দেশের শীর্ষ মাথাদের জুয়ার আস্তানাগুলো বন্ধ হবে কবে ? এন.সি-১৬০

দেশের শীর্ষ মাথাদের জুয়ার আস্তানাগুলো বন্ধ হবে কবে ?
19 September 2019
দেশের শীর্ষ মাথাদের জুয়ার আস্তানাগুলো বন্ধ হবে কবে ?
Related imageসম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যুবলীগ নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ক্যাসিনো বা জুয়ার আড্ডায় অভিজান চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক গ্রেফতার করছে, কাউকে কাউকে জেল-জরিমানাও করছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এইসব ক্লাব ভিত্তিক জুয়া খেলা যদি বন্ধ করতে হয়, তবে প্রথম অধিকার রাখে দেশের শীর্ষ অভিজাত শ্রেণীর ক্লাবগুলোর জুয়া খেলা বন্ধ করা। এর মধ্যে আছে- ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা বা ঢাকা লেডিস ক্লাবের মত কথিত ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলো।
আমার জানা মতে, এই ক্লাবগুলোতে দেশের সবচেয়ে অভিজাত শ্রেণী। যেমন- শীর্ষ এমপি, শীর্ষ মন্ত্রী, শীর্ষ ব্যবসায়ী, শীর্ষ সাংবাদিক, শীর্ষ আইনজীবি, শীর্ষ বিচারপতি, শীর্ষ বুদ্ধিজীবি, শীর্ষ কূটনীতিক, শীর্ষ আমলা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ সদস্য ও পর্দার আড়লে থাকা হোমরা চোমরারা। এই সব ক্লাবে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে দেশের শীর্ষ টেন্ডার ও ফাইলের লেনদেন হয়। দেশের শীর্ষ লোকগুলো এখানে বসে আকাম-কুকাম করে বিধায় সে খবর মিডিয়াতেও আসে না, সাধারণ জনগণ জানতেও পারে না। কারণ মিডিয়াতে যারা আনবে বা যারা ব্যবস্থা নিবে তাদের বসরাও এইসব ক্লাবে জুয়া খেলে, মদ খায় আর নারী নিয়ে ঢলাঢলি করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৬ সালের-
৪ ডিসেম্বর এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ১৩টি অভিজাত ক্লাবে জুয়া খেলা ৩ মাসের জন্য বন্ধ করতে আদেশ দেয়।
ক্লাবগুলো হলো- ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, ঢাকা লেডিস ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাংসিনিয়রস ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, সিলেট ক্লাব ও খুলনা ক্লাব।
কিন্তু এর ১ দিন পর-
৬ ডিসেম্বর ঢাকা ক্লাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার জজে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়।
৮ ডিসেম্বর সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ ফের ৩ মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশ বহাল করে। কিন্তু
১১ ডিসেম্বর ফের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সেই আদেশ স্থগিত করে দেয়, আবারো এই অভিজাত ক্লাবগুলোতে জুয়া খেলা জারির পক্ষে আদেশ দেয়।
উল্লেখ্য, ঐ সময় ঢাকা ক্লাবসহ ১৩টি অভিজাত ক্লাবে জুয়া খেলার পক্ষে ওকালতি করে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, যাকে দেশের মানুষ সুশীল এবং জনদরদী হিসেবেই চেনে। (https://bit.ly/2mhzaYXhttps://bit.ly/2krBk7Zhttps://bit.ly/2mhzdE7)
পাঠক লক্ষ্য করুণ, এই ক্লাবগুলোতে জুয়া খেলা কতটা দরকারি এবং সেই জুয়া খেলাটা কতটা প্রভাবশালী নির্ভর যে হাইকোর্টের মাধ্যমে মাত্র ৩ মাসের জন্য তা বন্ধ করতে চাইলেও একাধিকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয় এবং প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত সেই জুয়া খেলার পক্ষে রায় দেয়। আর প্রশাসনের মাধ্যমে সেসব ক্লাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া তো স্বপ্নেও চিন্তা করা যায় না।
বর্তমানে যুবলীগের তত্ত্বাবধানে যে ক্যাসিনো বা জুয়ার ক্লাব বন্ধের কথা বলা হচ্ছে, আমার কাছে এইসব অভিজাত ক্লাবগুলোর জুয়ার তুলনায় একেবারেই নস্যি মনে হয়।
তাই ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব বা ধানমন্ডি ক্লাবে দেশের মাথাগুলো যখন জুয়া খেলে সেটা বন্ধ করা আমার কাছে বেশি জরুরী মনে হয়। কারণ দেশের শীর্ষ মাথাগুলো যতদিন জুয়ামুক্ত না হবে, ততদিন পুরো দেশকে জুয়া মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
Image may contain: outdoor and text