বিদেশী বিনিয়োগ বা ঋণের পেছনে ছুটে আমাদের লাভ কতটুকু ? -৪ এন.সি ১৬৩

বিদেশী বিনিয়োগ বা ঋণের পেছনে ছুটে আমাদের লাভ কতটুকু ? -৪
17 September 2019
Related imageবিদেশী বিনিয়োগ বা ঋণের পেছনে ছুটে আমাদের লাভ কতটুকু ? -৪
নতুন যে সময়টা আসতেছে, সেটা হইলো সম্রাজ্যবাদীদের বাণিজ্যযুদ্ধের যুগ।
এ যুগে এক সম্রাজ্যবাদী, অন্য সম্রাজ্যবাদীকে বাণিজ্য বা ব্যবসা দিয়ে মাইর দিবে।
আমরা যারা ‘জনগণের ব্লক’ হবে বলে চিন্তা করি, তারা একটা কথা ভুলে যাই,
আমাদের শিক্ষিত সমাজকে প্রথম থেকেই শিক্ষা দেয়া হইছে- তুমি বড় হয়ে চাকুরী করবা।
চাকুরী শব্দটা আসছে চাকর বা দাস শব্দ থেকে।
আমাদের প্রজন্মকে ছোটবেলা থেকে একজন ভালো মানের চাকর বা দাস হওয়ার শিক্ষা দেয়া হয়।
অর্থাৎ তুমি পড়ালেখা শেষ করে কারো অধীনে দাস বা চাকর হবে।
তারমানে -শিক্ষাটাই অধীনন্ত হওয়ার শিক্ষা, সেই বাচ্চাটি যখন বড় হবে-তখন সে জাতিকে মুক্ত হওয়ার চিন্তা দিবে কিভাবে ?
আমি অনেক শিক্ষিত সুশীল ছেলের সাথে কথা বলছি-
তাদের কাছে ‘ব্যবসা’ বা ‘ব্যবসায়ী’ শব্দটা একটা গালি জাতীয় শব্দ।
ফেসবুকে আমি প্রায় দেখি- শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম ব্যবসায়ী কাউরে পাইলে গালি দিতে ছাড়ে না।
আমার জানা মতে, মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থগুলোতে ‘ব্যবসা’ করাটাকে উৎসাহিত করতে বার বার সেই শব্দটা উল্লেখ করা হইছে।
মুসলমানদের শেষ নবীও যুবক বয়সে ব্যবসা করতেন। একটু খবর নিয়ে দেখবেন-
যে কোন বন্দর এলাকাগুলোতে মুসলমানদের আধিক্য।
এর কারণ ‍সেই আদিকাল থেকে মুসলমানদের মধ্যে প্রচুর বণিক বা ব্যবসায়ী ছিলো।
তারা ব্যবসাও করতো আবার নিজে ধর্ম প্রচার অথবা প্রচারে সাহায্য করতো।
আজকে চীন যে বন্দর এলাকাগুলো নিয়ে মুক্তারমালা করতেছে সেগুলোতে কিন্তু মুসলিম আধিক্য এলাকা।
যা হয়েছে একমাত্র মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে। আরাকান, চট্টগ্রাম বা কেরালার বন্দর যেগুলো আজকে
সম্রাজ্যবাদীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু সবগুলোই এ কারণে মুসলিম অধ্যুষিত।
তবে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ‘ব্যবসা’ বা ‘ব্যবসায়ী’ মানে খারাপ এটা শিখাইছে মিডিয়া, যেটা মূলত ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত।
তারা আবার বিষয়টি শিখছে কমিউনিস্টদের থেকে। ডেমোক্র্যাটদের কাজ হলো শ্রেণী বিভেদ তৈরী করা।
মানে শ্রমিক ও মালিক (ব্যবসায়ী) এই দুই শ্রেণীর মধ্যে বিভেদ উস্কে দিয়ে মাঝখান দিয়ে ফায়দা নেয়া।
