আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত আছে,


tSc5p sonestorhMaeayd 
আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত আছে,
তাদের সাথে কথা বলে আমি করোনা সম্পর্কে যতটুকু জ্ঞান লাভ করেছি,
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে করোনা হলো সাধারণ ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা (সিজনাল জ্বর, সর্দি, ঠাণ্ডা) গোছের একটি রোগ, কিন্তু এর থেকে বেশি কিছু না।
গতকাল কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ এর নেতৃত্বে থাকা চিকিৎসক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সাক্ষাতকার পড়েও একই কথা জানলাম। তিনিও বলছেন- “‘কোভিড-১৯ রোগটি কিন্তু নরমাল ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা ফ্লুর মতো একটি রোগ।” (https://bit.ly/2YBgWTm)
আমার ধারণা, যারা কোভিড-১৯ হওয়ার পর খারাপ পরিস্থিতি হচ্ছে কিংবা মারা যাচ্ছে, সম্ভবত তারা সেকেন্ডারী কোন ইনফেকশনের শিকার। সেটা কোন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। যেমন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত নিউমোনিয়া কিংবা টাইফয়েড। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আমাদের অতি দৃষ্টি যেহেতু কোভিড-১৯ এর দিকে, তাই ক্ষতিটা হচ্ছে সেখানেই। কারণ আমাদের ভাইরাস আক্রমণের থেকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ অনেক শক্তিশালী ও প্রাণঘাতি। এবং ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে অনেক দ্রুত রোগীর অবস্থা খারাপ হয় এবং মৃত্যু ঘটে। ফলে এদের দ্রুত চিকিৎসা দরকার। দ্রুত অবজারভেশন ও মেডিকেশনের দরকার। কিন্তু আমাদের সবার অতি দৃষ্টি যেহেতু করোনার দিকে এবং সেখানে অতি আতঙ্ক থাকায়, সেকেন্ডারী ইনফেকশনের ক্রিটিকাল রোগীগুলো চিকিৎসা পাচ্ছে না, ফলে তাদের মৃত্যু ঘটছে। অথচ সামান্য এন্টিবায়োটিক প্রয়োগে এই রোগীগুলোকে বাচানো সম্ভব ছিলো। কিন্তু আমরা করোনার টেস্ট ও রেজাল্ট নিতেই ৫-৭ দিন ব্যয় করে ফেলছি, ফলে রোগীরা চলে যাচ্ছে ক্রিটিকাল কন্ডিশনে।
অনেকে ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু এর মহামারীর কথা বলে। আমি ঐ সময়কার একটা ইতিহাস পড়ে জেনেছিলাম, ঐ সময় স্প্যানিশ ফ্লু ভাইরাসের যত না মৃত্যু হয়েছে, তার থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে সেকেন্ডারী ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে। ঐ সময় মাত্র এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়েছে এবং অত উন্নতও হয়নি। ফলে ঐ রোগীগুলো ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে মারা যায় বেশি ।
আসলে আমরা সাধারণ জনগণ ভাইরাসকে বেশি ভয় পাই, কিন্তু আমাদের বেশি ভয় পাওয়া উচিত ছিলো ব্যকটেরিয়াকে। কারণ ভাইরাস অসুখগুলো ভুগায় বেশি, কিন্তু মৃত্যু কম। কিন্তু ব্যাকটেরিয়াল অসুখগুলো ভুগায় কম, কিন্তু দ্রুত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য ভাইরাসের কিন্তু নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই, কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার কিন্তু নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে। ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসকে একবারে মারতে পারে, কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে দুই প্রতিরোধ ব্যবস্থার পাল্টা পাল্টি যুদ্ধ হয় এবং তারপর কেউ জয়ী হয়।
যাই হোক,
আসলে আমাদের ভুল হয়েছে, করোনাকে পাত্তা দেয়া।
আমার মতে- আমরা যদি করোনাকে পাত্তা না দিতাম, তবে করোনাতে হয়ত এত লোকের মৃত্যুও হতো না।
তখন ডাক্তাররা তাদের স্বাভাবিক চিকিৎসা চালিয়ে যেতো।
তখন স্বাভাবিক যেটা বড় সমস্যা, সেটার দিকে আগে দৃষ্টি পড়তো,
সেটার চিকিৎসা হতো আগে।
করোনাকে বড় করায়, মূল সমস্যাটা থেকে দৃষ্টি সরে গেছে।
ফলে সেটাইতেই মৃ্ত্যু ঘটছে, কিন্তু নাম হচ্ছে করোনার।
আসলে আমরা একটা কথা বোধ হয় ভুলে যাচ্ছি-
রোগ কিন্তু শুধু একটা করোনা না, আরো অনেক রোগ, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া ঘটিত অসুখ আছে, মানুষ ডায়বেটিকসে ভুগছে, ব্লাড প্রেসারে ভুগছে, হার্টের সমস্যায় ভুগছে, লিভার-কিডনী জনিত প্রবলেমে ভুগছে, কারো ক্যানসার আছে, কারো অ্যাজমা-টিবি-সিওপিডি আছে। এগুলোর প্রত্যেকটির দিকে কড়া দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।
কিন্তু যখনই সবার দৃষ্টি করোনার দিকে আবদ্ধ হচ্ছে, “আগে করোনা টেস্ট করুন”, “আগে করোনা টেস্ট করুন” করতেছে সবাই। তারপর ছোয়াচে রোগের ভয়ে তার সেবা না করে দূর দূর করতেছে সবাই। তখন কিন্তু অন্য জটিল সমস্যাগুলোর থেকে দৃষ্টি সরে যাচ্ছে, ফলে ঐ রোগীগুলো কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে না, ফলে অনেকের জীবন-মরন সমস্যা তৈরী হচ্ছে।
বাংলাদেশে করোনাকে যদি সাধারণ রোগ হিসেবে ট্রিট করা হতো, এবং হাসপাতাগুলোতে কোন রোগী ভর্তি হলে, যেভাবে রক্ত টেস্ট করে বিভিন্ন ইনফেকশন চেক করে, করোনাকে তার মধ্যে একটা রাখতো, এবং যেটা গুরুতর সমস্যা সেটার আগে চিকিৎসা হতো, করোনার নয়। তখন কিন্তু মৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব ছিলো। তাই আমি একই কথা আবার বলছি- আমাদের ভুল হয়েছে করোনাকে অতি পাত্তা দেয়া।