আসলে সাধারণ মানুষ সব সময় সব কিছুকে তার নিজের মত করে কল্পনা করে।
ভাবে, আমি যেমন সাধারণ, সবাই বোধ হয় আমার মতই সাধারণ।
কিন্তু যারা এ বিশ্বে বড় বড় পদে বসে সব নিয়ন্ত্রণ করছে, তারা কিন্তু সাধারণ নয়,
এবং তারা ব্যতিক্রম বলেই আমার-আপনার মত সাধারণ মানুষগুলোকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এই বড় বড় পদে বসে থাকা লোকগুলো নানান বুদ্ধি আটে সাধারণ মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য,
যা সাধারণ মানুষের চিন্তার বাইরে।
আপনারা বিভিন্ন সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিটেক শব্দটার সাথে পরিচিত হয়েছেন নিশ্চয়ই।
অনেকেই বলে সিন্ডিকেট বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু সিন্ডিকেট জিনিসটা কি, এটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না।
আসলে সিন্ডিকেট হচ্ছে কোন একটি গ্রুপ বা সমষ্টি যারা বিভিন্ন স্তর থেকে একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।
আমি বিভিন্ন সময় আান্তর্জাতিক রাজনীতি বুঝাতে যে ‘ব্লক’ শব্দটা ব্যবহার করি,
এরাও একটি বড় সিন্ডিকেট, যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্তর থেকে কাজ করতে পারে ।
সিন্ডিকেট কিভাবে মানুষকে ধোকা দিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে সেটা বোঝার একটা গল্প যথার্থ, গল্পটা আগে পড়ে নেই আসুন-
গল্পের নাম- দশ চক্রে ভগবান ভুত-
এক হিন্দু ঠাকুর (মন্দিরের পুরোহিত) হাট থেকে পাঠা (বিশেষ প্রকৃতির পুরুষ ছাগল) কিনে বাড়ি ফিরছিলো। পথে তিন ঠগ (জচ্চুর) বিষয়টি লক্ষ্য করলো।
এক ঠগ বললো : “আয়! ঠাকুরের পাঠাখানা আমরা বগলদাবা করি।”
কিন্তু কি করা যাবে ??
তিন জনে ফন্দি এটে ফেললো। এবার রাস্তার তিন অংশে তিন জন দাড়িয়ে রইলো।
ঠাকুর রাস্তা দিয়ে পাঠা নিয়ে আসছে, এমন সময় রাস্তা আটকে দাড়ালো এক ঠগ। প্রথমেই মাথা ঠুকে প্রণাম জানালো ঠাকুরকে।
এরপর বললো : ঠাকুর ! কুকুর নিয়ে কোথায় চললেন ?
ঠাকুরের তো ঠগের কথা শুনে আক্কেল গুড়ুম ! বলে কি চ্যাংড়া ! “আরে চোখের কি মাথা খেয়েছো ?? কুকুর পেলে কৈ ? আমি তো পাঠা কিনে আনলাম।”
কথা শুনে হেসে মাটিতে লুটোপুটি খেতে থাকলো ঠগ।
বললো : ঠাকুর আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, আমি দেখছি কুকুর, আর আপনি দেখছেন পাঠা। যাকগে সেটা আপনার ব্যাপার। আমি চললাম। এ বলে, প্রথম ঠগ চলে গেলো।
এরপর ঠাকুর ফের রাস্তা দিয়ে হাটা শুরু করলো। এমন সময় ২য় ঠগ রাস্তা আটকে দাড়ালো এবং যথারীতি প্রণাম ঠুকলো। বললো : “মহাশয় ! কোথায় চললেন ?”
ঠাকুর বললো : “দেখছো না পাঠা নিয়ে যাচ্ছি”।
২য় ঠগ বললো : কি বকছেন আবোল-তাবোল !! যাচ্ছেন কুকুর নিয়ে, আর বলছেন কি না পাঠা নিয়ে যাচ্ছেন ? আপনি কি চোখে ভুল দেখছেন??
ঠাকুর তো এবার সত্যি মহাচিন্তায় পরে গেলো। দু’হাত দিয়ে চোখ কচলে বললো: “না আমি ভুল দেখছি না, ঠিকই দেখছি। আমি পাঠা-ই কিনেছি, কুকুর নয়”।
২য় ঠগ বললো : সেটা আপনার ব্যাপার। আমি যা সত্য তাই বললাম। আপনি কুকুরকে পাঠা মনে করলে আমি কি করবো ?” এ বলে ২য় ঠগও চলে গেলো।
এরপর চিন্তিত ঠাকুর ফের রাস্তা ধরলো । এবার রাস্তা আটকে দাড়ালো ৩য় ঠগ। এবারও যথারীতি প্রণাম ঠুকে দিলো এবং বললো : “ঠাকুর মশাই কুকুর নিয়ে কোথায় চললেন?”
