আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করে, তাদের মধ্যে একদলের অভিযোগ হচ্ছে, আমি খুব সস্তা লেখা লিখি করি। এন.সি- ১৯৬

আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করে, তাদের মধ্যে একদলের অভিযোগ হচ্ছে, আমি খুব সস্তা লেখা লিখি করি।
Related image
আমার বিরুদ্ধে যারা অভিযোগ করে, তাদের মধ্যে একদলের অভিযোগ হচ্ছে, আমি খুব সস্তা লেখা লিখি করি।
এই ‘সস্তা’ শব্দটা তারা কেন বলে, আমি খুব ভালো করে বুঝি,
সেটা হলো আমার শব্দ চয়ন দেখে, বাক্য গঠন দেখে।
আমার লেখাগুলোর মধ্যে খেয়েছে, পড়েছে, ধরেছে, খাচ্ছে, নাচ্ছে, করে থাকবে, বলে থাকবে, এমন কিছু খুব সহজ কিছু শব্দ বা বাক্য গঠন থাকে (সাথে ১০-২০টা বানান ভুলও থাকে), যেগুলো দেখলে ভাইভ সিক্সের বাচ্চাদের সাহিত্য চর্চার কথা মনে পড়ে।
এই ধরনের শব্দ চয়নের পেছনে কারণ -
আমি যখন লেখালেখি শুরু করি, তখন অনেককেই লেখালেখি করতে দেখেছি, কিন্তু তাদের শব্দ চয়ন অনেক জটিল। তারা একটা সহজ বাক্যকেও সহজ না করে জটিল করে বলে।
আমার কাছে মনে হয়, যত সহজ শব্দ চয়ন করতে পারবো বা যত সহজ একটি বাক্য বলতে পারবো, তত বেশি লোকের কাছে আমার মেসেজটা পৌছাবে। জটিল শব্দ ব্যবহার করলে হয়ত আমাকে লোকে পণ্ডিত ভাববে, কিন্তু বেশি সংখ্যক লোকের কাছে আমার মেসেজটা পৌছাবে না। যার কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মত জটিল বিষয়টাও আমি চেষ্টা করি খুব সহজ শব্দ চয়ন করে মানুষকে বুঝানোর জন্য।
মূলত বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে বেশি লেখালেখি করে সেনা কর্মকর্তারা। কিন্তু তাদের একটা স্বভাব হলো তারা ইংরেজী ভাষা ছাড়া আবার এই সব অ্যানালাইসিস লিখতে পারে না, এক্ষেত্রে তারা এমন কিছু ইংরেজী শব্দ চয়ন করে, যা বুঝতে পেট খারাপ হয়ে যাবার দশা হয়। যার ফলে তাদের সেই সব লেখা তাদের মধ্যেই থাকে, সেই বাধন ছিড়ে সাধারণ জনতার মধ্যে আসতে পারে না। অথচ সাধারণ জনতার মধ্যে এমন কেউ থাকতে পারে, যার জ্ঞান-বুদ্ধি-বিচক্ষণতা এমন পর্যায়ে আছে, যে সেই জ্ঞানটা পেলে ভবিষ্যতে তার দ্বারা বড় কোন কাজ হতে পারে। আমি সেই জিনিসটাই চাই, এই সব জ্ঞান, কোন ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক, হতে পারে সেই জনস্রোতের মধ্যে থেকেই এমন কেউ বের হবে, যে ঐ সব তথাকথিত জ্ঞানীদের থেকেও বড় কিছু হবে।
২১শে ফেব্রুয়ারী আসলে অনেকে অনেক কিছু নিয়ে আন্দোলন করে। আমি তাদের বলবো- আপনারা প্রথম আন্দোলন করুন- অনার্স, মাস্টার্স,এমবিবিএস, বিএসসিসহ এই লেভেলের সমস্ত পাঠ্যপুস্তক বাংলায় রচনা করার জন্য। এর কারণ দুটি-
