প্রসঙ্গ – এবার কি তবে আসাম থেকে শরনার্থী আসবে ? এন.সি- ১৯১

প্রসঙ্গ – এবার কি তবে আসাম থেকে শরনার্থী আসবে ?
প্রসঙ্গ – এবার কি তবে আসাম থেকে শরনার্থী আসবে ?
রিপাবলিকানদের ‘এন্টি ইমিগ্রান্ট’ পলিসি বুঝে কাজ করতে হবে
Related imageআমি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘রিপাবলিকান ব্লক’ একটা টার্ম ইউজ করি।
রিপাবলিকান ব্লকের লক্ষণ হলো- তারা সময় এন্টি ইমিগ্রান্ট বা অভিবাসী বিরোধী হয়।
যেমন ট্রাম্প রিপাবলিকান, সে সময় অভিবাসী বিরোধী বক্তব্য দিবে এবং পদক্ষেপ নিবে।
এই বক্তব্যকে পূজি করে সে রাজনীতি করে ভোট কামাবে।
ইউরোপে যখন শরনার্থীদের ঢল নামলো তখন হাঙ্গেরী সরকার তাদের ঢুকতে দিলো না।
হাঙ্গেরী সরকারও রিপাবলিকান ব্লকের।
ভারতের মোদি সরকার রিপাবলিকান ব্লকের – তারা আসামের মুসলমানদের বাংলাদেশ থেকে আগত অভিবাসী ট্যাগ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকাতে চায়।
একইভাবে সুকি সরকার হলো রিপাবলিকান ব্লকের। তারা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী ট্যাগ দিয়ে অবৈধ অভিবাসী বানিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
অর্থাৎ অভিবাসী নিয়ে অথবা কাউকে অভিবাসী বানিয়ে গেম খেলা রিপাবলিকানদের পলিসি।
আমি দেখেছি- অনেক মানুষ এ রাজনৈতিক বিষয়গুলো বুঝে না্, যার কারণে উল্টাপাল্টা করে।
যেমন অনেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য ট্রাম্প বা মোদির কাছে সাহায্য চায়।
কিন্তু তাদের রাজনৈতিক আদর্শ হচ্ছে এন্টি ইমিগ্রান্ট। তারা এই ব্যাপারে আপনাকে কোন সাহায্য করবে না।
করলে তাদের দেশে বিপরীত রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ধরবে, বলবে- “তুমি ঐ দেশে ইমিগ্রান্টদের পক্ষে কাজ করেছো, আমার দেশেও করো। ”
এজন্য তারা নিজেদের মূল মূল রাজনৈতিক পলিসি ঠিক রাখে।
তা্ই আমি বোকার মত তাদের অনুরোধ করতে পারি- কিন্তু লাভ হবে না।
আবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেকের মধ্যে বু্দ্ধির স্বল্পতা দেখেছি-
আমি গত কয়েকদিনে ৬টা স্ট্যাটাস দিয়েছি, পুরোটা বুঝানোর চেষ্টা করেছি।
কিন্তু তারপরও অনেকে ভাবছে-
“ভাই আপনি কি তাহলে বাংলাদেশীদের বিপক্ষে, রোহিঙ্গাদের পক্ষে।”
আবার কেউ কেউ বলতেছে- “তবে কি আপনি চান না রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরে যাক।”
আমি উত্তরে বলবো- আপনারা আসলে আমাকে ভুল বুঝতেছেন।
প্রকৃতঅর্থে আমি বাংলাদেশেরই পক্ষে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসনের পক্ষে।
তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে-
যারা ভাবতেছে রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ছড়ালেই রোহিঙ্গারা চলে যাবে এবং প্রত্যাবসন সহজ হবে।
আমার কথা হলো- এ ধরনের বিশ্বাস বা চিন্তাধারা উল্টা রোহিঙ্গাদের এদেশে স্থায়ী করে সমস্যা বাড়িয়ে দেবে এবং তাদের প্রত্যাবসনকে জটিল করে দিবে।
আমার কথা হলো- বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে চলেছে,
এ অবস্থায় একটু পরিপক্ক চিন্তা করেন, হুজুগ পরিহার করেন, কেউ উস্কানি দিলেই সেখানে দয়া করে ঝাপ দেবেন না।
আমি আমার সব লেখায় এ মেসেজটাই সব সময় দিতে চেয়েছি।
যাই হোক, আমার কাছে মনে হয়-
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরীর মূল কারণ বাংলাদেশের দুর্বল বিদেশ নীতি।
বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গা ইস্যুতে শক্তিশালী বিদেশনীতি দেখাতো,
তবে ভারত বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে আসামে ১৯ লক্ষ লোককে বাংলাদেশী ঘোষণা করার সাহস দেখাতো না।
আওয়ামী সরকার সব সময় বলে- “কারো সাথে শত্রুতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব”, কথাটা শুনতে সুন্দর শোনা গেলেও সোজা বাংলায় এই নীতিকে হিজরা নীতি বলা যায়।
কারণ এই নীতি অনুসারে আপনার সাথে কেউ শত্রুতা করলেও আপনি তার সাথে বন্ধু রক্ষা করেই চলবেন।
প্রতিপক্ষ ল্যাং মারতেই থাকবে, আর আর আপনিও তাকে বন্ধু বলে সম্মান দিতেই থাকবেন।
এক সময় হয়ত আপনাকে ল্যাং মেরে শোয়ায় ফেলবে, আপনাকে আর উঠতে দেবে না।
আজকে বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন-ভারত-আমেরিকার পা না ধরে- (কারণ চীন কোন ঝামেলায় যাবে না, কারণ তার ব্যবসায়ীক পরিবেশ নষ্ট হবে, আর ভারত-আমেরিকা নিজেরাই এন্টি ইমিগ্রান্ট তাই বলে লাভ নেই)
রোহিঙ্গাদের নির্যাতিত মুসলিম হিসেবে উপস্থান করে কক্সবাজারে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর প্রধানদের নিয়ে একটি কনফারেন্স আয়োজন করতো,
সেখানে তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তানের মত দেশগুলো আমন্ত্রণ জানিয়ে একটা ঘোষণা দিতো,
“মায়ানমার তো রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন শুরু করতে চাইছে ভালো কথা,
তবে সব রোহিঙ্গাকে তার ভূমি, নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা সহ আরাকানে ফিরিয়ে নিতে হবে।
আর ফিরিয়ে নিলেই হবে না, মুসলিম দেশগুলো সম্মিলিত সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগ্রেড
রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সাথে সেখানে সেটেল করে দিয়ে আসবে। ”
ব্যস এতটুকু শুধু মুখে ঘোষণা দিয়ে দেখতো কি হয়, বাকিটা সময়ই কথা বলতো।
আর এ কাজে শুধু রোহিঙ্গা সমস্যা না, আসামের সমস্যাও সমাধান হয়ে যাইতো।
যাই হোক, আমি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিবেশ দেখে কিছু বিষয় খুব চিন্তা করছি।
বাংলাদেশ কিন্তু এখন খুব জটিল প্যাচের মধ্যে আছে।
আমেরিকার পিভটু টু এশিয়া পলিসি,
ভারতের এক্ট ইস্ট পলিসি
আর তার বিপরীতের চীনের বেল্ট রোড ইনেশিয়েটিভ আর মুক্তার মালা পলিসি।
এসব পলিসির মাইনকার চিপায় বাংলাদেশ।
যে কোন একপক্ষ নিলে অপরপক্ষ শত্রুতা শুরু করবে।
এর মধ্যে আবার আমেরিকার ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান আলাদা ডুয়েল পলিসি, মানে দুইপাশে ধারওয়ালা ছুরি।
এত ফাদের মধ্যে প্রক্সিওয়ার জোন হিসেবে বাংলাদেশের আফগানিস্তান বা সিরিয়া হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আমার ধারণা শেখ হাসিনা হয়ত ভাবছেন তিনি এতদিন যেভাবে রিপাবলিকান আর চীনের মধ্যে ব্ল্যালেন্স করে চলে আসছেন, সেটাই তিনি জারি রাখবেন।
কিন্তু শেখ হাসিনাকে এটা বুঝতে হবে- এবারের পর ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় আসবে, তখন তারা চরম উগ্র আকার ধারণ করবে। তখন মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কি করবে সেটাও চিন্তা করা উচিত।
উল্লেখ্য- রিপাবলিকানদের পৃথিবী জুড়ে সবচেয়ে বেশি সামাল দেয় ডেমোক্র্যাট ব্লক।
কিন্তু এবার রিপাবলিকানরা কৌশল করে ডেমোক্র্যাটদের বড় বড় দুর্গগুলে শেষ করে দিচ্ছে।
