কার প্রতি দৃষ্টি দেয়া জরুরী- মগ উপজাতি না রোহিঙ্গা । এন.সি- ১৭৮

কার প্রতি দৃষ্টি দেয়া জরুরী-
মগ উপজাতি না রোহিঙ্গা
Related image
কার প্রতি দৃষ্টি দেয়া জরুরী-
মগ উপজাতি না রোহিঙ্গা
মগ আর রোহিঙ্গা দুটি জাতি মায়ানমার বা বার্মিজ জাতিগোষ্ঠী। কিন্তু একই দেশের গোষ্ঠী হলে হবে কি, দুই জাতির মধ্যে পরষ্পরের দ্বন্দ্বটা সাপে-নেওলের মত। বৈদ্যুতিক চার্জের সাথে তুলনা করলে একজন পজিটিভ, অন্যজন নেগেটিভ। চুম্বকের মেরুর সাথে তুলনা করলে দুই জন দুই মেরু।
মগরা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী, আর রোহিঙ্গারা ইসলাম ধর্মের। ইতিহাস বলে, যুগের পর যুগ ধরে মগ জাতি গোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করে আসছে, যার সর্বশেষ নজির হিসেবে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে দেখা যায়।
তবে শুধু রোহিঙ্গারা নয়, মগরা অনেকক্ষেত্রে বার্মীজ সরকারের সাথেও যুদ্ধে লিপ্ত। এখনও আরাকানে বিভিন্ন মগ বিদ্রোহী গ্রুপগুলো প্রতিনিয়ত গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই মগদের মধ্যে একটি গ্রুপ বহু আগে বার্মা ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরা বাংলাদেশে মারমা, রাখাইন ইত্যাদি নামে থাকে (পাহাড়ি মগদের মারমা বলে, সমতলের মগদের রাখাইন বলে)।
তবে ঘটনা হলো- মগদের উগ্র সন্ত্রাসী বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে বাংলাদেশের যে এলাকাগুলোতে বেশি দেখা যায় (যেমন: বান্দরবানের রুমা বা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা), সেখান থেকে কক্সাবাজারে উখিয়া উপজেলায় আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলো একেবারেই কাছে। শুধু কাছে বললেও ভুল হবে, উখিয়াতেও প্রচুর পরিমাণে মগ জাতি গোষ্ঠী আছে এবং উখিয়াও তাদের সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত হয়। এর প্রমাণ গত ৬ই সেপ্টেম্বর, উখিয়ার পাহাড়ে মাটি খুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও পোষাক উদ্ধার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এ ধরনের পোষাক, অস্ত্র সাধারণত পাহাড়ে উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করে। ঐ এলাকার ওসি এ সম্পর্কে বলে, “ঘটনাস্থল পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সন্নিকটে হওয়ায় কোনো পাহাড়ী সন্ত্রাসী অথবা স্থানীয় কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ এসব অস্ত্র ও পোশাক সেখানে রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া পোশাকগুলো দেখতে অনেকটা সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর পোশাকের মতোই।” (https://bit.ly/2kcEA76)
এই অস্ত্র ও পোষাক উদ্ধারের পর তাই স্বাভাবিকভাবে একটি প্রশ্ন উদয় হয়েছে,
কক্সবাজারের উখিয়াতে যে রোহিঙ্গাদের শরনার্থী ক্যাম্প হয়েছে এবং আশেপাশে কিছুটা হলেও রোহিঙ্গারা ছড়িয়েছে এতে কি বিদ্রোহী মগদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কোন সমস্যা হচ্ছে কি না ? কারণ রোহিঙ্গারা তো জাতিগতভাবে মগ বিদ্বেষী, তাদের পূথি সাহিত্যে মগ বিরোধী অনেক কিছু আছে। সেই মগদের এলাকায় যদি রোহিঙ্গাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তবে মগ’রা কি সমস্যায় পতিত হচ্ছে ?