১) অনেকের বিদেশী ভাষা কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা দুটোই না থাকতে পারে। কিন্তু এইসব বই বাংলায় পড়ে সে কিছুটা হলেও সে নিজ থেকে তার যোগ্যতা তৈরী করে নিতে পারে। এমনও হতে পারে, গ্রাম বাংলার কোন ছেলে, যে কোন কারনে প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, কিন্তু বাংলায় রচিত বই পড়ে তার জ্ঞান বর্তমান অনার্স-মাস্টার্স প্রজন্ম থেকেও বহুগুন বেড়ে যেতে পারে।
২) মানুষের মন চিন্তা করে তার মাতৃভাষায়। আপনি তাকে মাতৃভাষায় চিন্তা করতে দেন, তবে সে দূর বহুদূর চিন্তা করতে পারবে। আমার ধারণা- বাংলাদেশের গবেষক বা গবেষণাধর্মী চিন্তা চেতনা গড়ে না ওঠার পেছনে একটা বড় কারণ আমাদের অনার্স লেভেলের বইগুলো ইংরেজীতে লেখা। সেই লেখাগুলো অধিকাংশ ছাত্র হয়ত মুখস্ত করে, কিন্তু সেই জ্ঞানগুলো বিস্তার ঘটিয়ে যে গবেষণা করে নতুন কিছু নিয়ে আসবে সেটা হয় না। বইগুলো যদি বাংলায় লেখা থাকতো, তবে অবশ্যই সেসব চিন্তা বিস্তৃতি করে গবেষণায় আরো অধিক সংখ্যক ছাত্র মনোনিবেশ করতো। আর সেখান থেকেই হয়ত বের হয়ে আসতো অনেক দেশরত্ন।
আবার আমাদের ছেলেরা গবেষণা করছে, কিন্তু সে সব গবেষণাপত্রও ইংরেজী ভাষায় লেখা, সেগুলোও আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেতে পশ্চিমাদের বিভিন্ন গবেষণাসাইটে সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ আমাদের জ্ঞান গবেষণা তাদের ভাষায় করে, তাদের কাছে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, ঠিক যেভাবে আমাদের দেশের সম্পদ ডলারে কনভার্ট করে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভে সংরক্ষণ করা হয়।
কথা হলো- তাদের সিস্টেমে কনভার্ট করা জ্ঞান বা অর্থ, আবার তাদের কাছেই সংরক্ষণ করা,
সেই জ্ঞান আর অর্থ তাদের ষড়যন্ত্র রুখতে কি কাজে লাগবে বলুন ?
আসলে সাইকোলোজির একটা বড় শিক্ষা হচ্ছে, নলেজ বা মেসেজ ট্র্যান্সফার বা বিনিময়।
আপনি অনেক কিছু জানেন, কিন্তু সেটা ট্রান্সফার করতে পারেন না, তাহলে সেই নলেজের অনেক সময় গুরুত্ব নাও থাকতে পারে।
অপরদিকে আপনি হয়ত কম জানেন, কিন্তু আপনার নলেজ ট্রান্সফারের যোগ্যতা ভালো, তাহলে আপনার দ্বারা অনেক লোক উপকৃত হবে এবং আপনার জ্ঞান কাজেও লাগবে।
এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ক্লাস পারফর্মেন্স বোঝা যায়।
দেখা যায়, অনেক শিক্ষকের রেজাল্ট ভালো, কিন্তু ছাত্রদের ভালো পড়াতে পারেন না।
আবার অনেকের রেজাল্ট হয়ত অত ভালো না, কিন্তু ছাত্রদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং ছাত্ররা তার পড়াই সবচেয়ে ভালো বুঝে।
এর কারণ-
