গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী রবার্ট বারট্রামের নেতৃত্ব ইউএসএইডের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সাথে দেখা করে। সেই প্রতিনিধি দলকে কৃষিমন্ত্রী আশ্বাস দেয়, খুব শিঘ্রই গোল্ডেন রাইস নামক বিশেষ চালকে বাংলাদেশে চালু করা হবে। (https://sarabangla.net/post/sb-319603/)
উল্লেখ্য গোল্ডেন রাইস একটি ‘জিএমও ফুড’ যা বিটা ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) সমৃদ্ধ একটি চাল। দাবী করা হয়, এই চালের মাধ্যমে নাকি আমাদের ‘ভিটামিন-এ’র চাহিদা পূরণ হবে। কিন্তু দেশী চাল বাদ দিয়ে এই জিএমও চালটি আনলে আমাদের কতটুকু উপকার হবে, তা বিস্তারিত জানার দরকার আছে। এ সম্পর্কে গত ফেব্রুয়ারী মাসে একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম, তখনও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলো বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস আসছে। সেই আর্টিকেলটির অংশ বিশেষ আবারও প্রকাশ করলাম-
-------
(১) কৃষিমন্ত্রী দাবী করছেন, “এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জৈব প্রযুক্তি প্রকৌশলের (জিএমও) মাধ্যমে রূপান্তরিত গোল্ডেন রাইসের অনুমোদন দিয়েছে।”
অথচ- এরমানে এই নয়, এই ধান যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া নিজ দেশে চাষ করবে। তারা থার্ডওয়ার্ল্ড কান্ট্রি বাংলাদেশ বা ফিলিপাইনে এই ধান চাষের অনুমুতি দিয়েছে এবং প্রয়োজন হলে তারা সেই ধান থেকে পাওয়া চাল বা খাদ্যদ্রব্য নিজ দেশে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে এই ধান চাষের অনুমুতি না দেয়ার কারণ, এই জিএমও ধান চাষ করলে পরাগায়নের মাধ্যমে অন্য ধানের বীজের মধ্যেও এর প্রভাব বিস্তার হবে। ঐ দেশের ধানের বীজ স্বকীয়তা হারাবে। এ থেকে একটি কথা বোঝা যায়, বাংলাদেশেও যদি এই জিএমও ধান চাষ করা হয়, তবে বাংলাদেশের উৎপাদিত ধানের বীজের মধ্যে পরাগায়নের মাধ্যমে গোল্ডেন রাইস প্রভাব বিস্তার করবে এবং দেশী ধানের বীজ স্বকীয়তা হারাবে। গোল্ডেন রাইস ডেভেলপ করছে বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেনটা এবং এতে ফান্ডিং করছে মাইক্রোসফটের মালিক বিল গেটস। বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানিগুলো উদ্দেশ্য থাকে সবকিছুর মধ্যে নিজের জাল বিস্তার করা। গোল্ডেন রাইস বাংলাদেশে চাষ শুরু হলে পরাগায়নের মাধ্যমে এর বীজ দেশী বীজের উপর প্রভাব বিস্তার করবে, ফলে বাংলাদেশের ধানের বীজ স্বনির্ভরতা হারাবে এবং বিদেশী কর্পোরেট কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যাবে।
-------
(১) কৃষিমন্ত্রী দাবী করছেন, “এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জৈব প্রযুক্তি প্রকৌশলের (জিএমও) মাধ্যমে রূপান্তরিত গোল্ডেন রাইসের অনুমোদন দিয়েছে।”
অথচ- এরমানে এই নয়, এই ধান যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া নিজ দেশে চাষ করবে। তারা থার্ডওয়ার্ল্ড কান্ট্রি বাংলাদেশ বা ফিলিপাইনে এই ধান চাষের অনুমুতি দিয়েছে এবং প্রয়োজন হলে তারা সেই ধান থেকে পাওয়া চাল বা খাদ্যদ্রব্য নিজ দেশে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে এই ধান চাষের অনুমুতি না দেয়ার কারণ, এই জিএমও ধান চাষ করলে পরাগায়নের মাধ্যমে অন্য ধানের বীজের মধ্যেও এর প্রভাব বিস্তার হবে। ঐ দেশের ধানের বীজ স্বকীয়তা হারাবে। এ থেকে একটি কথা বোঝা যায়, বাংলাদেশেও যদি এই জিএমও ধান চাষ করা হয়, তবে বাংলাদেশের উৎপাদিত ধানের বীজের মধ্যে পরাগায়নের মাধ্যমে গোল্ডেন রাইস প্রভাব বিস্তার করবে এবং দেশী ধানের বীজ স্বকীয়তা হারাবে। গোল্ডেন রাইস ডেভেলপ করছে বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেনটা এবং এতে ফান্ডিং করছে মাইক্রোসফটের মালিক বিল গেটস। বহুজাতিক কর্পোরেট কোম্পানিগুলো উদ্দেশ্য থাকে সবকিছুর মধ্যে নিজের জাল বিস্তার করা। গোল্ডেন রাইস বাংলাদেশে চাষ শুরু হলে পরাগায়নের মাধ্যমে এর বীজ দেশী বীজের উপর প্রভাব বিস্তার করবে, ফলে বাংলাদেশের ধানের বীজ স্বনির্ভরতা হারাবে এবং বিদেশী কর্পোরেট কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে যাবে।
