বিশ্বব্যাংকের ব্ল্যাংক চেক ও বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব নিয়ে চিন্তা । এন.সি- ১৭৯

বিশ্বব্যাংকের ব্ল্যাংক চেক ও বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব নিয়ে চিন্তা

Image result for সাগর
বিশ্বব্যাংকের ব্ল্যাংক চেক ও বাংলাদেশের স্বার্বভৌমত্ব নিয়ে চিন্তা
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীকে ব্ল্যাংক চেক লিখে দিয়ে বলেছে, তোমাদের প্রয়োজন মত টাকা লিখে নাও। (https://bit.ly/2koOOkW)
‘ব্ল্যাংক চেক’ শব্দটার আড়ালে যেটা লুকিয়ে আছে, সেটা হলো লোভ দেখানো।
তারমানে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে লোভ দেখিয়েছে, আর সরকারও টাকার লোভে বিশ্বব্যাংকের ফাঁদে পা দিয়ে ব্ল্যাংক চেক গ্রহণ করেছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংকের সবচেয়ে বেশি শেয়ার হোল্ডার দেশ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাই তাদের ঋণদানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি স্বার্থ জড়িত থাকা স্বাভাবিক। এছাড়া বড় শেয়ার আছে ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান।। এছাড়া অল্প হলেও শেয়ার আছে ভারতের। এইসব ঋণের পেছনে ফান্ড দাতাদের স্বার্থ লুকিয়ে রাখে বিশ্বব্যাংক, যা বিভিন্ন শর্তের মাধ্যমে পূরণ করা হয়।
তাই আমরা ধরে নিতে পারি, সম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো শেখ হাসিনা সরকারকে লোভ দেখাচ্ছে, টাকার বিনিময়ে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করে দেয়ার জন্য। এখন কথা হলো- তাদের সেই বিশেষ স্বার্থটা কি ?
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক শুধু ঋণ দেয় না, এই ঋণের পেছনে এমন শর্ত জুড়ে দেয় যা ঐ রাষ্ট্রের জন্য ফাঁদ হয়ে দাড়ায়। এই কথা অবশ্য আমার নয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে বলেছিলো, “১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিশ্বব্যাংকের সাথে চূক্তি করে অনেক পাটকল বন্ধ করেছিলো বিএনপি সরকার। ফলে পাটের বাজার ভারতের দখলে চলে যায়। যার কারণে ধ্বংস হয় দেশের পাট শিল্প। বিএনপি সরকার যখন এই চূক্তি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাথে করলো, ঐ সময় ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আবার ভারতের একটা চূক্তি করলো, ভারতকে তারা টাকা দেবে নতুন নতুন পাটকল করার। বাংলাদেশে বিএনপি সরকার ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে পাটকল বন্ধ করার জন্য, আর ভারত টাকা পাচ্ছে নতুন পাটকল খোলার জন্য। আমি সাথে সাথে এই প্রশ্নও করলাম, আমাদেরকে তো সব সময় ভারতের দালাল বলেন, কিন্তু দালালীর এই যে একটা জ্বলন্ত উদাহরণ সমানে সেটার কি করবেন ? তাদের কোন জবাব ছিলো না। কারণ তাদের ঐ একটাই, তারা টাকা পাবে আর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলছে। এভাবে তারা কিন্তু আমাদের পাটকলগুলো একে একে ধ্বংস করে দেয়। …… তারা (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক) মাঝে মাঝে পরামর্শ দেয়, সে পরামর্শ হয়ে যায় অনেক সময় আত্মঘাতি। আর সেটা না শুনলেই তারা নানা রকম করে।” (https://youtu.be/jv4bprw_Va8)
উল্লেখ্য, এর আগে ৮০ এর দশকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বুদ্ধি দেয় বাংলাদেশ থেকে ব্যাঙ রফতানি করার জন্য। তখণ গণহারে ব্যাঙ ধরা শুরু হয়। আর ব্যাঙের সংখ্যা হ্রাস পেতেই ক্ষেতে পোকামাকড় বৃদ্ধি পায়, আর সেই পোকামাকড় দমনে বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কীটনাশক কিনতে হয়। যে কীটনাশকের কারণে আজ সকল খাবার বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।
আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের বুদ্ধি ও ঋণে বাংলাদেশ বৃক্ষায়নের নামে প্রচুর পরিমাণে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছ লাগায়। কিন্তু পরবর্তীতে বের হয়েছে, এই গাছের পরিবেশ রক্ষা তো দূরের কথা, উল্টো পরিবেশ আরো দূষিত হয়ে পড়ে।
এখানে আরো উল্লেখযোগ্য
আওয়ামী সরকার ২০০৯ এ ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক অনেক কিছুতেই ঋণ দিয়েছে। যেমন-
১) ওয়াসা যে কাজটি করে, মানে শহরগুলোতে পানি সাপ্লাইয়ে।
২) ঢাকার বিভিন্ন এলাকাগুলো উন্নয়নে, বিশেষ করে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা পুনর্গঠনে।
৩) ডেইরি শিল্পে
৪) সামুদ্রিক মাছ সংক্রান্ত
