যারা চায় সমাজে নারী-পুরুষ একত্রে চলুক, তারা নারী জাতির খারাপ চায়।

যারা চায় সমাজে নারী-পুরুষ একত্রে 
চলুক, তারা নারী জাতির খারাপ চায়

যারা চায় সমাজে নারী-পুরুষ একত্রে চলুক, তারা নারী জাতির খারাপ চায়
Image result for নদীএবার নির্বাচনী ইশতেহার তৈরী করতে গিয়ে, ইশতেহার : ‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ ২০১৮’ এর ১৬.৮ নম্বরে বলেছিলাম: “নারী নির্যাতন বন্ধ করতে নারীদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং কমপ্লেক্স, যানবাহন, হাসপাতাল, তৈরী করতে হবে। নারীদের জন্য পৃথক প্রতিষ্ঠানে শুধু নারীরা কাজ করবে, ফলে অনেক নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থান হবে।” (https://bit.ly/2VW0N7k)
আমি জানি, নারী আর পুরুষকে যখন আমি আলাদা করার কথা বলবো, তখন বৈষম্য শব্দটা তুলবে এক শ্রেণীর লোক। বলবে, “তুমি সমাজে বৈষম্য তৈরী করতে চাচ্ছো।” আচ্ছা, যারা সমাজে নারী-পুরুষ আলাদা করা পছন্দ করে না, তারা কেন ক্রিকেট, ফুটবল, দৌড়, সাতার, কুস্তি প্রতিযোগীতার সময় নারী-পুরুষ একত্র করে না। কেন নারীদের নিয়ে আলাদা প্রতিযোগীতার ব্যবস্থা করে ? এর কারণ, তারা জানে, সরাসরি জয়-পরাজয় দেখা যায়, এমন কোন সিস্টেমে নারী-পুরুষ একত্র করলে নারী-পুরুষের ব্যাপক পার্থক্য দৃশ্যমান হবে, যা “নারী-পুরুষ একত্রে চলতে হবে”, এই তত্ত্বের প্রতি বিরাট বাধা।
আসলে সমাজে নারী-পুরুষ পরষ্পরের প্রতিযোগী নয় বরং সহযোগী। এবং দুইজনকে প্রতিযোগী হিসেবে যারা একত্রে দাড় করিয়ে দেয় তারা নারী জাতির ভালো চায় না, বরং নারী জাতির খারাপ চায়। নারী ও পুরুষকে যদি আলাদা করা যেতো, তবে নারী জাতির আরো অনেক বেশি উন্নতি করা সম্ভব ছিলো। আসুন কিছু হিসেব মিলিয়ে নেই….
১) 'বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো' (ব্যানবেইস) এর জরিপে বলছে, ২০১৮ তে প্রাথমিক শিক্ষায় ছাত্রী সংখ্যা মোট শিক্ষার্থীর ৪৫%, কিন্তু শিক্ষিকা সংখ্যা ২৫%। যদি ছাত্র-ছাত্রী আলাদা করে ছাত্রদের জন্য পুরুষ শিক্ষক ও ছাত্রীদের জন্য মহিলা শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, তবে এখানে আরো ২০% শিক্ষিকা নিয়োগ করা সম্ভব।
২) লেবার ফোর্স সার্ভে (এলএফএস) ২০১৬-১৭-এর তথ্যমতে, দেশে মোট ১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু এই ১ কোটি ৮৬ লক্ষ নারীর মধ্যে ৬০% নারী যুক্ত হয়েছে কৃষি সেক্টরে। পাঠক, এই ৬০% নারী আসলে কারা ? কৃষিতে ফসলের উপযুক্ত দাম না পাওয়ায়, কৃষক যখন উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে চায়, তখন কৃষক স্বামী তার জমিতে পুরুষ কামলা নিয়োগ না করে নিজের স্ত্রীকে মাঠে নামিয়ে দেন। স্ত্রী স্বামীর খরচ বাচায়। হালের বলদ যে কাজ করে, একজন নারী শত শারীরিক কষ্ট বহন করে সেই কাজ করে। “নারীর কর্মসংস্থান’ বাড়ছে, নারী পুরুষের বৈষম্য হ্রাস পাচ্ছে’ এই কথাগুলো প্রচার করে যারা বিদেশ থেকে কাড়ি কাড়ি পুরষ্কার কামিয়ে আনে, আসলে কত নারীর অমানুষিক কষ্ট সেই কথাটার সাথে জড়িয়ে আছে, সেটা তারা জানে না। কৃষিতে পর্যাপ্ত হিমাগার তৈরী, যান্ত্রিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে যদি কৃষককে ফসলের উপযুক্ত মূল্য এনে দেয়া যায়, তখন অটোমেটিক বাংলাদেশের নারী কর্মসংস্থান অর্ধেক নেমে আসবে।
