বিদেশী বিনিয়োগ বা ঋণের পেছনে ছুটে আমাদের লাভ কতটুকু ? -৬
সরকার বিদেশী বিনিয়োগের ব্যাপারে যতটা সফট, দেশী বিনিয়োগকারী বা উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের বেলায় ততটুকু হার্ড। এ সম্পর্কে একটি দৈনিকের রিপোর্ট অনুযায়ী-
বিদেশীরা বিনিয়োগ করলে সরকার যে সব সুবিধা দিচ্ছে-
১) মুনাফাসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেওয়ার সুযোগ আছে।
২) ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করলে পাঁচ বছরের কর অবকাশ সুবিধা
৩) ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে বিনিয়োগ করলে সাত বছরের কর অবকাশ সুবিধা
৪) বিদেশি কম্পানিগুলো মুনাফা বা লভ্যাংশ পুনর্বিনিয়োগ করলে তা নতুন বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে একইভাবে কর অবকাশ সুবিধাসহ মিলবে অন্য সব সুযোগ-সুবিধা।
৫) নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় যন্ত্রপাতির জন্য প্রথম বছরে ৫০ শতাংশ অবচয় সুবিধা, দ্বিতীয় বছরে ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে ৩০ শতাংশ অবচয় সুবিধা দেওয়া হয়।
৬) উৎপাদিত পণ্যের ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করলে শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং আলাদা বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং সুবিধা দেওয়া হয়।
৭) এলসির বিপরীতে ৯০ শতাংশ ঋণ এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
৭) ইপিজেডের বাইরে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেও স্থানীয় বাজারে একই শুল্কে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য বিপণনের সুযোগ দেওয়া হয়।
৮) সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে নগদ সহায়তা।
১) মুনাফাসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেওয়ার সুযোগ আছে।
২) ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিনিয়োগ করলে পাঁচ বছরের কর অবকাশ সুবিধা
৩) ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে বিনিয়োগ করলে সাত বছরের কর অবকাশ সুবিধা
৪) বিদেশি কম্পানিগুলো মুনাফা বা লভ্যাংশ পুনর্বিনিয়োগ করলে তা নতুন বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে একইভাবে কর অবকাশ সুবিধাসহ মিলবে অন্য সব সুযোগ-সুবিধা।
৫) নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় যন্ত্রপাতির জন্য প্রথম বছরে ৫০ শতাংশ অবচয় সুবিধা, দ্বিতীয় বছরে ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে ৩০ শতাংশ অবচয় সুবিধা দেওয়া হয়।
৬) উৎপাদিত পণ্যের ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করলে শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং আলাদা বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং সুবিধা দেওয়া হয়।
৭) এলসির বিপরীতে ৯০ শতাংশ ঋণ এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
৭) ইপিজেডের বাইরে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেও স্থানীয় বাজারে একই শুল্কে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য বিপণনের সুযোগ দেওয়া হয়।
৮) সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যে ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে নগদ সহায়তা।
অপরদিকে দেশি ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি যেন ঠিক এর উল্টো-
১) কর অবকাশ সুবিধা নেই।
২) মুনাফার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয় করপোরেট কর বাবদ। এত বিপুল পরিমাণ কর দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ সম্ভব হয় না।
৩) রপ্তানিমুখী কয়েকটি খাতে নগদ সহায়তা থাকলেও আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন খাতে এ ধরনের কোনো সুবিধা নেই।
৪) বিদেশি উদ্যোক্তারা স্বল্প সুদে বিদেশ থেকে ঋণ নিতে পারেন সহজেই, দেশি উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশি তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত হলেও হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে এ সুবিধা।
