হাইকোর্ট বলেছে, নারীদের ধর্ষণ প্রতিরোধে অ্যালার্ম বা এন্টি রেপ ডিভাইস দিতে।

হাইকোর্ট বলেছে, নারীদের ধর্ষণ প্রতিরোধে অ্যালার্ম বা এন্টি রেপ ডিভাইস দিতে।
Related imageহাইকোর্ট বলেছে, নারীদের ধর্ষণ প্রতিরোধে অ্যালার্ম বা এন্টি রেপ ডিভাইস দিতে।
কিছুদিন আগে জাবি শিক্ষার্থীরা ধর্ষণ প্রতিরোধে একটা অ্যাপস তৈরী করছে।
মাসখানেক আগেই ভারতে ধর্ষণ প্রতিরোধে বের হলো অভিনব ইলেকট্রিক জুতা।
২০১৪ সালে ভারতেই বের হইছিলো নারীদের জন্য এন্টি রেপ জিন্স প্যান্ট।
এছাড়া বের হইছিলো এন্টি রেপ ব্রা, এন্টি রেপ লেগিংস, এন্টি রেপ আন্ডারওয়্যার।
কিন্তু কথা হইলো, এত এত এন্টি রেপ ডিভাইস আর জামা-কাপড়-জুতা তৈরী হলেও
ধর্ষণ কিন্তু কমতেছে না, বরং ধর্ষণ বেড়েই চলতেছে।
আমি এর আগেও বলেছি, এখনও বলছি,
আমি আসলে সন্দিহান, যাদের সব সময় ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার দেখা যায়,
তারা কি আদৌ চায় ধর্ষণ বন্ধ হোক ? যদি তারা সত্যিই চাইতো,
তবে এমন আজগুবি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন ?
অনেকে বলে আইন প্রয়োগ করে ধর্ষণ বন্ধ করতে হবে।
আমি এটাও বিশ্বাস করি না। কারণ শুধু আইন কখন অপরাধ দমন করতে পারে না।
অপরাধ যে কারণে উৎপন্ন হচ্ছে, সেটা আগে বন্ধ করতে হবে।
অপরাধ সংগঠিত হয়ে যাওয়ার পর আইন প্রয়োগ করে সেটা বন্ধ করবেন কিভাবে ?
এক্ষেত্রে ইসলামীক আইনে শেখার অনেক কিছু আছে।
যেমন- ইসলামী আইনে চুরি করলে হাত কাটার বিধান আছে।
কিন্তু তার আগে দেখতে হবে, ঐ ব্যক্তি ক্ষুধার্ত কি না ?
মানে সে হয়ত ২-৩ দিন যাবত ক্ষুধার্ত, সে বাধ্য হয়ে চুরি করেছে।
তখন ইসলামী আইন মতে তার খাবারের দায়িত্ব নিবে খিলাফত এবং তাকে শাস্তি দেয়া যাবে না।
কিন্তু যদি সে ভরপুর পেট থাকার পরও চুরি করে, তখন তার জন্য আইন প্রযোজ্য।
এই আইন থেকে শেখা যাচ্ছে- কোন অপরাধ দমন করতে শুধু আইন করলেই হবে না,
যে কারণে অপরাধ তৈরী হচ্ছে, সেটা আগে বন্ধ করতে হবে। তখন অপরাধ কমবে, এর আগে না।
বর্তমান সময়ে আসলে মানুষ যে ভাবাদর্শে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে- সেটাকে সুশীল চেতনা বলে।
এটা সুশীল চেতনাগুলোর ডেমোক্র্যাট ব্লকের তৈরী, যারা মিডিয়ার মাধ্যমে এগুলো ব্যাপক প্রচার করে।
এই সুশীলরা সবকিছু আইন করে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
এটা ভুল পদ্ধতি। আইন করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
যে কারণে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে, সেগুলো আগে চিহ্নিত করে বন্ধ করতে হবে এরপর আইন প্রয়োগ করলে কাজ হবে, এর আগে হবে না।
