রোহিঙ্গাদের শত্রু না বানিয়ে সম্পদ বানানো যায় না ? এন.সি-১৭৫

রোহিঙ্গাদের শত্রু না বানিয়ে সম্পদ বানানো যায় না ?

Image result for সাগর
রোহিঙ্গাদের শত্রু না বানিয়ে সম্পদ বানানো যায় না ?
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য ব্লু-ইকোনোমির কথা চিন্তা করলে বাংলাদেশের জন্য বড় সম্পদ হলো বঙ্গোপসাগরের এক খণ্ড অংশ। বঙ্গোপসাগরের এই খণ্ড অংশটির জন্য আজকে বাংলাদেশের কাছে বড় বড় আন্তজার্তিক শক্তিগুলো এসে ধর্না দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের কাছে বঙ্গোপসাগরের যে অংশটুকু আছে, তার থেকে বড় অংশ আছে কিন্তু আরাকানের ভাগে। এজন্য বাংলাদেশের আগেই সেই আরাকানের দিকে চোখ পড়েছিলো আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর। যার পাশ্র্বপ্রতিক্রিয়ায় বাস্তচ্যূত হতে হয়েছে আরাকানের আদিবাসী রোহিঙ্গাদের।
এটা ঠিক, আজকে রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমি ছাড়া। কিন্তু আরাকান যে তাদের আদি নিবাস সেটা বিশ্ব সমাদৃত। সুতরাং যদি কখন বার্মার সরকারের অধীন থেকে রোহিঙ্গারা আদিবাস ভূমি ফিরিয়ে নিতে পারে, তবে সেই ভূমির সাথে বিরাট সমুদ্র সম্পদের মালিকও কিন্তু হয়ে যাবে রোহিঙ্গারা। ঘটনা হলো এই সুযোগে কেউ যদি রোহিঙ্গাদের ‘মাথা’ বা বুদ্ধিদাতা হয়ে যেতে পারে, তবে ঐ বুদ্ধিদাতার ভাগ্যেই কিন্তু জুটবে বিশাল সম্পদ। এই যে এত এত এনজিও ইউরোপ-আমেরিকা থেকে এসে রোহিঙ্গাদের পেছনে অর্থ ব্যয় করছে, এগুলো কি এমনি এমনি করতেছে মনে হয় ? কখনই না। সেই ৮০-৮২ সাল থেকে তারা এত কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করছে। রোহিঙ্গাদের লাত্থি তারাও কম খায় নাই। কিন্তু তারা চুপ করে সব সহ্য করে যাচ্ছে। কারণ এর পেছনে তাদের দীর্ঘমেয়াদী বিশেষ উদ্দেশ্য আাছে।
তারা জানে, এই রোহিঙ্গাদের পেছনে যদি তারা ১০০ টাকা খরচ করে, তবে তার বদলে তারা ভবিষ্যতে ১ লক্ষ টাকা তুলে নিবে। তবে হ্যা, এর জন্য সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হবে। যদিও বাংলাদেশীদের জন্য রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা বেশি সোজা। কারণ- ধর্ম ও ভাষা (কাছাকাছি) দুইটি পশ্চিমাদের তুলনায় বাংলাদেশীদের পক্ষে।
সত্যি বলতে- মুসলমানরা আসলে দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করতে পারে না।
তারা জানে, ইহুদীরা বিশ্বে এখন ক্ষমতাবান। তারা এটাও জানে, ইহুদী জায়ানিস্টরা তাদের প্রটোকলে ৫০০ বছরের প্ল্যান নিয়েছিলো। কিন্তু তারা দুই হিসেব মিলিয়ে এটা বুঝতে পারে না, পৃথিবীতে ক্ষমতাবান হতে হলে দীর্ঘমেয়াদেই চিন্তা করতে হয়, স্বল্প মেয়াদে না। এর অবশ্য কারণ আছে, তাদের পাঠ্যবইয়ে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে, “নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও। বাকির খাতা শূণ্য থাক।”
আমি জানি, এসব দেখে, অনেকে বলবে- ভাই এসব চিন্তা করে লাভ কি ?
আওয়ামী সরকার কি এসব করবে ?
হ্যা, এটা ঠিক আওয়ামী সরকার এটা করবে না। কিন্তু আওয়ামী সরকারও চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে ?
