গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংককে কোন সহায়তা দিতে চেয়েছিলো। এন.সি-১৫৫

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংককে কোন সহায়তা দিতে চেয়েছিলো।
Related imageগত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংককে কোন সহায়তা দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা অগ্রাহ্য করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য ছিলো- “খেলাপিঋণসহ ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন দুর্বলতা হল দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এখানে বিদেশি সংস্থা কি করবে? বরং তাদের সহায়তা নিতে গেলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি। কারণ তারা তো পয়সা ছাড়া কাজ করবে না। সে ক্ষেত্রে শুধু অর্থ খরচই বাড়বে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না।… মনে রাখতে হবে, সহায়তার ছদ্মবেশে বিদেশি সংস্থাগুলো শুধু নিজেদের লাভই খোঁজে। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না।” (https://bit.ly/2l00sTk)
লক্ষণীয় ছিলো- আইএমএফকে কষ্ট দেয়ায় দৈনিক প্রথম আলো বেশ মায়াকান্না কেঁদেছিলো। এবং ফেসবুকে একটি অযথা পাবলিক ভোট তৈরী করে আইএমএফ পক্ষে সাফাই তৈরী করতে চেয়েছিলো। যদিও সাধারণ জনগণ এগুলোর কিছুই বুঝে না। (https://bit.ly/2kvaXOl)
যাই হোক, আইএমএফ কি জিনিস তা সাধারণ মানুষ এখনও বুঝে নাই। আইএমএফ আর বিশ্বব্যাংক হলো মার্কিন সম্র্যাজবাদীদের তৈরী নকল নিরপেক্ষ সংগঠন, যাদের কাজ সারা বিশ্বকে মার্কিন সম্রাজ্যবাদের মুখাপেক্ষী করা।
শুরুতে এদের কাজ ছিলো মার্কিন ডলারকে এমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা,
যেখানে ডলার শুধু ছাপা খানায় ছাপালেই হবে, এর বিপরীতে কোন সম্পদ জমা রাখতে হবে না।
বিভিন্ন সময় আমরা যে জাল টাকার কথা শুনি, আসলে জাল টাকা বিষয়টি কি ?
আসলে টাকা হচ্ছে, এক ধরনের ‘চেক’।
চেকের মাধ্যমে যেমন নির্দ্দিষ্ট এমাউন্টের টাকা লেনদেন হয়,
ঠিক তেমনি টাকার মাধ্যমে সম্পদ লেনদেন হয়।
মানে ১০০০ টাকার নোট লেনদেন করার মানে, আপনি ১০০০ টাকার পরিমাণ সম্পদ লেনদেন করলেন।
অনেকে চেক দেয়, কিন্তু ব্যাংকে টাকা থাকে না। এ অবস্থায় ব্যাংকে টাকা না থাকলে চেক ডিসঅনার মামলা হয়।
ঠিক তেমনি টাকার বিপরীতেও কোন সম্পদ জমা রাখতে হয়, যদি কোন টাকার বিপরীতে সম্পদ জমা না থাকে তবে বিষয়টি জাল টাকার মত হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো- সেই ১৯৭১ সাল থেকে আমেরিকা এই জাল টাকা ছাপিয়ে যাচ্ছে, আর সেটাকে বৈধতা দেয়ার জন্য থার্ড পার্টি হিসেবে কাজ করেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক।
সাধারণত, যারা মার্কেটে জাল টাকা ছাড়ে, তারা জাল টাকার মাধ্যমে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন সম্পদ কিনে নেয়। বা জাল টাকার মাধ্যমে সম্পদপূর্ণ টাকাগুলো কিনে নেয়।
ঠিক একইভাবে, আমেরিকা জাল টাকার মাধ্যমে সারা বিশ্বের সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে।
আমেরিকা এক্ষেত্রে তার জাল টাকার একটা সুন্দর নাম দিয়েছে- ফিয়াট কারেন্সি।
