গতকালকে ‘মেট্রোরেল: শুভঙ্করের ফাঁকি’ আর্টিকেল লেখার পর কেউ কেউ আমার লেখার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন। আসলে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন, সবার চিন্তাধারা যে এক হবে, এটা আমি কখনই ভাবি না, বরং প্রতিটা মানুষের চিন্তাধারা যে আলাদা এটাই বরং স্বাভাবিক।
তবে, মেট্রোরেল নিয়ে কিছু চিন্তা আমার মনে সব সময় উদ্রেক হয়-
১) সরকারী ভাবে মেট্রোরেলের মত একটি নতুন ও বড় সিস্টেম কিভাবে চলবে তা নিয়ে ভাবনার দরকার আছে। সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিছুদিন আগে বলেছে, “লোকসান দিয়ে বিআরটিসি আর কতোদিন চলবে ? এভাবে সরকারি কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে গাড়ি কিনে এনে দেশের মানুষ কী সুফল পাচ্ছে দেখতে হবে। দেখা যাচ্ছে, অনেক দাম দিয়ে বিআরসিটি বাস কেনা হচ্ছে। কিন্তু কিছু দিন পর ডাম্পিংয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে।” (https://bit.ly/2CMC38F) সরকার যেখানে বিআরটিসি সামান্য বাস সার্ভিস চালাতে পারছে না, সেখানে মেট্রোরেলের মত নতুন ডাইনামিক একই সিস্টেম তারা কতদিন চালাতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাছাড়া সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, এটা সরকার নিজেই স্বীকার করে। দেখা যাবে, মেট্রোরেল চালু হলে বাসের যাত্রী কমে যাবে। তখন বাস মালিক সমিতি (যার বেশিরভাগ মালিক এমপি-মন্ত্রীরাই) সরকারকে ঘুষ দিবে যেন মেট্রোরেলগুলো কারণে অকারণে বসিয়ে রাখা হয়। এভাবে বসে থাকতে থাকতে মেট্রোরেলও এক সময় বিআরটিসির মত ভাগাড়ে চলে যাবে।
২) সরকার যখন চালাতে পারবে না, তখন কথা আসবে মেট্রোরেল বেসরকারীভাবে চালানোর । আর বেসরকারী মানে উচ্চভাড়া। মানুষ চায়, স্বল্পভাড়া ও সহজ যাতায়াত। কিন্তু বেসরকারীখাতে গেলে আর স্বল্পভাড়া সম্ভব হবে না। জনগণকে ঋণে ফেলে মেট্রোরেল বানানো হলো, জনগনের রাস্তা ছোট করে পিলার উঠলো, জনগণ ৩ বছর নির্মাণ যানজট সহ্য করলো, কিন্তু বানানোর পর সেটা জনগণের থাকলো না, হয়ে গেলো বেসরকারী কর্পোরেটদের, ফলে যে টাকা খরচ করতে পারবে, সে উঠবে, বাকিরা আগের মত নিচে সরু রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করবে। বাংলাদেশের যেহেতু অধিকাংশ মানুষ স্বল্প খরচে যাতায়াত করতে চায়, সেহেতু দেখা যাবে, ভাড়া বেশি হললে একবারে মেট্রোরেলের সব সিট ভড়বে না, তখন ১৪ জোড়া রেলের পরিবর্তে ৪-৫ জোড়া চলবে, ফলে সেই ৬০ হাজার যাত্রীর কথা বলে বানানো মেট্রোরেলে ৩-৫ হাজার যাত্র্রী চলাচল করবে।
৩) মেট্রোরেলকে বলা হয়, ‘এমআরটি’ বা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট। আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যাস র্যাপিড ট্র্যানজিটের বিরুদ্ধে নই, বরং পক্ষে। কিন্তু আমি বিরুদ্ধ হচ্ছি, যারা বলছে এই ম্যাস র্যাপিডি ট্র্যানজিটে মাধ্যমে যানজট হ্রাস পাবে, তাদের এ বক্তব্যের। বাস্তবে এমআরটির সাথে চলমান জনজট পরিস্থিতির কোন রিলেশন নাই। একটি উদহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে। ধরে নিলাম মেট্রোরেল একসাথে ৬০ হাজার লোককে পরিবহণ করতে পারে। কিন্তু এই সংখ্যাটা কি বেশি কিছু ? একটি হিসেবে দেখা যায়, ঢাকা শহরে দৈনিক ৫ হাজার নতুন লোক প্রবেশ করে। সেদিক বিবেচনা করলে ১২ দিনে প্রবেশ করে ৬০ হাজার লোক (https://bit.ly/2RQlqnc )। অর্থাৎ ঢাকা শহরে ১২ দিনে যে লোক প্রবেশ করছে ৩ বছর ধরে ২২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল দিয়ে শুধু ততগুলো লোকের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাই ঢাকার যানজট নিরসনে প্রথম চ্যালেঞ্জ সেই ৫ হাজার নতুন লোককে ঢাকায় প্রবেশ করতে না দেয়া, বাইরের জেলায় তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, যাকে আমরা বলছি বিকেন্দ্রীকরণ।