৫) উৎপাদনশীল খাত তো বটেই, অনুৎপাদনশীল খাতেও বিদেশি বিনিয়োগ এলে সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে দ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু দেশের শিল্পমালিকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে বছরের পর বছর বসে থাকলেও সেখানে এসব সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে না। উল্টো বিনিয়োগের পর উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা পেতে সরকারের দপ্তরগুলোতে গিয়ে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের হয়রানি হতে হয় পদে পদে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভূমির বন্দোবস্ত করতে সরকার ইপিজেড প্রতিষ্ঠা এবং বিদেশিদের ইপিজেড করার জন্য ভূমির ব্যবস্থাও করছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগের পর গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে বছরের পর বছর অচল পড়ে থাকা কারখানার যন্ত্রপাতি একদিকে নষ্ট হয়, অন্যদিকে বাড়তে থাকে ঋণের সুদের ভার। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই স্থানীয় উদ্যোক্তাদের খেলাপি হতে হচ্ছে অহরহ।
৬) পরিবেশ আইনের আওতায় জমি ভরাট ও কারখানা স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা।
৭) বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস নিয়ে যেকোনো সময় প্রশ্ন ওঠার ভয়।
৮) সৃষ্টির ঝামেলা উতরে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গিয়ে পড়তে হয় বড় ধরনের সমস্যায়। উচ্চ সুদের হারের কারণে অনেক ব্যবসায় টিকে থাকায় দায় হয়ে যাচ্ছে।
১) কর অবকাশ সুবিধা নেই।
২) মুনাফার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয় করপোরেট কর বাবদ। এত বিপুল পরিমাণ কর দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন বিনিয়োগ সম্ভব হয় না।
৩) রপ্তানিমুখী কয়েকটি খাতে নগদ সহায়তা থাকলেও আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন খাতে এ ধরনের কোনো সুবিধা নেই।
৪) বিদেশি উদ্যোক্তারা স্বল্প সুদে বিদেশ থেকে ঋণ নিতে পারেন সহজেই, দেশি উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশি তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত হলেও হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে এ সুবিধা।
৫) উৎপাদনশীল খাত তো বটেই, অনুৎপাদনশীল খাতেও বিদেশি বিনিয়োগ এলে সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে দ্রুত গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু দেশের শিল্পমালিকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে বছরের পর বছর বসে থাকলেও সেখানে এসব সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে না। উল্টো বিনিয়োগের পর উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা পেতে সরকারের দপ্তরগুলোতে গিয়ে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের হয়রানি হতে হয় পদে পদে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভূমির বন্দোবস্ত করতে সরকার ইপিজেড প্রতিষ্ঠা এবং বিদেশিদের ইপিজেড করার জন্য ভূমির ব্যবস্থাও করছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগের পর গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে বছরের পর বছর অচল পড়ে থাকা কারখানার যন্ত্রপাতি একদিকে নষ্ট হয়, অন্যদিকে বাড়তে থাকে ঋণের সুদের ভার। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই স্থানীয় উদ্যোক্তাদের খেলাপি হতে হচ্ছে অহরহ।
৬) পরিবেশ আইনের আওতায় জমি ভরাট ও কারখানা স্থাপনে প্রতিবন্ধকতা।
৭) বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস নিয়ে যেকোনো সময় প্রশ্ন ওঠার ভয়।
৮) সৃষ্টির ঝামেলা উতরে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গিয়ে পড়তে হয় বড় ধরনের সমস্যায়। উচ্চ সুদের হারের কারণে অনেক ব্যবসায় টিকে থাকায় দায় হয়ে যাচ্ছে।
অর্থাৎ সরকার বিদেশী বিনিয়োগ টানতে যতটা আগ্রহী, দেশী বিনিয়োগ বা উদ্যোক্তাদের সুযোগ করে দিতে ততটাই অনাগ্রহী। অথচ বিদেশী বিনিয়োগ দেশের জন্য অনেকক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি তৈরী করতে পারে। সরকারের এ ধরনের আচরণের কারণে অনেক দেশী ব্যবসায়ী বিদেশে টাকা পাচার করে বিদেশে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। অথচ সরকার যদি বিদেশী ব্যবসায়ীদের মত দেশী ব্যবসায়ীদের প্রতি সফট হতো, তবে দেশকে অতি সহজেই উন্নত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব ছিলো। (https://bit.ly/2kstHy4)
