বাংলাদেশে কি খাবারে গরুর মাংশ ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ ?

বাংলাদেশে কি খাবারে গরুর মাংশ 
ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ ?

Related image
বাংলাদেশে কি খাবারে গরুর মাংশ ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ ?
গতকাল ফেসবুক মারফত একটি ঘটনা জানলাম। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায়। সেখানে ‘আল্লাহ দান বিরিয়ানী হাউজ’ নামক একটি দোকানে চিকেন খিচুরীর মধ্যে গরুর মাংশ মিশ্রিত পাওয়ায় ঐ মুসলিম দোকান মালিককে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর কাছে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।
কথা হলো-
১) কেউ যদি চিকেন বিরিয়ানীতে চিকেন দেয়ার পরও অতিরিক্ত গরুর মাংশ যোগ করে, তবে সেটা কি বাংলাদেশে আইনত অবৈধ ? ভারতে গরুর মাংশ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আইন আছে, কিন্তু বাংলাদেশে কিন্তু গরুর মাংশ ব্যবহার নিষেধ করে কোন আইন নেই। তাই কেউ যদি কোন খাবারের বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে অতিরিক্ত গরুর মাংশ বা তেলের বদলে গরুর চর্বি ব্যবহার করে তবে সেখানে আইনত কোন নিষেধ নেই।
২) দোকানের নাম ‘আল্লাহর দান বিরিয়ানী হাউস’, স্বাভাবিকভাবে ঐ দোকানে ইসলাম ধর্মে বৈধ জিনিস ব্যবহার করা স্বাভাবিক, যদিও ঐ জিনিসটি অন্য ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক হতে পারে। একজন হিন্দু কাস্টমার যদি সেই দোকানে খেতে যায়, তবে দোকানে ঢুকে তার বলা উচিত ছিলো, “আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী”। কারো চেহারা দেখে তো তার ধর্ম চেনা যায় না। কিন্তু হিন্দু ধর্মাবলম্বী যদি মুখে তার ধর্মের পরিচয় ঐ দোকানদারকে না জানান, তবে ঐ ‘আল্লাহদান বিরিয়ানী হাউসের মালিক যদি তার ধর্ম ও রাষ্ট্রের বৈধ কোন বিষয় তার খাবারে মিশ্রিত করে, তবে ঐ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এটা নিয়ে চার্জ করতে পারেন কোন যুক্তিতে ?
৩) একটি প্রশ্ন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আবেগের তোড়ে করতে পারে, সেটা হলো- আপনাকে যদি শুকরের মাংশ খাওয়ানো হতে তবে আপনি কি করতেন ?
এর প্রথম উত্তর হচ্ছে- কোন উপজাতি ধর্মের উপাস্যের নামে যদি কোন দোকান থাকে, তবে ঐ দোকানে ঢুকে একজন মুসলমানের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে নিশ্চিত হওয়া সে তার ধর্মের অবৈধ কিছু (স্বাভাবিক বা অতিরিক্ত) ব্যবহার করেছে কি না। এজন্য প্রথমে দোকানদারকে জানানো, সে একজন মুসলমান। ফলে দোকানদার তার জন্য সতর্ক হবে।
দ্বিতীয় কথা হলো- বাংলাদেশে আইন মেনেই বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুকরের মাংশ বিক্রি বা চর্বি ব্যবহার করলে শাস্তি দেয়। কিনতু গরুর মাংশ ব্যবহার করলে আইনত শাস্তি দেয়ার বিধান বাংলাদেশে নেই। সুতরাং কেউ যদি অতিরিক্ত হিসেবে গরুর মাংশ ব্যবহার করে, তবে তাকে কোন যুক্তিতে আইনের আওতায় আনা যায় ?
৪) ধর্মীয় অনুভূতির কথা যদি বলেন, তবে অনেক কথা বলতে হবে। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে স্কুলের বাচ্চাদের প্রসাদ খাওয়াছিলো ইসকন। মুসলিমদের জন্য দেবতার নামে প্রসাদ খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, ঠিক যেভাবে হিন্দুদের জন্য গরু খাওয়া নিষিদ্ধ। কথা তাহলে আসতেই পারে, ইসকনীরা কি মুসলমানদের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছিলো ? যদি নাই চায়, তবে আল্লাহ’র দান বিরিয়ানী হাউসের মালিককে কেন হিন্দুর পা ধরে ক্ষমতা চাইতে হবে ?
