আমাদের সাংবাদিকদের একটা বদ স্বভাব আছে,
স্বভাবটা হইলো- তার মনে যেইটা আছে, সেইটা সাক্ষাৎকার নেয়া ব্যক্তির নামে ছাপানো।
এই কাজটাও সে করে বেশ কৌশলে,
মানে যার সাক্ষাৎকার নিবে, তাকে বেশ কায়দা করে প্রশ্ন ছুড়ে দিবে, যেন সে হ্যা দিয়ে উত্তর দেয়,
এক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার নেয়া ব্যক্তির যদি তার প্রশ্ন শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চুপ হয়ে থাকে,
তখন সেটা মৌন সম্মতি হিসেবে পত্রিকায় তার রেফারেন্সে ছেপে দিবে।
দেখা যায় কথা বলছে ১০০টা, যেটা শুধু তাদের মতাদর্শের পক্ষে যায়, সেটা নিয়ে বড় করে হেডিং করছে, আর বাকি ৯৯টা কথা বাদ দিয়ে দিছে, অথচ সেখানেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো এবং অবশ্যই তা জাতির তা জানার দরকার।
ঘটনা হইলো, আমাদের দেশে এই ফাজিল সাংবাদিকগুলোকে এই আজগুবি খবরের কারণে সরাসরি ধরা হয় না, এর কারণ আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনরা প্রায় সবাই করাপটেড। তারা হয়তভাবে- এই ইস্যুতে ধরলে সাংবাদিক গংরা যদি আমার অন্য গোপন খবর প্রকাশ করে দেয়, তখন কি হবে ?
কিন্তু এই কাণ্ডটা করে যে ঐ সাংবাদিক গং পুরো জাতিকে বিভ্রান্ত করতেছে, তার দায় কে নিবে ?
সম্প্রতি ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় ঐ শিক্ষার্থীর নামে সংবাদপত্র বা পোর্টালগুলো যে খবর ছাপছে সেখানেই বিপত্তি ঘটে। সেখানে ঢাবি শিক্ষার্থীর রেফেরেন্সে ধর্ষকের কিছু বিবরণ ছাপা হয়, যেমন-
ধর্ষক একজন সুঠামদেহী
ধর্ষক একজন প্রভাবশালী
ধর্ষক একজন গাম্ভীর্যপূর্ণ ব্যক্তি।
আমি নিশ্চিত ‘সুঠামদেহী’, ‘প্রভাবশালী’, গাম্ভীর্যপূর্ণ’ এই শব্দগুলো ধর্ষিতার মুখের শব্দ না,
এটা আমাদের সাংবাদিকদের চয়ন করা শব্দ। তারা ছাত্রীকে এই প্রশ্ন গুলো করেছে-
আপনার কাছে কি ধর্ষককে সুঠামদেহী, প্রভাবশালী, বা গাম্ভীর্যপূণ মনে হয়েছে ?
ধর্ষিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছাত্রী তাদের এমন আজগুবি প্রশ্ন শুনে হা বা হু বলেছেন, সেটা মনে হয় সে নিজেই জানে না।
আর সেটাই সংবাদপত্রে ছেপে পুরো দেশকে ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছে সংবাদিক।
অথচ ছাত্রীর কথা শোনা- ঢাবি শিক্ষিকা, ফরসেনিক রিপোর্ট নেয়া বা কেউ এই ধরনের শব্দগুলো শুনতে হয় পায়নি, অন্তত ধর্ষণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭১টিভি’র টকশো শুনে আমার সেটাই মনে হয়েছে।
বরং ছাত্রীকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখা ফরসেনিক রিপোর্ট নেয়া ডাক্তারের বক্তব্য হলো-
ছাত্রীকে ধর্ষণ শেষে ধর্ষক ছাত্রীর ব্যাগ ঘাটতেছিলো টাকা পয়সা খুজতে, আর সেই সুযোগে ছাত্রী পালিয়ে আসে। আশ্চর্যজন হলো- আমাদের সাংবাদিকরা ধর্ষক প্রভাবশালী, পেশীবহুল কিংবা গাম্ভীর্যপূর্ণ এই শব্দগুলো নিয়ে এসেছে, কিন্তু ধর্ষক যে ছিচকে ছিনতাইকারীর মত আচরণ করেছে, সেটা উল্লেখ করেনি।
