চোখের পানি আর রক্তের ফোটায় ক্রিকেট খেলা

চোখের পানি আর রক্তের ফোটায় 
ক্রিকেট খেলা

চোখের পানি আর রক্তের ফোটায় ক্রিকেট খেলা
Image result for নদীগতকালকে একটা খবর দেখলাম, সরকার ঢাকার নিকটবর্তী পূর্বাচল এলাকায় ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানানোর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ১০ লক্ষ টাকায় ৩৭ একর জমি দিয়েছে। উল্লেখ্য পূর্বাচলে জমির বর্তমান বাজারমূলে ৩৭ একর জমির দাম প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি। সেই ১ হাজার কোটি টাকা সরকারের পক্ষ থেকে মাত্র ১০ লক্ষ টাকা মানে নামমাত্র মূল্যে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, পূর্বাচলে এই জমির উপর একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম বানানোর পরিকল্পনা করেছে, যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা, স্টেডিয়ামটির নাম হবে, ‘শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম’। (https://bit.ly/2t0TbDghttps://bit.ly/2TzAfaB)
পূর্বাচলের যে স্থানে সরকার নামমাত্র মূল্যে দিলো, এই জমি কিন্তু সরকারের নয়। এই জমি জনগণের। সরকার ও তার লেলিয়ে দেয়া দালালরা জনগণের জমি লোপাট করে পূর্বাচল নামক সিটি বানাচ্ছে। পূর্বাচলের জমি সম্পর্কে যাদের জ্ঞান আছেন, তারা জানেন নিরীহ জনগণের ‘সম্বল’ এই জমি দখল করতে সরকার কত মানুষের রক্ত ঝড়িয়েছে। কত মানুষকে গুম করা হয়েছে, কত লাশ খালে-বিলে ভেষে উঠেছে। কত মানুষকে রাতের আধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কত মানুষের হাহাকার আর কান্নার সাথে পূর্বাচলের এই জমি জড়িত। সবচেয়ে বড় ভয়ঙ্কর ছিলো ২০১০ সালের ঘটনা। ২৩শে অক্টোবর তারিখে লাগোয়া রুপগঞ্জের ইছাপুর ও তারআশেপাশের এলাকায় সরকার সেনাবাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য জুলুম চালায়, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়, অনেককে গুম করে। (https://bit.ly/2UD53XUhttps://bit.ly/2Uz6MNS)
সরকার ৩৭ একর জমি বিসিবিকে নামমাত্র মূল্যে দিয়ে দেয়। আচ্ছা যাদের জমি কেড়ে নিয়ে এই এক্সক্লুসিভ জোন বানানো হয়েছে তারা কি নূন্যতম কোন প্লট পেয়েছে ?
১১ মার্চ ২০১৬ দৈনিক সমকালে একটি খবর প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিলো- “২২ বছরেও প্লট পায়নি ১২০০ আদি বাসিন্দা” । খবরের ভেতরে-“মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বামী সুরুজ উদ্দিন যখন পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনে নিহত হলেন, ভানুমতি বেগমের বয়স তখন বিশের নিচে। তার পর শুরু হয় তার একার লড়াই। রূপগঞ্জের ভোলানাথপুরে স্বামীর রেখে যাওয়া আট বিঘা জমিটুকু কাজে লাগিয়ে সন্তানদের বড় করে তোলার লড়াইয়ে নামেন তিনি। মাত্র আট বিঘা জমিকে কতভাবে কাজে লাগানো যায়, একান্ত নিজস্ব প্রচেষ্টার সেই কাহিনী এখন অতীত। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আট বিঘা জমি সরকার অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। আর নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি। পূর্বাচল উপশহরে কোনো প্লটও জোটেনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বিধবা পত্নী ভানুমতির। ভোলানাথপুরের কসাইরটেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।” (https://bit.ly/2WEQm8A)
