শুরুতে বলছি, কেউ যদি বেশি মাত্রায় আওয়ামীলীগ বিদ্বেষী হন, তাহলে এ লেখাটা না পড়াই ভালো। এন.সি-২৬১

শুরুতে বলছি, কেউ যদি বেশি মাত্রায় আওয়ামীলীগ বিদ্বেষী হন, তাহলে এ লেখাটা না পড়াই ভালো।
Related image
(শুরুতে বলছি, কেউ যদি বেশি মাত্রায় আওয়ামীলীগ বিদ্বেষী হন, তাহলে এ লেখাটা না পড়াই ভালো। লেখাটি শুধুমাত্র আওমামীলীগ সদস্যদের জন্য লেখা। এক্ষেত্রে যারা আওয়ামীলীগকে পছন্দ করেন এবং আওয়ামীলীগের শুভাকাঙ্খী তারাই শুধু কমেন্ট করবেন। অযাচিত কমেন্ট থাকলে ডিলিট করা হবে।)
গত কয়েক বছর যাবত, প্রিয়া সাহার মত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কয়েকটি গ্রুপ বের হয়েছে,
যারা বলে বেড়াচ্ছে- “আওয়ামীলীগের আমলে হিন্দু নির্যাতন হয়। ”
তার প্রতুত্তরে তৎক্ষণাৎ আওয়ামী সরকার বলছে- “কখনই না, আওয়ামীলীগ আমলে হিন্দু নির্যাতন তো হয়ই না, বরং আওয়ামীলীগ হিন্দুদের আরো বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়।”এবং বাস্তবেও আওয়ামীলীগ তা দিয়েছে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে কোন ক্ষুদ্র কমিউনিটি বড় কোন কমিউনিটির সাথে যুক্ত হতে গেলে, এ ধরনের দেন-দরবার করতেই পারে। অর্থাৎ বেশি সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্য এভাবে দরদাম হওয়া অস্বাভাবিক না। তবে এক্ষেত্রে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে অলিখিত প্রধান চূক্তি থাকে, ক্ষুদ্র গোষ্ঠীটি যেন কোনভাবেই বৃহৎগোষ্ঠীটির শত্রুর সাথে হাত না মেলায়। যদি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীটি বৃহৎ গোষ্ঠীর শত্রুর সাথে হাত মেলায় তবে, তবে সেই ক্ষুদ্রগোষ্ঠীটি বিশ্বাসঘাতক বলে প্রতিয়মান হয়। আর তখন ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রাখা মানে, বৃহৎগোষ্ঠীর জন্য নিজের শত্রুকে আরো শক্তিশালী করার মত হয়ে যায়।
আওয়ামীলীগ ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটি বড় বাধন ছিলো এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। অনেকেই হিন্দুদের ডেকে থাকে আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক। আবার এটাও সবাই বলে, হিন্দুরা আওয়ামীলীগের আমলে এমন সুযোগ সুবিধা পায়, যা অন্যদের আমলে পায় না।
কিন্তু কয়েকবছর যাবত হিন্দুরা এমন কিছু ঘটনা ঘটাচ্ছে, যা আওয়ামীলীগ-হিন্দুদের মধ্যে অদৃশ্য চূক্তির মূল শর্ত, অর্থাৎ হিন্দুরা কখন আওয়ামীলীগের শত্রুর সাথে হাত মেলাবে না, এটা ভঙ্গ করেছে।
এরমধ্যে -
১. আওয়ামীলীগের বিশেষ নারী কোটায় এমপি হওয়া হেপী বড়ালের ভাতিজা শিপন কুমার বসু ইসরাইলে গিয়ে আওয়ামীলীগের রিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া।
২. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে সুযোগ পাওয়া রানা দাশগুপ্ত কর্তৃক শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফকে নাজেহাল করা। এছাড়া দেশে হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে বলে মোদি সরকারের কাছে সাহায্য চাওয়া।
৩. সংখ্যালঘু কোটায় প্রধান বিচারপতি হওয়া এসকে সিনহা কর্তৃক জুডিশিয়ার ক্যু করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামানোর ষড়যন্ত্র করা।
৪. পারিবারিকভাবে সরকারের থেকে ব্যাপক সুবিধা প্রাপ্ত হয়েও প্রিয়া সাহা নামক এক নারী ট্র্যাম্পের কাছে গিয়ে মিথ্যা কথা বলে আওয়ামী সরকারের ভাবমূর্তি সারা বিশ্বের কাছে নষ্ট করা।
৫. শুধু আন্তর্জাতিকভাবে নয়, গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিরোধীদল ঐক্যফ্রন্টের সাথে একাধিক হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল যুক্ত হতে যাওয়া।
এত বড় বড় বিরোধীতা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের হিন্দু গোষ্ঠীর প্রতি কোন বিরুপ ধারণা তৈরী হয়নি, হয়ত যেসব হিন্দু বিরোধীতা করেছে, শুধু তাদেরকে ‘চুপ’ করিয়ে বা পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু হিন্দু গোষ্ঠীর প্রতি সাধারণভাবে আওয়ামীলীগের পলিসির কোন পরিবর্তন হয়নি।
এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের বিশ্বাস হতে পারে মা’য়ের মত- “সঙ্গদোষে সন্তান কোন অপরাধ করতেও পারে। কিন্তু একদিন মায়ের সন্তান মায়ের কোলে ফেরত আসবেই।”
কিন্তু আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারনী মহলের একটি বিষয় চিন্তা করা দরকার- বাংলাদেশের হিন্দুদের পলিটিকাল ওরিয়েনটেশন হচ্ছে। ভারতের বিজেপি সরকার আসার কয়েক বছর আগে থেকে বিষয়টি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা খুব দ্রুত ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী বা উগ্রবাদী মতাদর্শে দিক্ষিত হচ্ছে বা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামীলীগের সাথে জাতীয়তাবাদী বা উগ্রবাদী কোন দলের সাথে কোয়ালিশন হওয়া কখনই সম্ভব নয়, এতে পুরো আওয়ামীলীগ ভেঙ্গে যাবে। দেখা যাবে, ঘুরে ফিরে আওয়ামীবিরোধী জাতীয়তাবাদী কোন দলের সাথেই গাট বাধতেছে হিন্দুরা। এক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ যদি হিন্দুদের সম্পর্কে তাদের আগের নীতি বহাল রাখে, তবে বিষয়টি হবে শত্রুকে ভালো ভালো খাবার দিয়ে লালনপালন করে বড় করার মত। তাই আওয়ামীলীগের জন্য খুব ভালো হবে, হিন্দুদের সম্পর্কে তাদের আগের নীতি পরিবর্তন করা এবং রাজনৈতিকভাবে যে সব হিন্দু তাদের বিরুদ্ধে গেছে এবং যে সব বিরোধী হিন্দু সরকার ও দলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে তাদের ফিল্টার করা।
‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ হওয়ার ভয় !
‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ টার্মটি মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের একটি রাজনৈতিক অস্ত্র। এটা বিশ্বব্যাপী এই ব্লকের সদস্যরা ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে দমন করে/নিয়ন্ত্রণে রাখে। অনেকের ধারণা ২০০১ সালে শেখ হাসিনা নিজেও মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের সাথে যুক্ত হয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে দমন করতে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ টার্মটি ব্যবহার করেছেন। তখন তিনি ডেমোক্র্যাটদের কাছে প্রচার করেছেন- “আওয়ামীলীগ আসলে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয় না, কিন্তু বিরোধীদল আসলে সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়।”
যদিও যে ডেমোক্র্যাটদের উদ্দেশ্য করে করে তিনি ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ টার্ম ব্যবহার করেছিলেন, পরবর্তীতে সেই ডেমোক্র্যাটদের সাথে শেখ হাসিনার কোয়ালিশন ভেঙ্গে যায় এবং ডেমোক্র্যাটরা বাংলাদেশের মাইনাস টু করে ড. ইউনুসকে বসাতে প্রচেষ্টা চালায়। বলাবাহুল্য, তখন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সাথে ডেমোক্র্যাটদের ‘শাপে-নেওলে সম্পর্ক’ বিদ্যমান আছে। গত দুই টার্মে আওয়ামীলীগ ডেমোক্র্যাটদের প্রধান চাহিদা ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’কে ছুড়ে ফেলেছে, এবং ডেমোক্র্যাটদের কোন বক্তব্য বা আন্তর্জাতিক কার্যক্রমকে দুইটাকা দিয়েও পাত্তা দেয়নি। সেক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটরা আওয়ামলীগের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধূয়া তুললে আওয়ামীলীগকে খুব বেশি নাড়া দেবে বলে মনে হয় না।
তবে আওয়ামীলীগের জন্য সবচেয়ে বড় সুখবর হলো- বর্তমান যে হিন্দুরা আওয়ামীবিরোধীতায় অংশ নিচ্ছে, তারা সবাই জাতীয়তাবাদী রিপাবলিকান ব্লকের। একারণে আওয়ামীলীগ যদি রাজনৈতিকভাবে বিরোধী হিন্দু গোষ্ঠীগুলো বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশনে যায়, তবে ডেমোক্র্যাট ব্লকরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধুয়া তুলে খুব বেশি এগোবে বলে মনে হয় না।
আওয়ামীলীগের হিন্দুনীতি’র পরিবর্তন হলে মোদি বা ট্র্যাম্পের ভূমিকা কি হবে ?