এর মূল কারণ-
কারণ আমাদের দেশের অধিকাংশ সাংবাদিকরা হচ্ছে বাম ছাত্র ইউনিয়ন বা ছাত্র ফেডারেশন ঘরোনার।
এরা হলো- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিরোধী। বিভিন্ন ইস্যুতে এই গ্রুপটি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যায়, যেমন- পাহাড়ে উপজাতি ইস্যু।
তারা যখন শুনেছে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের বিপরীতে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তখন তারা সেটা ঘুড়িয়ে সেনাবাহিনী ধর্ষণ করেছে, এটা প্রচার করতে চেয়েছে।
এবং সেই উদ্দেশ্য থেকেই তারা সংবাদ প্রচার বানায়- ধর্ষক একজন সুঠামদেহী, গাম্ভীর্যপূর্ণ বা প্রভাবশালী।
কিন্তু আমার আশ্চর্য লাগে- মানুষের রূচি বলে একটা জিনিস আছে।
ঐ মেয়েকে তুলে নিয়ে যদি কোন ক্লাবে বা হোটেলে ধর্ষণ করতো, তবেও বুঝা যেতো।
কিন্তু সেটা না করে ময়লা আবর্জনার আর কাটা বৃক্ষের উপর মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল চলা একটা মেয়েকে আর্মি ধর্ষণ করছে, এটা কেমন কথা ?
এটা তো মজনু মত হিরোইনচি যারা পাগলীর সাথে থাকে, তাদের পক্ষে সম্ভব।
আর সেটা ভাবা সম্ভব আমাদের ছাত্র ইউনিয়ন বা ছাত্র ফেডারেশন থেকে আগত গাঞ্জা খাওয়া সাংবাদিকদের পক্ষে।
আসলে ঘটনা হইলো-
৯০ এর গণ অভ্যুত্থানের সময় আর্মি-ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হইছিলো,
২০০৭ সালে ঢাবি আর সেনাবাহিনীর মধ্যে একটা সংর্ঘষকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব হইছিলো,
আর এবার ২০২০ সালে আবার ঢাবি আর সেনাবাহিনীর মধ্যে ছাত্রী ধর্ষণকে উপলক্ষ করে একটা দ্বন্দ্ব বাধানোর টার্গেট নিলো বাম ঘরোনার ছাত্র ফেডারেশন বা ইউনিয়ন গং।
আমার কথা হইলো- ঢাবি শিক্ষার্থীদের সাথে আর্মিদের সংঘর্ষ হইতে পারে, দ্বন্দ্ব হইতে পারে,
এর মধ্যে আমি কোন সমস্যা দেখি না।
সমস্যা হইলো- তোমরা একটা নিরীহ মেয়ে ধর্ষণ হইছে, এটা নিয়ে কেন রাজনৈতিক ব্যবসা করলা ?
আর্মিদের সাথে ছাত্র ইউনিয়ন বা ছাত্র ফেডারেশন থেকে আগত সাংবাদিকদের রাজনৈতিক দ্ব্ন্দ্ব থাকতে পারে, কিন্তু এই দ্বন্দ্বে গুটি হিসেবে তারা কেন একটা মেয়ের ধর্ষণের মত ঘটনাকে পূজি করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করলো ?
মজনু যদি ঐ শিক্ষার্থীর ধর্ষক হয়, তবে বাম সাংবাদিক মহলও তো এক ধরনের ধর্ষক,
কারণ তোমরা ঐ মেয়েটির ধর্ষণকে পূজি করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার মত হীন কাজ করতে উদ্দত হয়েছিলে।
ছিঃ সাংবাদিক ছিঃ।
আমার মতে, এই বামগ্রুপটা ধর্ষনবিরোধী আন্দোলন কখন আমলে নেয়া উচিত না,
কারণ সমাজে ধর্ষণ বন্ধ বা হ্রাস কোনটাই এদের উদ্দেশ্য নয়,
বরং ধর্ষণকে পূজি করে কিভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়া যায়, সেটাই তাদের উদ্দেশ্য।
এরা হলো ধর্ষণ ব্যবসায়ী।