তবে, মেট্রোরেল নিয়ে কিছু চিন্তা আমার মনে সব সময় উদ্রেক হয়-
১) সরকারী ভাবে মেট্রোরেলের মত একটি নতুন ও বড় সিস্টেম কিভাবে চলবে তা নিয়ে ভাবনার দরকার আছে। সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কিছুদিন আগে বলেছে, “লোকসান দিয়ে বিআরটিসি আর কতোদিন চলবে ? এভাবে সরকারি কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে গাড়ি কিনে এনে দেশের মানুষ কী সুফল পাচ্ছে দেখতে হবে। দেখা যাচ্ছে, অনেক দাম দিয়ে বিআরসিটি বাস কেনা হচ্ছে। কিন্তু কিছু দিন পর ডাম্পিংয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারকে।” (https://bit.ly/2CMC38F) সরকার যেখানে বিআরটিসি সামান্য বাস সার্ভিস চালাতে পারছে না, সেখানে মেট্রোরেলের মত নতুন ডাইনামিক একই সিস্টেম তারা কতদিন চালাতে পারবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তাছাড়া সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, এটা সরকার নিজেই স্বীকার করে। দেখা যাবে, মেট্রোরেল চালু হলে বাসের যাত্রী কমে যাবে। তখন বাস মালিক সমিতি (যার বেশিরভাগ মালিক এমপি-মন্ত্রীরাই) সরকারকে ঘুষ দিবে যেন মেট্রোরেলগুলো কারণে অকারণে বসিয়ে রাখা হয়। এভাবে বসে থাকতে থাকতে মেট্রোরেলও এক সময় বিআরটিসির মত ভাগাড়ে চলে যাবে।
২) সরকার যখন চালাতে পারবে না, তখন কথা আসবে মেট্রোরেল বেসরকারীভাবে চালানোর । আর বেসরকারী মানে উচ্চভাড়া। মানুষ চায়, স্বল্পভাড়া ও সহজ যাতায়াত। কিন্তু বেসরকারীখাতে গেলে আর স্বল্পভাড়া সম্ভব হবে না। জনগণকে ঋণে ফেলে মেট্রোরেল বানানো হলো, জনগনের রাস্তা ছোট করে পিলার উঠলো, জনগণ ৩ বছর নির্মাণ যানজট সহ্য করলো, কিন্তু বানানোর পর সেটা জনগণের থাকলো না, হয়ে গেলো বেসরকারী কর্পোরেটদের, ফলে যে টাকা খরচ করতে পারবে, সে উঠবে, বাকিরা আগের মত নিচে সরু রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করবে। বাংলাদেশের যেহেতু অধিকাংশ মানুষ স্বল্প খরচে যাতায়াত করতে চায়, সেহেতু দেখা যাবে, ভাড়া বেশি হললে একবারে মেট্রোরেলের সব সিট ভড়বে না, তখন ১৪ জোড়া রেলের পরিবর্তে ৪-৫ জোড়া চলবে, ফলে সেই ৬০ হাজার যাত্রীর কথা বলে বানানো মেট্রোরেলে ৩-৫ হাজার যাত্র্রী চলাচল করবে।
৩) মেট্রোরেলকে বলা হয়, ‘এমআরটি’ বা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট। আমি ব্যক্তিগতভাবে ম্যাস র্যাপিড ট্র্যানজিটের বিরুদ্ধে নই, বরং পক্ষে। কিন্তু আমি বিরুদ্ধ হচ্ছি, যারা বলছে এই ম্যাস র্যাপিডি ট্র্যানজিটে মাধ্যমে যানজট হ্রাস পাবে, তাদের এ বক্তব্যের। বাস্তবে এমআরটির সাথে চলমান জনজট পরিস্থিতির কোন রিলেশন নাই। একটি উদহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে। ধরে নিলাম মেট্রোরেল একসাথে ৬০ হাজার লোককে পরিবহণ করতে পারে। কিন্তু এই সংখ্যাটা কি বেশি কিছু ? একটি হিসেবে দেখা যায়, ঢাকা শহরে দৈনিক ৫ হাজার নতুন লোক প্রবেশ করে। সেদিক বিবেচনা করলে ১২ দিনে প্রবেশ করে ৬০ হাজার লোক (https://bit.ly/2RQlqnc )। অর্থাৎ ঢাকা শহরে ১২ দিনে যে লোক প্রবেশ করছে ৩ বছর ধরে ২২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল দিয়ে শুধু ততগুলো লোকের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাই ঢাকার যানজট নিরসনে প্রথম চ্যালেঞ্জ সেই ৫ হাজার নতুন লোককে ঢাকায় প্রবেশ করতে না দেয়া, বাইরের জেলায় তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, যাকে আমরা বলছি বিকেন্দ্রীকরণ।
