্চ। এবং পর্যাপ্ত যাত্রী যেন মেট্রোরেলে উঠে, সে জন্য কর্তৃপক্ষ কৌশলের আশ্রয় নিবে।
তারা হানিফ ফ্লাইওভারের দুই পাশের রাস্তার মত রাস্তা কেটে সরু রাখবে, যেন যাত্রীরা বাধ্য হয়ে মেট্রোরেলে উঠে। প্রয়োজনে ঐ রূট থেকে বাস নিষিদ্ধ হলেও অস্বাভাবিক কিছু থাকবে না।
মেট্রোরেল বেসরকারি হবে, না সরকারী ?
পাঠক ! দুর্ঘটনা আর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করলে মেট্রোরেলের দায়িত্ব বেসরকারী সংস্থার হাতেই দিতে হবে।
কিন্তু সমস্যা হবে, সেক্ষেত্রে ভাড়া হবে উচ্চ।
অপরদিকে যদি সরকার নিজের দায়িত্বে রাখে, তবে আমার দৃষ্টিতে মেট্রোরেল একটি আনন্দ ভ্রমণ পরিবহণের পরিণত হবে।
অধিকাংশ সময় সমস্যা, কারিগরি ত্রুটি নিয়ে এটি ঘণ্টায় ৬০ হাজার কেন, দিনেও ৬ হাজার যাত্রী পরিবহণ করতে পারবে না। দিনে সর্বোচ্চ দুইটা রেল যাইতে পারে। মাঝখান দিয়ে রাস্তা সরু করে এতগুলো বড় বড় পিলার জনগণের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হবে।
এক্ষেত্রে সরকার খরচ না তুলতে পেরে ২২ হাজার কোটি টাকা, সুদ এবং বাৎসরিক মেইনটেনেন্স বাবদ হাজার কোটি টাকা ব্যয় জনগণের উপর চাপিয়ে দিবে, যা বাজেটের মাধ্যমে হয়ে জনগণের ট্যাক্স অথবা টাকা ছাপিয়ে মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে জনগণের দৈনন্দিন বাজার খরচ থেকে কেটে নেয়া হবে।
ক্ষতিসমূহ-
ক) মেট্রেরেল বানানোর সময় চরম ভোগান্তি,
খ) অসহনীয় যানজট,
গ) ধূলাবালিতে রোগ-ব্যধি
ঘ) বানানোর পর রাস্তা সরু হয়ে যাওয়া,
ঙ) অসম্ভব বেশি ভাড়া,
চ) খরচ তোলার জন্য, পরিবহণ সেক্টরে অরাজকতা,
ছ) বানানোর উচ্চমূল্য ঋণ হিসেবে জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া, জনগণের দৈনন্দিন খরচ অসম্ভব বৃদ্ধি পাওয়া।
সোজা ভাষায়, যত আশা দিয়ে অতি ব্যয়বহুল এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, তার সিকি ভাগও এ থেকে আদায় হবে না। উল্টো এটা জনগণের উপর মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়াবে।
তবে এটা ঠিক, কিছু হলেও লাভ হবে, প্রেমিক-প্রেমিকার জুটির। তারা ১-২শ’ টাকা খরচ করে কয়েক ঘণ্টা রোলার কোস্টারের আনন্দ পাবে, আর গান গাইবে, “হাওয়া মে উড়তা যায়ে, মেরা লাল দোপাট্টা...মল মল কা হো জি...হো জি।”