ধর্ষণ বন্ধ করতে কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সেটা নিয়ে আমি আগেও অনেক পোস্ট দিয়েছি-https://bit.ly/2uEIPxahttps://bit.ly/2O4k985।, সুতরাং সেটা নিয়ে আজকে আর কথা বলবো না।
তবে কথা বলবো, তাদের সম্পর্কে যারা বলে, ধর্ষণ বন্ধে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।
এক্ষেত্রে সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনে তাদের কিছু শ্লোগান আছে, যেমন-
১. নারী-পুরুষকে সমান চোখে দেখতে হবে।
২. নারীর শরীরকে কামনার চোখে দেখলে হবে না।
৩. নারীর শরীরকে নিষিদ্ধ বস্তু করা যাবে না, কারণ নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষন বেশি হয়।
প্রথম যে পয়েন্টটা, মানে নারী-পুরুষকে সমান চোখে দেখা, এটা আমার কাছে কম বলে মনে হয়।
একজন নারীকে পুরুষের পক্ষে সমান হয়, বরং বেশি সম্মানের চোখে দেখা উচিত।
কারণ নারী হলো মায়ের জাত।
মাকে যেমন সন্তান শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে,
তেমনি পুরুষের দৃষ্টিতে নারীও হবে তেমন সম্মানিত ও শ্রদ্ধার পাত্র।
এজন্য সাধারণ মানুষের তুলনায় ভিআইপি মানুষেররা যেমন সম্মান পায়,
নারীকেও তেমন সম্মান দিতে হবে।
ভিআইপি মানুষের জন্য যেমন সবকিছু পৃথক ও ভিআইপি সিস্টেমে থাকে, নারীকেও তেমন ভিআইপি পৃথক ব্যবস্থা করা উচিত। ভিআইপিরা যেমন সাধারণ মানুষের সাথে চলে না, খায় না, সাধারণভাবে হাটাচলা করে না, পৃথকভাবে করে, তেমনি নারীকেও ভিআইপি সম্মান দিয়ে পুরুষের থেকে পৃথক ব্যবস্থা করে দেয়া উচিত।
দ্বিতীয় যে পয়েন্ট,
“নারীর শরীরকে কামনার চোখে দেখলে হবে না।”
আমি এই পয়েন্টে শতভাগ একমত। আপনি কেন নারীর শরীরের দিকে কামনার দৃষ্টিতে তাকাবেন?
আমার মনে হয়, এই পয়েন্টের সাথে ধার্মীক ও সুশীল দুই গ্রুপের মধ্যে অমীল নাই,
কিন্তু বাস্তবে চেতনা ধারণের মধ্যে পার্থক্য আছে।
যেমন- প্রকৃত ধার্মীকরা নারীকে কামনার চোখে দেখেও না, আবার কেউ যদি সেই কামনার দৃষ্টি উপস্থাপন করতে চায় তবে তার জোর প্রতিবাদ করে। যেমন: কোন নারীকে সিনেমা-মুভি-বিজ্ঞাপন বা অন্য কোথাও সেক্স সিম্বল হিসেবে প্রচার করলে ধার্মীকদের তার প্রতিবাদ করতে দেখা যায়।
অপরদিকে সুশীল শ্রেণী মুখে বলে-“নারীর শরীরকে কামনার চোখে দেখলে হবে না।” কিন্তু বাস্তবে, নারীকে যখন সিনেমা-মুভি-বিজ্ঞাপন বা অন্য কোথাও সেক্স সিম্বল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তখন তাদের কখনই প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। অর্থাৎ বাণিজ্যিকভাবে যখন নারীদেহকে ব্যবহার করা হচ্ছে কিংবা পুরুষের কামনাকে প্রলুব্ধ করতে বা নারী শরীরকে ব্যবহার