ঢাকার বাতাসে এখন বোঝাই কন্সট্রাকশনের ধূলা-বালি-সিমেন্ট।

ঢাকার বাতাসে এখন বোঝাই কন্সট্রাকশনের ধূলা-বালি-সিমেন্ট।
Related image
ঢাকার বাতাসে এখন বোঝাই কন্সট্রাকশনের ধূলা-বালি-সিমেন্ট। এগুলো নাক দিয়ে প্রবেশ করে, ২ কোটি শহরবাসী যে কত ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার কোন হিসেব নেই। শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত নানান অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো- যখনই বায়ু দূষণের কথা আসে, তখন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন ইটভাটাগুলোতে হামলা চালায় প্রশাসন, সেগুলো বন্ধ করে দেয়, বেকার করে দেয় হাজারো শ্রমিককে। কিন্তু ঘটনা হইলো- ইটভাটা থেকে যে কার্বন এমিশন হয়, সেগুলো কার্বন সাইকেলে পড়ে ঠিকই ভারসাম্যের ফিরে আসে। কিন্তু এই যে ফ্লাইওভার-মেট্রোরেলের বিপুল ধূলা-বালি-সিমেন্ট মিশ্রিত বাতাস এগুলো রিমুভ হবে কিসে ? ভারসাম্য হবে কিসে ?? ফুসফুসে একবার ঢুকলে এগুলো বের করার উপায় কি ? তাছাড়া ইটভাটাগুলো তো শহরের বাইরে, কিন্তু কন্সট্র্যাকশন গুলোতো ২ কোটি ঘনবসতির পেটের মধ্যে, এর ক্ষতির মাত্রা কতগুণ বেশি ?
আমি দেখেছি, সরকার নিজে পরিবেশের ক্ষতি করে, কিন্তু দোষ দেয় অন্যের।
যেমন- নদীর ধারে মসজিদ থাকলে নাকি নদীর ফ্লো তে সমস্যা হয়।
কিন্তু নদীর মাঝখানে যে বড় বড় সেতুগুলো বানানো হচ্ছে, এর দ্বারা তো পুরো নদীই মারা যাচ্ছে।
অপরিকল্পিত সেতুর কারণে যেখানে বড় বড় নদীগুলোর জীবন শেষ, সেখানে নদীর রক্ষার নামে নজর ঘোরানো হচ্ছে তীরের মসজিদগুলোর দিকে। আশ্চর্য।
যাই হোক, আমি এসব অপরিকল্পিত উন্নয়নের ঘোর বিরোধী অনেক আগ থেকেই।
আমি অনেক বছর আগ থেকেই বলেছি- এগুলো হলো কর্পোরেটোক্রেসি, যা দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের উপলক্ষ। যদিও অনেক জনগণ আমার কথার বিরোধীতা করেছে, কারণ তারা উন্নয়ন দেখতে চায়। যদিও এধরনের অপরিকল্পিত উন্নয়নের সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা নাই, এবং বুঝতেও চায় না।
আপনারা নিশ্চয়ই খবরে দেখছেন, সরকার এসব উন্নয়নের জন্য ব্যাংক থেকে সীমানা অতিক্রম করে প্রচুর লোন নিচ্ছে। হয়ত বুঝতেছেন না, এত এত লোন নিলে সমস্যা কি ? সমস্যা হলো- সরকার যত লোন নিবে, ব্যাংকগুলো তত টাকা ছাপাবে, আর যত অপরিকল্পিত টাকা ছাপাবে তত মুদ্রস্ফীতি হবে। আর যত মুদ্রাস্ফীতি হবে সব কিছুর দাম তত বাড়তে থাকবে। সম্প্রতি চালসহ বিভিন্ন খাদ্র্যদ্রবের দাম হু হু করে বাড়তেছে। যতই এর পেছনে ব্যাখ্যা দাড় করান, মূল কারণ হলো মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত বাড়ছে। চাল-ডালের দাম বাড়ায় তার থেকে সরকার তার উন্নয়নের খরচ যোগাচ্ছে।
আসলে আমাদের আম জনতা কিন্তু উন্নয়ন মানেই রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার বা কন্সট্র্যাকশন বুঝে।
আর ক্ষমতাসীনরা সেই সুযোগটি নেয়। কারণ যত প্রজেক্ট, তত টাকা মারা।
কিন্তু কোন জাতির উন্নয়ন মানে যে জ্ঞান বা নলেজের উন্নয়ন এটাই জনগণের নলেজে নাই। কোন জাতির কতটুকু নলেজ বৃদ্ধি পাইলো, সেটা দিয়ে তার উন্নয়ন মাপা উচিত।
আপনি যদি কন্সট্র্যাকশন দিয়ে উন্নয়ন মাপতে যান, তখনই বুঝতে হবে আপনি অশিক্ষিত,
এবং অশিক্ষিত মানুষকে ধোকা দেয়া সোজা।