একটা সময় আওয়ামী সরকার চলে গিয়ে কি নতুন কেউ আসতে পারে না ?
সেই নতুন কেউ হয়ত রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক পলিসি “কারো সাথে শত্রুতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব” নামক হিজরা নীতি পরিবর্তন করে নতুন নীতি করবে- “সবার বন্ধুভাবাপন্ন পলিসির সাথে বন্ধুত্ব, সবার শত্রুভাবাপন্ন পলিসির বিপরীতে শত্রুত্ব”। অর্থাৎ আমি কারো নির্দ্দিষ্ট বন্ধু বা কারো নির্দ্দিষ্ট শত্রু নই। কেউ বন্ধুভাবাপন্নতা দেখালে আমি তার সেই পলিসির বিপরীতে বন্ধুভাব দেখাবো। আবার সেই যদি অন্য কোন পলিসিতে শত্রুভাবাপন্নতা দেখায়, তবে তার সেই পলিসির বিপরীতে আমি শত্রুতা দেখাবো।
কিছুদিন আগে একটা স্ট্যাটাসে আমি বলেছিলাম, “শরনার্থী সমস্যা মুসলমানদের সমস্যা। তাই শরনার্থী সমস্যা বিষয়টি আসাম বা রোহিঙ্গা ভিত্তিক চিন্তা না করে, মুসলিম জাতির সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এক্ষেত্রে মার্কিন সম্রাজ্যবাদের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের আলাদা আলাদা পলিসি আছে। তাদের পলিসি ব্যতিরেকে মুসলিম সমস্যা হিসেবে মুসলমানদের আলাদা কোন পলিসি আছে কি ?”
কিন্তু স্ট্যাটাস দেয়ার পর কমেন্টে দেখে বুঝেছিলাম, অধিকাংশ মুসলমান মনে হয় আমার স্ট্যাটাসের মূল থিম ধরতে পারে নাই। এর কারণ হলো মুসলমানদের মধ্যে জাতীয়বাদ বা আঞ্চলিক বাদ ঢুকে গেছে। মুসলমানরা নিজেদের ভারতীয় মুসলমান, বাংলাদেশী মুসলমান, মায়ানামারের মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু ইসলামের মূল থিমের মধ্যে কিন্তু এটা নাই। মানে রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে যে সীমারেখা আছে, এটা কিন্তু ইসলামের মূলতত্ত্ব অনুসারে স্বীকৃত না। ইসলামে মুসলমানদের এক দেহ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কিন্তু কোন অঞ্চলবাদ,সীমারেখা বা জাতীয়তার ভিত্তিতে পৃথক করা হয় নাই। এ সম্পর্কে কবি ইকবালের একটা কবিতা আছে-
“চীন ও আরাব হামারা, হিন্দুস্তাঁ হামারা
মুসলিম হেঁ হাম, ওয়াতান হ্যায় সারা জাহাঁ হামারা”
অর্থ: “চীন ও আরব আমাদের, হিন্দুস্তান আমাদের
মুসলিম যে মোরা, সারা পৃথিবীটাই নিজভূমি আমাদের”।
আসলে মুসলমানদের মধ্যে অঞ্চলবাদ বা জাতীয়তাবাদের ঢুকার কারণে মুসলমানরা আজকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন, আর তাদের বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিচ্ছে ইহুদী খ্রিস্টান বা অন্য ধর্মের লোকরা।
আমার মনে হয়, এই পলিসিটা এখন হিন্দুরা গ্রহণ করছে।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের হিন্দুরা বললো, তারা নির্যাতিত হচ্ছে।
সাথে সাথে ভারতের বিজেপির হিন্দুরা বললো- বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য তাদের দ্বার খোলা।
আবার কয়েকদিন আগে আসামের এনআরসিতে ১৯ লক্ষের মধ্যে ১৩ লক্ষ হিন্দু বাদ পড়লো। সাথে সাথে বাংলাদেশের হিন্দুরা দাবী তুললো- ভারতের ১৩ লক্ষ হিন্দুকে বাংলাদেশে পুনর্বাসন করা হোক।
