ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু’র সভায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে। এন.সি- ১৫১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু’র সভায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে।
Image result for বাতি
শুনলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু’র সভায় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে। যদি সত্যিই সেটা হয়, তবে আমি বলবো, এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ-
১. আমার জানা মতে, ২৮ বছর ধরে ডাকসুতে নির্বাচন হয়নি,
ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য যে একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার, এটাও হয়ত অনেকে ভুলে গেছে।
এ অবস্থায় ২৮ বছর পর যদি ডাকসু’তে নির্বাচিত কমিটি হয়, তবে সেই কমিটির প্রথম উদ্যোগ নিতে হবে,
ছাত্র সমাজের মধ্যে ডাকসু’র প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করানো।
কিন্তু সেটা না করে তারা যদি শুরুতেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলোর দিকে হাত দেয়,
তবে ডাকসু’র আর গণতন্ত্র চর্চার যায়গা হলো না, স্বৈরতন্ত্র চর্চার যায়গায় পরিণত হলো।
এই সিদ্ধান্তের পর ডাকসু’র অবস্থান সাধারণ ছাত্রদের নিকট নষ্ট হবে হবে। ডাকসু’তে কোন সিদ্ধান্ত নিলেই সকল ছাত্র সেটা মেনে নিতে চাইবে না। কারণ তারা বলবে- “দূর ! যে সংসদে আমাদের চিন্তাধারার প্রতিফলন হয় না, সেটার সিদ্ধান্ত আবার মেনে নিতে হবে কেন ?”।
উদহারণ হিসেবে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাথে তুলনা করা যায়। প্রত্যেকটি দেশের জনগণের মাঝে জাতীয় সংসদের অনেক গুরুত্ব থাকে। সেখানে কি আলোচনা হয়, কি সিদ্ধান্ত হয়, সেটার জন্য সাধারণ জনতা উৎসুক হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সে ধরনের কোন গুরুত্ব-ই রাখে না। এর কারণ এই সংসদে সাধারণ জনতা চিন্তাধারার কোন প্রতিফলন হয় না, একটি নির্দ্দিষ্ট মহলের চিন্তাধারার প্রতিফলন হয়। ঠিক একইভাবে ডাকসু নামক ছাত্র সংসদে সাধারণ ছাত্রদের চিন্তাধারার প্রতিফলন থাকতে হবে, তাদের চিন্তাধারার বাইরে গিয়ে কিছু করা মোটেও ঠিক হবে না। আমি বলবো- যারা চাইছে এতদিন পর যে পরিবেশটা তৈরী হয়েছে সেটা নষ্ট হোক, শুধু তারাই এ ধরনের মাথামোটা সিদ্ধান্তকে প্রমোট করতে পারে।
২. অনেকে হয়ত ভাবতে পারে, এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর ক্ষতি হয়েছে।
আমি বলবো- এ কথাটা ভুল। ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনগুলোর কোন ক্ষতি হয় নি, তারা যেমন ছিলো তেমনই আছে। ক্ষতিটা হলো ডাকসু’র নিজের। তারা সব ছাত্রকে একটা সংসদে আনতে ব্যর্থ হলো। তারা নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধতা টেনে আনলো।
বলাবাহুল্য বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বয়স ৪০ বছরের উপরে। এখন পর্যন্ত কোন ধর্মভিত্তিক রাজনীতিক দল এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারেনি, এ অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক দল নিজেদের প্রচার করতে পারলেই তারা ক্যাম্পাস দখল করে ফেলবে, এটা একদম অদূরদর্শী চিন্তাধারা। বরং সেই দলগুলোকে নিজের মধ্যে করে নিতে পারলে বরং ডাকসু স্বয়ং সম্পূর্ণতা আরো প্রমাণিত হতো।
সত্যিই বলতে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ, এটা তো আজকে থেকে শুনতেছি না। কিন্তু বাস্তবে কি সেটা বন্ধ হয়েছে ? প্রত্যেক হলেই ধর্মনির্ভর সংগঠন আছে। হয়ত তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেছে না। মানে আপনি তাদেরকে সংসদে যায়গা দিচ্ছেন না, তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে কাজ করতেছে। মানে এক সংসদে তাদের সুযোগ না থাকায়, শত শত আন্ডারগ্রাউন্ড সংসদ বসতেছে। অথচ এই সুযোগটা থাকলে, ঐ শত শত আন্ডারগ্রাউন্ড সংসদ মূলধারার চিন্তাধারার সাথে সংযুক্ত হতো। হয়ত সেই সংসদে তাদের প্রতিনিধি থাকতেও পারতো, অথবা নাও পারতো। কিন্তু তারা চিন্তা করতো ডাকসু’র চিন্তাধারাকে নিয়ে। এখানে ডাকসু’কে নিজেকে সফল করার সুযোগ ছিলো।
৩. একটা কথা না বললেই না- খোদ বাংলাদেশে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি চালু আছে। যদি বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার দরকার হতো, তবে জাতীয়ভাবেই সেটা হতো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও কিন্তু বাংলাদেশের মানচিত্রের বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান নয়, বাংলাদশের ভেতরেরই একটা প্রতিষ্ঠান। সেটা মনে রেখেই ডাকসু নেতাদের চিন্তা করা উচিত।
৪. কিছু ছাত্রকে দেখলাম বোকার মত ৭২’র সংবিধানের কথা বলছে। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত, এখন সময়টা ৭২ নয়, ৪৭ বছর অতিবাহিত হয়ে ২০১৯ হয়ে গেছে। সংবিধান নিজেই ১৭ বার সংশোধনে গিয়েছে। যে বঙ্গবন্ধু নিজেই সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন, সেই বঙ্গবন্ধুই একাধিকবার সংবিধান সংশোধন করেছেন। তার কন্যাও বহুবার সংশোধন করেছেন। তারা নিজেও কখন বলেননি ৭২’র সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা। কারণ তারা সবাই জানে- সময়ের সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়। পরিবর্তন হয় মানুষের চিন্তাধারা, মানসিকতা, মানুষের ক্যাপাসিটি। যারা সময়ের পরিবর্তন হলেও জনসাধারণের চিন্তাধারায় সীমাবদ্ধতা আনতে চায়, তারা বোকা। এরা এক সময় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অপরদিকে বুদ্ধিমানরা সময়ের সাথে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও জনসাধারণের চিন্তাধারার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ায় নেয় এবং নিজেদের কার্যপরিধি ও সিস্টেমের আপডেট করে নেয়। ভুলে গেলে চলবে না- সময়টা ডিজিটাল, মানুষের হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল, সাথে ফোরজি কানেকশন। আপনি চাইলেও জোর করে কারো চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনতে পারবেন না। বরং বুদ্ধিমত্তা হলো- অধিকতর সুন্দর চিন্তা দিয়ে সকলের চিন্তাধারাগুলো জয় করে নেয়া।
সর্বোপরি এটা স্মরণ রাখতে হবে-
সময়টা এগিয়ে যাওয়ার, পিছিয়ে পড়ার নয়।
ছাত্রদের শক্তি ব্রেনের নিউরনে, কব্জির জোরে নয়।
কাজটা করতে হবে সবাইকে নিয়ে, বিচ্ছিন্নভাবে নয়।