আপনি কি ঋণ করে বাসায় সৌখিন ফার্নিচার বানান ? (১)

আপনি কি ঋণ করে বাসায় সৌখিন 
ফার্নিচার বানান ? (১)

Image result for নদী
আপনি কি ঋণ করে বাসায় সৌখিন ফার্নিচার বানান ? (১)
আপনি কি ঋণ করে বাসায় সৌখিন ফার্নিচার বানান ?
আমার মনে হয় এমনটা কেউ করে না, করলেও বিষয়টি খুব স্বাভাবিক নয়।
মানুষ তখনই সৌখিনতার আশ্রয় নেয়, যখন তার ইনকামের টাকা খরচের পর উব্ধৃত থাকে।
কথাটা বলালাম, কারণ একটা দেশ কিভাবে চলে তা সাধারণ মানুষ বুঝতে চায় না।
একটা পরিবার যেভাবে চলে, একটা দেশও কিন্তু সেভাবে চলে ।
একটা পরিবারকে যেমন আগে ইনকাম করে তারপর খরচ করতে হয়
ঠিক তেমনি রাষ্ট্রকেও আগে ইনকাম করে তারপর খরচ করতে হয়।
একটা পরিবারকে তার খরচের সময় তার ইনকামের কথা মনে রাখতে হয়। ইনকামের অতিরিক্ত সে খরচ করতে চায় না, তখন সে ঋণে পড়ে যাবে।
ঠিক তেমনি একটা রাষ্ট্রকেও খরচের সময় তার ইনকামের দিকে খেয়াল রাখতে হয়, নয়ত সে ঋণে পড়ে যাবে।
কোন পরিবার যখন খরচ বাড়াতে চায়, তার আগে সে ইনকাম বাড়ানোর ধান্ধা করে।
ঠিক তেমনি কোন রাষ্ট্রও খরচ বাড়াতে গেলে তার আগে ইনকাম বাড়াতে হবে, কিন্তু ইনকাম না বাড়িয়ে যদি খরচ বাড়ায় তখন তাকে ঋণগ্রস্ত হতে হয়।
কোন পরিবারের যদি ইনকাম ৩০ হাজার টাকা হয়, কিন্তু সে যদি মানুষের থেকে ঋণ করে ৫০ হাজার টাকা দামের সোফা সেট, ৭০ হাজার টাকা দামের ঝাড়বাত্তি কিনে তবে কি আপনি তাকে ভালো বলবেন ?
অবশ্যই ভালো বলবেন না, অপরিনামদর্শী, উড়নচন্ডিসহ নানান উপাধি দেয়া শুরু করবেন।
সেটাই যদি কোন পরিবারের জন্য সত্য হয়, তবে বাংলাদেশের ইনকাম অনুসারে বিদেশ থেকে ধার মেট্রোরেল, পাতাল রেল, এলিভেডেট এক্সপ্রেসওয়ের মত এসব এক্সপেনসিভ প্রজেক্ট বানানো কি অপরিনামদর্শীতা নয় ?
কথা হলো আপনি ঋণ করে কেন এসব স্থাপনা বানাবেন ? আপনি নিজেই ইনকাম বাড়ান, তারপর সেখান থেকে এগুলো বানান, কিন্তু সেটা না করে দ্রুত এসব স্থাপনা অনেকটা ৩০ হাজার টাকা ইনকামের লোকের ধার করে ৫ লাখ টাকা সৌখিন ফার্নিচার কেনার মত।
আসলে সাধারণ মানুষ, এসব জিনিস বুঝে না, তাই এসব কাজে বাধাও দেয় না। ঘরের কর্তা যদি এসব অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কিন্তু পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সেখানে বাধা দেয়, কারণ তারা জানে, এভাবে অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে এমন সৌখিন ফার্নিচার কিনলে একটা সময় ঋণের ভারে পরিবারের সুখ-শান্তি বিনষ্ট হতে পারে। ঠিক তেমনি বিদেশী ঋণ নিয়ে এসব উচ্চমূল্যের প্রজেক্ট করলেও দেশের মানুষের সুখ শান্তি বিনষ্ট হতে পারে, তাই দেশের মানুষেরও উচিত এসব প্রজেক্টে বাধা দেয়া।
মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করতে হবে :
ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি হচ্ছে, কোন প্রকল্পের সম্ভবতা যাচাই। এরমধ্যে অনেকগুলো অপশন আছে। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই প্রকল্পটি কি লাভজনক হবে কি না ? মানে এরমাধ্যমে খরচ উঠে লাভজনক হবে কি না ?