৪) ‘এমআরটি’ বা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিটের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষ যেন ব্যক্তিগত পরিবহন বা প্রাইভেট কার জাতীয় পরিবহণ ব্যবহার না করে। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরের জন্য জাপানের জাইকা যে মাস্টারপ্ল্যান দিয়েছে, সেখানে তারা প্রাইভেট মটরসাইকেল ব্যবহারেরও বিরোধীতা করেছে। তারা বলেছে, মটরসাইকেল যে হারে বাড়ছে তাতে খুব শিঘ্রই ঢাকায় যানজটের জন্য মটরসাইকেল দায়ী হবে। তাদের এ ধরনের বক্তব্য থেকে অবশ্য বুঝেছি, তারা ঢাকা সম্পর্কে সত্যিই খুব ধারণা রাখে। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে যারা প্রাইভেট গাড়ি চালায়, তারা কিন্তু মাঝের কোন স্থানে থামতে চায় না। যেমন- তারা বাড়ির গ্যারজ থেকে বের হয়ে অফিসের গ্যারেজে বা স্কুলের পার্কিং এ গাড়ি রাখে। কিন্তু এ লোকগুলো কিন্তু কখনই চাইবে না, গাড়ি ব্যবহার বাদ দিয়ে মেট্রোরেল ব্যবহার করতে এবং মেট্রোরেল থেকে নেমে আরো ১ কিলো রাস্তা হেটে নির্দিদষ্ট গন্তব্যে পৌছাছে। হ্যা এটা সম্ভব ছিলো যদি মেট্রোরেল থেকে নামার পর পরিবেশ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মত হয়। কিন্তু দেখা যাবে, মেট্রোরেল থেকে নামার পর পরিবেশ সেই ভীড়যুক্তই হবে। সুতরাং প্রাইভেট কার তারা কখন বাদ দিবে না, মেট্রোরেলও প্রাইভেট গাড়ি বা মটরসাইকেল কমাতে পারবে না।
৫) ‘জাপান খুব ভালো কন্সট্র্যাকশন বানায়, তাই মেট্রোরেল খুব ভালো হবে ’ এসব কথা বলে কোন লাভ নেই। কারণ একজন বিক্রেতা চাইবে বাজারে তার পন্য ভালো কথা বলে ছড়াতে। জাইকার কাজ হলো বাংলাদেশের মত দেশগুলোকে ঋণ দেয়ার নাম করে মেট্রোরেলের মত এসব অপ্রয়োজনী প্রকল্প গছায় দেয়া। ঋণ বলতে আসলে সেই ঋণ না। জনপার্কিন্সের লেখা ‘একজন অর্থনৈতিক ঘাতকের স্বীকারক্তি’ বইটা পড়লে বুঝতে পারবেন, এরা ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রকল্প বিক্রি করে, তারপর সেখানে কনসালটেন্সি, মালামাল, ইঞ্জিনিয়ার, সার্ভিসিং উচ্চমূল্য দিয়ে মূল প্রকল্পের ৬০% নিজেরাই ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এরপর পুরো টাকা সুদে আসলে আবার নেয়। এরপর সরকার সেই প্রকল্প চালাতে না পারলে ফের প্রকল্প চালিয়ে টাকা নেয়া নেয়। এরা হলো কর্পোরেট, তারা দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের জোগসাজসে একটি দেশে অর্থনৈতিক শাসন বিস্তার করে, যাকে বলা হচ্ছে কর্পোরেটোক্রেসি।
সরকার এই মেট্রোরেলের পর আরো ৪টি মেট্রোরেল, ৫টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ২১টি ট্র্যান্সপোর্ট হাবসহ অর্ধশতাধিক এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা বিদেশীদের থেকে ঋণ এনে বাস্তবায়নের চেষ্ট চলছে। আমরা চাইছি, যানজট নিরসন হোক, কিনতু সরকার চাইছে যানজট দীর্ঘজীবি হোক, কারণ যানজট যতদিন থাকবে, ততদিন তারা সেই মুলা ঝুলিয়ে বিদেশ থেকে ঋণ এনে এসব আজগুবি প্রকল্প গ্রহণ করতে পারবে, এবং নিজের পকেট ভরতে পারবে। যদিও বাস্তবে বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া অন্যকোন উপায়ে যানজট নিরসন কখনই সম্ভব না।