দেশীয় সমস্যা নিরসনে আমার কিছু চিন্তাধারা আছে-
ক) ব্যবসায়ীদের অন্যতম প্রধান সমস্যা সুদ। আবার ব্যাংকগুলোর প্রধান সমস্যা হলো খেলাপী ঋণ, লুটপাট। অপরদিকে দেশের সমস্যা হলো দেশী বিনিয়োগ না হওয়া। এই তিন সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে ব্যাংকগুলো ঋণ না দিয়ে বিনিয়োগ করবে, ব্যবসার অংশিদার হবে। এতে-
-- সুদের ঝামেলা থাকবে না।
-- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অংশিদার হওয়ায় তারা বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করবে। সঠিক যায়গায় বিনিয়োগ হবে, বেঠিক যায়গায় বিনিয়োগ হবে না।
-- দুর্নীতি, লুটপাট হওয়ার সুযোগ কমবে।
-- দেশীয় শিল্পের বিস্তার ঘটবে।
-- প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হবে।
-- সুদের ঝামেলা থাকবে না।
-- ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অংশিদার হওয়ায় তারা বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করবে। সঠিক যায়গায় বিনিয়োগ হবে, বেঠিক যায়গায় বিনিয়োগ হবে না।
-- দুর্নীতি, লুটপাট হওয়ার সুযোগ কমবে।
-- দেশীয় শিল্পের বিস্তার ঘটবে।
-- প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হবে।
খ) ‘ব্ল্যাক মানি’ থিউরীর অবসান ঘটাতে হবে। মানে ট্যাক্স না দিলে তার টাকা ‘ব্ল্যাক’ হয়ে যাবে, এই নীতি পরিবর্তন করত হবে। সরকার এবার যেমন রিয়েল স্টেট সেক্টরে যেমন ইনভেস্ট করলে ব্ল্যাক মানির প্রশ্ন থাকবে না বলে আইন করেছে, ঠিক তেমনি দেশী যে কোন শিল্পে ইনভেস্ট করলে ব্ল্যাক-হোয়াইটের প্রশ্ন তোলা যাবে না। এতে দেশের টাকা দেশেই থাকবে।
গ) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদের হার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধির পাওয়ার অন্যতম কারণ সরকার বিভিন্ন সময় তার প্রয়োজনে (যেমন: বেতন ভাতা পরিশোধ) এসব ব্যাংক থেকে লোন নেয়। চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় বৃদ্ধি পায় সুদ। এই সমস্যা নিরসনে সরকারের নিজস্ব ইনকাম থাকতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভতুর্কিভোগী না করে উৎপাদনশীল করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যে বেতন-ভাতা-বোনাস দিতে হয়, সেটা তাদের নিজেদেরকেই উৎপাদনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে ইনকাম করে নিতে হবে।
ঘ) বাংলাদেশের শিল্প-কারখানা বিস্তার ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের অপপ্রচার ও গুজব। এক্ষেত্রে তারা পরিবেশ, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, মান-নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি টার্ম ব্যবহার করে। তাদের সবচেড়ে বড় অস্ত্র হলো উচ্ছিষ্টভোগী মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবি। যেমন- কিছুদিন আগে দুগ্ধ শিল্প ধসিয়ে দিতে বিদেশী গুড়া দুধ কোম্পানিগুলোর গুজব স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছে। ইথোফেন ও ফরমালিন গুজবে আম-মাছ ধ্বংসের কথাও সবার জানা। পরিবেশের কথা বলে গার্মেন্টসের পর সবচেয়ে সম্ভবনাময় শিল্প চামড়া শিল্পকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। পুরান ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের অজুহাতে শিল্পকারখানা উচ্ছেদের প্রচেষ্টা কিংবা গার্মেন্টসে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের ষড়যন্ত্রের কথা সবার জানা। এছাড়া দেশের নিরাপদ খাদ্য নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা ও গবেষণাগারেও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী সংস্থার অনুপ্রবেশ চোখে পড়ার মত। এক্ষেত্রে দেশী শিল্পের বিরুদ্ধে বিদেশী ষড়যন্ত্র রুখতে দ্রুত আলাদা পলিসি নেয়া খুবই জরুরী।
পূর্বের লেখাগুলো-
১ম পর্ব- https://bit.ly/2kB3dKW
২য় পর্ব- https://bit.ly/2lRojEW
৩য় পর্ব- https://bit.ly/2kC1W6l
৪র্থ পর্ব- https://bit.ly/2ksFxbw
৫ম পর্ব- https://bit.ly/2m2ih4i
১ম পর্ব- https://bit.ly/2kB3dKW
২য় পর্ব- https://bit.ly/2lRojEW
৩য় পর্ব- https://bit.ly/2kC1W6l
৪র্থ পর্ব- https://bit.ly/2ksFxbw
৫ম পর্ব- https://bit.ly/2m2ih4i