পূর্বাচল তো আগের বিষয়, পূর্বাচলের চারপাশের জমি পর্যন্ত দখল করে ফেলে ভূমিদুস্যুরা, যাতে নিরব ভূমিকা পালন করে সরকার-প্রশাসন। এ সম্পর্কে ৪ঠা জানুয়ারী ২০১৫ তারিখে দৈনিক জনকণ্ঠে একটি খবর প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিলো- “পূর্বাচলের আশেপাশের আগ্রাসন, বোবা-কান্না” খবরের ভেতরে- “জমি দখলকারীদের নাম কইলে রাইত কইরা আইসা ডেগার দিয়া মারবো। মামলা করছিলাম। সন্ত্রাসীদের ভয়ে মামলাও তুইলা নিয়া আইছি। জমি দখলের সামান্য প্রতিবাদ করলেই রামদা নিয়া কুবাইতে আয়ে। নিজের বাপের জমি। দখলকারীদের ভয়ে চাষ করতে পারি না। ইরি-মৌসুম চললেও জমি পতিত পড়ে আছে।’ রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া গ্রামের জনৈক বাসিন্দা এভাবেই নিজের জমি হারিয়ে বর্তমান অবস্থার বিবরণ দিচ্ছিলেন। কথা বলতে বলতেই এখানে জড়ো হন স্থানীয় অনেক মানুষ। ভূমিদস্যুদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। নাম প্রকাশেও অনিচ্ছুক তারা। কিন্তু সবাই নিজের সম্পত্তি ধরে রাখতে চান। বাঁচতে চান শেষ সহায় সম্বলটুকু নিয়ে। এই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ একটি বিশেষ গ্রুপের বিরুদ্ধে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হাত করে অল্প জমি কেনে তারা। পরে আশপাশের জমি ভাড়া নিয়ে, কখনও জোর জবরদস্তি করে প্রায় ৬০০ একর জমিতে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অল্প সময়ের মধ্যে শুরু হবে বালু ভরাট। তারপর প্লট বিক্রি শুরু। মাঝখানে এসব কৃষি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হতে হবে এলাকার মানুষদের। আবাসন বাণিজ্যের কারণে পূর্বাচল প্রকল্পের চারপাশের মানুষের এখন বোবা কান্না। কারও মুখ খোলার সাহস নেই। ” (https://bit.ly/2MN4TKR)
আমি জানি, আমার অনেক আগেই এ বিষয়টি নিয়ে অনেকের লেখার কথা ছিলো, কিন্তু তারা লিখেনি। কারণ ক্রিকেট নিয়ে সাধারণ জনগণের একটা সেন্টিমেন্ট আছে। আর তারা কখনই সেই ক্রিকেট সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে যেতে চায় না। আর বিরোধীপক্ষের এই অক্ষমতা আর সাধারণ জনতা ক্রিকেট প্রেমকে কাজে লাগিয়ে অনেক কাজ করছে সরকার এবং আগামীতেও করবে।
আমি এও জানি, আমার এ লেখার পর এক শ্রেণীর ক্রিকেট পাগল জনগণ আমাকে এসে গালাগালি করবে। বলবে, “তোমার খেয়েদেয়ে কাজ নেই, শুধু ক্রিকেটের পেছনে লেগে থাকাই কাজ। আগামী ২০২১ সালে বিশ্বকাপের ভেন্যু হবে এই স্টেডিয়াম, আর তোমার আগে থেকেই চুলকাানি শুরু হয়েছে।”
যারা আমাকে এ ধরনের কথা বলবে, আমি তাদের উত্তরে বলবো-
ভাই জীবনটাকে দয়া করে ক্রিকেট দিয়ে বিচার করবেন না। ক্রিকেট খেলাই সব নয়, মানুষের জীবনের থেকে বড় ক্রিকেট খেলা হতে পারে না। আপনি হয়ত ক্রিকেট খেলা দেখে এন্টারটেইন হবেন, কিন্তু যার একমাত্র সম্ভব দখল করে এই স্টেডিয়াম বানানো হলো, যাকে রাস্তায় নামানো হলো, যে লোকগুলোকে খুন করা হলো, গুম করা হলো তাদের কথা একবারও ভাবলেন না ? মানুষের রক্ত আর চোখের পানির মধ্যে কি আপনার ক্রিকেট খেলা খেলতে চান ? আর আপনারা যে কোটি কোটি জনগণ ক্রিকেটের জন্য এক হয়ে যান, তারা কি পূর্বাচলের নিরীহ লোকগুলোর ক্ষতিপূরণের জন্য এক হতে পারেন না ? প্রতিবাদ করতে পারেন না ? এমনও তো হতে আগামীতে আপনার জমিও ক্রিকেট খেলার নাম করে দখল করা হতে পারে, তখন অন্যরা কি করবে ? একবার ভেবেছেন ??