বিশেষ করে সামনের কানাডার নির্বাচনের ডেমোক্র্যাটদের বড় ফিগার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নাও আসতে পারে। সেখানে দখল করে নিতে পারে রিপাবলিকান ব্লকের কোন সদস্য।
এছাড়া এতদিন ডেমোক্র্যাট ব্লকের জার্মানির নিয়ন্ত্রণে ছিলো পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এ অবস্থায় রিপাবলিকানরা কৌশল করে বোরিস জনসনকে এনে ব্রিটেনের ব্রেক্সিট করাচ্ছে।
এতে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রাধীন জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবে,
আর বরিস জনসন ব্রিটেনকে নিয়ে আমেরিকার সাথে জোট বাধবে,
ঠিক যেভাবে টনি ব্লেয়ার বুশের সাথে জোট বেধেছিলো।
অর্থাৎ রিপাবলিকানদের প্রতিন্দন্দ্বী শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করতে চাইবে।
আর রিপাবলিকানদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ‘এন্টি-মুসিলিম’ কর্মকাণ্ড ।
অর্থ্যাৎ বুশ যেভাবে বিশ্বজুড়ে মুসলিম নিধন করেছিলো, ঠিক একই রাস্তায় হাটতে পারে ট্রাম্প।
তবে এক্ষেত্রে ট্রাম্পের বেশি ক্ষোভ পড়বে বাংলাদেশের উপর, কারণ বাংলাদেশ চীনের সাথে লিয়াজো করছে।
তবে বাংলাদেশ যদি ভাবে, চীনের সাথে লিয়াজো করে বাচতে পারবে, তবে ভুল করবে,
কারণ চীনের ব্যবসায়ীক পলিসি আছে, কিন্তু ভালো রাজনৈতিক পলিসি নাই,
আর আমেরিকার রাজনৈতিক পলিসির সাথে তুলনা করলে তো সেটা শিশুতূল্য।
তাই আমার মনে হয়, বাংলাদেশকে এখন থেকে ব্যতিক্রম কিছু চিন্তা করতে হবে।
বিশেষ করে, এমন মুসলিম দেশগুলোর সাথে যুক্ত হওয়া উচিত, যারা আমেরিকার চালগুলো ধরে সেগুলো রাজনীতিকভাবে সামাল দিতে পেরেছে। বিশেষ করে অতি সম্প্রতি গঠিত হতে যাওয়া তুরষ্ক-মালয়েশিয়া-পাকিস্তান জোটকে আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। আমার মনে হয়, অন্তত শেখ হাসিনার এদের সাথে কিছুটা হলেও একটা যোগাযোগ বা জোটবদ্ধতা থাকা উচিত, নয়ত চীন-আমেরিকা দ্বন্দ্বে বাংলাদেশে যে কোন সময় যে কোন বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
একইসাথে বিদেশীদের উপর ভর না করে বাংলাদেশীদের মধ্যে একটা এনালিস্ট গ্রুপ তৈরী করা উচিত, যারা এধরনের আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশকে সঠিক পথ দেখাবে।
সম্প্রতি খবরে দেখলাম- আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিবেচনা করে বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার সার্থে ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ নামক একটি কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। আমার ধারণা এটা একটা এনালিস্ট গ্রুপ (নিরাপত্তা বিশ্লেষক) হবে, যারা বর্তমান সুপার পাওয়ারদের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের কি ভূমিকা হওয়া উচিত, অ্যানালাইসিস করে সরকারকে সে ‍বুদ্ধি দিবে। বিষয়টি খুবই ভালো উদ্যোগ। নির্বাচনের আগের দেয়া- “ইশতেহার : ‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ ২০১৮’- এর মধ্যে ১২.২ নম্বর পয়েন্টে আমি এরকম একটি এনালিস্ট গ্রুপ তৈরীর কথা বলেছিলাম। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, এই কমিটিতে যেন কোনভাবেই কোন ব্লকের দালাল ঢুকে না পড়ে, তখন ভালো বুদ্ধি থেকে কুবুদ্ধি দিয়ে পুরো দেশ ডুবিয়ে দেবে তারা।