পূজায় নির্বাচন, রোজায় পরীক্ষা এবং একটি ক্ষমতার মনস্তত্ব
অনেকে বলে মুসলমানরা আজ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
কিন্তু কেন মুসলমানরা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে ?
আসলে মুসলমান ক্ষমতায় নেই বলতে বুঝায় ইসলামীক নিয়মনীতি ক্ষমতা নেই।
এর কারণ যারা ইসলামীক নিয়মনীতি ধারণ করবে, মানে মুসলমান,
সেই মুসলমান চায় না, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামীক নিয়মকানুন জারি হোক বা রাষ্ট্র ইসলামীক নিয়ম কানুনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিক।
যখন মুসলমানরাই চাইবে, রাষ্ট্রে ইসলামীক নিয়ম কানুনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হোক,
তখনই আসলে ইসলামীক নিয়ম কানুনগুলো জারি হবে বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে, তখন হয়ত বলতে পারেন, মুসলমানরা ক্ষমতায় গিয়েছে।
যেমন হিন্দুরা।
তারা তাদের পূজাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে খুব গুরুত্ব সহকারে ফুটিয়ে উঠাচ্ছে।
সব হিন্দু একমত হয়েছে, কেউ তার বিরুদ্ধে যায়নি।
অথচ স্বরসতী পূজায় কিন্তু রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান নয়, তার জন্য সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয় না।
কিন্তু সেই স্বরসতী পূজার তিথির ১ ঘন্টা নির্বাচনের মধ্যে পড়ে গেছে দাবী করে তারা একত্র হয়েছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ভোট পিছিয়ে দেয়ার জন্য। শুধু তারাই এক হয়নি, তারা অনেক মুসলমানকে তাদের সাথে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে, তাদের মুখ দিয়ে পূজার গুরুত্ব বর্ণনা করছে।
সত্যিই বলতে- তারা আসলে পূজায় ছুটি চাইছে না, তারা চাইছে স্বরসতী পূজার রাষ্ট্রীয় একটা গুরুত্ব তৈরী করতে। সবাই তাদের পূজা নিয়ে কথা বলুক, তাদের ধর্মীয় জিনিসকে সব জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভাবুক, সবাই বিশ্বাস করুক- স্বরসতী পূজা একটা বিরাট গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এই যে গুরুত্ব তৈরী হওয়া, এটাই হলো ক্ষমতা। এটা যদি রাষ্ট্র বা তার জনগনকে তারা বিশ্বাস করাতে পারে, তবে বুঝতে হবে- এই বিশ্বাসটাই হিন্দুদের ক্ষমতায় নিয়ে গেছে। অর্থাৎ তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস রাষ্ট্র বা জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস হয়ে গেছে, অর্থাৎ হিন্দু ধর্ম ক্ষমতায় চলে এসেছে, এখন তাদের জনসংখ্যা ৩% হোক, আর মুসলমানদের জনসংখ্যা ৯৫% হোক, সেটা কোন ব্যাপার না।
এবার আসি রোজায় পরীক্ষা নিয়ে, আগামী রোজার সময় সারা দেশের এইচএসসি পরীক্ষা পড়েছে। এই কারণে অনেক মুসলিম ছাত্র/ছাত্রী/শিক্ষক রোজা রাখতে পারবে না, আবার কেউ রাখলেও তাদের অনেক কষ্ট হবে, এই জিনিসটা নিয়ে যখন মুসলমান কথা বলবে, মুসলমান যখন তার রোজা পালনকে গুরুত্ব দিবে, পরীক্ষা পেছাতে বলতে, তখন বুঝতে হবে ইসলামীক নিয়মনীতির গুরুত্ব আছে।
সবাই সেটা রাষ্ট্রীয় নিয়মে ঢোকানোর চেষ্টা করবে, তখন আসলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামীক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়ার রেওয়াজ তৈরী হবে, এবং সেখানে একটা মনস্তত্ব তৈরী হবে।
অর্থাৎ ইসলামীক নিয়মনীতির রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব তৈরী হওয়া মানে ক্ষমতায় ইসলামীক নিয়মনীতি আসা বা মুসলমানরাই ক্ষমতায় আসা।
কিন্তু সমস্যা হইলো,
হিন্দুরা যেটা বুঝতে পারতেছে,
অর্থাৎ সরস্বতী বন্দনাকে রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূণ করে তাদের মনস্তাত্বিক ক্ষমতাকে পুরো রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দেয়া, সেটাই কিন্তু মুসলমানরা বুঝতে পারতেছে না।
তারা বুঝতে পারতেছে না, তাদের রোজাকে গুরত্ব দিলে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরই ক্ষমতা হবে,
জাতিগত চিন্তা না করে তারা ব্যক্তিকেন্দ্রীক চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
তারা ভাবতেছে, পরীক্ষা পেছালে তাদের ক্যারিয়ারের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে, অমুক, তমুক।
আরে ভাই কত মুসলমান সারা দিন ক্যারিয়ার-ক্যারিয়ার পরীক্ষা-পরীক্ষা করতেছে,
তাদের কি পিটানি খাওয়া বন্ধ হইছে ? পশ্চিমে গেলে খ্রিষ্টানরা মারে, পূর্বে গেলে বৌদ্ধরা মারে, ভারতে হিন্দুরা মারে, প্যালেস্টাইনে ইহুদীরা মারে। বহু মুসলমানের ক্যারিয়ার তো আছে, কিন্তু তারা কিন্তু মাইর থামাতে পারে নাই। কারণ মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় নিয়মনীতিতে ফোকাস করে সেটাকে রাষ্ট্রীয়করণ করতে পারে নাই, রাষ্ট্রের উপর চাপায় দিতে পারে নাই, যেটা হিন্দুরা পারছে, বৌদ্ধরা পারছে, নাস্তিকরা পারছে, খ্রিস্টানরা পারছে বা ইহুদীরা পারছে। আর রাষ্ট্রের উপর চাপায় দেয়া মানে অটোমেটিক অন্য ধর্মের লোকদের উপর ডোমিনেট করা। এটা অনুধাবন করে এবার ভারতে মুসলমানদের সকল ধর্মীয় দিবসের ছুটি বছরের শুরুতেই রাষ্ট্রীয় তালিকা থেকে বাদ দেয়া হইছে। (https://bit.ly/2TAt2tl)
আপনি যতই বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু আর মুসলমানরা সংখ্যাগুরু,
লাভ নাই । ক্ষমতা তার কাছেই যাবে তার নিয়মনীতি রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপাবে,
সেখানে হিন্দুদের স্বরসতী পূজা যতটা গুরুত্ব পেলো, মুসলমানদের রোজা তার ধারে কাছেও নাই।
হিন্দুরা তাদের ১ ঘন্টার তিথিকে যতটা গুরুত্বসহকারে ফুটায় উঠাতে পেরেছে,
মুসলমানরা তাদের রোজা, তারাবীসহ রমজান মানের বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়গুলো ঐভাবে ফুটায় উঠাতে পারে নাই, বলতে পারে নাই- রোজার মধ্যে পরীক্ষা পড়লে সকল ছাত্র-ছাত্রীর ধর্মীয় বিষয় কি কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অমুক গুনাহ হবে, অমুক আমল ছুটি যাবে। বিষয়টি এমন-তাদের কাছেই তাদের ধর্মীয় বিষয় গুরুত্বপূর্ণ না, রাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে কিভাবে ??
বাংলাদেশের মুসলমানরা যে খুব শিগ্রই অখণ্ড ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অংশ হতে যাচ্ছে, এই আভাসই তা বলে দেয়।