আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেই কি খারাপ ?
অনেকে ভাবছে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেই বোধ হয় খারাপ। কিন্তু আক্রান্ত যদি নাই বাড়ে, তবে তবে হার্ড ইমিউনিটি এচিভ হবে কিভাবে ? আর সেটা না হলে, কোভিড-১৯ দূর হবেই বা কিভাবে ?? হিসেব বলে, যত আক্রান্ত, ততই লাভ।
হার্ড ইমুউনিটি জিনিসটা বোঝা দরকার আছে।
Herd অর্থ পাল (যেমন পশুর পাল)। আর ইমুউনিটি মানে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যখন কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ঐ ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরী হয়। যখন কোন এলাকার অনেক মানুষের একত্রে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরী হয়, তখন তা একত্রে ঐ ভাইরাসটিকে তার বিস্তারে বাধা দেয় বা নিঃশেষ করে ফেলে। একে হার্ড ইমুউনিটি। একটি কমিউনিটিতে যত বেশি তরুণ প্রজন্ম ও নারী থাকে, তাদের হার্ড ইম্যুউনিটি এচিভ করা তত সোজা। কারণ তরুণ প্রজন্ম ও নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। কমিউনিটিতে যত তাড়াতাড়ি হার্ড ইম্যুউনিটি এচিভ হবে, যারা ভাইরাসে মৃত্যুর ঝুকিতে আছে (বৃদ্ধ ও অসুস্থরা) তত সেফটির দিকে যাবে। কারণ তার চারপাশে ইমুনাইজড লোকজন ভীড় করবে (ছবিতে দেখুন)। এজন্য প্রাথমিক অবস্থায়- বৃদ্ধ ও অসুস্থদের আলাদা রাখা এবং তরুণদের মুক্ত ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানে কাজ।
আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু মৃত্যু সংখ্যা সেই অনুপাতে বাড়ছে না, এর দ্বারা প্রমাণ হয়, বাংলাদেশের জন্য হার্ড ইমিউনিটি সিস্টেম মানসিকভাবে মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আর না মেনে নিলেও কিছুই আসে যায় না। কারণ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টির শুরু থেকে এভাবেই হচ্ছে এবং এভাবেই হবে। আমরা হয়ত জানতাম না, তাই আমরা সেটা নিয়ে এতদিন মাথা ঘামায়নি। এখন কোন কারণে যখন জানতে পারলাম, তখন আমাদের নানা যুক্তি আসা শুরু করেছে। যদিও আমাদের এসব যুক্তি-বুদ্ধির কতটুকু মূল্য আছে, সেটা সময়ই বলে দেবে।
অনেকে বলছে, বাংলাদেশের অনেক কোভিড-১৯ পজিটিভ আছে, কিন্তু টেস্ট করাচ্ছে না দেখে প্রমাণ হচ্ছে না। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। আপনারা চীনের দেয়া তথ্য অনেকে পড়েছেন , তারা বলেছে, কোভিড-১৯ পজিটিভ ৮০% রোগী কোন লক্ষণই প্রকাশ করে না। এটা কিন্ত একটা পজিটিভ কথা। আমাদের দেশেও যদি এখন বাস্তবে অনেক রোগী থাকে, যাদের লক্ষণ নেই বা মৃদু লক্ষণ আছে, কিন্তু হাসপাতাল মুখী হতে হচ্ছে না। কয়েকদিন পর তারা অটো ইমুনাইজড হয়ে যাবে, যা উল্টো ভাইরাস কিলড করবে, এটা তো আমাদের জন্য ভালো।
অনেকে হয়ত ভাবছে, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং (লক ডাউন, স্কুল বন্ধ, অফিস বন্ধ, সমাবেশ বন্ধ, সবার থেকে ব্যক্তি দূরত্ব) বোধহয় ভাইরাস থেকে বাচার একমাত্র সমাধান। এটা একটা ভুল কথা।
আপনি সোশ্যাল ডিসটেন্সিং সম্পর্কে যত স্ট্যাডি আছে, সব খুজে আসুন। দেখবেন ভাইরাস দমনে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর কোন ভূমিকাই নেই। সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর কাজটা হলো, আক্রান্তের গতিকে হ্রাস করা। কিন্তু আক্রান্ত সবাইকে হতেই হবে। সেটা আজ অথবা কাল। ১ মাসে না হোক ৬ মাস। সোশ্যাল ডিসটেনসিং এ আক্রান্ত বা মৃত্যু হ্রাসে কোন ভূমিকা নেই।
(আসলে ইনফ্লুয়েঞ্জা মাত্রই পেনডামিক, যা সারা বিশ্ব ছড়াবেই। আপনি হাজার চেষ্টা করলেও আটকে রাখতে পারবে না। কোভিড-১৯ যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ভাইরাস, এটাও বিশ্বব্যাপী ছড়াবে। এক বা দুই মৌসুমে এর প্রকোপ থাকবে।)
ধনী রাষ্ট্রগুলো কেন সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বেছে নিলো ?