সম্প্রতি প্রিয়া সাহা যে অনুষ্ঠানে ট্র্যাম্পের কাছে বিচার দিয়েছে, সেটা ট্র্যাম্প বা রিপাবলিকানদের হঠাৎ কোন অনুষ্ঠান না। এটা বেশ কয়েকবছর ধরে চলে আসা মার্কিন সরকারের অনুষ্ঠান। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো- ট্র্যাম্প একজন পপুলিস্ট, সে ‘সংখ্যালঘু শব্দ’ নিয়ে রাজনীতি করার লোক না। সে যেটা করবে- তার সংস্পর্ষে হিন্দুদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ বা উগ্রবাদের উত্থান হবে। এবং ইতিমধ্যে তা শুরু হয়ে গেছে। এখন আওয়ামীলীগকেও তাই ‘সংখ্যালঘু’কে ভয় পেলে হবে না, ‘হিন্দু উগ্রবাদ’কে ভয় পেতে হবে।
আওয়ামীলীগ এতদিন মুসলিম উগ্রবাদ দমন করেছে এবং তা দমনে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছে। এখন আওয়ামীলীগকে যেটা করতে হবে, হিন্দু উগ্রবাদকে দমন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বেশ সক্রিয় হতে হবে। কারণ সরকার ও দলের বিভিন্ন যায়গায় প্রচুর পরিমাণে হিন্দু প্রবেশ করে বসে আছে। মলয় সাহার মত লোকদের কাছে দেশের বড় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফাইল থাকতে পারে, যা হাতছাড়া বা পাবলিক হয়ে গেলে ভয়ের কারণ হতে পারে। তাছাড়া দেশনেত্রী শেখ হাসিনার অনেক নিকটব্যক্তির মধ্যে হিন্দু আছে। হঠাৎ কাছে যাওয়া কোন হিন্দু যদি উগ্রবাদী সংষ্পর্ষে গিয়ে নথুরাম গডসে হয়ে যায়, তবে শেখ হাসিনাকেও করমচাঁদ গান্ধী হতে বেশি সময় লাগবে না।
আমি আগেও একটা কথা বলেছি, মোদি বা ট্র্যাম্প তখন কিছু করতে পারবে, যখন আমাদের হিন্দুরা লিবিয়ার মত কিছু করে আগে নিজেরা কিছু করে দেখাবে। কিন্তু সেই পর্যন্ত সুযোগ দেয়ার কি কারণ থাকতে পারে ? হিন্দুরা যেন সেই অবস্থায় যেতে না পারে বা উগ্রবাদী না হতে পারে, সে জন্য যতগুলো সংগঠন/ব্যক্তি তাদের উগ্রবাদী বানাচ্ছে তাদের ধরে ধরে ব্ল্যাক লিস্টেড করে দিলেই হয়। আর যে সব হিন্দু সরকার বা দলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, তাদের নজরদারিতে রাখা, জাতীয়বাদী দলের সংস্পর্ষ আছে, এমন আভাস পাওয়া মাত্রই তাদের চ্যূত করা। তবে সরকারের জন্য প্রাথমিকভাবে হিন্দুদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা খুব কঠিন, কারণ হিন্দুদের আর্টিফিসিয়াল ফেস খুব তোষামোদী। এজন্য মুসলমানদের মধ্যে উগ্রবাদ দমনে যেভাবে ‘সেল’ করা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছো, ঠিক একইভাবে হিন্দু উগ্রবাদ দমনে আলাদা সেল করা প্রয়োজন, আলাদা গবেষণা ও ট্রেনিং এর প্রয়োজন। সেই ‘সেল’ এর গবেষণা ও দিক নির্দেশনায় সরকারকে হিন্দু উগ্রবাদকে দমন করতে হবে। বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে, নয়ত উগ্রহিন্দুত্ববাদের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।