গাইবান্ধায় সাওতালপল্লীতে আগুন দেয়ার কথা মনে আছে ?

গাইবান্ধায় সাওতালপল্লীতে আগুন দেয়ার কথা মনে আছে ?
Image result for নদীগাইবান্ধায় সাওতালপল্লীতে আগুন দেয়ার কথা মনে আছে ?
পুলিশবাহিনী নিজেই সেই আগুন দিয়েছিলো।
কিন্তু মিডিয়ার ক্যামেরায় সেই আগুন ধরা পড়ায় এবং মিডিয়া সেটা প্রকাশ করায় সবার নজরে আসে। নয়ত সেই আগুনও হয়ত, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট বা চুলার আগুন বলে প্রচার করা হতো।
এখানে একটি বিষয় বোঝার আছে, বাংলাদেশে সাওতাল সংখ্যালঘুদের পক্ষে হলো মার্কিনপন্থী এবং তাদের অনুগত মিডিয়াগুলো। তাদের স্ট্র্যাটেজি, সংখ্যালঘু দিয়ে সংখ্যাগুরু দমন।
এজন্য তারা সাওতালপল্লীতে আগুন দেয়ার গোমর ফাঁস করে দিয়েছিলো।
একইভাবে আজকে ভাষানটেক বস্তিতে আগুন নিয়েও দৈনিক প্রথম আলো একইরকম নিউজ প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম: ‘উচ্ছেদের আগেই পুড়ল জাহাঙ্গীরের বস্তি’ (https://bit.ly/2Trfscs), নিউজের মধ্যে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছে, ‘‘এই আগুন লাগানো হতে পারে”। তারমানে বোঝা যায়, ভাষানটেক বস্তি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে মার্কিনপন্থী প্রথম আলো। এর কারণ সম্ভবত ভাষানটেক বস্তি উচ্ছেদ করে সেনাবাহিনীর কোন প্রজেক্ট হবে। (https://bit.ly/2NFAUFj)
যেহেতু মার্কিনপন্থীদের অবস্থান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে, তাই তারা এখানে উচ্ছেদের বিরোধিতা করবে, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু সমস্যা হলো, পুরান ঢাকায় যে কারণে আগুন দেয়া হয়েছে, সেটা সরকার ও মার্কিনপন্থী উভয়ের স্বার্থ মিলে গেছে, এ কারণে চকবাজারের আগুনের মূল গোমরটা ফাঁস করছে না মিডিয়া, বরং অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর সাধারণ মানুষও বিষয়টি বুঝতে পারছে না, দুই গ্রুপের ধোকায় পড়ছে।
আরেকটি বিষয় বলতে হবে,
গতকালকে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সাথে কেমিকেল ব্যবসায়ীদের একটি মিটিং হয়েছে এবং সংবাদে এসেছে কেমিকেল ব্যবসায়ীরা নাকি রাজী হয়েছে তাদের গোডাউন টঙ্গী এবং কদমতলীতে সরিয়ে নেয়ার। (https://bit.ly/2IFi5D6)
এখানে কয়েকটি কথা বলতে চাই-
ক) বাণিজ্যমন্ত্রনালয়ের সাথে মিটিং এ কি আসলেই কেমিকেল ব্যবসায়ীরা তাদের মালামাল সরিয়ে নিতে রাজি হয়েছেন ? তাদের বক্তব্য হুবুহু প্রকাশ করা হোক। নাকি মিডিয়া কথা কাটছাট করে তাদের নামে মিথ্যা প্রচার করছে ?
খ) যে সব ব্যবসায়ী মন্ত্রনালয়ের সাথে মিটিং করেছে, তারা কি আসলেই কেমিকেল ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করে ? নাকি আওয়ামী নেতাকে কেমিকেল লিডার সাজিয়েছে মিডিয়া সামনে উপস্থাপন করেছে সরকার ?
গ) যে টঙ্গী বা কদমতলীতে গোডাউন সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটা কতটুকু উন্নত ? সেখানে গোডাউন রাখার কতটুকু সুযোগ ‍সুবিধা আছে ? সেটা আগে বিস্তারিত প্রকাশ করা হোক। দেখা যাবে, ঐ স্থানগুলো সম্পূর্ণ অণুপযোগী, কিন্তু মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কেমিকেল গোডাউনগুলো নষ্ট করার পায়তারা করছে সরকার।
ঘ) পুরান ঢাকার কেমিকেল গোডাউন কেরানীগঞ্জে সরাটা যুক্তিযুক্ত, কিন্তু পুরো উল্টাপাশে মানে টঙ্গী-গাজীপুরে সরার কোন যুক্তি দেখি না। এত দূরে নিয়ে পোষাবে তো ?

