এ সপ্তাহে পত্রিকাজুড়ে ছিলো শিশু ধর্ষণ ও হত্যার খবর-
১) শনিবার ঢাকার গেন্ডারিয়ায় দুই বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা
২) রবিবার সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণীর শিশুকে ধর্ষণ শেষে পুকুরে ফেলে হত্যা
৩) সোমবার ঢাকার ডেমরায় দুইশিশুকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা
১) শনিবার ঢাকার গেন্ডারিয়ায় দুই বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা
২) রবিবার সাতক্ষীরায় তৃতীয় শ্রেণীর শিশুকে ধর্ষণ শেষে পুকুরে ফেলে হত্যা
৩) সোমবার ঢাকার ডেমরায় দুইশিশুকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা
আমি জানি, এই খবরগুলো দেখার পর একদল সুযোগ সন্ধানী বলা শুরু করবে, ধর্ষণের জন্য পোষাক দায়ী না, যদি দায়ী হতো, তবে এই শিশুগুলো কেন ধর্ষিত হলো?
যারা এ ধরনের কথা বলে, বুঝতে পারবেন, তারা হলো ছিচকে চোরের মত, যারা গাড়ি এক্সিডেন্ট হলে আহত যাত্রীকে উদ্ধার না করে, তার ব্যাগ ধরে টানাটানি করে। ছোট বাচ্চা কেন ধর্ষিত হচ্ছে, সেই কারণ না খুজে, তার নিজের পোষাক পড়তে ইচ্ছা করে না, সেটা্ ঐ সুযোগে হালাল করতে চায়।
যারা এ ধরনের কথা বলে, বুঝতে পারবেন, তারা হলো ছিচকে চোরের মত, যারা গাড়ি এক্সিডেন্ট হলে আহত যাত্রীকে উদ্ধার না করে, তার ব্যাগ ধরে টানাটানি করে। ছোট বাচ্চা কেন ধর্ষিত হচ্ছে, সেই কারণ না খুজে, তার নিজের পোষাক পড়তে ইচ্ছা করে না, সেটা্ ঐ সুযোগে হালাল করতে চায়।
যাই হোক, কথা হচ্ছিলো, ‘ধর্ষণ’ নিয়ে। ধর্ষণ আসলে খুব নিকৃষ্ট একটা সমস্যা। এটা একটা মানসিক ব্যাধিও বলা যায়। আসলে যে কোন অপরাধ প্রবণতাই একটা মানসিক ব্যাধী। ধর্ষণ ছাড়াও আরো যৌন মানসিক ব্যাধী আছে। পায়ুকামীতা, পশুকামীতা, মৃতদেহকামীতা, মর্ষকামীতা, অজাচার ইত্যাদি।
একজন মানুষ কেন ধর্ষণ করে ?
অনেক কারণ থাকতে পারে। হিংসা বা পরের ক্ষতি করার আকাঙ্খা ধর্ষণের একটা বড় কারণ হতে পারে।
এছাড়া যৌন আকর্ষনও ধর্ষণের কারণ। কথা হলো একজন প্রাপ্ত বষস্ক বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ তৈরী হতে পারে, কিন্তু একজন শিশুর প্রতি আকর্ষণটা কোথায় ?
অনেক কারণ থাকতে পারে। হিংসা বা পরের ক্ষতি করার আকাঙ্খা ধর্ষণের একটা বড় কারণ হতে পারে।
এছাড়া যৌন আকর্ষনও ধর্ষণের কারণ। কথা হলো একজন প্রাপ্ত বষস্ক বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ তৈরী হতে পারে, কিন্তু একজন শিশুর প্রতি আকর্ষণটা কোথায় ?
