রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শেখ হাসিনার ম্যাজিকনীতি পরিহার করা উচিত

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শেখ হাসিনার ম্যাজিকনীতি পরিহার করা উচিত

Image result for নদী
রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শেখ হাসিনার ম্যাজিকনীতি পরিহার করা উচিত
যাদুকররা কিভাবে যাদু করে এটা নিয়ে আমি একবার খোঁজ নিয়েছিলাম। দেখেছিলাম, যাদুকরদের যাদুর পেছনে কিছু কৌশল আছে। যেমন- যাদুকররা হাত দিয়ে কোন জিনিস লুকাবে। এক্ষেত্রে কাজটা করবে এক হাতে, কিন্তু নাড়তে থাকবে অন্য হাত। একহাত নাড়িয়ে সে মানুষের দৃষ্টিকে বিভ্রান্ত করবে, অন্যহাত দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটা লুকিয়ে ফেলবে। মানুষের দৃষ্টি বিভ্রান্ত করে অন্য হাতের সাহায্যে লুকানোর সেই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে যাদু বা ম্যাজিক।
গত কয়েকদিন ধরে দেখছি, নির্বাচনের পর থেকে শেখ হাসিনা ‘ম্যাজিকনীতি’ গ্রহণ করেছেন। সম্ভবত বানোয়াট নির্বাচনের দৃশ্য ভুলাতে শেখ হাসিনার এই কৌশল। তিনি ম্যাজিক দেখিয়ে জনগণের স্নায়ুকে উত্তেজিত করে পুরাতন স্মৃতি ভুলাতে চাইছেন।
যেমন: হঠাৎ করে বুড়িগঙ্গার তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কিংবা ধর্ষককে ক্রশফায়ার। দুটো শুনতেই খুব ভালো। কিন্তু বুড়িগঙ্গা যতগুলো অবৈধ স্থাপনা আছে, তার সবগুলো সরকার-প্রশাসনের যোগসাজসেই হয়েছে। তাই অবৈধস্থাপনাকারীদের সাথে সরকার-প্রশাসনের সাথে যুক্তদেরও বিচার হওয়া উচিত। এছাড়া বুড়িগঙ্গার তীরে যে অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরী করা হয়েছে, আমি নিজে দেখেছি, তার একটি বড় অংশ প্রকৃতপক্ষে অবৈধ স্থাপনাই নয়, বরং তাদের নাম উদ্দেশ্যমূলকভাবে লিস্টে ঢুকানো হয়েছে। সরকার ম্যাজিক দেখাতে চোখ বন্ধ করে যে কাজ করছে তাতে নিরাপরাধ ব্যক্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যেটা কখনই কাম্য হতে পারে না। (https://bit.ly/2TmH679)
ক্রশফায়ারের নামে ধর্ষকে গুলি করে হত্যা। ধর্ষণ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক, এটা আমারও দাবী। কিন্তু ক্রশফায়ারের নামে মিথ্যা লোক যেন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের স্বীকার না ঘটে, সেটাও খেয়াল রাখা উচিত। বিশেষ করে এসব ক্ষেত্রে সরকারের নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্চনিয়। আমরা দেখেছি এর আগে সরকার মাদক নির্মূলে ক্রশফায়ার দিলো, কিন্তু ইয়াবার মূল হোতা বদিকেই কিছু বললো না। এতে বোঝা যায়, সরকার নিজেই মাদকের ক্রশফায়ার নিয়ে দ্বিচারিতায় ভুগছে। কোর্ট কাচারিতে গিয়ে দেখবেন, ৮০% নারী নির্যাতন মামলা ভুয়া, অপরকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে (https://bbc.in/2CWKiiL)। শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে যদি ক্রশফায়ার দেয়া হয়, তবে ‘ভুল’ হওয়ার সম্ভবনা আছে। পাশাপাশি যদি ক্রশফায়ারও দেয়, তবে সেখানে প্রশাসনের অবস্থান নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কক্সবাজারে একটি ধর্ষণের ঘটনায় দেখলাম, শাহাব উদ্দিন নামক এক ধর্ষককে ক্রশফায়ারে দেয়া হয়েছে, খুব ভালো। কিন্তু শ্যামল দে নামক আরেকজনকে বাচিয়ে রাখা হয়েছে (https://bit.ly/2sXhemC)। সরকারের ভেতর যেহেতু হিন্দু প্রীতি বা ভীতি আছে, সম্ভবত সে কারণে শ্যামল দে কে ক্রশফায়ারে দেয়ার সাহস পায় নাই। এ দিকগুলোতে পরিষ্কার থাকা সরকারের জন্য জরুরী।
আওয়ামী সরকারের উন্নয়নের ম্যাজিকনীতি প্রথম দৃশ্যমান হয় ফ্লাইওভার, মেট্রোরেলে মাধ্যমে। আপনারা যদি জনপার্কিন্সের লেখা ‘এক অর্থনৈতিক ঘাতকের স্বীকারক্তি’ বই পড়েন, তবে স্পষ্ট হয়ে যাবে, আওয়ামী সরকারের কথিত উন্নয়নের ম্যাজিকের আড়ালে কিভাবে দেশকে বিদেশী কর্পোরেটদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। সরকার বিদেশ থেকে ঋণ এনে অনুৎপাদনশীল খাত ফ্লাইওভার-মেট্রোরেল করতেছে, আর উৎপাদনশীল খাতগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। যেমন, গত কয়েকদিন খরবগুলো যদি দেখেন-
- জাপানের ঋণে হচ্ছে পাতাল রেল, চলছে নকশার কাজ (https://bit.ly/2Sd9yem)
- মহাখালীতে আবারও ফ্লাইওভার (https://bit.ly/2RW4mfs)
এই খবরগুলোর উল্টা পাশের খবর-
১) ৩০০ মেট্রিক টন ইলিশ, অপর্যাপ্ত লবণ-বরফে পঁচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ (https://bit.ly/2BaalCS)
২) বগুড়ায় বহুমুখী হিমাগারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে সবজী, হুমকির মুখে ১৮ হাজার চাষী (https://bit.ly/2Wv4Qb5)
৩) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে হিমাগারের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষীরা (https://bit.ly/2ShAQjB)
৪) কুমিল্লায় হিমাগারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে শাক-সবজি ও ফলমূলের ৩০%
(https://bit.ly/2sXAXm2)
৩ বছর আগে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলো,“ সরকার আর হিমাগার নির্মাণ করতে চায় না ” (https://bit.ly/2TlhmYI)
সরকার যদি দেশজুড়ে হিমাগার নির্মাণ করতো, তবে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার খাদ্যসম্পদ নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পেতো, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়তো না, জনগণ স্বল্পমূল্যে খাবার পেতো, এছাড়া বেচে যেতো কৃষক সমাজ। এটাই মূলত উৎপাদনশীল খাত। কিন্তু সরকার সেটা না করে ফ্লাইওভার-মেট্রোরেলের বানানোর ম্যাজিকে নেমেছে। কিন্তু এই ম্যাজিক দেশকে শুধু ঋণের মধ্যে জড়িয়ে দেবে, জনগণের লিভিংকস্ট বাড়িয়ে তুলবে।জনগণের খরচ কমাতে পারবে না।
শেখ হাসিনাকে বলবো, দয়া করে ম্যাজিশিয়ান নয় রাষ্ট্র পরিচালক হোন। ম্যাজিক দেখিয়ে হয়ত কিছু সময়ের জন্য কিছু মানুষকে ধোঁকা দিতে পারবেন, কিন্তু সব সময়ের জন্য সব মানুষকে ধোঁকা দিতে কখনই পারবেন না।