ফিয়াট কারেন্সি হলো এমন এক মুদ্রা, যার বিপরীতে কোন সম্পদ রাখতে হয় না, এর ভ্যালু নির্ধারিত হয় সাপ্লাই ডিমান্ডের উপর ভিত্তি করে।
১৯৭১ সালে নিক্সন শকের মাধ্যমে আমেরিকা যখন জাল টাকা উৎপাদন শুরু করলো, তখন সেই জাল টাকার ডিমান্ড তৈরী করে দিলো সৌদি আরব। সে ঘোষণা দিলো- আমার তেল কিনতে হলে মার্কিন ডলার লাগবে।
ফলে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রথমে আমেরিকা থেকে ডলার কিনলো, তারপর সেই ডলার দিয়ে সৌদি থেকে তেল কিনলো।
এতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদা তৈরী করে প্রতিষ্ঠা পেলো আমেরিকার জাল টাকা।।
বিষয়টি কত কঠিন যে, আমাদের মত রাষ্ট্রগুলো আমাদের সম্পদপূর্ণ ৮৪ টাকা দিয়ে আমেরিকা ১ ডলার জাল টাকা কিনে আনছি।
শুধু এখানেই শেষ নয়- আমাদের রিজার্ভে যে ৩ লক্ষ কোটি টাকার মত আছে, সেটাও আমেরিকার জাল টাকায় কনভার্ট করে রাখা হয়েছে।
এছাড়া আমরা বছরে যে আমদানি রফতানি করি প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকার মত, সেটাও করতে হয় আমেরিকার জাল টাকা বা ডলার মাধ্যমে।
সোজা ভাষায় আমাদের যে কোন ধরনের সম্পদে ভাগ অটোমেটিক চলে যায় সম্রাজ্যবাদী আমেরিকার কাছে।
উল্লেখ করার মত বিষয় হচ্ছে, আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক কিন্তু আবার মার্কিন সরকারের নিয়ন্ত্রণে নয়,
এটা প্রাইভেট মানে, কিছু প্রভাবশালী ইহুদীবাদী পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এই একই কাজটা করতে চেয়েছিলো ইউরোপের কিছু প্রভাবশালী রাষ্ট্র।
তারা নিজেদের মধ্যে চালু করেছিলো ফিয়াট মানি ইউরো।
কিন্তু তাদের পরিধি শর্ট এলাকায় হওয়ায়- ফলাফলটা খুব প্রকাশ্য দেখা যায়।
মানে জার্মানির মত প্রভাবশালীরা দিনে দিনে বড় লোক হতে থাকে,
আর গ্রিসের মত রাষ্ট্রগুলো দেওলিয়া হয়ে পড়ে।
সোজা ভাষায় গ্রিসের টাকা চুষে খায় জার্মানি, কিন্তু খালী চোখে দেখার সুযোগ নাই।
কিন্তু কথা হলো- ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো যদি ডলারের বাইরে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ইউরোতে লেনদেন করে, তখন তো আবার আমেরিকার লাভ নাই। কারণ সে তো ভাগ পাচ্ছে না। এখন আমেরিকার কি করবে ?
সে চাইলো কোন উপায়ে ইউরোজোন ভেঙ্গে দিতে, যার প্রক্রিয়া আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি ব্রেক্সিট নামে। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে কম বেশি করে যে ভাগ বাটোয়ারা করে খাচ্ছিলো, ইউরোজোন ভেঙ্গে গেলে তখন ভাগটা আমেরিকাও পাওয়া শুরু করবে।
আপনারা দেখবেন- মাঝে মাঝে বাংলাদেশের কিছু ভারতপন্থী নেতা বলে-
“বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অভিন্ন মুদ্রা চালু করা হবে।”
এই মুদ্রা চালু করলে অনেক সুবিধা। কারণ এখন ভারতের অনেক পলিসি করে বাংলাদেশ সম্পদ নিতে হয়। তখন অভিন্ন মুদ্রা চালু করলে সেই মুদ্রা ব্যবহার করলে অটোমেটিক তাদের কাছে সম্পদ চলে যাবে, আলাদা করে কোন কিছুই করতে হবে না।
আজকে আমাদের দেশে অনেক উৎপাদন হয়।
আমাদের জনসংখ্যাও অনেক, সবাই কাজ করে,
তবুও আয়-বরকত নাই। কেন ?