৩) নারী-পুরুষের একত্রে থাকলে নারী কর্মসংস্থান বৃদ্ধি কখন সমাজের উন্নতি প্রকাশ করে না, বরং অবনতি প্রকাশ করে। বাংলাদেশের কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি নারী সংযুক্ত আছে কৃষি (৬০%) এবং পোষাক শিল্পে। এবং উভয় ক্ষেত্রে নারীরা সংযুক্ত হয়েছে স্বল্প শ্রমিক মজুরীর দরুণ। একজন নারী কেন স্বল্প মজুরীর পরও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে ? কারণ স্বামী/বাবার ইনকামে পরিবার চলছে না। কর্পোরেটোক্রেসি অর্থনৈতিক ষড়যন্ত্রে living cost কে এতটা বৃদ্ধি করা হয়, যেন পুরুষের ইনকামে সংসার না চলে, তখন নারী স্বল্পমূলে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হয়। যদি পরিবারে পুরুষ সঙ্গী উপযুক্ত ইনকাম করতো, তবে একজন নারী কখনই কৃষি বা পোষাক শিল্পের মত কঠিন শ্রমের স্থানে যেতো না।
৫) কৃষিতে নারীর হালচাষ, কিংবা গার্মেন্টসে নারীর হাড়ভাঙ্গা খাটুনিরকে যারা ‘নারী ক্ষমতায়ন’ শব্দযুগল দ্বারা প্রকাশ করে তাদের বলছি, এই শব্দযুগল হচ্ছে ওয়ার্ল্ডের বড় বড় কর্পোরেটদের মুখরোচক শব্দ। গণতন্ত্র নাম দিয়ে যেমন তারা দুই দলকে লাগিয়ে দিয়ে উপর থেকে ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করে, ঠিক তেমনি নারী ক্ষমতায়নের নাম দিয়ে তারা সমাজে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মজুরীর মধ্যে লাগিয়ে মজুরী নিয়ন্ত্রণ করে। নারীর থেকে স্বল্পমূল্যের মজুরীর পাওয়ার কথা বলে পুরুষের মজুরী বাড়াতে দেয় না। এতে আলটিমেটলি স্বল্প শ্রম মজুরী সুযোগ নিয়ে সেই কর্পোরেটরাই লাভবান হয়, নারী কখনও লাভবান হয় না।
৬) শ্রমের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে প্রতিযোগী করা যাবে না। বরং নারী-পুরুষ আলাদা সেক্টর করতে হবে। নারীদের জন্য আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শপিং কমপ্লেক্স, যানবাহন করলে সেখানে একদিকে যেমন প্রচুর পরিমাণে নারী নিয়োগ পাবে, অন্যদিকে পুরুষের সাথে শ্রমের তুলনা না করায় নারীকে অনেক বেশি মজুরী দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইহুদীবাদী কর্পোরেটরা চায়, শ্রমের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ দ্বন্দ্ব তৈরী করে স্বল্পশ্রমিকমূল্যের ফায়দা লুটতে, কিন্তু আমরা যদি নারী-পুরুষের সেক্টর আলাদা করে দেই, তবে ইহুদীরা সেই ফায়দা লুটতে পারবে না।
সবচেয়ে বড় কথা, ইহুদীরাবাদীরা নারীকে পুরুষের সাথে কর্মসংস্থানে নামালেও তারা কিন্তু নারী জাতির নিরাপত্তা দিতে পারেনি। পুরুষ শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী নির্যাতন, বসের দ্বারা নারী স্ট্যাফ নির্যাতন, বাসে হেলপারের দ্বারা নারী যাত্রী নির্যাতন, পুরুষ ডাক্তারের দ্বারা নারী রোগী নির্যাতন, এগুলো এখন হরহামেশাই ঘটছে এবং দ্রুত বাড়ছে, কমার কোন লক্ষণ নেই। নারী আর পুরষ সেক্টর আলাদা করে দিলে, একদিকে যেমন নারীদের বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে, অন্যদিকে নারীদের শ্রম মজুরীও অনেক বাড়বে, পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, যেটা নারী-পুরুষ একত্রে করে কখনই সম্ভব নয়।