আসলে মানুষের দেহকে একটা কম্পিউটারের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কম্পিউটার নিজ থেকে কোন কাজ করতে পারে না, তাকে বাইরে থেকে একটা প্রোগ্রাম সেট করে দিলে, সে সেই অনুসারে কাজ করতে থাকে। মানুষ প্রতিনিয়ত ইন্দ্রিয় দিয়ে সেই সব প্রোগ্রামিং গ্রহণ করতে থাকে এবং তার ব্রেইনে সেগুলো সেট করতে থাকে। এবং তার ভেতরে থাকা নৈতিকতা দিয়ে সেটা যাচাই বাছাই করে কখন সেটার বাস্তবায়ণ করে, কখনও বা বর্জন করে। আধুনিককালে মানুষকে বিকৃত যৌনকামী করে দেয়ার মূলে রয়েছে মিডিয়া। এই মিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন মেসেজ ব্রেইনে ঢুকে, এবং শরীর সে অনুসারে পরিচালিত হয়। যৌন আকর্ষণের ক্ষেত্রে এই ধরনের মেসেজগুলোকে ‘ফ্যান্টাসি’ নামে ডাকা যেতে পারে। অর্থাৎ বাইরে থেকে কোন উপায়ে তার ব্রেইনে কোন উপায়ে ফ্যান্টাসি ক্রিয়েট করা হয়, এবং সেই ফ্যান্টাসি থেকেই সে পরিচালিত হয়।
সমাজে শুধু নিজের স্ত্রীকে নিয়ে ফ্যান্টাসি করা বৈধ। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক রীতি ভেঙ্গে স্ত্রী ছাড়াও অন্য নারী, জিএফ, অন্যের স্ত্রী, ইনসেস্ট, সমলিঙ্গ, ধর্ষণ, পশুকাম, মৃতকাম, মর্ষকাম টাইপের ফ্যান্টাসি তৈরী করা হচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে মিডিয়া দ্বারা। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে একটা বিজ্ঞাপন দেখায়, যেখানে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে হাসপাতালের নার্স হিসেবে কল্পনা করে, আর স্ত্রী তার স্বামীকে প্লাম্বার হিসেবে কল্পনা করে। অর্থাৎ অবৈধ’র মধ্যে ফ্যান্টাসি আছে, সেটাই সেখানো হচ্ছে।
তবে মিডিয়ার সর্ববৃহৎ সমস্যা হচ্ছে, আপনার নিজের কাছের এরিয়ার বাইরে বহুদূরের একটা কালচার বা সংস্কৃতিও হাজার হাজার কিলোমিটার পার হয়ে সব বাধন ভেদ করে আপনার বেড রূমে চলে আসতেছে, আপনার পিসি চলে আসতেছে, আপনার মোবাইলে চলে আসতেছে। যদিও যে দেশ থেকে এই সংষ্কৃতি আসতেছে সেই দেশ সম্পর্কে আপনার কোন ধারণাই নাই। যেমন, ধরুন, ইউরোপের অনেক দেশেই ফ্যান্টাসি হচ্ছে ঘরে ভেড়া পালা। ভেড়ার সাথে পশুকাম করা তাদের সৌখিনতা। কিন্তু সেই কালচার যখন কোন চ্যানেল বা ইন্টারনেট-টিউবের মাধ্যমে আপনার ঘরে পৌছে যাচ্ছে, তখন আপনি সেটার প্রয়োগ করলে ঘটে যাবে বিরাট সমস্যা, এই সমাজ ব্যবস্থা কখনই মেনে নেয়া যাবে না। যেমন, আমেরিকার অনেক অঙ্গরাজ্যে বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে শারীরিক সম্পর্ক করা বৈধ। এটা তাদের জন্য একটা ‘ফ্যান্টাসি’, সেটা যখন মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার ঘরে, আপনার মনের বসে যাচ্ছে, তখন সেটা এই