করোনার গুজব নিরসন আপডেট (৩)


tSpuauo1nsnore6fi Madyi 
করোনার গুজব নিরসন আপডেট (৩)
১. হার্ড ইম্যুনিটি করতে গেলে আমাদের অনেক জনগণকে এর জন্য মূল্য দিতে হবে। জনসংখ্যার ঐকিক নিয়ম করে দেখুন, কত মানুষকে এর জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এবং কত মানুষ এতে মারা যাবে।
উত্তর- যারা প্রাকৃতিক এই হার্ড ইম্যুউনিটির বিরুদ্ধে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তারা দুটি জিনিস এড়িয়ে যাচ্ছে। একটি কমিউনিটি, অন্যটি সময়।
হার্ড শব্দের অর্থ ‘পাল’। আপনি যখন বাংলাদেশের মানুষের হার্ড ইম্যুনিটি নিয়ে কথা বলবেন, তখন একটা বাংলাদেশ হিসেব করলে হবে না, বরং বাংলাদেশের মানুষ কতগুলো পাল বা কমিউনিটি তৈরী করে বসবাস করে সে হিসেব করতে হবে। ভাইরাস যখন ছড়াতে থাকবে, তখন সে এক বারে সব এলাকায় যাবে না, বরং ছোট ছোট কমিউনিটির মধ্য দিয়ে ছড়াবে। বাংলাদেশে মহল্লার হিসেব করলে কমপক্ষে ৪-৫ লক্ষ মহল্লা পাবেন, যেখানে মানুষের কমিউনিটি বা পাল আছে। ভাইরাসটি যখন স্প্রেড হবে, তখন সে প্রতিটি কমিউনিটিতে আঘাত করবে এবং সেই কমিউনিটিতে এক সময় হার্ড ইম্যুনিটি এচিভ হবে। এই হার্ড ইম্যুনিটি মহল্লাগুলোতে ভাইরাস বাধাপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এভাবে ব্যক্তি ও দলগত (হার্ড) উভয় ইমিউনিটিতে বাধাগ্রস্ত হয়ে এক সময় ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে সব এলাকায় নাও পৌছাতে পারে, যা পূর্ববর্তী অনেক ভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যায়। অর্থাৎ হিসেবটা পুরো দেশজুড়ে হবে না, কারণ ভাইরাস দেশের সীমানা বুঝে না। বরং হিসেবটি মহল্লা বা কমিউনিটির হিসেবে হবে।
দ্বিতীয়তঃ তারা যে ভুলটা করে সেটা হলো- সময়ের বিষয়টি এড়িয়ে যায়। তারা ঐকিক নিয়ম করে এমন তথ্য প্রকাশ করে মনে হয় যেন সবাই একসাথে হাসপাতালে ঢুকবে বা মারা যাবে। আসলে করোনা ভাইরাসের ছড়ানোর হার এত বেশি না। পুরো বাংলাদেশে ছড়াতে ৩-৪ বছরও লাগতে পারে। তারা যে হিসেবে দেখায় এত কোটি লোকের চিকিৎসা লাগবে, এটা আসলে ৩-৪ বছরে লাগবে, অর্থাৎ বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এত মানুষই চিকিৎসা নিবে। আর যদি অনেক লোক মারাও যায়, তারা ৩-৪ বছরে মারা যাবে। একবারে ঠুস করে মারা যাবে না। বরং বৃদ্ধ ও অসুস্থ যারা বিভিন্ন অসুখে ভুগে মারা যেতো, তারা হয়ত মৃত্যুর সময় করোনা ধরে মারা যাবে। এবং এটা একটি প্রাকৃতিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা সিজনাল ফ্লু এর নামে অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। জাস্ট সেটা মিডিয়ায় হাইলাইট করে পাবলিককে ভয় দেখানো হয়েছে।
২. “করোনা একইডসের মত, কখনই হয়ত এই রোগ যাবে না”