(৩) গোল্ডেন রাইস চাষের যে মূল কারণ বলা হচ্ছে, সেটা হলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধতা। তাদের দাবি বাংলাদেশের মানুষ ভিটামিন এ’র অভাবে সবাই গণহারে রাতকানা রোগে ভুগছে। এই চাল খেলে বাংলাদেশীদের ভিটামিন এ’র অভাব পূরণ হবে, রাতকানা রোগ দূর হবে। কিন্তু মার্কিন ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এর বক্তব্য হচ্ছে, গোল্ডেন রাইসের মধ্যে খুব সামান্য পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে। বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছে, গোল্ডেন রাইস দ্বারা গরীব মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। অথচ গবেষকরা বলছে, গোল্ডেন রাইসের মধ্যে ভিটামিন এ’র পরিমাণ এতটাই কম যে, একজন মানুষের দৈনন্দিন ভিটামিন এ’র চাহিদা পূরণ হতে তাকে দিনে কমপক্ষে ৩ কেজি ৭৫০ গ্রাম গোল্ডেন রাইস খেতে হবে, যা কখনই সম্ভব না। অথচ দরিদ্রদের জন্য সহজলভ্য একটি মাত্র মিষ্টি আলুতে যে পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে তা দৈনন্দিন চাহিদার সোয়া চার গুন, এককাপ গাজরে দৈনন্দিন চাহিদার সোয়া ৩ গুন, ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ায় দৈনন্দিন চাহিদার পৌনে দুই গুন পর্যন্ত ভিটামিন এ থাকে, যার সামনে গোল্ডেন রাইস কিছুই না। অবাক করার মত বিষয়, বাংলাদেশে কৃষিমন্ত্রী গবীরদের জন্য সহজলভ্য গাজর, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টিআলু বা শাকসবজী বাদ দিয়ে কেন গোল্ডেন রাইসের মত আজগুবি জিনিসের বিজ্ঞাপন করছেন, তা মাথায় আসছে না ।
(৪) গোল্ডেন রাইসের বড় সমস্যা হচ্ছে, এটা বাতাসের সংস্পর্শে আসলে তার ভিটামিন এ’র ক্ষমতা দ্রুত হারাতে থাকে। গবেষণা বলছে, গোল্ডেন রাইস ৩ সপ্তাহ রাখলে ৪০% ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায় এবং আড়াই মাস রাখলে ৮৭% নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে গোল্ডেন রাইসের পুষ্টি পেতে হলে তা ক্ষেত থেকে আহরনের সাথে সাথে খেয়ে নিতে হবে।
(৫) গোল্ডেন রাইস কি নিরাপদ ?
গবেষকরা বলছে, বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রে যেখানে ভাত প্রধান খাদ্য, সেখানে গোল্ডেন রাইস নিরাপদ কিংবা অনিরাপদ এটার জন্য এখনও প্রয়োজনীয় পরিমাণে গবেষণা শেষ হয় নাই। তার আগেই তা বাংলাদেশ বা ফিলিপাইনের বাজারে ছাড়ার টার্গেট নেয়া হয়েছে, যা অনেকটা ঐ দেশের জনগণকে গিনিপিগ বানানোর মতই। একইসাথে অপরিকল্পিত ভিটামিন সমৃদ্ধকরণ শরীরের উপর সব সময় ভালো প্রভাব ফেলে না। বিশেষ করে কিছু কিছু ক্যারোটিনয়েড শরীরের জন্য ক্ষতিকারণ ও অনেক সময় বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
গবেষকরা বলছে, বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রে যেখানে ভাত প্রধান খাদ্য, সেখানে গোল্ডেন রাইস নিরাপদ কিংবা অনিরাপদ এটার জন্য এখনও প্রয়োজনীয় পরিমাণে গবেষণা শেষ হয় নাই। তার আগেই তা বাংলাদেশ বা ফিলিপাইনের বাজারে ছাড়ার টার্গেট নেয়া হয়েছে, যা অনেকটা ঐ দেশের জনগণকে গিনিপিগ বানানোর মতই। একইসাথে অপরিকল্পিত ভিটামিন সমৃদ্ধকরণ শরীরের উপর সব সময় ভালো প্রভাব ফেলে না। বিশেষ করে কিছু কিছু ক্যারোটিনয়েড শরীরের জন্য ক্ষতিকারণ ও অনেক সময় বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
(৬) গোল্ডেন রাইস পরীক্ষামূলক চাষের জন্য বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনকে বেছে নিয়েছে আন্তর্জাতিক কর্পোরেট কোম্পানিগুলো। কিন্তু ফিলিপাইনের কৃষকদের আন্দোলনের ফলে তা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ সরকার তার অনুমুতি দিয়ে দিলো।
(৭) ২০১৩ সালে বিভিন্ন বিদেশী কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর উপস্থিতি আমেরিকার পারডু ইউনিভার্সিটি থেকে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাককে বাংলাদেশের কৃষিতে তাদের নীতি গ্রহণ করার জন্য পুরষ্কার দেয়া হয়েছিলো। এই পদক দেয়ার কিছুদিন পরই বাংলাদেশে জিএমও বিটি বেগুনের অনুমোদন দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে এই আব্দুর রাজ্জাকই বলেছিলো, “সুযোগ পেলেই ‘সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ তুলে দেয়া হবে।
গোল্ডেন রাইস চাষের মাধ্যমে একদিকে যেমন বাংলাদেশের ধান সম্পদকে বিদেশী কর্পোরেটদের কাছে বিক্রি করার টার্গেট নিয়েছে সরকার, অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে তাদেরকে দিয়ে বহুজাতিকদের পন্য পরীক্ষা করা হবে। আমার মনে হয়, অন্য কোন সভ্য দেশের কৃষিমন্ত্রী এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ঘোষণা দেয়ার পর জনগণের প্রতিবাদের মুখে নিশ্চিত তার এবং তার প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হতো। যদিও বাংলাদেশের জনগণ ও বিরোধীদলগুলো এ ক্ষেত্রে নিরব।