অর্পিত সম্পত্তি নামক যে সম্পত্তিগুলো মুসলমানদের দখল করে রাখছে (তাদের দাবী)
সেগুলো সেই ১৩ লক্ষ হিন্দুকে দিয়ে দেয়া হোক।
বিষয়টি লক্ষ্য করেন, তাদের দাবী পূরণ হোক কিংবা না হোক,
অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কিন্তু হিন্দুজনগোষ্ঠীর ভেতর বেশ দৃঢ়ভাবে আছে।
বিষয়টি তাদের মধ্যে এতটাই দৃঢ় যে, উগ্রহিন্দুত্ববাদী বিজেপি এবং সেক্যুলার কংগ্রেস উভয়েই অখণ্ড ভারত নীতির পক্ষে।
অনেকে বলতে পারেন, “ভাই এগুলো চিন্তা করে কি লাভ, আমাদের দেশ তো এখন দরিদ্র”।
আসলে চিন্তা করতে দরিদ্র-বড়লোক লাগে না।
ভারতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ চরম দরিদ্র, অনেক মানুষ দরিদ্রতার কারণে আত্মহত্যা করে, অনেকে মাটি খায়, অর্ধেক মানুষের টয়লেট পর্যন্ত নেই। কিন্তু সেই ভারত চাদে সফল হোক না হোক চন্দ্রযান পাঠায়। ব্যবহার করুক বা নাই করুক পরমাণু অস্ত্র রাখে।
আমেরিকাতেও অনেক মানুষ দরিদ্র, রাস্তায় থাকে, ঘুমায়। ব্রিটেনেরও একই অবস্থা। তাই বলে তারা কিন্তু বাহ্যিক আগ্রাসী মনোভাব পরিহার করে নাই। এবং তাদের সেই বাহ্যিক আগ্রাসী মনোভাবের কারণে আমরা তাদের সমীহ করে চলি, তাদের ভয় পাই। কোন কিছু হলেই তাদের হাতে পায়ে ধরি। কারণ আমরা বা আমাদের মুরব্বীরা তাদের কিছু একটা মনে করে, তাদের বাহ্যিক আগ্রাসী মনোভাবের কারণেই।
আমি বলছি না, বাংলাদেশীদের এখনই সে রকম হতে হবে, কিন্তু এই চিন্তাগুলো অন্তত শুরু করা উচিত,
এই চিন্তটাই এক সময় আমাদের পৃথিবীর বুকে অনেক বড় করে তুলতে পারে।
হয়ত অনেকে বলবেন- ভাই মুসলমারা আগ্রাসী হলেই ওরা ‘জঙ্গী তকমা দিবে’।
হ্যারে ভাই। তারা তো দিবেই। তারা তো মুসলমানদের দমাতে চাইবেই।
এইজন্যই তো তারা জঙ্গী তকমা দেয়ার পলিসি বের করছে।
কথা হইলো তাদের জঙ্গী তকমা দেয়ার পলিসি’র বিপরীতে আপনারা আপডেট কোন পলিসি বের করছেন কী ?
মানে তারা ‘জঙ্গী তকমা’ নামক লক বের করছে, আপনি বুদ্ধি খাটিয়ে জঙ্গী-আনলক পলিসি বের করেন,
যেন তাদের ফাঁদেও না আটকান, আবার আপনার স্বার্থও উদ্ধার হয়।
তাহলেই তো হয়। দুনিয়াতে কোন কিছুই অসম্ভব নয়, এটা সব সময় মনে রাখবেন।
যাই হোক, অনেক কথা বললাম।
তবে শেষ কথা হলো- রোহিঙ্গাদের প্রতি অযথা বিদ্বেষ দেখিয়ে তাদের শত্রু বানানোটা বোকামি।
বরং একটু কষ্ট হলেও তাদের পুষেই রাখুন।
যদি রোহিঙ্গাদের সঠিক ব্যবহার করা যায়, তবে একটা সময় রোহিঙ্গারা আপনার জন্য সমস্যা নয়,
বরং বিরাট সম্পদের উৎস হিসেবে কাজ করবে। সারা বাংলাদেশের মানুষ যা লাভ করছে,
রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে তার থেকে বেশি কিছু পেতে পারবেন।
৮০ বছর আগে জিন্নাহ ভুল করে আরাকানকে মুসলমানদের না করে বৌদ্ধদের হাতে দিয়ে এসেছিলো।
সেই ভুলটা আবার শোধরানো যায় কি না, সেটা একবার হলেও তো চেষ্টা করা উচিত।
No photo description available.