এছাড়া ডেমোক্র্যাটরা পরিবেশ, স্বাস্থ্য, নিয়মনীতির দোহাই দিয়েও আমাদের ব্যবসা/উৎপাদনকে ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
আর আমরা বোকার মত তাদের কথা শুনে লাফ দেই।
যাই হোক, যেটা বলছিলাম, মুসলিম ব্যবসায়ীদের কথা।
আসলে পূর্ববর্তী মুসলিম ব্যবসায়ীরা যে কাজটা করতো, মানে ব্যবসা আর ধর্মপ্রচার (অথবা ধর্ম প্রচারে পৃষ্ঠপোষকতা) একসাথে করতো।
কিন্তু পরবর্তীকালে ইহুদীবাদীরা সেই কৌশলাই বেশ ভালোভাবে রপ্ত করে নেয়।
তবে মুসলমানদের মত ইহুদীরা তো আর ধর্মপ্রচার করে না,
তাদের কাজ হইলো- অন্য আব্রাহামিক ধর্মগুলোর (বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম) বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা।
মানে একসাথে ব্যবসাও করবে আবার ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারও করবে।
যেমন- একটা সময় যারা হজ্জে যাইতো, সে সব হাজী সাহেব জায়নামাজ কিনে নিয়ে আসতো।
সেই সব জায়নামাজের মধ্যে মক্কা ও মদীনার ছবি থাকতো। সেই সব জায়নামাজ ব্যবহার করে অনেক মুসলমান ইচ্ছা হোক আর অনিচ্ছায় হোক,
সেই ছবিগুলো পা দিয়ে মাড়াইতো।
আমি শুনছিলাম- জায়নামাজে ধর্মীয় স্থাপনার এই ছবি দেয়ার ট্রেন্ডটা নাকি ইহুদী কিছু ব্যবসায়ী চালু করছিলো। এর মাধ্যমে তারা জায়নামাজ বিক্রি করে প্রচুর ব্যবসাও কামাতো, আবার জায়নামাজে ছবিযুক্ত করে মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনারগুলোর ছবি মুসলমানদের পা দিয়ে মাড়ায় অবমাননা করতো।
বাংলাদেশে বর্তমানে বহুজাতিক ইহুদীবাদী কর্পোরেট কোম্পানি হইলো ইউনিলিভার। তার সাবানের নাম ল্যাক্স।
সে এই ল্যাক্স সাবান বিক্রি করে একদিকে প্রচুর টাকা কামাইতেছে, অন্যদিকে সুন্দরী প্রতিযোগীতার নাম দিয়ে মুসলিম নারীদের ধর্মীয় বাধন ছিন্ন করতেছে।
অর্থাৎ ব্যবসাও করছে, আবার প্রতিদ্বন্দ্বী ধর্মের ক্ষতিও করতেছে।
মানে ইনকাম আর ধর্মীয় উদ্দেশ্যে এক করে কাজ করতেছে।
একটু সূক্ষভাবে যদি চিন্তা করেন-
তবে আন্তর্জাতিক ক্ষমতার যে প্লেয়িং গ্রাউন্ড (বাণিজ্যযুদ্ধ) সেখানে থেকে মুসলমানদের শুরুতেই থাক্কা মেরে সাইড বেঞ্চে বসায় দেয়া হইছে।
এক্ষেত্রে ইহুদীবাদীরা হইলো চালকের আসনে, মানে তারা হইলো ব্যবসায়ী,
আর মুসলমানরা তাদের অধিনে চাকর হয়ে (চাকুরী করে) তাদের যুদ্ধের গতি সঞ্চার করবে।
কিন্তু মুসলমানদের কোন পৃথক অবস্থান থাকবে না।
এ কথাগুলো এ কারণে বললাম, যখন দেখি বাংলাদেশের বিদেশী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া-
বাংলাদেশের চামড়া শিল্প, পুরান ঢাকা ব্যবসায়ীক এলাকা কিংবা দুগ্ধ খামারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে,
তখন আমাদের তরুণ প্রজন্ম মিডিয়ার পক্ষ হয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে বলে-
