মন্ত্রীদের নিয়ে কিছু কথা
তবে তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাদের মন্ত্রী বানালে সুবিধা অসুবিধা দুই পরিলক্ষিত হতে পারে। সুবিধা দেখা যাচ্ছে পরিবর্তণ হয়েছে, পুরাতন ছেড়ে নতুন হয়েছে।, মানুষ নতুন কিছু চায়, ব্যস এইটুকুই। আর অসুবিধা হলো, যদি অযোগ্য লোকই ক্ষমতায় আসে, তবে নতুন আর পুরাতনের মাঝে তফাৎ কোথায় ?
স্বাভাবিকভাবে একটা কথা সব সময় উঠবে, যোগ্যলোককে যোগ্য পদ দেয়া উচিত। বাংলাদেশে এখন একটা পিওনের চাকুরী পেতে গেলেও ১০ হাজার পদপ্রার্থী প্রতিযোগীতা করে। দৃশ্যত্ব সেই প্রতিযোগীতায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েই কেউ পিওন হয়। সেখানে বাংলাদেশে একজন মন্ত্রী হওয়ার জন কতটুকু যোগ্যতার প্রতিযোগীতা হয় ?
বাংলাদেশের সংসদীয় ব্যবস্থায় ‘ফিউশন অব পাওয়ার’ পদ্ধতি থাকে, এতে মন্ত্রীদের মধ্যে ৯০% শতাংশ হয় এমপিদের থেকে, বাকি ১০ শতাংশ হয় টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী। আরেকটি পদ্ধতি আছে, যাকে বলছে ‘সেপারেশন অব পাওয়ার, মন্ত্রীরা সেখানে এমপিদের থেকে নয়, বরং যোগ্যতার ভিত্তিতে মন্ত্রী হবে, তবে তারা সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে। ‘সেপারেশন অব পাওয়ার’ সিস্টেমটাকে আমার কাছে মন্দের ভালো মনে হয়েছে, এবং মনে হয়েছে বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি চালু করলে ভালো হতো, কারণ একটি মন্ত্রনালয় চালানোর মত একজন মন্ত্রীর কতটুকু যোগ্যতা আছে, সেটা যাচাই করার কোন সুযোগ থাকলো না।
কিছুমন্ত্রী নিয়ে কথা রয়েই যায়। যেমন খাদ্যমন্ত্রী করা হয়েছে সাধন চন্দ্র মজুমদারকে। সাধন চন্দ্র মজুমদার নিজে নওগার চাল ব্যবসায়ী, আর সাধারণত এই সব চাল ব্যবসায়ীরাই সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ায়। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য যেহেতু চাল, তাই এখন থেকে যতবার চালের দাম বাড়বে, ততবার চোখ বুজে বলা যাবে এর জন্য দায়ী মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। ব্যতিক্রমের মধ্যে তার চার মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে লোপা আর কাবেরী মজুমদার ধর্মান্তরিত মুসলমান, কিন্তু সেই পজিটিভ প্রভাব চাল নিয়ে চালবাজিতে পড়বে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
ধর্মান্তরের ঘটনা আছে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ফ্যামিলিতে। তার দুই ভাই রাশিয়ান মেয়েদের বিয়ে করে মুসলিম বানিয়েছে। তবে সমস্যা, দীপু মনিকে নিয়ে। শুনেছি রাজনৈতিক মহলে তাকে নিয়ে স্ক্যান্ডাল আছে। ভয়ের কথা হলো, যদি সে স্ক্যান্ডালকে পূজি করে বিদেশী শক্তিরা রাষ্ট্র ও জাতিবিরোধী পাঠ্যবই বানাতে চায়, তখন। একই ধরনের স্ক্যান্ডাল আছে এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে নিয়ে। ২০১৩ সালে এই তাজুল ইসলামের পর্নো ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল হয়। তাকে বহিষ্কারের দাবীতে তখন প্রেসক্লাসেও অনেকে মানববন্ধন করে। সুতরাং ফাকফোকর অনেক আছে। তার ডেপুটি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আছে স্বপন ভট্টাচার্জ, যে চরমমাত্রার দুর্নীতিবাজ। ৫ বছর এমপি থেকে অদৃশ্য কাজ করে সে ও তার স্ত্রী সম্পদ বাড়িয়েছে শতগুন। ২০১৪ সালে বিনাভোটের নির্বাচনের সময় এলাকাবাসীকে শুধু সুয়েরেজ লাইন বানানোর একটা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, কিন্তু নির্বাচনের জিতে তাও পূরণ করেনি। বাংলাদেশের অন্যতম সম্পদময় মন্ত্রনালয় এলজিআরডি’র তাই ভবিষ্যতে কি অবস্থা হতে পারে তা সহজে অনুমেয়। একই অবস্থা পাবর্ত বিষয়ক মন্ত্রী উশেসিংকে নিয়ে। পেশায় ফুটবল রেফারী উশেসিং পাবর্ত সমস্যার কতটুকু সমাধান করবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে নিজ এলাকা ও ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ‘তোমরা সবাই বাঙালী হয়ে যাও’ যতক্ষণ বাস্তবায়ন না হবে ততক্ষণ পাবর্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
শেষে বলতে চাই, পুরাতন দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্যদের ঝেটিয়ে বিদায় ভালো হয়েছে, তবে সেটা ভালো হিসেবে তখন ধরা দেবে যখন নতুনরা ভালো কাজ করতে পারবে। কিন্তু নতুনরা যদি দুর্নীতি ও নৈতিকতাহীন স্ক্যান্ডালে বেশি জড়ায় তখন তাদের দ্বারা আবার একই দুরাবস্থা ফিরে আসবে, যাতে কোন সন্দেহ নাই।