দেশে জেএ অপরাধ। আবার আমাদের পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ‘বৌদিবাজি’ নামে একটা শব্দ বহুল প্রচলিত আছে। এটা তাদের জন্য খুবই স্বাভাবিক, অনেকটাই সমাজ সওয়া। যার কারণে তারা উমা বৌদি, ঝুমা বৌদি নামক সিরিয়াল তৈরী করছে, টিআরপিও প্রচুর পাচ্ছে। কিন্তু সেই ফ্যান্টাসিটা যখন বাংলাদেশে ডিশের লাইন আর ইন্টারনেট লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে চলে আসছে, তখন ঘটছে বিপত্তি। কারণ বাংলাদেশের সমাজে ভাবী (পশ্চিমবঙ্গের ভাষায় বৌদি)’র সম্পর্কে এতদিন ধারণা ছিলো ভিন্নরকম। ভাবীর সম্পর্কে বলা হতো “ভাবী হলো মায়ের মত”। অর্থাৎ মিডিয়ার মাধ্যমে যৌন ফ্যান্টাসিও বিবর্তন হচ্ছে, যা সমাজের জন্য বিপজ্জনক ও দুর্ঘটনাপ্রবণ।
এখন কথা হলো, এই মিডিয়ার মাধ্যমে অবাধ ‘অযাচিত ফ্যান্টাসি’ ঢুকছে, এটার প্রতিরোধ কে করবে?
আপনি কিন্তু হাজারো আইন করে এটা দমন করতে পারবেন না। বরং ব্যাপক চর্চার কারণে কিছুদিন পর সেই অনৈতিক ফ্যান্টাসির পক্ষে আইন হয়ে যাবে। এই ফ্যান্টাসি দমনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে নৈতিকতা চর্চা, যার মূল আসে ধর্ম থেকে। ধর্মের মাধ্যমেই নৈতিকতা চর্চা হয়, এবং সেটা সমাজের বাধণ তৈরী করে। যেসব দেশের টিভি চ্যানেল ‘বৌদিবাজি’ আর ঘরভাঙ্গা শেখায় সেগুলো দ্রুত বন্ধ করা তাই জরুরী।
আপনি কিন্তু হাজারো আইন করে এটা দমন করতে পারবেন না। বরং ব্যাপক চর্চার কারণে কিছুদিন পর সেই অনৈতিক ফ্যান্টাসির পক্ষে আইন হয়ে যাবে। এই ফ্যান্টাসি দমনের মূল হাতিয়ার হচ্ছে নৈতিকতা চর্চা, যার মূল আসে ধর্ম থেকে। ধর্মের মাধ্যমেই নৈতিকতা চর্চা হয়, এবং সেটা সমাজের বাধণ তৈরী করে। যেসব দেশের টিভি চ্যানেল ‘বৌদিবাজি’ আর ঘরভাঙ্গা শেখায় সেগুলো দ্রুত বন্ধ করা তাই জরুরী।
বিশ্বজুড়ে শিশু ধর্ষণের একটা কারণ ইন্টারনেটে চাইল্ড পর্নোগ্রাফী। বাংলাদেশেও যে এটা নেই সেটা বলা যায় না। আজ থেকে ৭-৮ বছর আগে টিপু কিবরিয়া নামক এক মুক্তমনা লেখক গ্রেফতার হয়েছিলো চাইল্ড পর্নোগ্রাফী তৈরী ও বিদেশে রফতানির জন্য (রকমারিসহ বিভিন্ন বইয়ের দোকানে এখনও তার বই বিক্রি হয়)। তবে বাংলাদেশের যে শ্রেণীর মধ্যে শিশুধর্ষণের বিষয়টি দেখা যাচ্ছে, সেটা অনেকটা নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সমাজের এই শ্রেণীদুটির মধ্যে ধর্ম ও নৈতিকতার চর্চা অনেক কম। তাছাড়া এই শ্রেণীদুটি অনেক বেশি ডিশ/ক্যাসেট/ড্যান্স এন্টারটেইমেন্ট দ্বারা প্রভাবিত। আজ থেকে কয়েক বছর আগে, টিভিতে একটা রিপোর্ট হয়েছিলো যেখানে দেখানো হয়, শিশু বাচ্চাদের নায়ক-নায়িকা বানিয়ে রোমান্টিক মিউজিক ভিডিও বানানো হচ্ছে, সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে এই বাচ্চাদের রোমান্টিক মিউজিক ভিডিও দেখার প্রবণতা খুব বেশি। ইউটিউবের এসব শিশু রোমান্টিকতার ভিউ কিন্তু কম নয়। এখানে একটা ভিডিও দেখুন, ভিউ প্রায় পোনে তিন কোটি (https://youtu.be/ZjrShKD3FOI), সুতরাং সমাজে এর গ্রাহক কম এটা আপনি বলতে পারবেন না। এছাড়া আজকাল বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে খুব ছোট ছোট শিশুদেরকে ভারতীয় নায়িকাদের স্টাইলে পোষাক পড়িয়ে তাদের দিয়ে নাচানো হয় (https://youtu.be/wgYQz8bM578), হয়ত ছোট বাচ্চা বলে কেউ তেমন আমলে নেয় না। কিন্তু একটা ছোট অবুঝ বাচ্চাকে দিয়ে এধরনের মারাত্মক নাচ নাচিয়ে আপনি সমাজে সেই শিশু নিপীড়নের ফ্যান্টাসি তৈরী করছেন নাকি সেটা চিন্তা করার দরকার আছে।
মনে রাখবেন, মানুষ প্রতিনিয়ত টিভি, ইন্টারনেট বা পরিবেশ থেকে আন-ন্যাচার্যাশল যৌনতা দেখে ‘যৌন উন্মাদ’এ পরিণত হচ্ছে। তার মাথায় সারা দিন ফ্যান্টাসি ঘুরঘুর করছে। সর্বক্ষণ উপায় খুজছে কিভাবে ঠাণ্ডা হওয়া যায়। তাই ছোট বাচ্চা দেখলে সেখানেই প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে, বাচ্চা চিৎকার করলে করা হচ্ছে হত্যা।
পাশাপাশি এই বিদেশী টিভি চ্যানেলগুলোর কারণেই পরিবারে সৃষ্টি হচ্ছে অশান্তি, বৃহৎ পরিবার ভেঙ্গে ক্ষুদ্র পরিবার তৈরী হচ্ছে। এতে শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ।
তবে শুধু মিডিয়া আর ইন্টারনেটকে দোষ দিলে চলবে না, অনৈতিক ফ্যান্টাসির বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়েবে সেই ‘নৈতিকতা চর্চা’ও কিন্তু সমাজে কমে যাচ্ছে। বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকগুলোতে নৈতিকতা বা ধর্মচর্চা তুলে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে স্কুল-কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতার চর্চা প্রায় উঠেই গেছে। পাশাপাশি মসজিদ-ওয়াজ মাহফিলগুলোতেও নৈতিকতার চর্চা উঠে গেছে। আজকাল ইউটিউবে অনেক মুসলিম বক্তার ওয়াজ শুনলে মাথা ঘুড়ে যায়। কোন গায়িকা কেমন গান গাইলো, কোন নায়ক কিভাবে নাচলো, কোন ব্যক্তি কিভাবে সিগেরেট খাইলো, কোন নায়িকা ব্রেস্ট ইম্প্যান্ট করলো, সেগুলো হয়ে গেছে তাদের ওয়াজের বিষয়, শুধু হাসায় আর কাদায় কিংবা প্রতিপক্ষকে দমন করে। ধর্মীয় আলোচনা বা নৈতিকতা সৃষ্টি থেকে তারা চলে গেছে বহুদূরে।
সার্বিকভাবে সমাজে অনৈতিকতার একটা বিস্তার ঘটেছে, নৈতিকতার ব্ল্যাক হোল তৈরী হয়েছে। সচেতন মহল এটা নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, সমাজে বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরী হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।