সরকার কখনই ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করে না। কারণ সরকার জানে, এটা জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করলে জনগণ এ প্রজেক্ট বাধা দিবে। সেই ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতেই আছে সরকার কিভাবে মেট্রোরেলের ২২ হাজার কোটি টাকা খরচ উঠিয়ে নিয়ে আসবে।
এখানে একটা আবারও বলি, জনগণ কিন্তু বুঝে না দেশ কিভাবে চলে। কিন্তু সরকার বাস্তবে সেটা বুঝে। একজন কর্তাকে যেমন টাকা সংগ্রহ করে তারপর খরচ করতে হয়, কোন ব্যবসায় ইনভেস্ট করলে তার খরচ ও লভ্যাংশ তুলতে হয়। ঠিক তেমনি সরকারকেও কোন একটি প্রকল্পে ইনভেস্ট করলে তার খরচ ও লভ্যাংশ তুলে আনার ফর্মুলা দেখাতে হয়। আর সেই ফর্মুলা দেখানোর পদ্ধতিকেই বলছি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি। যদি সরকার ফিজিয়াবিলিটি স্ট্যাডিতে মূল খরচ ও লভ্যাংশ না দেখাতে পারে, তবে এ প্রজেক্ট কখনই গ্রহণযোগ্য হবে না।
মেট্রোরেলে খরচ হবে ২২ হাজার কোটি টাকা, যার ৭৫% সুদে ঋণ হিসেবে দিবে জাপানের জাইকা। বাকি ২৫% সরকারী ফান্ড থেকে আসবে, এটা কিন্তু ভর্তুকি নয়, সরকারকে এটা ফেরত দিতে হবে। আমার জানা মতে সরকারকে জাইকার টাকা ৩০ বছরের মধ্যে সুদ আসলসহ ফেরত দিতে হবে।
যদিও ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি আমার হাতে এসে পৌছায়নি, তবুও আমরা যদি একটু ক্যালকুলেশন করি, তবে দেখতে পাই ৩০ বছর = ১১ হাজার দিন। তাহলে ২২ হাজার কোটি টাকা সুদ ছাড়া উঠে আসতে মেট্রোরেলকে সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ২ কোটি টাকা লাভ করতে হবে। পাঠক, আমি আবার বলছি, মেট্রোরেল যদি সব খরচ বাদ দিয়ে দৈনিক ২ কোটি টাকা লাভ করে, তবে মেট্রোরেলের খরচ উঠতে ৩০ বছর লাগবে (সুদ ছাড়া)। শর্ত হলো ৩০ বছরে প্রাথমিক ২২ হাজার কোটি টাকার পর অতিরিক্ত আর কোন খরচ মেট্রোরেল করতে পারবে না। তারমানে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে সরকার দৈনিক ২ কোটি টাকার আরা অধিক লাভ প্রদর্শন করেছে এবং সেই ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি প্রদর্শন করে এই প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এখানে একটি কথা আপনাদের জেনে রাখা দরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের সড়ক ও যোগাযোগ খাতে বাজেট ছিলো ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সারা দেশের বাজেট ছিলো ২০ হাজার টাকা কোটি টাকা, সেখানে এক মেট্রোরেলের বাজেট ২২ হাজার কোটি টাকা। এ থেকে বোঝা যায়, এই মেট্রোরেল কত উচ্চমূল্যের একটি প্রজেক্ট।
এখন কথা হলো, মেট্রোরেল থেকে যদি দৈনিক ২ কোটি টাকা লাভ আসে, তাহলে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু যদি না আসে তখন কি হবে ?
তখন সেই টাকা জনগণকে পরিশোধ করতে হবে । জনগণ কিভাবে পরিশোধ করবে ?
জনগণের ট্যাক্স, ভ্যাট, মাসুল, জমির খাজনা, গ্যাসের বিল, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি বাড়িয়ে দেয়া হবে। সেই অতিরিক্ত টাকা থেকে মেট্রোরেলের ব্যয় মেটানো হবে। আর যদি সেগুলো বাড়ানো নিয়ে জনগণ আন্দোলনে নামে তাহলে সরকার সেগুলো হয়ত বাড়াবে না। কিন্তু অতিরিক্ত টাকা ছাপায়ে সেই খরচ জোগান দিবে। আর অতিরিক্ত টাকা ছাপানো মানে মুদ্রস্ফীতি। ফলে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। ৬০ টাকার চাল ১২০ টাকা হবে। সোজা ভাষায় মেট্রোরেল যদি দৈনিক ২ কোটি টাকা ৩০ বছর লাভ না করতে পারে, তবে সেই টাকা জনগণের পকেট থেকে দিতে হবে, সেটা যেভাবেই হোক।
আমি জানি, বাংলাদেশের অনেক লোক মেট্রোরেলের পক্ষে। মেট্রোরেলের পক্ষে থাকার কারণ, “মনে করেন খুশির ঠেলায় ঘুড়তে, ভাল্লাগে তাই” ব্যস এতটুকু। তার দেখতে ভাললাগে, সেখানে ঘুড়তে ভালো লাগে তাই। এর কারণ সে মনে করে এই মেট্রোরেলের জন্য সরকার খরচ করবে, আর সে যদি ফ্রি পায় তবে সমস্যা কোথায় ? এর বিরোধীতা করার দরকার কি ? কিন্তু এই লোকগুলোর এতটুকু বুঝে আসে না, সরকারের টাকা বলে কোন টাকা নাই, সব পাবলিকের টাকা, পাবলিকের পকেটের টাকাই সরকার অমুক-তমুক ছুতায় নেয়। মাঝখান দিয়ে সরকার যত বেশি টাকার প্রজেক্ট দেখাতে পারবে, ততবেশি লুটপাট আর দুর্নীতি করতে পারবে। সরকারের অতি-উৎসাহি হওয়ার কারণ সেখানেই। (চলবে)