উত্তর- পুরো আজগুবি ভয় দেখানো বক্তব্য। আসলে করোনা হলো একটি নরমাল ফ্লু ভাইরাস। ফ্লু ভাইরাসগুলো প্রথমবার এসে কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি করে, এরপর সেটা সিজনাল ফ্লু হয়ে বছর বছর ঘুরে আসে। করোনাও এভাবে বছর বছর ঘুড়ে আসবে সিজনাল ফ্লু হয়ে। এখানে সেই কথাটাই ঘুড়িয়ে ভয় দেখিয়ে বলা হয়েছে, মানে কখনই যাবে না। এমনকি এইডসের সাথে মিলিয়ে আরো ভয় দেখানো হয়েছে। আসলে এইডস ভাইরাস মানুষের কোষের নিউক্লিয়াসের ভেতর ঢুকে (লুকিয়ে) দীর্ঘদিন অবস্থান করতে পারে, এতে নিউক্লিয়াস তাকে মারতে পারে না। কিন্তু করোনা ভাইরাসের লুকানোর সেই ক্ষমতা নেই। সেই বাইরেই থাকে। ফলে সে একবারেই রোগপ্রতিরোধ দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়।
৩.“করোনায় আক্রান্তদের রক্ত জমাট বেধে স্ট্রোক হচ্ছে”।
উত্তর- কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একজন করোনা চিকিৎসা দেয়া মুগদা হাসপাতালের এক ডাক্তারের বক্তব্য শোনাচ্ছিলো। তার বক্তব্য হলো করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর মানুষ করোনা দ্বারা যতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিপার্শ্বিক পরিবেশের দ্বারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে। এই আতঙ্কটা তার পরিবার থেকে শুরু করে হাসপাতালের বেডেও তীব্র আকার ধারণ করে। এই আতঙ্কের কারণে অনেকের রক্তচাপ বেড়ে স্ট্রোক হচ্ছে । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আতঙ্ক বৃদ্ধির সেই স্ট্রোকের মৃত্যুকেই চালিয়ে দেয়া হচ্ছে করোনা নামে।
৪. বুমবিডি থেকে সাবধান !
ব্যাখ্যাঃ বিভিন্ন ১০-২০ টাকার সাধারণ ওষুধেই যদি বাংলাদেশে করোনা রোগীরা সেরে উঠে, তবে ভ্যাকসিন বা এন্টি ভাইরাল ড্রাগ কোম্পানিগুলো যে জনপ্রতি ৫০-৬০ হাজার ওষুধ বিক্রির প্ল্যান নিয়েছে সেটা আর হবে না। তাই কম টাকার ওষুধে করোনা সেরে গেছে, এমন খবরগুলোকে তারা প্রশ্ববিদ্ধ করতে নানান খবর ছড়াচ্ছে। এমন একটি কাজ করছে ‘বুমবিডি’ নামক একটি সংস্থা। বুমবিডি হলো ভারত ভিত্তিক একটি সংস্থা যারা অনলাইনে টাকার বিনিময়ে ফ্যাক্ট চেকের নাম দিয়ে বিভিন্ন খবরকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বা গুজব বলে রটিয়ে দেয়। এই সংস্থাটি মোদি সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ফ্যাক্টচেকের নাম দিয়ে ভারতের মুসলিম নির্যাতনের খবরগুলোকে গুজব বলে দাবী করতো এবং মায়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে রোহিঙ্গা নির্যাতনের খরবগুলোকে গুজব বলে প্রচার করতো। এরা এখন বাংলাদেশেও তাদের কথিত ফ্যাক্ট চেক শুরু করেছে বুমবিডির নাম দিয়ে। তাই এদের কথিত ফ্যাক্টচেক থেকে সাবধান।
পূর্বের দুটি পর্ব পড়তে-
১ম পর্ব- https://bit.ly/3cF1vxR
২য় পর্ব- https://bit.ly/3dVKHTd