জেমস বন্ড থেকে নয়ন বন্ড, মিডিয়ার দায় কতটুকু ?এন.সি- ২৭২

জেমস বন্ড থেকে নয়ন বন্ড, মিডিয়ার 
দায় কতটুকু ?

জেমস বন্ড থেকে নয়ন বন্ড, মিডিয়ার দায় কতটুকু ?
Image result for মরুভূমিনয়ন বন্ড জেমস বন্ডকে কতটুকু অনুসরণ করতো সেটা তার নামের শেষে ‘বন্ড’ শব্দখানা যোগ করা দেখে বোঝা যায়। শুধু বন্ড যোগ করে নয়, ফেসবুকে যে গ্রুপ নয়ন খুলেছিলো তার নাম ছিলো ০০৭, অর্থাৎ জেমসবন্ডের সেই ০০৭। জেমস বন্ড যেভাবে গোলাগুলি বা মারামারি করতো, নিঃসন্দেহে নয়ন বন্ড সেটা বেপরোয়াভাবে অনুসরণ করতো। আমার যতদূর মনে পড়ে, জেমস বন্ডের সাথে সব সময় কিছু সুন্দরী মেয়ে থাকতো। সম্ভবত নয়ন বন্ড মিন্নিকে ভাবতো সেই জেমসের বন্ডের সুন্দরী মেয়ের প্রতিচ্ছবি। জেমস বন্ডের সাথে নতুন সিরিজে হয়ত নতুন নতুন মেয়ে থাকতো, কিন্তু নয়ন বন্ড এত সুন্দরী মেয়ে পাবে কোথায় ? তাই হয়ত যক্ষের ধনের মত মিন্নিকে আকড়ে ধরে থাকতে চাইতো। সেই বন্ডের সুন্দরীকে নিয়ে যখন রিফাত টানাটানি শুরু করলো, তখন নয়ন থেমে থাকবে কেন ?
আমরা নয়নের কর্মের উপর অনেকে দোষ চাপাচ্ছি, কিন্তু মিডিয়াতে যেই জেমস বন্ড দেখে নয়নরা অনুপ্রাণিত, সেটা কেন এড়িয়ে যাচ্ছি ? নয়ন বন্ড নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ নিয়ে কি আমরা বলতে পারি না, মিডিয়া আমাদের মন মগজে অপরাধ প্রবণতা ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
মিডিয়া কিভাবে মানুষকে অপকর্মের দিকে প্ররোচিত করতে পারে, এর একটি বড় উদাহরণ হতে পারে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারিত ‘ক্রাইম পেট্রল’ টাইপের অনুষ্ঠান। ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচারিত ক্রাইম পেট্রল অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে কি প্রভাব রাখছে আসুন দেখি-
১)রাজশাহীতে ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রল দেখে জোড়া খুন
(https://bit.ly/2Y8v6eN)
২) মাদারিপুরে ভারতীয় ক্রাইম পেট্রল দেখে নিজ কন্যা ধর্ষণ করলো পিতা
(https://bit.ly/2xTscMw)
৩) কেরানীগঞ্জে ক্রাইম পেট্রল দেখে অটোরিকশা ছিনতাই ও চালক খুন
(https://bit.ly/2YRNXbj)
৪) ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় ভারতীয় ক্রাইম পেট্রল দেখে খুনের পদ্ধতি রপ্ত করে স্ত্রীকে হত্যা।
(https://bit.ly/2YgHdqA)
৫) পিরোজপুরে ক্রাইম পেট্রল দেখে স্কুল ছাত্রকে হত্যা ও চাদা দাবী
(https://bit.ly/2xTcP6y)
৬) চট্টগ্রামে ভারতীয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রল দেখে ভাবীকে খুন।
(https://bit.ly/2NVtiSv)
অর্থাৎ অপরাধের কৌশলসহ সবিস্তারে বর্ণনা মিডিয়ায় উন্মুক্ত করা হচ্ছে, আর সেটা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে যত্রতত্র আরো অপরাধের জন্ম দিচ্ছে।
আবার বাংলাদেশের এফএম রেডিওতে একটি অনুষ্ঠান হয়, নাম ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’। এই অনুষ্ঠানে কে কিভাবে অপরাধ করলো, অপকর্ম করলো তার সবিস্তারে বর্ণনা থাকে। আমার মনে হয়েছে, এই অনুষ্ঠানগুলোও বহু মানুষকে অপরাধের দিকে প্ররোচিত করবে।
এক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম ইসলামে খুব ভালো একটা থিউরী আছে, সেটা হলো গোপন অপরাধের বিষয়গুলো গোপন রাখা। প্রকাশ্যে না বলা।
এক্ষেত্রে হয়ত অনেকে বলবেন, ভাই এগুলোর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হয়, তাছাড়া সব অনুষ্ঠানে বলে দেয়া হয়, এগুলো যেন মানুষ অনুসরণ না করে।
এক্ষেত্রে ছোটবেলায় টিভিতে রেসলিং বা সার্কাস দেখার কথা মনে পড়লো। সেই অনুষ্ঠানগুলোর সময় দেখতাম, নিচে লেখা থাকতো- “ডু নট ট্রাই দিস এট হোম”। এরপরও দেখতাম শিশু-কিশোররা হরদম রেসলিং বা সার্কাসের প্র্যাকটিস করতেছে, যার ফল স্বরূপ মারাত্মক ব্যাথা পাবার ঘটনা অহরহ ঘটতো।
এ কথা বলার উদ্দেশ্য, মানুষ অনুকরণ প্রিয়। মানুষের মনের ভেতর হয়ত নতুন কোন কিছু থাকে না, কিন্তু বাইরে থেকে যদি নতুন কোন পলিসি বা বীজ ঢুকিয়ে দেয়, তবে সেটা ডালপালা মেলে বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাই যতই বলুন- এগুলো অনুসরণ করবেন না” সবাই কিন্তু শুনবে না, বরং কেউ কেউ চেষ্টাও করতে পারে। এক্ষেত্রে লাভের থেকে ক্ষতি অনেক বেশি।
শুধূ মারামারি কাটাকারি নয়, বরং যৌনতা, নিপীড়ন, ধর্ষণের ছবিগুলো যখন মুভিতে দেখানো হয় অবশ্যই তার প্রভাব সমাজে আছে, এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। যার ফলশ্রুতিতে দিন দিন সমাজে নারী নির্যাতন বাড়ছে।
আমরা অপরাধ নিয়ে অনেক কথা বলি, অপরাধ দমন করতে অনেক কঠিন কঠিন আইন পাশ করি,
কিন্তু মিডিয়ার মাধ্যমে যে নিয়মিত অপরাধ ট্রেনিং হয়, সেটার বিরুদ্ধে বলি না,
সেটা বন্ধ করার কোন উদ্যোগও নেই না।
কিন্তু অপরাধ দমন করতে হলে, দেশী হোক আর বিদেশী হোক সেসব মিডিয়া মানুষকে এসব অপকর্মের দিকে উব্ধুদ্ধ করছে, সেগুলো আগে বন্ধ করা উচিত, কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত, নয়ত অপরাধ সমাজে হ্রাস পাওয়া তো দূরের কথা বরং বাড়তেই থাকবে।