ভালো রেজাল্টওয়ালা শিক্ষকের নলেজ ট্রান্সফার সিস্টেম খারাপ,
কিন্তু কম ভালো রেজাল্টওয়ালা শিক্ষকের নলেজ ট্রান্সফার সিস্টেম ভালো।
এবার ছোট বাচ্চাদের দিয়ে উদাহরণ দিচ্ছি,
ধরুন আপনার বাসায় একটা একটা ছোট বাচ্চা আছে।
আপনি সারাদিন তাকে শাসন করেন, এটা শিখান, ওটা শিখান, কিন্তু সে সহজে শিখে না।
অপরদিকে তার বয়সী কোন একটা বাচ্চা এসে তাকে ১টা দুষ্টুমি ১ বার দেখায় দিয়ে গেছে,
ব্যস সে মুহুর্তে সেটা কপি করে করা শুরু করলো।
এর কারণ ঐ নতুন বাচ্চাটা আপনার বাচ্চার পর্যায়ে নেমে তার মেসেজটা সরবরাহ করতে পারছে,তাই দ্রুত ঢুকছে। কিন্তু আপনি সেটা পারেন নাই, তাই আপনার মেসেজ বাচ্চা নেও নাই।
আরেকটি বিষয় বলতেছি-
বিদেশীদের জ্ঞান চর্চা বুঝতে আমাদের ইংরেজী শিক্ষার দরকার আছে, এটা ঠিক। কিন্তু ইংরেজী ভাষা নিয়ে আমার আলগা কোন ফ্যান্টাসি ভালো লাগে না। যেমন- ভার্সিটি থাকতে দেখেছি, কিছু ছেলেপেলে ইংরেজদের মত ইংরেজী উচ্চারণের জন্য প্র্যাকটিস করতো । এভাবে ইংরেজী বলে তারা গর্বও করতো। আমি পারতাম না দেখে আমাকে তিরস্কার করতো।
সত্যিই বলতে ঐ সব মুসলিম ছেলের ইংরেজী ঢং এ ইংরেজী বলা এবং সেটা নিয়ে গর্ব করা দেখে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে হাসতাম। কারণ ঐ সময় আমি ক্রিকেট খেলা দেখতাম। ক্রিকেট খেলায় ইংরেজী ধারাভাষ্যকারদের ইংরেজী উচ্চারণ লক্ষ্য করে দেখতাম, তারা সবকিছু ভালো করেই উচ্চারণ করতে পারে, কিন্তু মুসলমানদের কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে পারতো না অথবা ইচ্ছা করেই বিকৃত করে বলতো। যেমন মুহাম্মদ আশরাফুল, এটা উচ্চারণ করতো ‘মহ্যা-ম্যাড’ আশরাফুল অথবা মুসলিম শব্দটা করতো ‘মজলিম’ বলে। আমি চিন্তা করতাম- পশ্চিমা ধারাভাষ্যকাররাই মুসলমানদের ‘মুহাম্মদ’ আর ‘মুসলিম’ এই দুইটা গুরুত্বপূর্ণ শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না, আর সাধারণ মুসলমানরা পশ্চিমা ঢং এ ইংরেজী উচ্চারণ নিয়ে আদেকলামির শেষ নাই। আহহারে!!
যাই হোক, এ পোস্টে মূল কথা হলো –
জ্ঞানকে আমি কোন বাধনের সীমায় বাধতে রাজি নই। আমি চাই জ্ঞান সর্বত্র ছড়িয়ে যাক।
এতে জ্ঞানকে পূজি বা কুক্ষিগত করে যারা ব্যবসা করতে চায় বা বিশেষ স্বার্থ হাসিল করতে চায়, সেটা আর সম্ভব হবে না।
কোন ঘরে আলো জ্বেলে দিলে যেমন সেখানে আর অন্ধকার থাকতে পারে না, সব কিছু স্পষ্ট দেখা যায়।
ঠিক তেমনি জনগণের মাঝে প্রকৃত জ্ঞানের আলো জ্বেলে দিলে, তাদের নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা আর কোন ষড়যন্ত্র করতে পারবে না,
জনগণ নিজেরাই সব বুঝতে পারবে, আর এটাই নয়নের নয়ন খোলা পলিসি।