ইসকনের সাম্প্রতিক কার্যক্রম ও সরকারের করণীয়
ইসকন সংগঠনটির কথা যদি সরকারকে মনে করতে হয়, তবে প্রথমে মনে করতে হবে, সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা’র নাম। সিনহা ছিলো ইসকন সদস্য, যে কিনা আন্তর্জাতিক মদদে জুডিশাল ক্যু করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে চেয়েছিলো। কিন্তু সরকার বেশ শক্ত হাতে সিনহাকে চেয়ার থেকে নামিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়, এবং শেষ মুহুর্তে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। যদিও এর জন্য কম ধকল সহ্য করতে হয়নি আওয়ামী সরকারকে। এ ঘটনা থেকে শেখ হাসিনা সরকারের শিক্ষা, ইসকনীদের ‘লাই’ দিলে ক্ষতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে ।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে ইসকনীদের কার্যক্রম নিয়ে সারা দেশ জুড়ে একটি জনগণমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষোভটির স্বপক্ষে প্রকাশ্য দলিল ও গ্রহণযোগ্য যুক্তি আছে। সরকার যদি নয়-ছয় বুঝিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা না নিয়ে, বিষয়টি থামিয়ে দিতে চায়, তবে তাৎক্ষণিক ধামাচাপা দেয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক ঝুঁকির সম্ভবনা তৈরী হয়। মানুষের মাঝে এমন ভাব উদয় হতে পারে, দেশে কোন সাম্প্রদায়িক অপরাধ ঘটলে সরকার তার বিচার করে না, ফলে জনগণকে তার বিচার নিজ হাতে তুলে নিতে হবে। তখন বাংলাদেশে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা তৈরী হওয়া স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিচারে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরী হওয়া বাংলাদেশের জন্য কখনই সুখকর নয়।
অতি সম্প্রতি পদ্মা সেতু’র মাথা কাটার কথা নিয়ে সেটা ডাইরেক্ট অস্বীকার করে গুজব বলে দাবী এড়িয়ে যাওয়ার ফল হচ্ছে, গতকাল এক বাচ্চা মাথা পাওয়াতে ঐ ব্যক্তিকে জনতা কর্তৃক পিটিয়ে মারা। কোন সেতু বানানোর সময় কাল্ট বা বিশেষ ধর্মীয় বিশ্বাসীরা যে ছড়িয়ে দেয়, ‘মানুষের মাথা লাগবে’- এটা নতুন কোন কথা নয়, যে কোন সেতু বা কালভার্টের ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বললে সত্যতা মিলবে । সরকারের উচিত ছিলো সেই বিশেষ অন্ধবিশ্বাস অস্বীকার করে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্মের কাউকে দিয়ে একটি বিবৃতি দেয়া, “এগুলোতে আমরা বিশ্বাস করি না, এগুলো কাল্টদের বিশ্বাস। তাই এগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে ব্যবহার হবে না, সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর এ ধরনের কোন পরিস্থিতি যেন তৈরী না হয় এজন্য আমরা সতর্ক অবস্থা গ্রহণ করছি, আপনারা সন্দেহজনক কাউকে দেখলে ৯৯৯ এ ফোন করুন। “-ব্যস এতটুকুইতে হতো, কিন্তু সরকার যখন গুজব বলে পুরো বিষয়টিকে উড়িয়ে দিলো, তখন কারো কারো মনে আসতে পারে, সরকার পুরো বিষয়টিকে গোপন করে আড়ালে কাজ সারার সমর্থক। আর তখনই পাবলিক নিজের হাতে আইন তুলে নেয় এবং সরকারবিরোধী ক্ষোভের জন্ম হয়।
আমার কথা হলো, যেহেতু পাবলিক নিয়ে দেশ গঠিত, তাই পাবলিক ঘটনা ঘটতেই থাকবে। কিন্তু যখন কোন একটি পাবলিক ঘটনা ঘটবে, তখন তা বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলীভাবে সামাল দেয়া উচিত।এতে সরকারবিরোধী ক্ষোভ নয়, বরং সরকারের জনসমর্থন তৈরী করা সম্ভব। কিন্তু সেটা না করে, যদি ডাইরেক্ট ধামাচাপা সিস্টেম হয়, তবে পরবর্তীতে তার বিষ্ফোরণ ঘটা স্বাভাবিক। কারণ এখন স্যোশাল মিডিয়ার যুগ, এখন কোন ঘটনার দলিল প্রমাণ লুকিয়ে থাকে না, আবার দেশজুড়ে ছড়াতেও সময় লাগে না। তাই অযথাই পুরাতন সিস্টেমে গুজব বলে অমুক তমুক বলে চাপিয়ে রাখার ফল কখন সুখকর হবে না।
এখানে একটি স্পষ্ট কথা হলো, ইসকন আর ঐ স্কুলের শিক্ষকরা যদি অন্যায় করেই থাকে, তবে আইন অনুসারে তাদের ফয়সালা করে দেন। এখানে কথা হবে আইন দিয়ে, এখানে আলাদা কোন ছলছূতোর দরকার নাই, কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন- “বাংলাদেশের আইন অনুসারে হইছে”। কিন্তু সরকার যখন আইন এড়িয়ে আলাদা ছলছূতোর আশ্রয় নিবে, তখন সেই অন্যায়ের দায়ভার আসবে সরকারের উপর। জনগণ ভাববে, যেহেতু সরকার অন্যায়কারীদের বাচাতে চাইছে, সেহেতু সরকার সেখানে জড়িত, তখন ইসকন বিরোধী আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলনে টার্ন নিবে। আর স্বাভাবিক সেখানে জড়িয়ে যাবে সরকারবিরোধী সকলগোষ্ঠীগুলো। যেহেতু বিষয়টি সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় অনুভূতির সাথে জড়িত এবং ইতিমধ্যে হাইকোর্ট বিষয়টিকে অন্যায় বলে সাব্যস্ত করে প্রশাসনের প্রতি বিচারের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে, তাই বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা না করে, আইন অনুসারে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে জনক্ষোভ প্রশমন করাই শ্রেয়।