পোষাক শ্রমিকদের আন্দোলন, কারণ ও সমাধান

পোষাক শ্রমিকদের আন্দোলন, কারণ ও 
সমাধান

Image result for নদী
পোষাক শ্রমিকদের আন্দোলন, কারণ ও সমাধান
গত কয়েকদিন যাবত বাংলাদেশের বিভিন্ন পোষাক কারখানার শ্রমিকরা মাঠে নেমে আন্দোলন করছে। তারা ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে রেখেছে। শ্রমিকদের দাবি, তারা ন্যায্য উপায়ে বেতন পাচ্ছে না, তারা তাদের বেতন আরো বৃদ্ধির আবেদনও জানিয়েছে। আসলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন একেবারেই অযৌক্তিক নয়, তবে একবারেও তা সমাধান করা যাবে না। কারণ আপনি যত ধাপে বেতন বাড়াবেন, তারা আরো বেশি চাইবে, এটা যে তাদের দোষ তাও নয়। কিন্তু আমি যে কোন সমস্যার গোড়ায় গিয়ে তা সমাধানের পক্ষে, যেন একই সমস্যা বার বার উদয় না হতে পারে।
পোষাক শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রধান দুটি কারণ আছে।
প্রথমত, কারখানা মালিকরা অনেক সময় তাদের বেতন আটকে রাখে, অনেক ক্ষেত্রে ঠকায়। কিন্তু সরকারীভাবে সেটার প্রতিকার করা হয় না।
দ্বিতীয়ত, মার্কিনপন্থী কিছু এনজিও নিজেদের স্বার্থে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঠে নামতে উস্কানি দেয়। মোশারেফা মিশু নামক মার্কিন ব্যাকিং চলা এক মহিলা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাঠে নামানোর জন্য অন্যতম দায়ী।
একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের পোষাক কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক অর্ডার পায় ন্যূনতম শ্রমিক মজুরীর কারণে। সেই শ্রমিক মজুরী নিয়ে যদি আঘাত আসে, তবে পরবর্তী প্রতিঘাতটা নিয়েও চিন্তা করার দরকার আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের পোষাক শিল্পের এখন করুণ অবস্থা। এই অবস্থায় যদি শ্রমিক অস্থিরতা তৈরী করা যায় এবং গার্মেন্টস মালিকদের খরচ বাড়িয়ে দেয়া যায়, তবে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাতকে ধিরে ধিরে ধ্বংস করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আপনারা আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের কথা শুনে দেখবেন, তারা বলে, “আমরা যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। বাড়িভাড়া, খাবার খরচ আগে থেকে বেড়েছে, কিন্তু সে অনুপাতে বেতন বাড়ে নাই।”
আচ্ছা, এ সমস্যাটা কি শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকদের ? নাকি সকল চাকুরীজীবিরই একই সমস্যা ? সবাই `লিভিং-কস্ট' ম্যানেজ করতে গায়ের ঘাম ঝড়াচ্ছে না ? তারমানে সমস্যাটা শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতনে না, অনেকেরই আছে। তাই সমাধানটা মূল জায়গায় করা দরকার।
মনে রাখতে হবে, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে ঢাকাবাসীদের মূল খরচ তিনটি।
১) বাড়িভাড়া, যা তার বেতনের প্রায় ৬০% পর্যন্ত হয়।
২) খাবার খরচ, উচ্চদ্রব্যমূল্যের কারণে অনেকে খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
৩) যাতায়াত ভাড়া, দিনে দিনে তা উর্ধ্বমূখী।
এখন আপনি যদি কারো সেলারি না বাড়িয়ে দিয়ে, এই তিনটি খরচ কমিয়ে দেন, তাহলেও সমস্যার সমাধান হয়। কি বলেন ?
এই তিনটি সমস্যার সমধান হবে কেবল যদি ঢাকাকে ডিসেন্ট্রালাইজ বা বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় তবে। এই বিকেন্দ্রীকরণের প্রথম ধাপ হতে পারে, ঢাকা শহর ও তার আশেপাশের এলাকায় যে হাজার পাঁচেক ছোট বড় গার্মেন্টস কারখানা আছে, তা সারা দেশজুড়ে মানে ৬৩ জেলায় ছড়িয়ে দেয়া। এতে প্রতি জেলায় ৮০টি করে কারখানা পড়ে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা ঢাকা শহরে এসে তারপর পোষাক কারখানায় কাজ করে। দেশজুড়ে যদি কারখানাগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়, তবে-
-সে নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে কারখানায় কাজ করতে পারবে। এতে তার বাড়ি ভাড়া বেচে যাবে।
-সে নিজের গ্রামের বাড়িতে থাকলে তার খাবার খরচ কমে যাবে, কারণ গ্রামে চাষবাস থেকে অনেক খাদ্য আসে।
- নিজ জেলা শহরে কাছের কোন কারখানায় যেতে বাসে যাতায়াত খরচ খুব বেশি হবে না।
-গ্রামীন অর্থনীতিও অনেক সমৃদ্ধ হবে।
ঢাকা থেকে পোষাক কারখানা সরে গেলে ঢাকাবাসীর যে লাভ হবে-
ক) ঢাকা ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় ১ কোটি লোক চলে যাবে। ফলে সাপ্লাই-ডিমান্ড থিউরী অনুসারে ঢাকা শহরের বাড়িভাড়া হ্রাস পাবে।
খ) ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট অনেক হ্রাস পাবে।
৬৩ জেলায় কারখানা ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি গার্মেন্টস মালিকেরদের মানাতে গেলে-
-যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ও স্বল্প করতে হবে। গার্মেন্টস মালামাল পরিবহনের জন্য নদীপথ ব্যবহার করলে খরচ অনেক কমে যাবে। যে স্থানে পানির স্বল্পতা আছে, সেখানে খনন করতে হবে। নদীপথের পর দ্বিতীয় চয়েজ হতে পারে রেলপথ। মনে রাখতে হবে, মালামাল পরিবহনের জন্য সড়ক ব্যবস্থা কখন ১ম পছন্দ হতে পারে না।
-প্রতি জেলায় কারখানার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এভেলএবল করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশবিধ্বংসী ও উচ্চমূল্যের বিদ্যুৎ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের গ্যাস ফিল্ডগুলো চেপে না রেখে সেগুলো উন্মুক্ত করতে হবে এবং নিজ দেশের গ্যাস দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। বিদ্যুৎ আর যাতায়াত সহজ করা গেলে গার্মেন্টস কারখানাগুলো দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে মালিকপক্ষের আর কোন ‘না’ থাকবে না।
আমার মনে হয়, আওয়ামীলীগ সরকার যদি এই পলিসি গ্রহণ না করে, তবে কোন রাজনৈতিক দলের উচিত হবে, এ পলিসি নিয়ে প্রচার চালানো, বলা- তারা ক্ষমতায় গেলে এই পলিসিতে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ জনগণের জীবন নির্বাহের খরচ কমিয়ে আনবে এবং জনগণের কষ্ট লাঘব করবে।
Image may contain: one or more people and people on stage, text that says 'নিসুতম পোষাক মজুরী শ্রমিকদের ৬0০০ আন্দোলন কারণ টাকা সমাধান'