একটা বিষয় কিন্তু আপনাদের স্বীকার করে নিতে হবে,
এবার করোনা ইস্যুতে অনেক ধর্মীয় আলেম মিডিয়ার পথে হেটেছে।
করোনাকে মহামারী ঘোষণাসহ, সেই অনুসারে ফতওয়া দিয়ে মসজিদের আসা নিষেধও করেছে।
তাদের ফতওয়ার কারণে এক পর্যায়ে মসজিদ বন্ধ থাকলো প্রায় ১ মাস, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এবার অনেক মানুষ খতমে তারাবীতে অংশগ্রহণ করতে পারে নাই, মাদ্রাসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,
সমস্যা আরো বহুমুখী, তার ফলাফল কতদূর পর্যন্ত গড়ায় সেটা সময় গেলে বোঝা যাবে।
আর এখন মসজিদ খুলে দিলেও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সোশ্যাল ডিসটেন্সিংসহ নানাজ আজগুবি শর্ত।
আমি এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছি, আলেম শ্রেনীর বদনাম করার জন্য নয়,
আমার মনে হয়, আলেম সমাজ অবশ্যই শ্রদ্ধার পাত্র্
কিন্তু প্রত্যেক ঘটনা ও পরিস্থিতি থেকে সকলের শিক্ষা নেয়া উচিত।
অর্থাৎ এই যে করোনা পরিস্থিতি মুসলিম সমাজের উপর গেলো,
এর থেকে মুসলিম সমাজের কি শিক্ষা নেয়া উচিত ?
আমার বিশ্বাস,
ইসলাম ধর্মের যে জ্ঞান (ফতওয়া জ্ঞান) সেটা আলেম শ্রেণীর কোন অংশে কম নেই।
অনেকেই এ বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্র্যাকটিসিং মুসলমান হওয়ায় অনেকেই অনেক ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কে ভালো জানেন।
সুতরাং ইসলাম ধর্মীয় ফতওয়ার পারদর্শীতা নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নাই।
কিন্তু আমার কথা হচ্ছে- কোন সাম্প্রতিক বা নতুন ইস্যু নিয়ে যখন বিভিন্ন আলেম সমাজের কাছে ফতওয়া চাওয়া হয়, তখন সতর্ক থাকা উচিত।
মানে একজন মানুষের সব সাইডে জ্ঞান নাও থাকতে পারে।
কোরআন হাদীসের উপর অবশ্যই আলেম শ্রেণীর জ্ঞান আছে।
কিন্তু হঠাৎ করে প্র্যাকটিসিং লাইফে কোন নতুন ইস্যু বা ঘটনা আসলো, সেই সম্পর্কে আলেম শ্রেনীর তৎক্ষণাৎ জ্ঞান নাও থাকতে পারে।
অথবা হঠাৎ করে মিডিয়াতে যে তথ্যগুলো প্রচার হচ্ছে, সেগুলো গুজব, অতিরঞ্জিত বা বিভ্রান্তিকরও হতে পারে।
এক্ষেত্রে সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে যদি আলেম শ্রেনী যদি ফতওয়া দেন,
তবে ফতওয়ার ইসলামী অংশে ভুল না হলেও
যে বিষয়টির উপর ভিত্তি করে ফতওয়া দেয়া হলো, সেই বিষয়টির মধ্যে ঝামেলা থাকায় পুরো ফতওয়া বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
অর্থাৎ মিডিয়া বা ক্ষমতাসীনরা ইচছা করেই আলেমের সামনে (সেটা টকশো বা অন্যত্র) এমন তথ্য উপস্থাপন করছে, যেন সেটার উপর ভিত্তি করে ফতওয়া হিতে বিপরীত আসতে পারে।
আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে আলেম শ্রেনীর প্রথম কাজ হবে,
কেউ কোন ফতওয়া চাইতে আসলেই তাড়াহুড়া করে ফতওয়া না দিয়ে,
বা ফেসবুকে লাইভে এসে কোন বক্তব্য না দিয়ে বা টকশোতে ডাইরেক্ট কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে বরং অপেক্ষা করা।
তাড়াহুড়া করে বেঠিক জিনিস বলার থেকে বুঝেশুনে সময় নিয়ে সঠিক জিনিসটা বলা।
প্রয়োজনে সবাইকে অপেক্ষা করতে বলা। নতুন বিষয়টি সম্পর্কে সময় নিয়ে বিস্তারিত স্ট্যাডি করা।
কারণ নতুন একটা জিনিস আসলে আগে সেটা নিয়ে স্ট্যাডি করতে হয়।
তাড়াহুড়া করে বিবৃতি দিয়ে অনেক সময় মার্কেটের তাৎক্ষনিক চাহিদা পূরণ করা যায়, কিন্তু বাস্তবে নিজের অবস্থান কখন ঠিক থাকে না।
আমি আবার বলবো-
এখানে ইগোর কিছু নেই। কারণ কুরআন হাদীসের স্ট্যাডি আলেম সমাজের পূর্ণ জ্ঞান আছে, কিন্তু যে নতুন জিনিসটার সম্পর্কে ফতওয়া চাওয়া হয়েছে, সেটার সম্পর্কে আলেম সমাজের স্ট্যাডি লাগতেই পারে। ঐ নতুন জিনিসের উপর স্ট্যাডি ছাড়া ও অপূর্ণ জ্ঞান ছাড়া যদি ফতওয়া দেন, তখন কিন্তু পুরো ফতওয়াটাই হিতে বিপরীত হতে পারে। এবং করোনার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে।
একইসাথে-
আমি তরুণ সমাজের কাছে সব সময় আশাবাদি।
ইসলামীক সমাজের মধ্যে যারা তরুণ আছেন, আমি তাদেরকেই বলছি-
আপনারা বিষয়টি ঠিকমত নজরদারি করবেন।
আপনাদের মধ্যে যারা বয়ঃবৃদ্ধ আলেম আছেন, নিঃসন্দেহে তারা ধর্মীয় জ্ঞান আছে।
কিন্তু নিত্য নতুন যে বিষয়টি আসলো, সেটা নিয়ে যখন কেউ ফতওয়া চাইতে আসবে,
তখন বয়ঃবৃদ্ধ শ্রেনীকে আপনারা নতুন বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, উপস্থাপনার কারণে অনেক সময় ফতওয়া বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
এক্ষেত্রে স্বার্থন্বেষী মহল চাইবে আলেম শ্রেনীকে বিভ্রান্ত করে তার ঘাড়ে বসে স্বার্থ উদ্ধার করতে,
স্বার্থনেষী মহলকে কখনই সেই কাজটি করতে দেয়া যাবে না।