এ কথা শুনে ঠাকুর মাথা চুলকাতে থাকলো। বললো : “ না মানে...., না মানে..., আমি তো বাজার থেকে পাঠা কিনেই আনলাম, কিন্তু সবাই কেন যে কুকুর বলছে, বুঝে উঠতে পারছি না”
ঠগ বললো: “ কি যে বলেন মশাই ! কুকুর কি কখন পাঠা হয় ??”
ঠগ ঠাকুরের হাত থেকে পাঠার দড়ি নিয়ে ছেড়ে দিয়ে বললো : দূর! কুকুরটাকে ছেড়ে দিন তো।”
ঠাকুর ভাবলো, সত্যিই মনে হয় তার কোথাও ভুল হয়েছে, সে মনে হয়, কুকুরকে পাঠা ভেবে কিনে এনেছে, তাই পাঠা ফেলেই সে রওনা দিলো। এ সুযোগে তিন ঠগ পাঠা পেয়ে তো মহাখুশি, তাদের মিশন সাকসেস ফুল।
অর্থ্যাৎ ১০ চক্রে ভগবান শেষে ভুত হয়ে গেলো ।
বিশ্বনিয়ন্ত্রণকারী এই সিন্ডিকেট বলেন বা ব্লক বলেন, তাদের কাজটাও ঐ ঠগদের মত। অর্থাৎ তারা বিভিন্ন স্থানে দাড়িয়ে থেকে মানুষকে ধোকা দিয়ে সেই ফাদে পা দিতে বাধ্য করছে। করোনা নিয়ে একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন। বিশ্বের বড় বড় ভ্যাকসিন কোম্পানি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন মিডিয়া, টকশোওয়ালা, কথিত বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিক সবাই মিলে একটা সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। সবাই যার যার অবস্থান থেকে করোনাকে একটা ভয়ঙ্কর কিছু বলে প্রচার করে যাচ্ছে। কিন্তু রসুনের গোড়া যেমন এক, তেমনি এদের সবার গোড়া এক। একটা স্থান থেকে এবং একই স্বার্থে সবাই পরিচালিত হচ্ছে। ঠগ যেমন ঠাকুরকে ধোকা দিয়ে ছাগলকে কুকুর বানিয়ে ফেলেছে। তেমনি এরা বিভিন্ন সেক্টর থেকে একই কথা প্রচার করে সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বর-সর্দির করোনাকে বাঘ বানিয়ে ফেলেছে। তারপর নিজেই লকডাউন-সোশ্যাল ডিসটেন্স টাইপের জন-বিধ্বংসী পলিসি সমাধাণ হিসেবে চাপিয়ে দিচ্ছে।
মিডিয়া তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকায়, তারা তাদের বিরুদ্ধে খবরগুলো তারা সেন্সর করে ফেলে এবং তাদের পক্ষে ১% খরব পাইলে সেটা ১০০% জুম করে দেখায় জনগণকে বিভ্রান্ত করে। এদের মূল উদ্দেশ্য জনগণের শক্তিকে ধ্বংস করে তাদের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্ষমতা ও অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য যদি বহু মানুষকে জীবন দিতে হয়, তবে তাদের কোন সমস্যা নেই। তাদের ক্ষমতা ও টাকা চাই।
কথা হচ্ছে- জনগণ যদি ভয় না পায়, তবে তাদেরকে টাকা দিবে কেন ? আর জনগণের যদি নিজস্ব অর্থনৈতিক শক্তি থাকে, তবে তারা ওদের কাছে মাথা নত করবে কেন ? তাই জনগণের অর্থনৈতিক শক্তি গুড়িয়ে দিতে, তাদের টাকা পয়সা কেড়ে নিতেই আতঙ্ক তৈরীর পলিসি।
কিন্তু সমস্যা হলো- সাধারণ মানুষ সিন্ডিকেট জিনিসটা বুঝতে পারে না। মিডিয়া, বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন যায়গা থেকে এক কথা শুনলে ঠাকুরের মত ধোকা খায়। ছাগলকে কুকুর ভেবে বসে। মানুষ যতক্ষণ এসব সিন্ডেকেট চিন্তা চেতনা থেকে বের হয়ে না আসবে, ততক্ষণ তাদের উত্তরণের কোন পথ নেই।