কিছুদিন আগে বাংলাদেশে স্বরসতী পূজার জন্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, এসএসসি পরীক্ষা এবং একুশে বইমেলা পেছানো হলো। হিন্দুদের জন্য যদি গরুর মাংশ নিষেধ হয়, তবে মুসলমানদের জন্যও তো স্বরসতী নামক মূর্তিকে পূজা করা নিষিদ্ধ, স্বরসতীকে সম্মান করে পরীক্ষা, বইমেলা পেছানেf নিষিদ্ধ। তাহলে কেন ৯৫% মুসলিম জনগোষ্ঠীকে স্বরসতী মূর্তিকে সম্মান করতে বাধ্য করলেন ?
আপনারা যে মন্দিরগুলোতে সার্বজনিন শব্দটা লিখেন, এটাও তো ঠিক নয়। গরুর মাংশ যদি সার্বজনিন না হতে পারে, তবে মন্দির কিভাবে সার্বজনিন হয় ?? শুধু নিজের বেলায় অপরের থেকে উদারতা চাইবেন, কিন্তু অন্যের বেলায় ঠেলা দিবেন, এটা তো ঠিক না।
৫) ভাটারা থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর গোলাম ফারুক কোন আইনের ভিত্তিতে হিন্দু অভিযোগকারী হিমেল বিশ্বাসকে বলেছে, “হিমেল,তুমি যেমনভাবে ব্যবস্থা নিতে চাও, আমি তেমন ব্যবস্থাই নিব”। হিমেল দত্ত যেভাবে বলবে পুলিশ সেভাবে ব্যবস্থা নিবে এটা কোন আইনের কথা হলো ? এটা তো বাংলাদেশ, বিজেপি’র ভারত না, ভারতে হিন্দুত্ববাদীদের কথাই আইন, বাংলাদেশে কিভাবে তাদের কথাই আইন হয়?
আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি,-
বাংলাদেশের মুসলমানরা উদার সেুক্যলার হয়ে নিজ ধর্মকে যখন ব্যক্তিগত করে ফেলছে, ঠিক তখনই হিন্দুরা তাদের ধর্মকে রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দিয়ে পুরো দেশকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণভাবে গরুর মাংশ ব্যবহারের বিরুদ্ধে কোন আইন নেই, কিন্তু তারা ভারতের মত বাংলাদেশেও গরুর মাংশ ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা তৈরীর চেষ্টা করছে, বসুন্ধরার ঘটনাই তার প্রমাণ। কারণ হিমেল বিশ্বাস নামক হিন্দু ছেলেটির যদি এতই ধর্মীয় অনুভূতি থাকে, তবে সে ‘আল্লাহর দান’ নামক রেস্টুরেন্টে ঢুকলো কেন ? স্পষ্টতঃ এই ঘটনা হিন্দুরা তাদের সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য থেকেই করেছে।হিন্দুদের এ ধরনের সংঘবদ্ধ উৎপাতের কারণে ইতিমধ্যে ঢাকা শহরের অনেক রেস্টুরেন্টে ‘নো বিফ সাইন’ ঝুলাতে বাধ্য হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেকের ইচ্ছা থাকলেও রেস্ট্রুরেন্টে গিয়ে গরুর মাংশ খেতে পারছে না।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশে সাধারণ জনতাকে এগিয়ে আসা উচিত। ভারতীয় গরুর মাংশের মৌলবাদ বাংলাদেশে জারির চেষ্টা এবং অর্থদণ্ড ও জেলের ভয় দেখিয়ে একজন মুসলমানকে হিন্দুর পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি কখনই মেনে নেয়া যায় না।
হিমেল বিশ্বাসের পোস্ট- https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=1388952381287476&id=100005181822787, আর্কাইভ-http://archive.ph/KRX2d