করে পণ্যের বাণিজ্য করা হচ্ছে, তখন ঐ সুশীল শ্রেণী আশ্চর্যজনভাবে নিরব থাকে। তাদের এ ধরনের নিশ্চুপ থাকা সন্দেহজনক। আবার ঐ সুশীল গোষ্ঠীটি সব সময় শিক্ষা বাণিজ্য, অমুক বাণিজ্য, তমুক বাণিজ্য বন্ধ করতে বলে। কিন্তু নারীদেহ বাণিজ্য বা পতিতাবৃত্তি বন্ধ করতে বলে না, বরং পতিতাবৃত্তি সমাজে জারি রাখতে বলে, এখানে তাদের দ্বিচারিতা পাওয়া যায়।
তৃতীয় পয়েন্ট- “নারীর শরীরকে নিষিদ্ধ বস্তু করা যাবে না।”
এই পয়েন্টে খেয়াল করুন- ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশেই নারীকে পুরুষের তুলনায় পোষাকে বেশি স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। যেমন কোন অনুষ্ঠানে পুরুষ কোর্ট-প্যান্ট পরে গলা থেকে পা পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় ৯০% শরীর ঢেকেছে। অপরদিকে নারীর বুকের অর্ধেরক থেকে উপরের অংশ উন্মুক্ত, আবার হাটুর উপর অংশ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত উন্মুক্ত, মানে নারীর শরীরের ৪০% ঢাকা, কিন্তু ৬০% উন্মুক্ত। যেহেতু কথা হচ্ছে নারীর ধর্ষণ বন্ধ করা নিয়ে, তাই খোজ নিয়ে দেখুন- ঐ দেশগুলোতে কিন্তু নারীর ধর্ষণের রেট অনেক উচ্চ। তারমানে নারীর শরীরকে উন্মুক্ত করলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে, এটা একটা ভুল তত্ত্ব।
অনেককে আমি বলতে দেখি- “ধার্মীকরা নারীর শরীরকে কামনার বস্তু হিসেবে দেখে বলেই, তাদের শরীর ঢেকে রাখতে বলে।” এটা একটা ভুল কথা। কামনার বস্তু হিসেবে দেখে বলেই ঢেকে রাখতে বলে না, বরং তারা কামনার বস্তু হিসেবেও দেখে না, আবার নারীর শরীরকেও ঢেকে রাখতে বলে, বিষয়টি অনেকটা টু-স্টেপ সিকিউরিটি ভেরিফিকেশনের মত। মানে বহুমানুষের সমাজে একটা ব্যর্থ হলেও যেন অন্যটা ব্যর্থ না হয়।

আবার ধর্ষণ বন্ধে আইনের ক্ষেত্রে সুশীলদের তুলনায় ধার্মীকদের পদ্ধতি অনেক শক্তিশালী।
যেমন- সুশীলরা শুধু আইনের ভয় দেখিয়ে অপরাধ থামাতে চায়।
কিন্তু ধর্মে প্রথমে ছেলেকে দেখতে বারণ করে,
মেয়েকে দেখাতে বারন করে,
অপরাধ করার আগে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মনের মধ্যে খারাপ চিন্তার সূত্র বুনতে হয়, সেই চিন্তা করতেও নিষেধ করে,
অতঃপর অপরাধ করতেও না করে। এরপরে যদি কেউ অপরাধ করে তবে তার জন্য শাস্তির বিধান, এছাড়া পরকালের শাস্তির ভয় দেখানো তো আছেই।
অর্থাৎ অপরাধ দমন করতে ৫ স্টেপ সিকিউরিটি, যার একটাও সুশীলদের নেই।
অর্থাৎ ধর্ষণ বন্ধে ধার্মীকদের তুলনায় সুশীলদের এথিকস অনেক দুর্বল এবং দ্বিচারিতা বিশিষ্ট্য,
ফলে সুশীলদের নিয়মে চললে সমাজে ধর্ষণ হ্রাস না পেয়ে বরং বৃদ্ধি ঘটাই স্বাভাবিক।