এদিকে, আজকে সকালে পুরান ঢাকার কোন কোন বাসায় কথিত কেমিকেল পেয়ে গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে টাস্কফোর্স। অথচ ঐ বাসাগুলো বাসিন্দারা বলছে, এগুলো কেমিকেল গোডাউন নয়। অযথাই তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। (https://bit.ly/2Vq0z7y)
এই কথাটা আমি অনেকদিন আগে থেকে বলে আসছি। মিডিয়া যেভাবে ঢালাওভাবে ‘কেমিকেল’ ‘কেমিকেল’ বলে প্রচার করছে (যেহেতু কেমিকেল শব্দটার প্রতি বাঙালীর এলার্জি আছে), পুরান ঢাকায় কেমিকেল ব্যবসার সংজ্ঞাটা কিন্‌তু অন্যরকম। অথচ মিডিয়াতে সকল ব্যবসার উৎপানের কাচামালকে কেমিকেল ট্যাগ দিয়ে সবকিছু উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য‘কেমিকেল’ শব্দটা বাংলা অর্থ হচ্ছে ‘রাসায়নিক’, তো রসায়ন তো সব যায়গায় আছে। কোন যায়গায় রসায়ন নেই বলুন ? প্রতিটা অনু-পরমাণুর মধ্যে রসায়ন চলছে, সে হিসেবে পুরো দুনিয়াটাই তো রাসায়নিক বা কেমিকেল। সত্যিই বলতে পুরো পুরান ঢাকায় বিভিন্ন ব্যবসা-বানিজ্য ও পণ্যের গোডাউন আছে এবং সেটা থাকতেই হবে, নয়ত ব্যবসা চলবে কিভাবে ? কিন্তু মিডিয়া ও সরকারি লোকজন যেভাবে ‘কেমিকেল এলার্জি’ ব্যবহার অপপ্রচার চালিয়েছে, তাতে পুরান ঢাকায় সকল ব্যবসা কেমিকেল ট্যাগ খেয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
পূরান ঢাকায় ‘কেমিকেল’ ‘কেমিকেল’ করে আমরা নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারছি না তো ?
চকবাজারে যে স্থানে কয়েকদিন আগে আগুন লাগলো, তার পাশেই ছিলো প্লাস্টিক গুটির গোডাউন। ‘প্লাস্টিক গুটি’ তথা প্লাস্টিক অবশ্যই দাহ্য পদার্থ ( দাহ্য পদার্থ আর বিষ্ফোরক পদার্থ কিন্তু এক নয়। আপনার বাসায়ও প্রচুর প্লাস্টিক আছে)। মিডিয়ায় অপপ্রচার এবং সরকারী দমন নিপীড়নের ফলে পুরান ঢাকা থেকে যদি প্লাস্টিক কারখানা উচ্ছেদ করে পুরো ব্যবসাটা ধ্বংস করা হয়, তবে আমাদের লাভ হবে নাকি ক্ষতি হবে সেটার হিসেব করার দরকার আছে।
আমার মনে আছে, একটা সময় ঢাকা শহর জুড়ে পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতলে সয়লাব ছিলো। প্লাস্টিক এমন এক জিনিস, যা হাজার বছরেও পরিবেশে থাকলে তা নষ্ট হয় না। এতে পুরো পরিবেশ বিপর্যযের অবস্থা তৈরী হলো। কিন্তু হঠাৎ করে ঢাকা শহরে এসব বোতল ও প্লাস্টিক উধাও হওয়া শুরু করলো। এর কারণ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টোকাই এসব তুলে নিয় যায়। নিয়ে যায় পুরান ঢাকায়, সেখানে কেজি দরে বিক্রি করে। পুরান ঢাকায় চকবাজার থেকে কামরাঙ্গীরচর পর্যন্ত এ ধরনের ৩০০ প্ল্যাস্টিক রিসাইক্লিং ফ্ল্যাক্টরি তৈরী হয়েছে, যারা এসব বোতল বা অন্যান্য প্ল্যাস্টিক সংগ্রহ করে, গুটিও তৈরী করে আবার রিসাইক্লিং করে অন্য প্ল্যাস্টিক সামগ্রি (চেয়ার, টেবিল, বিভিন্ন প্লাস্টিক পণ্য, গার্মেন্টেসের বিশেষ ধরনের সুতাসহ হাজারো সামগ্রী) তৈরী করতেছে। এগুলো তৈরী করে শুধু দেশীয় চাহিদা নয়, বরং চীনে এই ‘প্ল্যাস্টিক রেজিন’ রফতানি হচ্ছে, যা সত্যিই বিষ্ময়কর। একইসাথে এই ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। অথচ কেমিকেল বা দাহ্য অজুহাত দিয়ে যদি পুরান ঢাকার শুধু প্ল্যাস্টিক ব্যবসা ধ্বংস করা হয়, তবে পুরো ঢাকা শহর প্লাস্টিকের পাহাড়ে পরিণত হবে, বিপর্যস্ত হবে পরিবেশ। তাছাড়া এই ৩০০ কারখানায় যুক্ত নিম্ন আয়ের মানুষ এবং এতে যোগানদাতা লক্ষ লক্ষ টোকাই কর্মহীন হয়ে পড়বে। তখন এসব লক্ষ লক্ষ টোকাই এবং নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহারিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত হবে, খুন, ছিনতাই, মাদকের ব্যবসা শুরু করে পুরো দেশকে তারা অস্থিতিশীল করে তুলবে, মেক্সিকো বা আফ্রিকার মত বাংলাদেশ হয়ে উঠবে অপরাধে স্বর্গরাজ্য।
সবশেষে বলবো, পুরান ঢাকায় যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাতে চোরে (সরকার) চোরে (মার্কিনপন্থী) মাশতুতো ভাই মিলে গেছে। তাই কেউ আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে এটা চিন্তা করা বোকামি। তাই আমার মনে হয়, পুরান ঢাকাবাসী এবং ব্যবসায়ীরাই এক হয়ে এগিয়ে আসুন। সবাই এক হয়ে, এসব দখলদারীত্ব ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্য করুন। সংবাদ সম্মেলন করুন, বিক্ষোভ, মিছিল করুন, কথিত টাস্কফোর্সকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করুন। সবাই যদি এক হয়ে কিছু না করতে পারেন, তবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বেশিদিন টিকতে পারবেন বলে মনে হয় না।