প্রসঙ্গ : পুরান ঢাকার সাকরাইন, মেথরের অনুষ্ঠান মুসলমানের ঘরে
পুরান ঢাকার সাকরাইন বলে একটা অনুষ্ঠানের নাম শোনা যায়। পুরান ঢাকার আমুদপ্রিয় তরুণ প্রজন্ম ছাদের মধ্যে সার্চ লাইট লাগায়, বাজি পুড়িয়ে, হিন্দি গান বাজিয়ে, নর্তন-কুর্দন করে, ঘুড়ি উড়িয়ে এই দিবস পালন করছে। সাকরাইন বা পৌষ সংক্রান্তিকে যতই সাবর্জনীন ঢাকাইয়া উৎসব নামে ডাকা হোক, বাস্তবে এ অনুষ্ঠানটা হিন্দুদের অনুষ্ঠান সবাই জানে। এটা হিন্দুদের মকর সংক্রান্তি, যে দিন হিন্দুদের অনেক পূজা-পার্বন থাকে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত, নেপালের হিন্দুরা ভিন্ন নামে এ দিবসটি পালন করে। যেমন- মাঘি সংক্রান্তি (নেপাল), ‘সাকরাত’ (দিল্লি ও হরিয়ানা), উত্তরায়ন (গুজরাট), ‘মাঘি (পাঞ্জাব) এবং আরও অনেক নামে।
এবার আসুন উইকিপিডিয়া কি বলছে,: “ঢাকা শহরে উৎসবমুখর পরিবেশে সাকরাইন উৎসব পালন করা হয়[। মূলত পুরান ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাতে বেশি জমজমাট ভাবে উদযাপিত হয় পৌষসংক্রান্তি তথা সাকরাইন। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগ ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে ছোট, বড় সকলেই মেতে উঠে এ উৎসবে।”
পাঠক, ৪৭ আর ৬৫ –এ বাংলাদেশে যতসামান্য ব্রাহ্মণ বাংলাদেশ ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গ চলে যায়। বাংলাদেশে যারা থাকে সবাই নিচুজাতের হিন্দু, যাদের বেশিরভাগের কাজ মুসলমানদের বাড়ির টয়লেট মলমূত্র পরিষ্কার করা। যেসব এলাকায় সাকরাইন অনুষ্ঠানটি পালন হয়, তাদের নামগুলো খেয়াল করুণ, তবেই বুজতে পারবেন- শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, সূত্রাপুর।
-শাখারীবাজার নামটি এসেছে নিচু হিন্দু জাত শাঙ্খিক বা শঙ্খকার থেকে
-তাতীবাজার নামটি এসেছে নিচু হিন্দু জাত তাঁতি থেকে
-গোয়ালনগর শব্দটি এসেছে নিচু হিন্দু জাত গোয়ালা বা সদগোপ থেকে
-সূত্রাপুর শব্দটি এসেছে নিচু হিন্দু জাত সূত্রধর বা কাঠমিস্ত্রি থেকে
-তাতীবাজার নামটি এসেছে নিচু হিন্দু জাত তাঁতি থেকে
-গোয়ালনগর শব্দটি এসেছে নিচু হিন্দু জাত গোয়ালা বা সদগোপ থেকে
-সূত্রাপুর শব্দটি এসেছে নিচু হিন্দু জাত সূত্রধর বা কাঠমিস্ত্রি থেকে
অন্যদিকে পুরান ঢাকা শব্দটি এসেছে ঢাকার আদি অবস্থান হিসেবে। বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৭শ’ শতাব্দীতে ঢাকাকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন। পুরান ঢাকার মুসলমানরা সেদিক থেকে ঢাকার আদিবাসী এবং ঐতিহ্যবাহী। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজকে পুরান ঢাকার মুসলিম তরুণ প্রজন্ম যে গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান ‘সাকরাইন’ পালন করতে উঠে পড়ে লেগেছে, তারা এতদিন ছিলো ঐ মুসলিম পরিবারের টয়লেট পরিষ্কারওয়ালা, জুতা সেলাই, বা হাসপাতালে লাশকাটা করা। যারা সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের বাড়ির আঙ্গিনায় কখন পা দেয়ার সাহস পায়নি, আজকে সেই সম্ভ্রান্ত মুসলিমদের নতুন প্রজন্ম ঐ নমশূদ্র হিন্দুর কালচার মাথায় নিয়ে নাচতেছে। অনেকটা সিনেমার নায়িকা জয়া আহসনের মত। এক সময় যে ছিলো সম্ভ্রান্ত নবাব পরিবারের বউ (আহসান মঞ্জিল)। কিন্তু সেখানে থেকে ডিভোর্স নিয়ে জয়া আহসান এখন কলকাতায় গিয়ে হিন্দু লম্পটদের খোরাক হয়েছে।
পুরান ঢাকায় হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের লোকই আছে এবং অনেক আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু এতদিন সেখানের মুসলমানরা কখনই হিন্দুদের সাথে মিশে যায়নি বা সংস্কৃতি গ্রহণ করে। কারণ তারা দুই শ্রেণীর স্ট্যাটাসের পার্থক্য ভালোভাবে বুঝে। সাকরাইন পুরান ঢাকার হিন্দুদের কালচার হতে পারে, কিন্তু সেটা কখনই পুরান ঢাকার সম্ভ্রান্ত মুসলমান শ্রেণীর কালচার নয়। কিন্তু হঠাৎ করে কার উস্কানিতে তারা নিচু শ্রেণীর হিন্দু কালচারের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলো তা আমার বুঝে আসছে না। এতদিন ‘পুরান ঢাকা’ শব্দটার সাথে যে ‘ঐতিহ্য’ ও ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দযুগল সংযুক্ত ছিলো, সেটা অবশ্যই নবাবী কালচার, মুসলমানদের কালচার। কিন্তু এখন সেখানে মেথর-ডোম আর গোয়ালার কালচার প্রবেশ করিয়ে তা কলুষিত করায় ভবিষ্যতে ‘পুরান ঢাকা’র সাথে ‘ঐতিহ্য’ আর ‘সম্ভ্রান্ত’ শব্দযুগল বিলুপ্ত হবে, এটা নিশ্চিত।