কোথাও কি ছিদ্র আছে ? আমরা সম্পদ তৈরী করছি, কিন্তু সেই ছিদ্র দিয়ে সম্পদ উড়ে যাচ্ছে ? কেউ নিয়ে যাচ্ছে আমার আয় করা সম্পদ ??
আসলে এই উড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেকে হয়ত বুঝে না।
যেমন একটা গাড়িতে আপনি তেল ভরে নিচ্ছেন।
তেল শেষ হচ্ছে আপনার গাড়ি চলতেছে। আপনি ভাবলেন-
আরে ভাই, আমার তেল তো কেউ চুরি করে নাই। তাহলে সমস্যা কি ?
সমস্যা আছে। আপনি গাড়ির ট্যাংকিতে যে তেল ভরলেন, সেটার মাত্র মাত্র ১৫% হয়ত আপনার ইঞ্জিন ব্যবহার করতে পারছে, বাকিটা অপচয় হচ্ছে। এতে ১ লিটার তেলে হয়ত আপনার গাড়ি ৫ কিলো যেতে পারছে,
কিন্তু বাস্তবে তেলের সঠিক ব্যবহার করতে পারলে আপনার যাওয়ার কথা ছিলো ১ লিটার তেলে ৪০ কিলো। অর্থাৎ আপনার অপচয় হচ্ছে, কিন্তু আপনি বুঝতে পারতেছেন না।
ঠিক একইভাবে বর্তমান মুদ্রা ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্রাজ্যবাদীরা আপনার সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আপনি টের পাচ্ছেন না।
১০ টাকা দিয়ে আপনার যে কাজ হওয়ার কথা, সেটা আপনি ১০০ টাকা দিয়ে করতে হচ্ছে। কারণ তারা সিস্টেমটা এমনভাবে করেছে যে আপনার ১০০ টাকার ৯০ টাকা তারা নিয়ে যাবে, কিন্তু আপনি টের পাবেন না।
যাই হোক, এতগুলো কথা বললাম, এ কারণে- আমাদের নিজের প্রয়োজনেই আমাদেরকে সম্রাজ্যবাদীদের মুদ্রা ব্যবস্থার এই গোলকধাধা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। চীন কিন্তু তার রিজার্ভ থেকে ডলার ত্যাগ করেছে। রাশিয়া-ইরান-তুরস্ক লেনদেনে ডলার বর্জনের ডাক দিয়েছে।
আমার মনে হয় মুসলিম দেশগুলোর আলাদা করে ভাবা উচিত-
১) কিভাবে করে ফিয়াট কারেন্সি নামক জাল টাকা (বা অনলাইন ক্রিপ্টো কারেন্সি) বর্জন করা যায়।
২) অন্তত নিজেদের মধ্যে হলেও নিজস্ব পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করা যায়।
সমস্যাটা একদিনে তৈরী হয়নি, তাই সমাধানও একদিনে হবে না।
যারা ষড়যন্ত্রগুলো তৈরী করেছে, তারাও বহুদিন ধরে বহু কষ্ট করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে। তাই আপনি চাইলেও এক নিমেষে বের হতে পারবেন না্ । তবে যদি বিপরীত চিন্তাধারা তৈরী করা যায় এবং সবাই সচেতন হয়, তবে একটা সময় অবশ্যই ইহুদী সম্রাজ্যবাদীদের এ গোপন ও ভয়ঙ্কর ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।