“এখন এগুলো বন্ধ করা হোক, ব্যবসায়ীদের জেলে ভরা হোক।”
আবার যখন দেখি- “বাংলাদেশের অমুক অমুক অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীন, জাপানের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে আসবে, এত লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। ” এই খবর দেখে-
ঐ তরুণ প্রজন্মই স্ট্যাটাস দেয়- “খুব ভালো, খুব ভালো। তাদের অধীনে চাকর হইলে (চাকুরী পাইলে) আমাদের জীবন ধন্য হবে।”
আপনারা জানেন, আমি বেশ কয়েক বছর যাবত কর্পোরেটোক্রেসি পলিসি’র বিরুদ্ধে বলে যাচ্ছি।
কর্পোরেটোক্রেসি হইলো ইহুদীবাদী তথা সম্রাজ্যবাদী ব্যবসায়ীদের বানানো কর্পোরেট পলিসি, যার মাধ্যমে তারা আমাদের মত দেশগুলোকে শাসন করে বা জনগণকে দাস বানায়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ঠিক ঐ পলিসি চলতেছে, মানে জনগণের থেকে টাকা নিয়ে প্রচুর বিদ্যুৎকেন্দ্র, ফ্লাইওভার, সেতু, বন্দর, বিমানবন্দর, পর্যটনকেন্দ্র বানানো হচ্ছে, যার মাধ্যমে বিদেশী ব্যবসায়ীদের আসার জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করা হচ্ছে।
এরপর বিদেশী ব্যবসায়ীদের বলা হচ্ছে- “তোমাদের জন্য সব সুবিধা আছে, তোমারা বাংলাদেশে এসে ব্যবসা করো।” অপরদিকে সেই সব স্থাপনা বানাতে জনগণের থেকে জোর করে টাকা চুষে নেয়ায়, জনগণ দরিদ্র হয়ে পড়ছে এবং নিজেদের স্বল্পমূল্যের উপযুক্ত দাস হিসেবে প্রস্তুত করছে।
আমার কথা হইলো- বিদেশী ব্যবসায়ীদের নিয়ে আসার জন্য যত টাকা, বুদ্ধি আর পলিসি খরচ করা হইলো, সেটা যদি দেশী ব্যবসায়ী বা দেশী উৎপাদকের (যেমন: কৃষক, মাছ চাষী) জন্য করা হইতো, তাহলে আমাদের আর বিদেশীদের অধীনে দাস হইতে হতো না। বরং দেশী উৎপাদক বা ব্যবসায়ীদের জন্য করা হলে তারা নিশ্চিত দেশকে আরো বহুগুনে রিটার্ন দিতে পারতো।
কিন্তু এখন আমরা জনগণ নিজের গাটের টাকা খরচ করে বিদেশীদের জন্য অনেক কিছু বানালাম, এরপর তাদের দিকে ‘হা’ করে তাকিয়ে থাকলাম ফকিরের মত, যদি তারা আসে আর আমাদের দাস হিসেবে ব্যবহার করে, তবে আমরা ধন্য হবো। ৪৭ বছর আগে দেশকে স্বাধীন করা হইছিলো কি ৪৭ বছর পর এসে নতুন করে বিদেশী ব্যবসায়ীদের দাসত্ব বরণ করে নেয়ার জন্য?
আমার কথা হলো- এ ধরনের ‘দাসীয় পলিসি’ থেকে দেশকে আগে মুক্ত করতে হবে, তবেই প্রকৃতঅর্থে দেশ উন্নত হবে, আমরা অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পাবো এবং জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারবো, এর আগে না।
১ম পর্ব- https://bit.ly/2kB3dKW
২য় পর্ব- https://bit.ly/2lRojEW
৩য় পর্ব- https://bit.ly/2kC1W6l