তুমি করলে লীলা, আমি করলে বিলা (পাপ)
১) ইউনিলিভারের ল্যাক্স সাবানের প্যাকেটে গোলাপের ছবি আছে । ল্যাক্স সাবানে কি আসলেই গোলাপ মিশ্রিত ??
এর কি কোন পরীক্ষা হইছে ?? তাদের দাবীকৃত ফ্রেঞ্চ গোলাপ মিশ্রিত একটা লাক্স সামানের দাম তো কমকরে কয়েকশ টাকা হওয়া উচিত, এত কম দামে তো দেয়া সম্ভব না।
ল্যাক্সের ভেতর যদি গোলাপের অস্তিত্ব নাই থাকে, তবে অবশ্যই তার প্যাকেটের গায়ে গোলাপের ছবি ব্যবহার করা কাস্টমারকে ধোকা দেয়ার নামান্তর। এক্ষেত্রে মিডিয়া নিরব কেন ? কেন তারাই প্রতিদিন তাদের পত্রিকায় সেই সাবানের প্রতারণামূলক বিজ্ঞান দিচ্ছে ?
২) ইউনিলিভারের ফেয়ার এন্ড লাভলীর প্যাকেটের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটা কালো মেয়ে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী ব্যবহার করে ফরসা হয়ে যাচ্ছে। এটা কি সত্যি ? ফেয়ার এন্ড লাভলী ব্যবহার করে কি সত্যিই ফরসা হওয়া যায় ?
যদি নাই যায়, তবে তারা সেই ছবি দৃশ্যমান করে এতদিন যাবত কিভাবে দেদারসে এই ক্রিম বিক্রি করে যাচ্ছে ? এটা কি কাস্টমারকে ধোকা দেয়া নয় ? আর মিডিয়াও কেন এর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতেছে না ? বরং তারাই কেন তাদের মিডিয়ায় সেই ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপন ছেপে টাকা কামাই করতেছে ??
৩) ইউনিলিভারের হুইল ডিটারজেন্টের প্যাকেটে লেবুর ছবি কেন ? ডিটারজেন্টে কেমিক্যালী লেবুর ফ্লেভার ব্যবহার করা হয়, কিন্তু তার সাথে প্রাকৃতিক লেবুর কোন সম্পর্ক নাই। এক্ষেত্রে তার বিজ্ঞাপনে প্রাকৃতিক লেবুর ছবি ব্যবহার করে কাস্টমারের সাথে স্পষ্ট প্রতারণা করছে। এবং মিডিয়া সেই প্রতারণাপূর্ণ বিজ্ঞাপন প্রচার করে টাকা কামাচ্ছে।
৪) ব্র্যাকের আড়ং গুড়া দুধের প্যাকেটের মধ্যে লেখা ডেইরী মিল্ক। কিন্তু বাজারে প্যাকেটে বিক্রি হওয়া কোন গুড়া দুধই ১০০% ডেইরী মিল্ক নয়, বরং এতে একটা বড় অ্যামাউন্টের ভেজিটেবল মিল্ক বা অন্য দ্রব্যাদি মিশ্রিত আছে। কিন্তু সেটা কেন আড়ং প্রকাশ করতেছে না ? ডেইরী মিল্কের নাম দিয়ে ভেজিটেবল মিল্ক বিক্রি করা কি কাস্টমারকে ধোকা দেয়া নয় ? আর সেই ধোকাপূর্ণ বিষয়ের বিজ্ঞাপন কেন মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত প্রকাশ করা হচ্ছে?
৫) প্রথম আলো ৯ই মে, ২০২০ তারিখে তাদের পত্রিকায় তাদেরই (ট্রান্সকমের) ওষুধ কোম্পানি এসকেএফ এর বানানো ওষধের প্রচারণায় লিখেছে “করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ রেমডিসিভির বানিয়েছে এসকেএফ।” কিন্তু “রেমডিসিভির করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ” এমন কোন প্রমাণ এখনও হয়নি। আমেরিকার গবেষণায় ৩১% রোগী ৩ দিন আগে সুস্থ হইছে (১৪ দিনের যায়গায় ১১ দিন), আর চাইনিজ গবেষণায় এর তীব্র সাইড ইফেক্ট প্রমাণিত হইছে। অর্থাৎ এর মানে এই নয়- রেমডিসিভির করোনা প্রতিরোধে কার্যকর কোন ওষুধ।
কথা হচ্ছে, আমের ভেতর আটি কাচা থাকলে মিডিয়ার বুক ফেটে যায়। “মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে” শিরোনামে মিডিয়া রিপোর্ট করে প্রশাসনের সহায়তায় হাজার হাজার টন আম নষ্ট করে। কিন্তু ইউনিলিভার, ব্র্যাকের আড়ং বা প্রথম আলোর এসকেএফ যখন প্রতারণা করে এবং সেই প্রতারণা যখন মিডিয়াই বিজ্ঞাপন করে প্রচার করে, তারা টাকা কামায়, তখন বিষয়টি কেমন হয় ?
অথচ যারা টিভি বা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে পণ্য কিনতে প্ররোচিত করে এবং যাদের ক্রয়মূল্য ফিক্সড তাদেরকে আগে ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন করার জন্য ধরা উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে মিডিয়া, কথিত ভোক্তা অধিকার সচেতন গোষ্ঠী এবং প্রশাসন একেবারেই নিরব।
অথচ প্রান্তিক পর্যায়ে একজন কৃষক/ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কি করলো সেটা নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড়। দেশের সব আইন আর যুক্তি শুধু তাদের জন্য। ভাবখানা এমন দরিদ্র লোকটাকে গ্রেফতার/জরিমানা করতে পারলেই বুঝি দুনিয়ার সব অন্যায় মিটে যাবে।
এজন্য বলে- তুমি করলে লীলা, আমি করলে বিলা (পাপ)।