কিশোর গ্যাং কালচারের পেছনে কারণ কি ? সমাধান কি ?? এন.সি- ১৮১

কিশোর গ্যাং কালচারের পেছনে কারণ কি ? সমাধান কি ??

কিশোর গ্যাং কালচারের পেছনে কারণ কি ? সমাধান কি ??
Related imageগত বেশ কিছুদিন মিডিয়া একটি কথা শোনা যাচ্ছে ‘কিশোর গ্যাং কালচার’। কিশোর গ্যাং নিয়ে অনেক কথা খবর শোনা যাচ্ছে, আসুন খবরগুলো দেখি-
১) গ্যাং কালচারে বাড়ছে কিশোর অপরাধ
(https://bit.ly/2k78Lwr)
২) উত্তরায় স্কুলছাত্র খুনের পেছনে ‘ডিসকো আর নাইনস্টার গ্রুপের দ্বন্দ্ব’
(https://bit.ly/2lC8IJq)
৩) কিশোর গ্যাং: ঢাকায় ১১০ কিশোর-তরুণ আটক
(https://bit.ly/2m6losf)
৪) ‘গ্যাং কালচারের’ নামে ভয়ংকর হয়ে উঠছে যে কিশোরেরা
(https://bit.ly/2k2YvFi)
৫) দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং
(https://bit.ly/2lHYqHs)
৬) ঢাকায় সক্রিয় ৫ ০ কিশোর গ্যাং
(https://bit.ly/2m6asLj)
৭) তুই করে বলায় চা বিক্রেতাকে খুন করলো কিশোর গ্যাং
(https://bit.ly/2k8ujsw)
ইতিমধ্যে ঢাকার পুলিশ কমিশনার ঘোষণা দিয়েছে, ঢাকায় কোনো গ্যাং কালচার থাকবে না।
(https://bit.ly/2lY9Uqv)
কিন্তু কথা হলো, পুলিশের ঘোষণা দিয়ে কি গ্যাং কালচার থামানো সম্ভব ?
এক্ষেত্রে -
গ্যাং কালচার কেন হয় ? এটি গড়ে ওঠার মূল কারণ কি ?- তা আগে শেখা দরকার।
এ সম্পর্কে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সদ্য বিদায়ী পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এমরানুল হাসানের মতে কিশোর গ্যাং কালচারের মূল কারণ ‘হিরোইজম’ (https://bit.ly/2lYa1SX)
অর্থ্যাৎ কিশোররা নিজেদের হিরো মনে করে, একজন অন্যজনের থেকে নিজেকে বড় প্রমাণ করতে শো-অফ করে, সব মিলিয়ে সব কিশোরদের মধ্যে একটি প্রতিযোগীতামূলক পরিস্থিতি, মানে কে কার কে নিজেকে বড় হিসেবে প্রমাণ করবে, সেটা করতে গিয়েই কিশোর গ্যাং বা কমিউনিটি কালচার চরম পর্যায়ে পৌছে।
সত্যিই বলতে, এ ধরনের সামাজিক যে কোন সমস্যার মূলে কুঠারাঘাত না করতে পারলে তা কখনই সমাধান হবে না। আপনি বড় বড় আইন করতে পারবেন, কিন্তু ঠিক যে কারণে সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে, সেই মূল কারণ চিহ্নিত করে তার দাওয়াই দিলে কেবল সমাজ থেকে এ ধরনের সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব।
আসলে আমরা যে সমাজে বাস করি, সেটা শো একটা শো অফ সমাজ। সবাই লোক দেখাতে পছন্দ করে। পাড়াপ্রতিবেশী দেখিয়ে, বন্ধু বান্ধব কে দেখিয়ে, আত্মীয়কে দেখিয়ে, কলিগকে দেখিয়ে আমাদের অন্তর প্রশান্ত করি। এক্ষেত্রে আমাদের দর্শকরা হয়ে যায়, আমাদের মূল্যবোধের মাপকাঠি, কিন্তু বাস্তবে নীতি নৈতিকতার আলাদা স্কেল আমরা হারিয়ে ফেলছি। এ কারণে আমাদের আশেপাশের লোকগুলো যখন খারাপ হয়ে যায়, তখন আমরাও খারাপ কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে যাই।
যারা কিশোর গ্যাং কালচারের সাথে সংযুক্ত, তারা চরম পর্যায়ের শো-অফ করতে পছন্দ করে। এবং একজন যখন অনৈতিকতা করে, তখন অন্যরা সেই অনৈতকতার তুলনায় অধিক অনৈতিকতা প্রদর্শন করে নিজেকে হিরো হিসেবে প্রদর্শন করার চেষ্টা করে (যেমন- একটা উদাহরণ হতে পারে দ্রুত গতিতে মটর সাইকেল চালানো)। ফলে দ্রুত ভয়ানক হতে থাকে পরিস্থিতি। আমার মতে, আমাদের শো-অফ সমাজে, কিশোর গ্যাং কালচার তো কমবেই না, বরং দ্রুত অন্যান্য বয়সের মধ্যে আরো এধরনের অপরাধ প্রবণতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে, আপনি আইন করতে পারবেন, মূল সমস্যা সমাধান না করলে কোন লাভ হবে না।