৫) বন ও গাছপালা
৬) বাচ্চাদের স্কুল থেকে ঝড়ে পরা বন্ধ করতে (সেই ফান্ড থেকে সম্ভবত বাচ্চাদের টিফিন বা স্কুল ড্রেস দেয়া হবে)।
৭) চিকিৎসা সেক্টরে।
৮) ট্রানজিট বা করিডর তৈরীতে
৯) বিশুদ্ধ বাতাস
১০) নৌ যাতায়াত সংক্রান্ত
১১) কৃষিতে
১২) স্কুলের বাচ্চাদের বিনামূল্যে বই সরবরাহ
১৩) নারীদেরকে কাজে নিয়ে আসা
১৪) বুড়িগঙ্গার তীরে পর্যটন করতে।
এরকম আরো অনেক প্রজেক্ট আছে বিশ্বব্যাংকের। (https://bit.ly/2k66QYR)
ভালোভাবে লক্ষ্য করুন- যে সমস্ত সেক্টরে বিশ্বব্যাংকের অর্থ ঢুকেছে, সেখানেই কোন কোন ঝামেলা দেখা দিচ্ছে। এখন কথা হইলো- বিএনপির আমলে এক পাট ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে যদি বিশ্বব্যাংক পাট সেক্টর ধ্বংস করতে পারে, তবে আওয়ামী সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংক যে সব সেক্টরে ঋণ দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কি শর্ত লুকিয়ে আছে, যা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর ? এগুলো আগে জানা প্রয়োজন।
যেমন হতে পারে-
ক) বিনামূল্যে পাঠ্যবইয়ে ঋণ দিলে সেখানে বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপনে হিন্দুত্ববাদী পাঠ্য অন্তর্ভূক্ত করতে হয়েছে, যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর।
খ) বুড়িগঙ্গার তীরে পর্যটন কেন্দ্র করার জন্য বুড়িগঙ্গার পানি পরিশুদ্ধ করার নামে ট্যানারি শিল্পকে শেষ করে দেয়া হয়েছে, অপরদিকে বাংলাদেশের কাচামালের সুযোগ নিতে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত ঘেষে গড়ে উঠেছে বিরাট ট্যানারিপল্লী।
গ) শহরের পানি সরবরাহ সিস্টেম ওয়াসা থেকে বের করে কোন বহুজাতিক কোম্পানিকে দিতে চায় বিশ্বব্যাংক।
ঘ) বাংলাদেশের গরুর দুধ ও মাংশ নিয়ে নানান ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের শিল্প শেষ করে বিদেশ থেকে আমদানি করতে চাইছে।
ঙ) বায়ু দূষণের নাম করে ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া। এতে পাথরের চাহিদা ব্যাপক বাড়বে। কিন্তু বাংলাদেশের পাথরের উৎসগুলো (সিলেট, দিনাজপুর, সাঙ্গা-মাতামুহুরী) পরিবেশের অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে পাথর আমদানি করতে হচ্ছে ভারত থেকে। উল্লেখ্য বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা সবচেয়ে অধিক পণ্য হলো পাথর।
চ) সামুদ্রিক মাছ বন্ধ করে ভারতীয় জেলেদের দিয়ে সেই মাছ ধরে নিয়ে যাওয়া।
ছ) চিকিৎসা সেক্টরে অরাজকতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশের রোগিরা চলে যাচ্ছে ভারতে।
জ) কৃষিকে দুর্বল করে দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা দাম না পেয়ে ধান চাষ বন্ধ করে দিচ্ছে।অনেক কৃষি পণ্য ভারত থেকে আমদানি করে দেশের মার্কেট শেষ করে দেয়া হচ্ছে।
ঝ) পুরান ঢাকা উন্নয়নের নামে ক্ষুদ্র শিল্পগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। আর সেগুলোর একমাত্র বিকল্প হচ্ছে ভারতের বাজার।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, বিশ্বব্যাংকে যদি আমেরিকার পাওয়ার সবচেয়ে বেশি থাকে, তবে বিশ্বব্যাংকের কোন শর্ত বা পদক্ষেপে ভারতের লাভ হয় কেন ?
এর উত্তর হলো- বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চলতেছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এ অঞ্চলে যেন চীন ক্ষমতা বিস্তার না করতে পারে, এজন্য ভারতকে তার আঞ্চলিক প্রতিনিধি এবং চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করাতে চাইছে। এজন্য বিশ্বব্যাংকও চাইবে বাংলাদেশের ব্যবসা শেষ হয়ে ভারত তার মালিক হোক, এক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে লাভবান হবে আমেরিকাই। আর বাংলাদেশের ব্যবসা নষ্ট করে ভারতের ট্র্যান্সফার করা যে বিশ্বব্যাংকের স্বভাব সেটা খোদ শেখ হাসিনা নিজের মুখে স্বীকার করেছে।
এখন কথা হইলো, এই যে কয়েকদিন আগে বিশ্বব্যাংক সরকারকে ব্ল্যাংক চেক দিলো, এই ব্ল্যাংক চেকের আড়ালে কি শর্ত লুকিয়ে রেখেছে সরকার ও বিশ্বব্যাংক, যে শর্তে ধ্বংস হতে পারে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর, হুমকির মুখে পড়তে পারে দেশের স্বার্বভৌমত্ব।
তবে এবার যেহেতু ব্ল্যাংক চেক, তাহলে লোভটাও নিশ্চয়ই বড়, এবং দেশের ক্ষতিটাও অবশ্যই বড় হবে।
তাই আওয়ামী সরকার লোভে পড়ে বিশ্বব্যাংকের ব্ল্যাংক চেক নিয়ে কতটুকু দেশ বিক্রি করছে, তা অবশ্যই জনসম্মুক্ষে প্রকাশের দাবী জানাই।