কয়েকদিন আগে খবরে দেখলাম, সরকার কারিগরি শিক্ষাকে আরো বিস্তৃতি করার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা ইনভেস্ট করতেছে। আরে ভাই কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের পেছনে ‘দক্ষ শ্রমিক’ হওয়ার যুক্তি দিচ্ছেন বুঝলাম, কিন্তু আপনি কেন স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দীর পর পুরো জাতিকে শ্রমিক বানাতে চাইছেন? তাদের মালিক বানান। কথা হলো- আমাদের অনার্স লেভেলে যে শিক্ষা সিস্টেম আছে সেটা কতটুকু মার্কেট রিলেটেড ? অনার্সের প্রত্যেকটা সাবজেক্টকে মার্কেটের সাথে রিলেশেন করে দেন, তাহলে তো আমাদের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অটোমেটিক শিক্ষিত শ্রেনী প্রবেশ করতো, নতুন নতুন আইডিয়া ক্রিয়েট হতো। বাংলাদেশে অনার্স পাশ করে লক্ষ লক্ষ পোলাপাইন ছুটতেছে বিসিএসের পেছনে, তারা চাকর হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে অধিকাংশ ব্যবাসায়ী হলো স্বল্পশিক্ষিত, শিক্ষার অভাবে তাদের ক্রিয়েটিভিটি হচ্ছে না, যার কারণে তাকে শুনতে হচ্ছে নকলবাজ উপাধি। ক্রিয়েটিভিটির মাধ্যমে লাভবান না হওয়ায়, বাধ্য হয়ে লাভবান হতে আশ্রয় নিচ্ছে দুর্নীতির। অথচ সরকার এখন কারিগরী শিক্ষাকে যেভাবে মার্কেটের সাথে সংযুক্ত করতে চাচ্ছে, মানে শ্রমিক হওয়ার জন্য যে কার্যক্রমটা নিছে সেটা যদি অনার্স লেভেলের সাথে নিতো, তবে পুরো বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সেক্টরে অনেক ক্রিয়েটিভ উদ্যোক্তা প্রবেশ করতো, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু সে ধরনের কোন উদ্যোগই নাই।
কিছুদিন আগে, রাষ্ট্রপতি বক্তব্য দিলো- পাবলিক ভার্সিটিতে সান্ধ্যকালিন কোর্স বন্ধ হওয়ার পক্ষে।
এরপরই ঘোষণা আসলো- পাবলিক ভার্সিটিতে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের। এটা আপনাকে মানতেই হবে, পাবলিক ভার্সিটিতে সান্ধ্যকালীন কোর্স চললে প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো ছাত্র হারাচ্ছিলো। অনেকে বলে, রাষ্ট্রপতির সন্তানরা নাকি প্রাইভেট ভার্সিটির মালিকানার সাথে সংযুক্ত এবং প্রাইভেটে ভার্সিটির স্বার্থ রক্ষা করতেই এই ঘোষনা। যদিও তার সত্যতা আমার জানা নাই। তবে কিছুদিন আগে আমি একটা বিষয় দেখলাম- আমরা বলি ভারতীয়রা বাংলাদেশের জব সেক্টর দখল করছে। এটা নিয়ে অনেকেই প্রতিবাদী। কিন্তু কোন অংশগুলোতে তারা বেশি আসছে ? বেশিরভাগ হলো কোম্পানির উপরের দিকে জবগুলো, যার স্যালারি অনেক উচ্চ। ঐ জবগুলোতে ভারতীয়দের হটিয়ে যদি বাংলাদেশীরা যদি দখল নিতে চায় তবে আমাদের প্রচুর পরিমাণে মানসম্পন্ন এমবিএ পাশ করা ছেলেপেলে লাগবে। কিন্তু সমস্যা হলো প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো থেকে অনেকে এমবিএ করে বের হলেও তা মানসম্পন্ন হচ্ছে না, আর পাবলিক ভার্সিটিরটা মানসম্পন্ন হলেও তার সিট কম। আর সেই সমস্যাটার সমাধান হচ্ছিলো এই সান্ধ্যকালিন কোর্স দিয়ে। অধিকাংশ সান্ধ্যকালীন কোর্স ছিলো এই এমবিএ কোর্স। কিন্তু পাবলিক ভার্সিটির ছেলেপেলের অতিরিক্ত ইগো নামক হিংসা আর ‘মাথা ব্যথ্যার উপশমে মাথা কেটে ফেলা’র নীতি আমাদের জাতিকে উঠতে দিচ্ছে না। কাকড়া যেভাবে গর্তে পড়লে একজন অন্যজনকে টেনে নিচে নামিয়ে দেয়, আমরা বাঙালীরাও সেভাবে অন্য ভাইকে নামিয়ে দিচ্ছি, আসলে আমরা ক্ষতি করছি পুরো জাতির, পেরে উঠছি না ভারতীয়দের সাথে।
আরে ভাই, ঐ টিচাররা নিয়মিত ক্লাস নেয় না, বুঝলাম। তাহলে এমন নিয়ম করেন, “যে শিক্ষকের দিনের বেলায় ক্লাস পারফর্মেন্স ভালো হবে তারাই সান্ধ্যকালীন কোর্সের ক্লাস পাবেন”। নিয়মটা একটু ঘুড়িয়ে নিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সান্ধ্যাকালীন ক্লাস বন্ধ করতে পারলেও কি প্রাইভেট ভার্সিটির ক্লাস বন্ধ করতে পারবেন ? তা তো পারবেন না।
মূল কথা হলো-
আমাদের নলেজ বাড়াতে হবে, আবেগ নয়। নয়ত ধোকায় পড়তে হবে।
আবার আমাদের দেশপ্রেম বাড়াতে হবে, হিংসে নয়। নয়ত জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়তে হবে।