আমি আগেও এটা নিয়ে আলোচনা করেছি, আবারও বলছি-
১) যেহেতু তাদের দেশে শীতল আবহাওয়া বিরাজ করছিলো, কোভিড-১৯ এর মত ভাইরাসগুলোতে এ সময়ে মৃত্যুহার বাড়ায়। তাই ইউরোপ-আমেরিকা সময় ক্ষেপন করেছে শীত আবহাওয়া চলে যাওয়ার জন্য। কারণ শীতে ফ্লুতে মৃত্যুহার বাড়তে পারে। গরমে আক্রান্ত হলেও মৃত্যুহার তত হবে না। কিন্তু আমরা উল্টো কাজ করছি। গরমে সময় ক্ষেপন করছি, আর শীতের জন্য অপেক্ষা করছি।
২) ধনী রাষ্ট্রগুলো ভেবেছে, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর কারণে স্লো হলে তারা অসুস্থদের চিকিৎসা সুবিধা দিতে পারবে। যেটা একবারে অনেক রোগী আসলে দেয়া সম্ভব না এবং তাদের বৃদ্ধের সংখ্যাও বেশি হওয়ায় ক্রিটিকাল রোগী বাড়বে। কথা হচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকা তাদের কম জনসংখ্যার ঘনত্ব ও অধিক মেডিকেল ফ্যাসিলিটি নিয়ে যেটা চিন্তা করেছে, আমরা বাংলাদেশীরা কি সেটা চিন্তা করতে পারবো? আমাদের দেশে কোভিড-১৯ রোগী আসার আগেই তো আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। আসলে সেটা কয় বছরে সমাল দিতে পারবো ??
৩) ধনী রাষ্ট্রগুলো হয়ত তাদের জনসংখ্যাকে ৩-৪ মাস বসিয়ে খাওয়াতে পারবে, কিন্তু আমরা আমাদের জনসংখ্যাকে কত দিন বসিয়ে খাওয়াতে পারবো ??
৪) ধনী রাষ্ট্রতে বৃদ্ধ বেশি, কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো। আর আমাদের বৃদ্ধ কম, কিন্তু আর্থিক অবস্থা দুর্বল। তারা এই ফ্যাক্টর চিন্তা করেই সোশ্যাল ডিসটেনসিং করছে। কিন্তু আমাদের সম্পূর্ণ উল্টো। আমরা যদি তাদের অন্ধ অনুকরণ করে সোশাল ডিসটেনসিং (লক ডাউন, শ্যাট ডাউন, স্কুল বন্ধ, অফিস বন্ধ, রাস্তাঘাট বন্ধ, সমাবেশ বন্ধ, সবার থেকে ব্যক্তি দূরত্ব) গ্রহণ করি তবে আমাদের ভালোর থেকে মন্দ হবে। ভাইরাসে যত লোক মারা যাবে, তার থেকে ঢের মারা যাবে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে।
এ ধরনের ঘটনা ক্ষেত্রে আসলে আবেগ বা অন্ধঅনুকরণ কোন সিদ্ধান্ত নেয়া কখন বুদ্ধিমানের কাজ না। কারণ নিজেদের অবস্থা না বুঝে অন্ধ অনুকরণ বা আবেগে সিদ্ধান্ত নিলে, সেটা হিতে বিপরীত হতে পারে। ভাইরাস যদি ১ জনের মৃত্যু ডেকে আনে, তবে আমাদের আবেগ ও অন্ধ অনুকরণে লকডাউন, শাট ডাউনসহ নানান সিদ্ধান্তের কারণে ডেকে আনবে ১০০ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বহু লোক।