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময় ঐ এলাকাগুলোতে মগ বিদ্রোহী গ্রুপগুলো যে বেশ সক্রিয় তার খবর কিন্তু পাওয়া যায়।
১) অস্ত্রসহ মগ লিবারেশন পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতা মংটু মারমা গ্রেফতার (খবর: মে ২৩ ২০১৯)
২) মগ লিবারেশন পার্টির ৩ সদস্য আটক (খবর: মে ৩১, ২০১৯)
একটি বিষয় আমি সব সময় দেখেছি, আপনারা লক্ষ্য করেছেন কি না জানি না-
পাহাড়ে যখনই উপজাতি সন্ত্রাসীরা কোন ঘটনা ঘটায়, তখন স্বাভাবিকভাবে স্থানীয় বাংলাদেশীরা পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধির দাবী তুলে। কিন্তু ঠিক ঐ সময় মিডিয়াতে অন্য কোন ইস্যুতে আলোচনার উদয় হয় এবং জনগণকে সে দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করা হয়। ফলে হারিয়ে যায়, স্থানীয় বাঙালীদের সেনাকাম্প বৃদ্ধির দাবীটি।
যেমন-
এ বছর ১৮ই মার্চ রাঙ্গামাটিতে নির্বাচনের সময় ব্রাশফায়ার করে ৮ জনকে হত্যা করে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। মারাত্মক আহত হয় ১০ জন। স্বাভাবিকভাবে এই বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ ইস্যু হওয়ার কথা। কিন্তু তারপর দিন সকালে অর্থাৎ ১৯শে মার্চ ঢাকার প্রগতি সরণিতে সুপ্রভাত বাসের ধাক্কায় আবরার আহমেদ চৌধুরী নামক এক ছাত্র।নিহত হয়। সেই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তৈরী হওয়া আন্দোলন দেশের সর্বোচ্চ আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়, হারিয়ে যায় পার্বত্য উপজেলায় সেনাক্যাম্প বৃদ্ধির বিষয়টি।
একই ঘটনা ঘটে আগস্ট মাসেও। ১৮ই আগস্ট রাঙ্গামাটিতে উপজাতি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় এক সেনাসদস্য, যার খবর মিডিয়াতে ১৯শে আগস্ট আস। কিন্তু ২০শে আগস্টে থেকে বিভিন্ন মিডিয়াতে “রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য হুমকি” (একুশে টিভির হেডিং) শিরোনামে খবর প্রচারিত হতে থাকে। ফলে সেনাবাহিনী সদস্যকে হত্যা করেও ফের হারিয়ে যায় পাহাড়ে সেনাক্যাম্প বৃদ্ধির ইস্যুটি। পাহাড়ে বাঙালীরা তাদের নিরাপত্তার জন্য সেনাক্যাম্প বৃদ্ধির জন্য সমাবেশ করলেও সেটা হারিয়ে রোহিঙ্গাবিদ্বেষী স্রোতে।
এবার ফেসবুক নিয়ে কথা বলি। ফেসবুকে যে আইডি/পেইজ/গ্রুপগুলো রোহিঙ্গা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তাদের মূল মূল লোকগুলো হলো চেতনা ব্যবসায়ী। এই চেতনা ব্যবসায়ীরা অতি উচ্চমাত্রায় চেতনার গান গায়। সারা দিন মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা করতে করতে তাদের মুখে ফেনা উঠে যায়। এই গ্রুটি আবার একটি লক্ষণ হলো- তারা খুব জাফর ইকবাল ভক্ত। আমার জানা মতে, জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী ইয়াসমিন আহমেদ হলো সিএইচটি কমিশনের সদস্য। উল্লেখ্য সিএইচটি কমিশন হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত এমন একটি সংগঠন যার মধ্যে পূর্ব তীমুর, দক্ষিণ সুদান এবং তিব্বতকে ভাঙ্গার কাজে নিয়োজিত আন্তজাতিক ব্যক্তিরাও রয়েছে। এদের মূল উদ্দেশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে জুম্মল্যান্ড নামক পৃথক রাষ্ট্র তৈরী করা। (https://bit.ly/2lDUJmr)
আমি এর আগেও স্ট্যাটাসে বলেছি, রোহিঙ্গা সমাবেশে এমন কিছু বলা হয়নি, যা বাংলাদেশের জন্য হুমকি, বরং এই সমাবেশে এমন কিছু হয়েছে যেটা আসলে অন্য কারো বিরুদ্ধে হুমকি, আর ঐ মহলটি তাদের হুমকিটিকে বাংলাদেশীদের জন্য হুমকি বলে চালিয়ে দিতে চাইছে। অর্থাৎ নিজের শত্রু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশীদের শত্রু বানিয়ে দিতে চাইছে এবং বাংলাদেশীদের দিয়ে তাদের দমন করতে চাইছে।
আরেকটু সহজভাবে বলতে-
রোহিঙ্গারা হলো জাতিগত মগ বা উপজাতি বিরোধী। উপজাতিদের সংখ্যা ৮ লক্ষ এবং রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লক্ষ। তারা দুইজন খুব পাশাপাশি এলাকায় অবস্থান করতেছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের সেখানে অবস্থান করা এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি আসলে উপজাতিদের জন্য, বিশেষ করে তাদের অস্ত্রগার, ক্যাম্প, বিদ্রোহী কার্যক্রম নির্ভিগ্নে চালানোর জন্য হুমকি, যা তাদের দীর্ঘ মেয়াদী প্ল্যান নষ্টের কারণও বটে। পাশাপাশি উপজাতিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে (পৃথক রাষ্ট্র দাবী করা, অস্ত্র মজুদ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাধারণ জনগণের উপর হামলার) সেগুলো ঘুরিয়ে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে রোহিঙ্গাদের উপর। ফলে যেটা আসল দাবী হওয়া উচিত ছিলো পাহাড়ে উপজাতিগোষ্ঠীগুলোর উপর নজরদারী বৃদ্ধি এবং আসামের মত তাদের এনআরসি করে নাগরিকত্ব বাতিল করে মায়ানমারে পাঠানোর দাবী তোলা। কিন্তু এখন সেটা আড়াল করে পাবলিক ফোকাস ঘুরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে।
No photo description available.