মানুষের ঠাণ্ডা-সর্দি-জ্বর কেন হয় ?
সাধারণত মানুষের ঠান্ডা-সর্দি-জ্বর বলতে আমরা যা বুঝি সেটা হয় বিভিন্ন ভাইরাসের কারণে। এর জন্য দায়ী প্রায় ২০০ ভাইরাস বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পেরেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো –
১. রাইনো ভাইরাস : ১০-৪০% ঠাণ্ডা-জ্বর-সর্দির জন্য দায়ী এই রাইনো ভাইরাসের টাইপসমূহ।
২. করোনা ভাইরাস : ২০% ঠাণ্ডা-জ্বর-সর্দির জন্য দায়ী করোনা ভাইরাস। এর ৩০ এর বেশি সদস্য বা টাইপ আছে। তবে এর মধ্যে ৩-৪টি মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে।
৩. আরভিএস ও প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা : ২০% ঠাণ্ডা-জ্বর-সর্দির জন্য দায়ী এদের টাইপ সূমহ।
এ কথাগুলো বললাম- কারণ মানুষের সাধারণ ঠাণ্ডা-সর্দি-জ্বরের জন্য অনেক আগে থেকে দায়ী হচ্ছে এই করোনা ভাইরাস। এটা নতুন কিছু না। তবে প্রতি বছর বছর সে নতুন স্ট্রেইন চেঞ্জ করে নতুন রূপে/টাইপে আসে এবং আমাদের ঠাণ্ডা-সর্দি-জ্বর ঘটায়।
এ বছর আমরা করোনা ভাইরাস বলতে যে কোভিড-১৯ এর কথা শুনছি, এটা কিন্তু নতুন কিছু না। বরং সেই পুরাতন করোনা ভাইরাসের একটা নতুন টাইপ।
কথা হচ্ছে- একটা মুরগী, কতটুকু পরিবর্তন হতে পারে ? সর্বোচ্চ সাধারণ মুরগী থেকে আচিল মুরগী (ফাইট করতে পারে) হতে পারে।
কিন্তু মুরগী থেকে নিশ্চয়ই বাঘ হয়ে যায় না।
একইভাবে মানুষ হয়ত চীনা মানুষ থেকে আফ্রিকান মানুষ হইতে পারে। কিন্তু মানুষ পরিবর্তন হয়ে নিশ্চয়ই হাতি হয়ে না।
ঠিক তেমনি স্বাভাবিক ঠাণ্ডা-জ্বর-সর্দির জন্যা দায়ী করোনা ভাইরাস যতটুকু মিউটেশন হোক, সেটা তো করোনা ভাইরাসই থাকবে, তা তো আর এইডস ভাইরাস হয়ে যাবে না নিশ্চয়ই। তাহলে এই ভাইরাস নিয়ে হঠাৎ করে এত আতঙ্ক তৈরী কেন ?
হয়ত কেউ কেউ বলতে পারেন-
“আপনি করোনা ভাইরাসকে খুব স্বাভাবিক ভাইরাস বলতে চাইছেন,
কিন্তু এই করোনার মধ্যে কিন্তু সার্স, মার্স ভাইরাস আছে, যাদের মৃত্যুহার অনেক বেশি।
আর কোভিড-১৯ কে তো সার্স-কোব-২ বা সার্স ভাইরাসের দ্বিতীয় ভার্সন বলা হয়।”
আসলে যারা এ ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন, তাদেরকে বলছি,
এক্ষেত্রেও আগে আপনাকে আক্রান্ত আর সনাক্তের পার্থক্য বুঝতে হবে।
সার্স ভাইরাসে সনাক্ত হওয়া প্রায় ৮ হাজার লোকের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিলো ৭৭৪ জনের, অর্থাৎ সনাক্তের মধ্যে মৃত্যুহার ৯%।
মার্স ভাইরাসে সনাক্ত হওয়া প্রায় ২ হাজার লোকের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিলো ৬০০ জনের, অর্থাৎ সনাক্তের মধ্যে মৃত্যুহার ৩০%।
কথা হচ্ছে, ২০০৩ সালে চীনে কিংবা ২০১২ সালে মিডল ইস্টে আবির্ভাব ঘটা করোনা ভাইরাসের সেই সময় কতটুকু টেস্ট করা হয়েছিলো সেটা সন্দেহজনক। যদি সনাক্তের উপর ভর না করে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা বের করা যেতো (এন্টিবডি টেস্ট করে) তবে দেখা যেতো সেক্ষেত্রে মৃত্যুহার অনেক কমে আসতো। স্বাভাবিক করোনা ভাইরাসের তুলনায় নিশ্চয়ই খুব বেশি হতো না।
মূল কথা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস নতুন কিছু নয়, বরং চিরাচরিত ঠাণ্ডা-সর্দি-জ্বর বলতে আমরা যা বুঝি, করোনা ভাইরাস সেটাই। হয়ত তার কোন কোন টাইপ কিছুটা মারাত্মক হতে পারে। কিন্তু এরমানে এই নয়, সেটা এত ভয়ঙ্কর কিছু হয়ে যাবে, যার জন্য সবাইকে কাজ-কর্ম বন্ধ করে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে হবে। যদি তা করতেই হয়, তবে প্রতি বছরই তা করতে হবে, ৩৬৫ দিনই করতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাস পরিবেশে আগেও ছিলো, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।