আমার দৃষ্টিতে, এ ধরনের কিশোর গ্যাং কালচার বৃদ্ধির মূল কারণ হলো- পাঠ্যবই বা শিক্ষা সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব, সেক্যুলার শিক্ষার বিস্তার এবং সমাজে ধর্মীয় শিক্ষা হ্রাসকরণ। এ বিষয়গুলো কারণে শিশু-কিশোররা পাঠ্য বই এবং সমাজ থেকে নৈতিকতা লাভ করতে পারছে না, ফলে তাদের নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডগুলো সম্পর্কে কোন মূল্যবোধ তৈরী হচ্ছে। এই মূল্যবোধহীন থাকার কারণে বিদেশী টিভি চ্যানেল বা সংস্কৃতির প্রয়জনগুলো দ্রুত তাদের মধ্যে প্রবেশ করছে। ফলে ঘটছে বিপত্তি। অথচ শিশু শ্রেণী থেকে যদি তাদের ধর্মীয় নৈতিকতার বেজ তৈরী করে দেয়া হতো, তবে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ সেটা তারা নিজ থেকে যাচাই করে নিতে পারতো, ফলে এগুলো থেকে তারা দূরে থাকতো। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না।
যেমন ইসলাম ধর্ম সব সময় লোক দেখানো, অহংকার, বড়ত্ব, অপরকে ছোট করা, হেয় করা, নিজেকে বড় করা, হিংসা করা এগুলো বিরুদ্ধে জোরালোভাবে বলে। এবং এগুলোর বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধ ভিত্তিক তত্ত্ব ইসলাম ধর্মে আছে। এ কারণে সঠিক ধর্মীয় অণুকরণ করলে শো অফ বা বড়ত্ব, অহংকার এগুলো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। এ ধর্মীয় বিষয়গুলো যদি শিক্ষা সিলেবাস এবং সামাজিকভাবে শিক্ষা দেয়া হতো, তবে কিশোরদের মধ্যে এসব অপসংস্কৃতি প্রবেশ করতো না এবং ছোটবেলা থেকেই রেজিসটেন্স কাজ করতো। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। বলাবাহুল্য সেক্যুলার সমাজ নিয়ে অনেকে অহংকার করতে পারে, কিন্তু কিভাবে শো-অফ, অহংকার, হিরোইজম, বড়ত্ব, লোকদেখানো বন্ধ করতে হবে, তার কোন শিক্ষা সেখানে নাই। অর্থাৎ সেক্যুলার শিক্ষা বা সমাজ ব্যবস্থা এক্ষেত্রে দেওলিয়া। তাই তাদের থেকে সমস্যার সমাধান নেয়াও সম্ভব নয়।
আমি ব্যক্তিগত জীবনে দেখেছি, অনেক ছেলেপেলে একটা সময় এসব গ্যাং কালচারের সাথে যুক্ত ছিলো, কিন্তু কিছুদিন পর ধর্মীয় সংস্পর্ষে এগুলো সম্পর্কে বুঝতে পারে এবং গ্যাং কালচার বাদ দিয়ে ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমানে সমস্যা হলো- সেটার পথও রোধ করা হচ্ছে। যেমন সম্প্রতি মিডিয়াতে প্রতিনিয়ত দেখানো হচ্ছে, যারা ধর্মীয় চর্চা করে তারা খারাপ হয়ে যায়। আগে গান বাজনা করতো, কিন্তু হঠাৎ করে ধর্ম চর্চা শুরু করলো। কয়েকদিন পর বের হলো সে জঙ্গী দলে যোগ দিয়েছে। এ ধরনের প্রচারণা অর্থাৎ “ধর্ম চর্চা করলে জঙ্গী হয়” আমাদের সমাজকে আরো বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
তারমানে একদিকে পাঠ্যবইয়ে ধর্মীয় শিক্ষা গায়েব করে দেয়া, অপরদিকে সামাজিকভাবে ধর্ম চর্চা শিখার পথও রুদ্ধ করে দেয়া। আর এই দুয়ের মাঝে পড়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে সামাজিক অপরাধগুলো, যেখানে ঘি ঢেলেছে বিদেশী টিভি চ্যানেল, সিরিয়াল ও মুভিগুলো।।
এজন্য আমি সব সময় বলি- আইনের ভয় দেখিয়ে কখনও অপরাধ দমন করা যায় না,
অপরাধ দমন করতে হয়, একমাত্র নীতি নৈতিকতা দিয়ে।
আর যেটা পাওয়া সম্ভব একমাত্র ধর্ম চর্চার মাধ্যমে।
তাই কিশোর গ্যাং কালচারসহ অন্যান্য সামাজিক সমস্যা দূর করতে-
-পাঠ্যপুস্তকে ইসলামীকীকরণ,
-সমাজে অবাধে ইসলাম ধর্ম পালনের সুযোগ দেয়া এবং
-বিদেশী অপসংস্কৃতির প্রবেশের পথ বন্ধ করার
কোন বিকল্প হতে পারে না।